The Old Man and The Sea Pdf Bangla Book

0

    আর্নেস্ট হেমিং এর 'the old man and the sea Pdf Bangla' বইয়ের অনুবাদ করেছেন রওশন জামিল। বইটি মূলত এক বুড়ো নাবিকের সমুদ্র অভিযান, যার নাম সান্তিয়াগো। এক কিশোরকে নিয়ে উত্তাল সমুদ্রে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প নিয়েই বইটি রচিত হয়েছে।

    The Old Man and The Sea Pdf Bangla by রওশন জামিল

    অনুবাদক রওশন জামিল এর কথা 

    মানুষ হিসেবে হেমিংওয়ে ও তাঁর জীবন বর্ণাঢ্য। তার অধিকাংশ গল্প-উপন্যাসই আত্মজৈবনিক। পুরো নাম আর্নস্ট মিলার হেমিংওয়ে। জন্ম ১৮৯৯ সালের ২১ জুলাই, শিকাগাের উপকণ্ঠে ইলিনয়ের ওল্ড পার্ক অঞ্চলে। এক মধ্যবিত্ত ক্যাথলিক পরিবারের সন্তান তিনি। তার বাবা ছিলেন ডাক্তার। শিকার আর মাছ ধরা ভার নেশা ছিল। মা ছিলেন ধর্মপরায়ণ, সঙ্গীতের প্রতি তার ছিল প্রগাঢ় অনুরাগ।

    হেমিংওয়ের মানস-গঠনে পারিবারিক বৃত্তে তাঁর বাবার প্রভাব সর্বাধিক। আশৈশব তিনি ছিলেন ডানপিটে। ছেলেবেলায় মুষ্টিযুদ্ধ শিখতে গিয়ে তাঁর নাকের হাড় ভেঙে যায় এবং চোখে আঘাত লাগার ফলে ক্ষীণ হয়ে যায় দৃষ্টিশক্তি। দুই-দুবার বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে রাস্তায় রাস্তায় দিনমজুরি করেন। যুদ্ধের সঙ্গে হেমিংওয়ের সম্পর্ক ছিল আত্মিক। ১৯১৭ সালে আমেরিকা যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তখন থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন হেমিংওয়ে।

    ভগ্নস্বাস্থ্যের কারণে নিয়মিত বাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি, পত্রিকার যুদ্ধকালীন সংবাদদাতা এবং স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন। যুদ্ধের প্রতি তার অদম্য আগ্রহের কারণে সুযােগ পেলেই রণাঙ্গনে চলে যেতেন তিনি। ১৯১৮ সালে ইটালির ফলটা ডি-পিয়াভায় মর্টার শেলের আঘাতে হেমিংওয়ে আহত হন। বার বার অস্ত্রোপচার করে ডাক্তাররা তার শরীর থেকে ২৩৭টি লোহার টুকরো বের করেন। বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ হেমিংওয়ে খেতাবে ভূষিত হন। 

    ১৯৩৬ সালে স্পেনে যখন গৃহযুদ্ধ চলছে, সেখানেও তিনি ছিলেন সংবাদদাতা হিসেবে। ১৯৪২ সালে কিউবার সমুদ্র উপকূলে শত্রুপক্ষের ইউ-বোট ধ্বংসের কাজ করেন। এসময় তিনি তার মাছধরা নৌকা ‘পিলার'-কে কাজে লাগান। ১৯৬৪ সালে হেমিংওয়ে প্রথমে ইংল্যাণ্ড, পরে ফ্রান্সে ছিলেন। ওি ডে-তে মিত্রবাহিনী যখন নরম্যাণ্ডি আক্রমণ করে তখন তিনি ছিলেন লুক্সেমবার্গের সিন-ইফেল হার্টজের জঙ্গলে ফাস্ট আর্মির ফোর্থ ডিভিশনের সঙ্গে। সংবাদদাতা হিসেবে হেমিংওয়ে দস্তুরমত একটা ছােটখাট বাহিনীও পরিচালনা করতেন। 

    এক পর্যায়ে নিজের বাহিনী নিয়ে আর্ক দ্য ট্রাক্ষের কাছে সক্রিয় ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
    বীর হেমিংওয়ে এবং সাধারণ মানুষ হেমিংওয়ে মিলে গড়ে উঠেছে প্রবাদপুরুষ আর্নস্ট হেমিংওয়ে। কিংবদন্তীর এই হেমিংওয়ে বাস্তবের হেমিংওয়ে থেকে কোথাও আলাদা, আবার কোথাও-বা এক। বরাবরই তার ব্যক্তি অনমনীয় এবং উজ্জ্বল।

    জীবনে নানা সময়ে নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগােতে হয়েছে তাকে। তিনবার বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু একটি বিয়েও টেকসই হয়নি। যুদ্ধক্ষেত্রে তো বটেই, দুবার অটো এবং দুবার প্লেন দুর্ঘটনায় পড়েন। অত বারো বার মগজে চোট পেয়ে ছিলেন। তাঁর বাবা শেষ বয়সে আত্মহত্যা করেন। এসব ঘটনা তার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে—এবংপতিবারই তিনি প্রচণ্ড : আত্মপ্রত্যয়ের জোরে কাটিয়ে ওঠেন সেসব আঘাত। 

    হেমিংওয়ের বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের মাঝে এই মানসিক আঘাতগ্রস্ত মানুষটির উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু তারাও, তাদের স্রষ্টার মতই, অসীম মনোবলের শক্তিতে শেষ পর্যন্ত সমস্ত বাধাবিঘ্ন কাটিয়ে উঠে উপনীত হয় বিশ্বাসের এক জ্যোতির্ময় জগতে--যেখানে মানুষ সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অপরাজেয় ! বস্তুত হেমিংওয়ের সমগ্র সাহিত্য সৃষ্টির মর্মবাণী এটি : মানুষ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে কিন্তু কখনও পরাজিত হয় না।'

    হেমিংওয়ে ১৯২১ সাল থেকে প্যারিসে ছবছর স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। এসময় দেশত্যাগী মার্কিন ঔপন্যাসিক-সমালোচক এজরা পাউণ্ড ও গারট্রড স্টেইন-এর সঙ্গে হেমিংওয়ের বন্ধুত্ব হয় এবং এদের প্রভাবেই তার জীবনে দেখা দেয় নতুন দিগন্তু। এই দুজনের উৎসাহ ও সমালোচনা হেমিংওয়ের রচনাশৈলী নির্মিতিতে পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

    আর্নেস্ট হেমিংওয়ের যুদ্ধ

    ব্যাপক দেশভ্রমণ, যুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতা, এবং একাধিক শারীরিক ও মানসিক আঘাতের প্রভাব আর্নস্ট হেমিংওয়ের মানস-গঠনে অপরিসীম। দেশভ্রমণ ও যুদ্ধের অভিজ্ঞতা হেমিংওয়ের চেতনালােকে জন্ম দিয়েছে এক অপার বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ ; জাতি-ধর্ম-বর্ণ মতবাদনিবিশেষে সমগ্র মানবের দুঃখ-বেদনার সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করতে পেরেছেন তিনি। 

    উপলব্ধি করেছেন মানুষ মাত্রেই একা, নিঃসঙ্গ। তার চলার পথ রূঢ় বন্ধুর, আর সেই ঝোড়ো পথে তার নৈঃসঙ্গ্যই তার অন্তৰ্শক্তি। সে জানে সে একা, তাই বিরূপু বিশ্বের প্রতিটি ঝঞ্চার বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম করে মানুষ এগিয়ে যায় তার আপন লক্ষ্যের দিকে। এই অসম সংগ্রামে হয়ত তার জীবন ধ্বংস হয়ে যায়, যা হতে চায় তা সে পায় না, গ্রীক নিয়তির মতই তার ওপর নেমে আসে অমোঘ ট্র্যাজেডি ; তবু হার স্বীকার করে না পৌরুষাকার, তবুও স্বপ্ন দেখে সে, যেমন দেখেছে ‘দি ও ম্যান অ্যান্ড দ্য সী'-র নায়ক বুড়ো সান্তিয়াগাে—আফ্রিকার সাদা সমুদ্র সৈকতে কেশর ফোলান সিংহের স্বপ্ন।

    অন্যদিকে, শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয়ের ফলে হেমিংওয়ের মনে জন্ম নিয়েছিল নিরাসক্তি। জীবনের যেকোন ঘটনাকেই তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন অত্যন্ত নিরাসক্তভাবে। হেমিংওয়ের গল্প উপন্যাসে প্রকৃতি ও ভূ-দৃশ্য বস্তুজগতের ত্রিমাত্রিক অবয়বে ডিটেইলসে উদ্ভাসিত-সেজর ল্যাগুস্কেপের মতই। নিখুত। বর্ণনায় কখনও প্রয়োজনাতিরিক্ত গাঢ় রঙ ব্যবহার করেননি তিনি। হেমিংওয়ের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব বােধ করি, তার ভাষায়। কথ্য বুলিতে এক অননুকরণীয় অনবদ্য সাহিত্যিক ভাষা সৃষ্টি করেছেন তিনি। 

    তাঁর বাক্য নির্মেদ, নির্ভার ; সুমিত ও সংহত। অত্যন্ত অবলীলায় আপাত সহজ কোন শব্দের ভেতর দিয়ে নিগুঢ় কোন ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হেমিংওয়ের ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য। হেমিংওয়ের উপন্যাস চারটি। 
    • দি সান অলসাে রাইজেস (১৯২৬); 
    • ‘এ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস' (১৯২৯); 
    • ফর ইম দ্য বেল টোলস (১৯৪০); 
    • এবং দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী’ (১৯৭২)
    ১৯৫২ সালে দি ওল্ড ম্যান অ্যাণ্ড দ্য সী-র জন্য তিনি সাহিত্যে পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করেন এবং ১৯৫৪ সালে পান নোবেল পুরস্কার। 

    নােবেল কমিটি সাহিত্যে তাঁর অবদান সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ‘দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী’-র কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন: 

    'His vigorous art and the influence of his style on the literary art of our times as manifested in his book “The Old Man and the Sea'...,'

    আজীবন খেয়ালি মানুষ হেমিংওয়ে তার নোবেল পুরস্কারের সমস্ত টাকা খরচ করেন কোহিমার ধীবর পল্লীতে। কিউবার রাজধানী হাভানার বার মাইল উত্তরে অবস্থিত এই জেলে পাড়াটিই তাকে তাঁর কালজয়ী উপন্যাস “দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী’ লিখতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। কোহিমারের জেলেরা তার সেই ঔদার্যের কথা ভোলে নি। 

    ১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আইডহােতে এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় হেমিংওয়ে তাঁর নিজের বন্দুকের গুলিতে নিহত হন। এসময় বন্দুকটি তাঁর হাতেই ছিল। কোহিমারের জেলেরা তাঁর স্মৃতি ধরেঞ্জাখার সিদ্ধান্ত নেয়। 

    নিজেদের নৌকার প্রপেলার থেকে সীসা কুঁদে বের করে হেমিংওয়ের একটি আবক্ষ মূর্তি নির্মাণ করে ওরা। হাভানার নয় মাইল দূরে, স্যান ফ্রানসিসকো দ্য পাওলোতে পাহাড়ের ওপর একটি খামারে বাস করতেন হেমিংওয়ে। থামারটির নাম ফিনস ভিগিয়া। 
    হেমিংওয়ের সম্মানে কিউবা সরকার এটিকে জাতীয় যাদুঘরের মর্যাদা দিয়েছেন। এ বাড়ির যাবতীয় আসবাব, কাগজপত্র অবিকল আগের অবস্থাতেই রেখে দেয়া হয়েছে। প্রতি বছর আগ্রহী দর্শনার্থীরা ভিড় জমান এখানে, বন্ধ দরজা-জানালার শার্সির ভেতর দিয়ে উৎসুক দৃষ্টিতে দেখেন তাদের কিংবদন্তীর মানুষটি বাস্তবে কিভাবে থাকতেন, কেমন ছিল তাঁর রুচি।

    The Old Man and The Sea Pdf Bangla

    মানুষ তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে প্রাণপণ সংগ্রাম করে, এবং অনেক সময় তা করতে গিয়ে বিশ্ববিধানকেও লংঘন করে যায় সে, ফলে তার ওপর নেমে আসে প্রকৃতির অমোঘ নির্মম কষাঘাত—কিন্তু তবু মানুষ হাল ছাড়ে না; চড়া মাশুল দিয়ে হলেও, নিজের চ্যালেঞ্জকে সে প্রতিষ্ঠা করে। মানবজীবনের এই নিগুঢ়তম সত্যটিকেই আর্নস্ট হেমিংওয়ে তার দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী’ উপন্যাসে তুলে ধরতে চেয়েছেন বুড়ো সান্তিয়াগাে একজন জেলে। 

    বুড়ো সান্তিয়াগো ও একটি মাছ

    একটা বিরাট আকৃতির মালিন মাছ ধরেছে সে। সমুদ্রের পানি থেকে তাকে টেনে তােলা সহজ কথা নয়। তিন দিন ধরে সংগ্রাম চলল। এই তিন দিনের কথাই উপন্যাসের আখ্যানভাগ। বৃদ্ধ হলেও, সান্তিয়াগাে চরিত্রে শক্তির বিকাশ আছে এবং শক্তি দিয়েই শেষ পর্যন্ত মাছটাকে পরাজিত করেছে সে।

    তবে এখানে একটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে হেমিংওয়ে সান্তিয়াগাে চরিত্রে মানুষের দৈহিক শক্তির গর্ব প্রকাশ করেননি। তিন দিন ক্রমাগত মাছটার সঙ্গে সংগ্রাম করে জেলে মাছটাকে ভালবেসে ফেলেছে। ওই মালিন মাছ প্রকৃতি ও প্রাণিজগতের সবকিছু মহত্ত্ব ও সৌন্দর্যের প্রতীক। সান্তিয়াগো ওর ভেতর দিয়ে প্রকৃতি ও পশুপাখির সঙ্গে একটা অখণ্ড যোগসূত্র অনুভব করেছে। ভালবেসেছে বলেই মাছটাকে মেরেছে সে। কারণ, কাউকে যদি ভালবাসা যায়, তাকে মারলে পাপ হয় না।' 

    মৃত্যু ভালবাসার সম্পর্ককে করতে পারে চিরস্থায়ী । হেমিংওয়ের মৃত্যু এখানে ভয়াল চেহারা নিয়ে দেখা দেয়নি- মৃত্যু এখানে বিশ্ব-প্রকৃতির সাথে ঐক্যানুভূতির সেতুবন্ধ।

    মাছটার সঙ্গে লড়াই করে বৃদ্ধ জেলে একবারও হতাশ হয়ে পড়েনি। কিন্তু মানুষের জন্ম তত হার স্বীকারের জন্য নয়। মানুষ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে কিন্তু কখনাে পরাজিত হয় না, আশা হারিয়ে ফেলা বোকামিও। ভাবল তাছাড়া আমার বিশ্বাস এটা একটা পাপ।

    কিশাের ম্যানােলিন এই উপন্যাসের একটি প্রতীকী চরিত্র। একদিকে, সান্তিয়াগাের নিঃসঙ্গ সংগ্রামের শুরু এবং শেষ পর্যায়ে সে মানবসুলভ সহানুভূতির মডেল। মানুষ এবং জেলে হিসেবে সান্তিয়াগের প্রতি ওর শ্রদ্ধাবােধ থেকে সান্তিয়াগাের শক্তি ও ক্ষমতা সম্বন্ধে আমাদের মনেও একধরনের প্রসন্ন আশাবাদ জারিত হয়। 

    অন্যদিকে, এবং এটিই প্রধান ও ব্যাপক, ম্যানোলিন চরিত্রের মধ্য দিয়ে সান্তিয়াগাের অতীতে প্রত্যাবর্তন এবং তার সােনালি গৌরবােজ্জ্বল অতীতকে পুনরাবিষ্কারের দুরূহ-জটিল কাজটিকে সম্পন্ন করেছেন হেমিংওয়ে। অর্থাৎ, একজন মানুষের অতীত ও বর্তমানের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করইে এই চরিত্রটি। কিশাের ম্যানেলিনের মাঝে সান্তিয়াগে নিজের হারান যৌবনকে আবিষ্কার করে যখন তার সমস্ত ক্ষমতা তার অধিগত ছিল, অথচ যখন জীবনের শ্রেষ্ঠতম পুরস্কারটি পায়নি সে-অপেক্ষা করতে হয়েছে ভবিষ্যতের জন্যে।

    সান্তিয়াগাে বারবার বলেছে, ছেলেটা যদি আজ থাকত এখানে, ছেলেটাকে যদি আজ পেতাম সঙ্গে। আর এভাবেই বিরাটকায় মালিন মাছটার সঙ্গে লড়াই করার মানসিক শক্তি পেয়েছে সে। ছোট্ট সহজ একটি শব্দ ‘ছেলেটা'—কিন্তু এর মধ্য দিয়েই নিজের চরম প্রয়ােজনে তার হৃতযৌবনকে সে নিজের মাঝে নতুন করে উপলব্ধি করেছে।
    সিংহের অনুষঙ্গ উপন্যাসে ফিরে ফিরে এসেছে। তােমার বয়সে, ম্যানেলিনকে সান্তিয়াগাে বলেছে, আমি আফ্রিকাগামী একটা বড় জাহাজের মাস্তুলে বসে থাকতাম। সন্ধ্যার আলো অন্ধকারে সৈকতে সিংহদের খেলা করতে দেখেছি। এই সিংহগুলাে এক অর্থে সান্তিয়াগোর জীবনে শুশ্রুষার বিশল্যকরণী।

    বায়বীয় এদের স্বপ্ন দেখেছে সে। সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে বিড়াল ছানার মত খেলা করে, ওরা, হেমিংওয়ে লিখেছেন, এবং সে ওদের ভালবাসে যেমন বাসে ছেলেটাকে। সান্তিয়াগাের অবচেতনায় দুরবর্তী সিংহশাবকের স্মৃতি কিশাের ম্যানেলিনের অপেক্ষাকৃত সাম্প্রত ইমেজের সঙ্গে মিলিত এবং দ্রবীভূত হয়ে গেছে। ওদের একীভুত শক্তির ক্ষমতা এত ব্যাপক যে সান্তিয়াগের এই বৃদ্ধ বয়সে, তার যন্ত্রণা এবং সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে বিজয়ের মুহূর্তে, ওরাই এখন তার অবলম্বন—তার শক্তির আধার। 

    এই উপন্যাসের আর একটি লক্ষণীয় দিক এতে সর্বনাম পদের ব্যবহার। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সান্তিয়াগাে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে তাকে সম্বােধন করা হয়েছে ‘বুড়ো, সে, এবং ‘লােকটা'—এই তিনটি সর্বনামে। এই রীতি আসলে এ উপন্যাসের মর্মবাণীর সম্পূরক। একজন মানুষের যন্ত্রণা ও সাফল্যের চিত্রকল্পের মধ্য দিয়ে বিশ্ববেদনায় একাকার হতে চেয়েছেন হেমিংওয়ে। এবং সেজন্যেই সর্বনাম পদের ব্যবহার, যেন উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের মাঝে নিজেকেই এবিষ্কার করতে পারে একজন পাঠক।

    সমুদ্র এখানে একটি রূপক। বস্তুত আমাদের জীবনটাও একধরনের সমুদ্রই, কখনও উত্তাল তরঙ্গবিক্ষুব্ধ কখনও শান্ত সমাহিত ; আর সেই সমুদ্রের মূল স্রোতধারা ধরে, বিধিলিপিকে মেনে নিয়ে, উজান বা ভাটিতে, আমরা এগিয়ে যাই যেকোন চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে --দুবৃত্ত হাঙরের হামলা থেকে আমাদের জীবনের সেরা সম্পদকে রক্ষা করবার জন্য।

    বাংলাভাষায় ‘দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী’র অনুবাদ নতুন নয়। পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, বাংলাদেশেও ইতােপূর্বে এর অনুবাদ হয়েছে। শ্রদ্ধেয় ফতেহ লোহানীর সেই আশ্চর্য-অনবদ্য অনুবাদটি আমাকে এই প্রজন্মে ‘দি ওল্ড ম্যান অ্যাণ্ড দ্য সী’র অনুবাদে দুঃসাহসী হতে প্রেরণা জুগিয়েছে। এখানে এই সুযোগে ফতেহ লােহানীর কথা স্মরণ করছি-তাঁর কাছে আমার ঋণ স্বীকারের জন্য।


    Book Name Publisher Author  F Size
    The Old Man And The Sea pdf Bangla সৃজনী রওশন জামিল ৫ মেগাবাইট
    Bookshop Price Language  T Page
    Durdin Magazine Only 138 Taka Bangla 96

    Read More: ইসসা ভ্যালি Pdf

    বুড়োর সমুদ্র যাত্রা

    বুড়ো মানুষ, ডিঙিতে চেপে গালফ স্ট্রীমে একাকী মাছ ধরে বেড়ায়। আজ চুরাশি দিন একটিও মাছ পায়নি ও। প্রথম চল্লিশ দিন একটা ছেলে ছিল ওর সঙ্গে। কিন্তু চল্লিশ দিন পরেও যখন কোন মাছ উঠল না, ছেলেটার বাবা মা ওকে বলল বুড়াে এখন নির্ধাত সালাও, অর্থাৎ চরম অপম্বা হয়ে গেছে। ওদের নির্দেশে অন্য নৌকায় চলে গেছে ছেলেটা এবং পয়লা হপ্তায়ই বড় বড় তিনটে মাছ ধরেছে ওরা। রােজ রোজ বুড়ােকে শূন্য ডিঙি নিয়ে ফিরতে দেখে খারাপ হয়ে যায় ছেলেটার মন। বুড়াে এলেই ও দৌড়ে চলে যায় কাছে, মাছধরা দড়ি বা কোচের বােঝ, হারপুন আর নয়ত মাস্তুলে গোটান পাল বয়ে আনতে সাহায্য করে। পালে ময়দার বস্তার অসংখ্য তাল্টি গোটান অবস্থায় দেখে মনে হয় যেন স্থায়ী পরাজয়ের ধ্বজাটি।

    বুড়াের চেহারা রুগ্ন, ক্লিষ্ট। অসংখ্য বলিরেখা নেমে গেছে ঘাড়ের নিচে। ওর গালে রোদ পােড়া ক্রান্তীয় সমুদ্রের প্রতিফলনে হিতৈষী ক্যান্সারের বাদামি ফুসকুড়ি মুখের অনেকদুর অবধি নেমে গেছে ওগুলাে। হাত দুটো ক্ষতবিক্ষত, বড়শির দড়িতে ভারি মাই টেনে তুলার ফল। তবে ওগুলার কোনটিই তাজা নয়—মাছহীন মরুভূমির ক্ষয়ের মতই প্রাচীন।।

    ওর সবকিছুতেই কেমন যেন প্রাচীনত্বের ছোঁয়া। শুধু চোখ দুটোই যা ব্যতিক্রম, সেখানে সাগরের নীল ; জ্বলজ্বলে ও অপরাজেয় ।

    ‘সান্তিয়াগাে, ডিঙি বেঁধে নদীর পাড়ে উঠতে উঠতে ছেলেটা বলল, আবার তোমার সঙ্গে বেরােতে পারব আমি। মাছ বেচে আমাদের কিছু আয় হয়েছে । | বুড়ােই মাছ ধরা শিখিয়েছে ছেলেটিকে, তাই ছেলেটা ওকে ভালবাসে। ‘না, বলল বুড়ো। তুমি একটা পয়মন্ত নৌকায় আছ ওদের সঙ্গেই থাক।

    ‘তােমার মনে নেই, সে-বার সাতশি দিন একটিও মাছ পাওনি তুমি। তার পর আমরা তিন হপ্তা রোজ বড় বড় মাছ পেয়েছিলাম।'

    ‘আছে, বলল বুড়াে।‘জানি তুমি হতাশ হওনি বলেই ছেড়ে . যাওনি আমাকে।'

    ‘বাবা আমাকে যেতে বাধ্য করেছে। আমি ছোটমানুষ, তার কথা আমার শোনা উচিত।

    ‘জানি, বলল বুড়ো। সেটাই স্বাভাবিক। “বিশ্বাস জিনিসটা বাবার মধ্যে নেই। তাই,' বলল বুড়ো। কিন্তু আমাদের মধ্যে আছে। 


    Tags

    Post a Comment

    0Comments
    * Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
    Post a Comment (0)

    #buttons=(Accept !) #days=(20)

    Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
    Accept !