তাও তে চিং হল সহজ পথের নিশানা। লাউৎস এর জীবনবাদও বলা হয়। এটি এমন এক সততার খোঁজ, যা ইশ্বরের চেয়েও পুরনো।
তাও তে চিং বই
তাও তে চিং কি
সরকার আমিনের কবিতা
তাও তে চিং pdf
Book | Publisher | Author | F Size |
---|---|---|---|
তাও তে চিং | বাংলা একাডেমি | লাউৎস, সরকার আমিন | ৫ মেগাবাইট |
Bookshop | Price | Language | T Page |
Durdin Magazine | Only 170 Taka | Bangla | 95 |
Read More: দি প্রফেট PDF : খলিল জিবরানের কবিতা
Taw te ching bangla pdf by Sarkar Amin
অনুবাদক সরকার আমিনের কথা
প্রাচীন চীনের দার্শনিক লাও ৎস রচিত ক্লাসিক গ্রন্থ তাও তে চিং-এর স্টিফেন মিশেলকৃত ইংরেজি অনুবাদ গ্রন্থটি আমাকে উপহার দেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী কবি দেলােয়ার হােসেন মঞ্জু।
বইটি পড়তে গিয়ে, ইলেকট্রিকের তারে ভেজা হাত পড়লে যে অবস্থা হয়-আমারও হয় সে দশা। এটি গ্রাস করে ফেলে আমাকে। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি—যে কাজ জীবনে করিনি—অর্থাৎ অনুবাদ—শুরু করব।
মনে হলাে লাওৎস আমাতে ভর করেছেন । বন্ধু মুজিব ইরম উৎসাহ দেন। বন্ধুবড়ভাই সাদ কামালী প্ররােচনা দেন। কানাডা থেকে সাদী ভাই পাঠালেন ডায়ান ড্রেহার প্রণীত দা তাও অফ ইনার পিস। পড়লাম । শুরু করলাম ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি। পেয়ে গেলাম বেশ কটা ওয়েব সাইট। কিন্তু বিপদে পড়লাম একেক জনের একেক ধরনের অনুবাদ দেখে।
হঠাৎ প্রশ্ন জাগল, আচ্ছা বইটির কি কোনাে বঙ্গানুবাদ বের হয়নি? বাংলা একাডেমী লাইব্রেরি চষে ফেল্লাম। পাই না পাই না। হঠাৎ পেয়ে গেলাম তাও তে-চিং : লাও-ৎস কথিত জীবনবাদ ১৯৬০ সালে নিউ দিল্লি সাহিত্য অকাদেমী প্রকাশিত অমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের গ্রন্থটিকে।
জ্বর থামল ঘাম দিয়ে; লাও ৎস-এর বাংলা হয়ে গেছে, তবে আমার আর অনুবাদ করার দরকার কী? কিন্তু 'আবিষ্কৃত এই বই আমাকে যথেষ্ট অবাক করল। ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া 'তাও' অনুবাদ, স্টিফেন মিশেল-এর অনুবাদ আর অমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুবাদে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি।
বেশ বিভ্রান্ত হলাম। অমিতেন্দ্রনাথও বিভ্রান্ত হয়েছিলেন আমারই মতাে। তার বক্তব্য : “তাও-তেচিং-এর অনুবাদের শুরু করার আগে আমার জানা ছিল না যে নানান পণ্ডিত এই সূত্রগুলির নানা রকম ভাষ্য দিয়েছেন।
এমনকি কোনখানে কি শব্দ লেখা ছিল, আজ কি লেখা আছে, আর কি শব্দ লেখা উচিত এ নিয়েও তর্কের শেষ নেই।”
অনুবাদের রকমফের সম্পর্কে পাঠকদের একটু ধারণা দেবার জন্য তাও তে চিং-এর প্রথম অধ্যায়টির তিনটি অনূদিত টেক্সট তুলে ধরছি:
স্টিফেন মিশেল এর অনুবাদ
The tao that can be told is not the eternal Tao. The name that can be named is not the eternal Name. The unnameable is the eternally real. Naming is the origin of all particular things.
Free from desire, you realise the mystery. Caught in desire, you see only the manifestations. Yet mystery and manifestations arise from the same source. This source is called darkness.
Darkness within darkness. The gateway to all understanding.
অমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়-১৩১৭ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসে ‘প্রবাসী' পত্রিকায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাও-তে-চিং-এর আংশিক বাংলা অনুবাদ করেছিলেন।
সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুবাদটি দেখতে পাইনি তবু মনে হলাে শৈল্পিক গুণের দিক থেকে মিশেল-এর ইংরেজি অনুবাদই সেরা। আমাকে থামলে হবে না অনুবাদ করতেই হবে, মনে মনে ভাবলাম।
অনন্তর, অনুবাদের কাজ শুরু করলাম।
তাও দর্শন পাঠ করলে সহজেই কতগুলাে প্রশ্ন মনে উদিত হয়। তাহলে কি তাও জীবন-বিরােধী? নিশ্চলতা তৈরি করাই কি তাও দর্শনের কাজ?
তাও কি একটি উদ্যোগহীন, প্রজ্ঞাহীন, অভিলাষহীন, মৃত্যুগন্ধী জীবনবােধ?
প্রাথমিকভাবে তা মনে হতে পারে। কিন্তু গভীরভাবে, দার্শনিক চিত্ত দিয়ে বিবেচনা করলে মনে হবে লাও আসলে জীবনের পাশবিক উত্তেজনা থেকে মুক্ত হবার আহ্বান জানিয়েছেন, জীবন থেকে পলায়নের মন্ত্রণা দেননি।
লাও মানুষকে প্রতিযােগিতার উঁদুর দৌড় থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। প্রতিযােগিতার মদমগ্নতা মানুষকে উপহার দেয় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা, যার অনিবার্য উপসংহার মনােবিকলন।
আমার কাছে মনে হয়েছে...তাও এর লক্ষ্য নিরাসক্ত-আনন্দ, নিঃশর্ত-উত্তেজনা নয় ...তাও এর লক্ষ্য-শৈল্পিক নির্জনতা- অসৎ কোলাহল নয়।
একটি সতেজ, সহজ, প্রশান্ত, আনন্দদায়ক ও সজ্ঞাতাড়িত জীবনের জন্য যারা যথেষ্ট পরিমাণে লালায়িত তারাই কেবল তাও দর্শন থেকে লাভবান হবেন। প্রলুব্ধ নয়, তাও জীবনের দিকে উদ্বুদ্ধ করে, কারণ তাও তে চিং অবশ্যই মৃত মানুষের উদ্দেশে রচিত কোনাে গ্রন্থ নয় ।।
৬ষ্ট শতাব্দীতে আরব দেশে আবির্ভূত মহাপুরুষ ‘জ্ঞানার্জনের জন্য চীন দেশে যাও বলে কেন আহ্বান জানিয়েছিলেন এই বইটি না পড়লে বুঝতে পারতাম না।
বইটি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ভাষা ও সাহিত্য উপবিভাগের উপপরিচালক জনাব মােহাম্মদ মিজানুর রহমান; বাংলা একাডেমী প্রেসের ব্যবস্থাপক জনাব মােবারক হােসেন; ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও পত্রিকা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জনাব মােহাম্মদ আবদুল হাই আমাকে নিরন্তর উৎসাহ দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন।
এই উপবিভাগের কর্মকর্তা জনাব আফরােজা পারভীন গ্রন্থ প্রকাশের জন্য দরকারি দাপ্তরিক কাজে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন।
প্রফেসর আবু তাহের মজুমদার এবং নাট্যজন ও অনুবাদক খায়রুল আলম সবুজ। -এর কাছে আমি বিশেষভাবে ঋণী। অনুবাদগুলাে সর্বপ্রথম ‘দৈনিক সংবাদে ছাপা হয়েছিল কবি ওবায়েদ আকাশ-এর সৌজন্যে। এরপর ‘লেখাবিল’ ও ‘অগ্রবীজ' নামের দুটি লিটল ম্যাগাজিনও বেশকিছু অনুবাদ প্রকাশ করে।
বইটি প্রকাশের জন্য অনুমােদন দিয়েছেন আমার শিক্ষক বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মােহাম্মদ শাহেদ।
এঁদের সবাইকে আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা ও ভালােবাসা জানাচ্ছি।
সরকার আমিন বাংলা একাডেমী ১৫ই জানুয়ারি, ২০০৮ sarkeramin@yahoo.com.