স্বপ্নসখা Pdf by Victoria Holt

0

    ভিক্টোরিয়া হোল্ট এর লেখা স্বপ্নসখা বইটি বাংলা অনুবাদ করেছেন মাসুদ মাহমুদ। সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই বইটির হার্ডকপি পাওয়া যাবে দুর্দিন ম্যাগাজিন ফেসবুক পেইজে।

    রুপকথার অরণ্যে স্বপ্নসখা

    সাতাশটি বসন্ত পেরিয়ে এসেছি, এখন আর আমি সেই হাটাঁ না পারা মেয়েটি নই। এমনকি আজকাল বিশ্বাসও করতে ভাবনা এক করেছি, হয়তাে সত্যিই অমন কোন ঘটনা আমার জীবনে ঘটেনি। 

    গভীর রাতে এখনও আমি জেগে উঠি, মনে হয়, দূর থেকে কে যেন আমাকে ডাকছে—আমার সন্তান! 

    আমি কি সত্যিই মানসিক অসুস্থতায় ভুগছি? একটা দুইটা ঘটনাকে ভােলার জন্যে আমি কল্পনার জগতে বাস করি? 

    ওরা তাে তাই বলে! আমার চারদিকে আমি গড়ে তুলেছি কল্পনার জগৎ: কিন্তু তাই কি কখনো হতে পারে? 

    এখনও আমি সেই দিনগুলাের প্রতিটি খুঁটিনাটি ঘটনা মনে করতে পারি, সিন্টার মারিয়া, সবচেয়ে কোমল হৃদয়। সবসময় আমাকে বলতেন, ‘হেলেনা, একটু ধীরস্থির হতে শেখাে। এত চঞ্চলতা মেয়েদের মানায় না।’

    সিস্টার গার্ডান, কুটিলতায় ভরপুর যার মন, বলতেন, একদিন, এই চঞ্চলতাই তােমার সর্বনাশ ডেকে আনবে।'

    চোদ্দ বছর বয়সে আমার মা আমাকে জার্মানির বিখ্যাত কলেজ ডেমেনস্টিফটে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন লেখাপড়া করার জন্যে। 

    একটানা চার বছর ছিলাম ওখানে। এই চার বছরে একবার মাত্র ইংল্যান্ডে এসেছিলাম, যখন আমার মা মারা যান। 

    বাবার দেখাশোনার জন্যে আমার দুই ফুফু এসে হাজির হলেন, যাদের আমি একটুও পছন্দ করতাম না, কারণ মায়ের সঙ্গে তাঁদের কোন মিলই খুঁজে পেতাম না। 

    দুজনের মধ্যে কারােলিন ফুফুই ছিলেন বেশি বাজে। অন্য সবার দুর্বলতাই ছিল তার একমাত্র আনন্দের খােরাক। 

    আমরা থাকতাম অক্সফোর্ডে। একসময় আমার বাবা ছিলেন এখানকার ছাত্র। 
    দাদা-দাদীর একমাত্র পুত্র, জার্মানিতে বেড়াতে গিয়ে মনােরম এক বিকেলে প্রেমে পড়নে নীলনয়না এক সুন্দরীর। 

    ছোটখাট এক রাজ্যের রাজকুমারী ছিলেন আমার মা। বিয়েটাও হয়ে গেল খুব তাড়াতাড়ি। তারপরে শুরু হলাে তাদের দুর্গতি। 

    আমার নানা মেয়েকে মেনে নেন নি বেকার যুবককে বিয়ে কর অপরাধে। আর বাবা ছিলেন খুব ভাল , শিক্ষকেরা অনেক আশা করতেন তাকে নিয়ে। 

    কিন্তু হঠাৎ বিয়ে করায় আলাদা করে দিলেন আমার দাদা। ফলে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়লেন বাবা। এক বইয়ের দোকানে চাকুরি নিলেন, ওপরে দুটো ঘর পেলেন তার জন্যে। খুব একটা সচ্ছল না।

    তবুও সুখের কোন কমতি ছিল না তাদের সংসারে। মা মারা যাবার আগে পর্যন্ত এত সুখী ছিলেন তারা। দোকানের মালিক টমাস কাকাই ছিলেন তাদের একমাত্র শুভাকাঙ্ক্ষী। 

    এমনকি মারা যাবার সময় দোকানটা তিনি বাবাকে লিখে দিয়েছিলেন-থাকার জায়গাটা সহ। তখন আমার বয়স বার। 

    বাবা ছিলেন সত্যিকারের জ্ঞানী। আমাদের ঘরে প্রায়ই জ্ঞানী-গুণী লােকের পায়ের ধুলো পড়ত, এখনও সেসব কথা মনে পড়ে আমার। 

    নানী প্রায়ই আসতেন। মা তাদের নাম দিয়েছিলেন গ্রে হাউণ্ড'। কাকার ঘরে ঢুকেই নাকি তার চারদিক ঘুরতেন কানমলার খোঁজে। প্রথম যেদিন তারে দেখি, সেদিন এ আশাহত হয়েছিলাম। যে হাউন্ড কুকুর কোথায়! এ যে দুই বুড়ি। 

    আমার কান্না থামাতে মা-কে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। আমায় ছেলে বেলাটা ছিল সত্যিই খুব সুন্দর। বাবার হাত ধরে নদীর তীর দিয়ে হেঁটে যেতাম বহুদূর। কত গানই না শােনাতেন তিনি। 

    রােমান আর গ্রীকদের ইতিহাস, অক্সফোর্ডের ইতিহাস, আরও কত কি। মাঝে মাঝে আমরা তিনজন পিকনিকে যেতাম। ঘুরে বেড়াতাম টম টাওয়ার আর ক্যাথেড্রালের প্রাঙ্গণে।

    মাকে খুব ভালবাসতেন বাবা! প্রিন্সেস হলেও এতটুকু গর্ব ছিল না মার মনে। জার্মানির কাহিনি শুনতাম তার কাছে। 

    যে দূর্গে তার শৈশব কেটেছিল তার গল্প শুনতে শুনতে আমিও চলে যেতাম সেই অপূর্ব রূপকথার রাজ্যে। আমি যেন চোখের সামনে দেখতে পেতাম, আমার মা ছােট্ট একটা মেয়ে হয়ে বেণী দুলিয়ে ক্রিসমাসের অনুষ্ঠানে এসেছে দুর্গের অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। 

    আমি অবাক হয়ে ভাবতাম, উনি চমৎকার একটা জীবন ছেড়ে কেমন করে এতদূরে এই অক্সফোর্ডে চলে এসেছিলেন। এমনকি একদিন জিজ্ঞেসও করেছিলাম। 

    জবাবে বাবা মায়ের মুখে যে মধুর হাসি ফুটে উঠেছিল, তাতেই আমি বুঝেছিলাম বাবার প্ৰতি তাঁর প্রেম কতটা গভীর। 

    তাদের ভালবাসার ব্যাপারটা জানতাম বলেই হয়তাে এত আমি ভালবাসতে পেরেছিলাম। যদিও আমার বেলায় ঘটনাটা ঘটে একেবারে অন্যরকম।

    একরকম গান গেয়ে আমাকে ঘুম পাড়াতেন মা। ব্লাক ফরেস্টের গল্প শুনতে ভালবাসতাম। 

    সেই গরীব কাইরে, এক মায়াবিনীর অনুরোধে কপাল ফিরে গেল তার। অথবা সেই ভগবান ওনি, হাতুড়িতে সদাজাগ্রত, সে যে নামে সাতদিনের একটা দিনের নাম রাখা হয়েছে ফাইছে, পরিবেশ এখনও আমাকে যথেষ্ট আলােড়িত করে।

    মার কাছে থেকে ভাল জার্মান বলতে শিখেছিলাম। তিনি সবসময় চাইতেন আমি যেন ডেমেনস্ট্রিটে যাই। 

    পাইনবনে ঢাকা পাহাড়, যেমনটি তুই ভালবাসিস। এখানকার আলাে-হাওয়ায় স্বাস্থ্য ভাল হয়ে উঠবে খুব তাড়াতাড়ি। 

    গ্রীষ্মের সকালে সবুজ মাঠে বসে পাবি গরুর খাঁটি দুধ আর সাদা রুটি। ওখানকার মানুষও খুব ভাল। 

    তারা তােকে শেখাবেন কিভাবে জীবনে সুখী হতে হয়, ঠিক যে ধরনের জীবন তােকে আমি দিতে চাই।
    মায়ের ইচ্ছেই ছিল বাবার ইচ্ছে। 

    তাই আমি একদিন ডেমেনস্টিফটে পৌছে গেলাম। বাড়ির জন্যে মন কেমন-করা ভাবটা কেটে যেতে কয়েকদিন লাগল, তারপর আমি ভালবেসে ফেললাম জায়গাটা। 

    ওখানকার এত গল্প মায়ের কাছে শুনেছি যে সবকিছু মনে হলাে বহুদিনের চেনা। ছােটবেলা থেকে মা আমাকে সবধরনের শিক্ষা দিয়েছিলেন, ফলে খুব সহজেই কনভেন্টের পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলাম। 

    ছাত্রীরা সবাই এসেছে ইউরােপের বিভিন্ন দেশ থেকে, আমি সহ দুজন ইংরেজ, এক ডজনের কিছু বেশি ফরাসী, আর সবাই জার্মানির বাজলাে থেকে। 
    ফরাসী ভাষাটাও বেশ সড়গড় হয়ে গেল আমার। মেয়েরাও ছিল খুব ভাল। কনভেন্টের কঠোর নিয়ম-কানুনের মধ্যেও দুটো হুর আনন্দেই কাটিয়ে দিলাম আমরা। 

    ক্রিসমাসের ছুটিতে বাড়ি যেতে পারলাম না দূর আর আর্থিক দৈন্যের কারণে। তবে সেজন্যে কখনও মন খারাপ করিনি আমি।

    সাতজন সঙ্গী ছিল আমার, যারা আমারই মত বাড়ি যেতে পারত না। আমরা ফার গাছ দিয়ে রুম সাজাতাম, সুর করে গান গাইতাম আর ইটারের সময় সুন্দর করে সাজাতাম চ্যাপেলটাকে।

    এ জীবটাতে দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম আমি। প্রায় ভুলে যেতে বসেছিলাম অক্সফোর্ডে টাওয়ারওশােকে। 

    এমনি এক সকালে খবর পেলাম, মা অসুস্থ, আমাকে যেতে হবে। ভাগ্যিস, সময়টা ছিল গ্রীষ্ম, বাবার বন্ধু মিস্টার গেইল সীক ইউরোপ ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। 

    তারাই আমাকে সঙ্গে করে বাড়ি পৌছে দিলেন। ঠিক তার আগের দিন মা মারা গেছেন।
    আমার জীবনের প্রথম আঘাত ছিল এটা। 

    বাবাকে দেখে মনে হলাে, দশ বছর বয়স বেড়ে গেছে তার। ঘরদোরে জাঁকিয়ে বসেছেন ফুফিরা। 

    তাদের আফসােস ওখানে চমৎকার বাড়ি ছেড়ে ভাইয়ের মায়ায় শহরে আসতে হয়েছে বলে। তখন আমার বয়স ষােলাে বছর। 

    নিজের বাড়ি, নিজের দেশ ছেড়ে বিজাতীয় ভাষা শিখবার জন্যে জার্মানিতে যাওয়ায় বাঁধা দিতে চাইলো তারা। কি হবে ওসব শিখে। 

    তবুও বাবা আমাকে আবার পাঠালেন ডেমেনস্টিফটে। কেটে গেল আরও প্রায় দু'টি বছর। 
    আঠারাে বছরেই তখন আমার ঘটে গেল সেই দুর্ঘটনা, যা আমার সারা জীবনটাকে পাল্টে দিল। তবে সেজন্যে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দোষ দিতে পারি না আমি।

    সিস্টারদের মধ্যে সিস্টার মারিয়া ছিলেন সবচেয়ে ভালমানুষ। ঠিক মায়ের মত মনে হত তাকে। অন্য সবার চেয়ে আমাকে বেশি বুঝতেন তিনি। 

    আমি ছিলাম অনেক আবেগপ্রবণ, চঞ্চল, তিনি বিশ্বাস করতেন, আমি যে পাপগুলাে করতাম, তা আর হবে না। মাদার সুপিরিয়রের কাছে আমার হয়ে প্রায়ই দেনদরবার করতেন তিনি।

    আমাদের এক সিস্টার শাকিয়া ঘােষণা করলেন, পিকনিকে নিয়ে যাবেন তিনি মেয়েদের। একটা ঘোড়ায় টানা গাড়িতেই হয়ে যাবে সবার। 

    আমাকে বেছে নিলেন তিনি অন্য এগারজন ভাগ্যবতী মেয়ের সঙ্গে। সে বিকেলেই ঘটল আমার জীবনের সেই ঘৃণিত দূর্ঘটনা। 

    তারপর পরের কাহিনি জানতে পুরো বইটি পিডিএফ আকারে পড়ুন।



    স্বপ্নসখা Pdf

    স্বপ্নসখা Pdf


    Book Publisher Author  F Size
    স্বপ্নসখা সেবা প্রকাশনী ভিক্টোরিয়া হোল্ট ৩ মেগাবাইট
    Bookshop Price Language  T Page
    Durdin Magazine Only 80 Taka Bangla 142

    Read More: The Old Man and The Sea PDF Bangla

    ভিক্টোরিয়া হোল্ট এর অন্যান্য বাংলা অনুবাদ পড়তে ভিজিট করুন বই নিবো পিডিএফ রিভিউজ।

    Tags

    Post a Comment

    0Comments
    * Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
    Post a Comment (0)

    #buttons=(Accept !) #days=(20)

    Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
    Accept !