আমরা পৃথিবীতে এমনভাবে জীবনধারণ করি যেন আমরা অমর, মৃত্যু মনে হয় আসবেই না। অথচ যে মুহূর্তটা এখন চলে গেল সেটা আর ফিরিয়ে আনা কখনােই সম্ভব নয়। এবং এই যে মৃত্যু এবং চলে যাওয়া এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ট্রাজিক সত্য। এটা ট্রাজিক সত্য কারণ এই সত্যটা সবাই জানলেও ভুলে থাকে বা ভুলে যায়।
সেনেকার মতে, তুমি এমনভাবে সময় অপচয় করাে যেন তােমার অফুরান যােগান আছে। কিন্তু ব্যাপারটা হলাে কোনদিন কাউকে যে সময়টা দিলে বা যে জন্য দিলে সেটা হয়তাে তােমার শেষ সময় । মরণশীল প্রাণির সব ভয় তােমাদের কিন্তু বাসনাগুলাে মৃত্যুহীনদের। যারা বিভিন্ন বেহুদা কাজে ব্যস্ত থাকে কিন্তু ভালাে কাজগুলাে, শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাগুলাে শেষ বয়সের জন্য ফেলে রাখে, যারা ৫০-৬০ এ অবসরে গিয়ে কিছু একটা করবে বলে চিন্তা করে তাদের ব্যাপক সমালােচনা করেছেন।
তিনি প্রশ্ন করেন কীভাবে তারা নিশ্চিত যে ৫০ বছর বা ৬০ বছর বেঁচে থাকবে? সেনেকার মতে, এমন মানুষদের লজ্জা পাওয়া উচিত। যারা তাদের জীবনের সেরা সময়টাতে ভালাে কাজ করতে পারেনি আর শেষ জীবনে এসে সব দেখিয়ে দেবে! এমনতর ভাবনা অহেতুক কল্পনা বিলাস নয় কি? সেনেকার কথা হচ্ছে যা কিছু করার আজই শুরু করতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য ফেলে রাখার দরকার নেই।
কীভাবে জীবন যাপন করতে হয় সেটা জানা অনেক সহজ আবার সারা জীবন চলে যেতে পারে সেটা আবিষ্কার করতে। এটা কি কেউ কাউকে শেখাতে পারে? জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অল্প বয়সে অনেকে উস্তাদ বনে যেতে পারলেও এখানে সেটি কঠিন ঠেকতে পারে।
জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া বা কীভাবে বাঁচতে হয় এটা শিখতে অনেক কষ্ট হয়, এমনকি জীবন ফুরিয়ে যাওয়ার আগে অনুধাবন হয় যে আসলে সেরকম বাঁচতেই পারলাম। অনেকে প্রচুর মানুষের উপর ক্ষমতাবান হওয়াকে জীবনের সফলতা মনে করে। এর একটা বড় গােলকধাধা হচ্ছে এই যে অনেকের কাছে পরিচিত হলেও দেখা যায় সে নিজের কাছে সবচেয়ে অপরিচিত। এজন্য অনেক খ্যাতিমান লোেক দিন শেষে খেয়াল করে ভড়কে যায় তার নিজের জন্যই তার সময় বরাদ্দ কত কম!
সেনেকার মতে- যারা তােমাকে তাদের দিকে ডেকে নেয় তারা আসলে তােমার কাছ থেকেই সরিয়ে নেয়।
সেনেকা তার বইয়ে সিসেরাের একটি চিঠির অংশবিশেষ উল্লেখ করে বলেন কীভাবে সিসেরাে নিজেকে অর্ধেক বন্দি’ (হাফ এ প্রিজনার) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বড় দায়িত্ব, বড় অবস্থান কিছু কিছু মানুষকে সেই বড় দায়িত্ব বা অবস্থানের হাতে বন্দি করে ফেলে।
অন্যকে সুখী করতে, অন্যের সামনে সুখী হিসেবে নিজেকে সবসময় তুলে ধরে রাখতে কত মানুষের জীবনের বড় অংশ চলে যায়। জীবনের যােগ বিয়ােগ শেষে দেখা যায় আর সবাইকে সুখি করতে পারলেও যাকে সুখী করা হয়নি সেটা হলাে নিজেকে।
পাবলিক লাইফের প্যাড়া এমনই! এজন্যই আমরা কত রাজা-বাদশা, ধনরাজ, জ্ঞানীমুনি-ঋষিকে দেখি অর্থ, সম্পদ, প্রাসাদ ছেড়ে জীবনের অর্থ খুঁজতে বের হয়ে পড়েন। তাদের মধ্য থেকেই বের হয়ে আসে গৌতম বুদ্ধ, মহাবীর, সক্রেতিস, রাহুল সাংকৃত্যায়ন, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেকার্ত বা লুডবিগ ভিৎগেনস্টেইন প্রমুখ মহামানব।
বেশিরভাগ মানুষের দিন কাটে অতীতের অনুশােচনা আর ভবিষ্যতের দুর্ভাবনা নিয়ে। কয়জন পারে আজকের দিনটাকেই শেষদিন মনে করে পূর্ণ করে বাঁচতে? আর অনেকের দিন কাটে ভবিষ্যতের ভালাে সময়ের অপেক্ষা করে। সেনেকার প্রশ্ন ভবিষ্যতের কাছে দাবি-দাওয়া বা ভবিষ্যতের ভয় ছাড়া বর্তমানে বাঁচতে পারে কয়জন?
মানুষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসকেই সবচেয়ে বেশি হেলা করে। আর সব ব্যাপারে কিপটে হলেও সময়ের ব্যাপারে আমরা বেশ উদার, তার কারণ এটা দেখা যায় না ।
অঁতােয়ান দ্য স্যান্ত একজুপেরির বিশ শতকের ক্লাসিক ক্ষুদে যুবরাজ’ (দি লিটল প্রিন্স) দেখি জীবনের সবচেয়ে বড় গােপন সূত্র হচ্ছে- মানুষ হৃদয় দিয়েই কেবল সত্যিকারে দেখতে পায়। যা প্রয়ােজনীয় তা চোখের অগােচরেই থাকে। সময়ের অপচয় সেনেকা মেনে নিতে পারেন না। অনেক তুচ্ছ বিষয়ে কােমরা বেশ সতর্ক হলেও এই মহামূল্যবান বিষয়টিতে বেহিসেবি।
সময়কে তুচ্ছ জ্বন করে যারা অপচয় করে, অহেতুক কাজ করে বেড়ায় তারাই আবার যখন গরীঅসুস্থতায় পরে বা মৃত্যুমুখে পতিত হয় তখন ডাক্তার-কবিরাজের হাঁটুর নিচে পড়ে থাকে যেন আরও কয়টা দিন বাঁচতে পারে । বা কাউকে যখন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তখন উকিল-মােক্তারদের পেছনে ভাই-বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনদের দৌড়াননা দেখলেইবুকা যায় একটি দিন কত বড় হতে পারে, কত মূল্যবান হতে পারে। আবার এ লোকটিই হয়তাে দিনের পর দিন, মূল্যবান দিন বেহুদা কাজে ক্ষয় করে গেছে, অল্পের জীর্ধন যাপন করে গেছে আর নিজের কাছে অচেনা থেকে কাটিয়েছে।
অনেক বছর বাঁচলেই কেবল বড় মানুষ হওয়া যায় না। সেনেকা বলেন- কারাে ধূসর চুল আর কুচকে যাওয়া চামড়া দেখে ভেবাে না সে অনেকদিন বেঁচেছে। সে বড়জোর অনেকদিন অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
আমার কাছে একটি ভালাে বই একটি ভালাে সফটওয়্যার। সফটওয়ার যেমন কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা স্মার্ট ফোনের কাজের প্রকৃতি পাল্টে দেয় তেমনি একটা ভালাে বইও মানুষের দেখার দৃষ্টি, ভাবনার পদ্ধতি পাল্টে দেয় । তাই আমার মতে বই মানুষের জন্য সেরা সফটওয়ার । আর একেকটা সেরা বই পড়া হচ্ছে একেকটা সফটওয়্যার ইন্সটল করা; তার মানে জগৎকে একেকবার একেকটি দৃষ্টিতে দেখার সক্ষমতা অর্জন করা।
সেনেকার
অন দ্য শর্টনেস অব লাইফ আমার কাছে তেমন একটি বই । যখন মনে হয় অহেতুক সময় অপচয় করছি, যখন মনে হয় আমি আমার নিজের কাছে কমিটমেন্টের সাথে প্রতারণা করছি, আমার মনের গহিন কোণে হতাশার চাষবাস করছি তখনই এমন কিছু সফটওয়ারের সাহায্য নিই। এগুলাে ইনস্টল করার মাধ্যমে আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করি।
আমি বইটি পড়ে নিজে উপকৃত হয়েছি। সময় ও নিজের জীবনের মূল্য নিয়ে সচেতন হয়েছি । নিজের স্বপ্ন ও আকাক্ষার উপর আত্মবিশ্বাস মজবুত করেছি। সেনেকার মূল বয়ানটার সঙ্গে একেবারে পুরােপুরি ঐকমত্য পােষণ করে স্বীকার করি-জীবন ছােট নয়, যদি সেটাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানাে যায়।
একই সঙ্গে বিশ্বসেরা বিজ্ঞানী থমাস আলভা এডিসনের কথা এ জায়গায় স্মর্তব্য: আপনি কী করতে পারেন না সেটি নয় বরং আপনি যা করতে সক্ষম তা-ই যদি ঠিকঠাকভাবে করতে পারেন তাহলে আপনি নিজেই নিজেকে বিস্মিত করবেন।
ভূমিকা পর্ব শেষের আগে আমাকে এটা স্বীকার করতে হবে আমাদের কোনাে কাজই স্রেফ একা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। বিশাল এই মানবসমাজের অসংখ্য মানুষ কোনাে না কোনভাবে আমাদের কাজে ভূমিকা রাখে। আমার এই অনুবাদ কাজেও অনেকে ছােট বড় ভূমিকা পালন করেছেন। সবার নাম নেয়া সম্ভব নয় কিন্তু তাঁদের কয়েকজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা না জানালে শান্তি পাব না।
প্রথমদিককার ড্রাফটগুলাে দেখিয়েছি ইসফানদিয়র আরিয়ন, সাগর বড়য়া, মিল্লাত মাফি, ইসরাত জাহান পপি, মােস্তাকিম লিমন, বাশার, রুহুল আমিন দীপু, সিনথিয়াসহ বেশ কয়েকজন বন্ধুকে। তাদের পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পরামর্শ কাজটিকে সমৃদ্ধ করেছে।
অনুবাদক সাবিদিন ইব্রাহিম এর কথা
আমার প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের অনেকগুলাে পরামর্শ আমাকে উপকৃত করেছ’দর্শনের দুনিয়ায় প্রবেশ করার ক্ষেত্রে যাদের বন্ধুত্ব ও সহযােগিতা আমাকে ঋদ্ধ করেছে তাদের মধ্যে হাবিব রহমান, মােঃ আলাউদ্দিন, তােরিফা নাজমিনা, তান্তি) আশরাফ, হােসেন শহীদ মজনু, ড. কাজল রশীদ শাহীন, আহমেদ দীন রুশি আরিফুর রহমান, রােকন, সাইফুলসহ সকল শ্রদ্ধাভাজন অগ্রজ ও প্রিয় বন্ধুদের প্রতিকেতজ্ঞতা জানিয়ে রাখলাম ।
আর যে কথাটা না বললেই নয় আমার সকল কর্মকাণ্ডের বড় অংশ জুড়ে থাকে বাংলাদেশ স্টাডি ফোরাম (বিডিএসএফ)।
যেনো বই নিয়ে কাজের সঙ্গে থাকে বিডিএসএফ এবং তার মেধাবী সভ্যরা ভঙ্গের অংশগ্রহণ, মতামত, সমালােচনা, পর্যবেক্ষণ আমাকে সমৃদ্ধ করে প্রতিনিয়ত। বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাসে সেনেকার এই বইটি নিয়ে লেকচার দিয়েছি। আলােচনায় অংশগ্রহণ করে অনেক বন্ধু আমাকে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করেছেন।
তাদের মধ্যে বিডিএসএফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু সাগর বড়য়া, মাহফুজ আবদুল্লাহ, আসিফ, সানজিদা বারী, স্মৃতি, রওনক জাহান, সানজিদা সের্জুতি, সাব্বির, মাসুদ রানা ও নুশরাত জাহানকে ধন্যবাদ । বিডিএসএফ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী বন্ধু ও সহযােদ্ধা হাফছা জাহান, এমদাদুল এইচ সরকার ও আরাফের প্রতি কৃতজ্ঞতা । তাদের আলােচনা ও পরামর্শ আমাকে সমৃদ্ধ করেছে।
কৃতজ্ঞতা জানাই আঁখি, মেহেরাব ইফতি, শ্রাবণ, সাইদুল, সুজন খানকে। এছাড়া বিডিএসএফ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার দিয়েও অনেক মতামত ও ইনপুট সংগ্রহ করেছি যা আমার কাজটিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। বিডিএসএফ, শেকৃবির দায়িত্বপরায়ণ দুই সহযােদ্ধা শিমুল চন্দ্র সরকার ও সাইফুল্লাহ ওমর নাসিফের মাধ্যমে শেকৃবি পরিবারের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালাম।
সেনেকা আদর্শ জীবন যাপনের পথ বাতলে দিতে গিয়ে যে জ্ঞান ও প্রজ্ঞাময় জীবনের ইশারা দিয়েছেন সে জীবনের পথে হাঁটার জন্য বইটির শেষভাগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই ও লেখক-দার্শনিকের কথা বলা হয়েছে। যাদেরকে পড়ে চিন্তাজগতের সাথে পরিচিত হওয়া যাবে এবং বিশ্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রাথমিক পরিচয় লাভ সম্ভব হবে বলে মনে করি । এছাড়া স্টোয়িক দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য যে কয়েকজন ব্যক্তি ও তাদের দর্শন গুরুত্বপূর্ণ তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেয়া হয়েছে। ইচ্ছে করলে নিজেরা আরাে বিস্তারিত পরিচয় লাভ করতে পারেন।
সবশেষে, বইটির প্রতিটি পাঠক যেন নিজের জীবনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় নির্ধারণ করতে পারে এবং সে পথে হাঁটতে পারে সেই প্রার্থনা রইল। সেনেকার কাছ থেকে এই শিক্ষা ও দীক্ষা নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে ছােট্ট এই জীবনেই সিঙ্কুলােকের সন্ধান পাক। এই শুভকামনা নিয়ে দুই হাজার বছর ধরে প্রভাব বিস্তার করে যাওয়া এই বইটিকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম। আপনাদের উপকারে আসলেই আমার পরিশ্রমের সার্থকতা।
অন দ্য শর্টনেস অব লাইফ সূচিপত্র
- সেনেকার পরিচয়/ ১৫
- অন দ্য শর্টনেস অব লাইফ/ ১৭
- সংক্ষেপে যা শিখলাম / ৪৪।
- স্টোয়িকবাদ কী ও সেনেকা পরবর্তী প্রভাবশালী স্টোয়িক কারা / ৪৬
- জীবন পাল্টে দেয়ার মতাে ২৫টি বই/ ৪৯
- পরিশিষ্ট/ ৭৩
সেনেকার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
রােমান দার্শনিক ও নাট্যকার লুকিউস আন্নাইউস সেনেকা খ্রি.পূ. ৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমান স্পেনের কর্ডোভাতে জন্মগ্রহণ করলেও খুব অল্প বয়সে পরিবারের সাথে রােমে চলে আসেন। তর্কশাস্ত্র ও আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেন। মায়ের প্রভাবে দর্শনের জগতে প্রবেশ করেন।
স্টোয়িকবাদের সাথে পরিচিত হন এবং শক্ত অনুসারী এবং প্রচারকে পরিণত হন। তিনি ছিলেন রােমান সম্রাট নীরুর গৃহশিক্ষক ও পরবর্তীতে উপদেষ্টা। রাজনীতির রেষারেষি থেকে দূরে থেকে দর্শনের জগতে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন নীরুর উপর। বড় হওয়ার সাথে সাথে নীরু তার শিক্ষক সেনেকার প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে যান সেটা সুস্পষ্ট। ম্রাট নীরুর মধ্যে দার্শনিকতা বা দার্শনিক রাজার গুণাবলি ছাড়া আর সব কিছুই ছিল। বলা যায় নেতিবাচক গুণগুলাের উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি ছিল।
খুব স্বাভাবিকভাবেই সেনেকার স্টোয়িক দর্শন তাকে তেমন আকৃষ্ট করেনি। রােমান সাম্রাজ্যে বিভিন্ন বড় পদে দায়িত্ব পালন করে সেনেকা অবসরে যান। তার জীবনের শেষ তিন বছর নিজের দর্শনকে গুছিয়ে শেষ করে যান । রােমান সম্রাট নীরুকে হত্যার লক্ষ্যে পিসােনিয়ান ষড়যন্ত্র হয় ৬৫ খ্রি.। সেই ব্যর্থ ষড়যন্ত্রে সেনেকার নামও চলে আসে। তবে বেশিরভাগ গবেষকদেরই মতামত সেনেকা এতে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু কী আর করা! রাজরােষের শিকার হলেন সেনেকা এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দিল তারই ছাত্র সম্রাট নীরু ।
আরেকটি সক্রেটেসীয় কাহিনির শুরু। সেনেকাকে নিজের জীবন নিজে নেওয়ার সুযােগ দেওয়া হলাে। সেনেকা তার রগগুলাে কেটে দিলেন যাতে রক্ত ফুরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মারা যেতে পারেন। বুড়াে বয়সের কারণে শিরাগুলাে দিয়ে হয়তাে রক্ত ধীরে ধীরে বের হচ্ছিল। এজন্য সক্রেতিসের মতাে বিষও পান করেছিলেন সেনেকা।
বিষটি দুর্বল হওয়ার কারণে সেটাও ধীরে ধীরে কাজ করছিল। অবশেষে দ্রুত মৃত্যুর জন্য উষ্ণ পানির টাবে নামেন যাতে শরীর থেকে দ্রুত রক্ত বের হয়ে যায়। আশপাশে ভক্ত ও শিষ্য পরিবেষ্টিত হয়ে সেনেকা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সময়টা ছিল ৬৫ খ্রিষ্টাব্দ। সেনেকার বেশিরভাগ নাটকই ট্রাজেডি।
বিখ্যাত নাটকগুলাে হচ্ছে:
- দ্য ম্যাডনেস অব হারকিউলিস,
- দ্য ট্রোজান ওইমেন,
- দ্য ফিনিসিয়ান ওইমেন,
- আগামেমনন,
- ঈদিপাস,
- মিদিয়া।
চিঠি ও প্রবন্ধ আকারে অনেকগুলাে গদ্য লিখেন যার প্রতিটিতেই জীবনের গভীর উপলব্ধি অর্জনের মসলা পাওয়া যাবে। পলিনাস নামে একজন রােমান রাজকর্মচারীকে উদ্দেশ্য করে ‘অন দ্য শর্টনেস অব লাইফ’ লিখেছিলেন। সময়টা ছিল ৪৯ খ্রিষ্টাব্দ। ল্যাটিন ভাষায় বইটির শিরােনাম ছিল De Brevitate Vite ।
অন দ্য শর্টনেস অব লাইফ pdf by সেনেকা
জীবন এত ছােট কেন নামে অনুবাদক সাবিদিন ইব্রাহিম তার বইয়ের মাধ্যমে দেখিয়েছেন অধিকাংশ মানুষকেই হরহামেশা এই অভিযােগ করতে দেখবে প্রকৃতি আমাদেরকে কত কম সময় দিয়েই না পাঠিয়েছে! এত কম সময় যে অল্প কতক ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশই তাে জীবনের প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই দুর্নিয়া থেকে চম্পট দেয়। এ অভিযােগটা যে শুধু আমজনতাই করে এমন বরং অনেক খ্যাতিমান মানুষও এটা নিয়ে বিলাপ তােলে।
এই সুরে সুর মিলিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ জীববিজ্ঞানীকে বলতে শুনি, ‘জীবন ছােট কিন্তু শিল্প দীর্ঘস্থায়ী। সেই ধারাবাহিকতায় অ্যারিস্টোটল যখন প্রাণিকুল নিয়ে গবেষণায় মজলেন তখন দেখলেন কিছু জীবজন্তু আছে যেগুলাে মানুষেরচয়ে পাঁচ কিংবা দশগুণ বেশি সময় বাঁচে। কিন্তু সেখানে মানুষের জন্য কতঅল্প সময় দেয়া হয়েছে যার পক্ষে অনেক বড় বড় কাজ করা সম্ভব।
আমরা অল্প সময় নিয়ে এসেছি ঐটা সঠিক নয় বরং আমরা আমাদের সময়ের বড় অংশই অপচয় করে ফেলি। যদি প্রাপ্ত সময়ের পুরােটাই সঠিক বিনিয়ােগ করি তাহলে এ জীবনেই অনেক বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব। যখন সে সময়কে হেলায় উড়িয়ে দিই, কোনাে উত্তম কাজে ব্যয় করি না, তখন সেটা কখন আমরা যতটুকু জীবন নিয়ে আসি সেটা ছােট নয়।
ইংরেজি বেশ কয়েকটি অনুবাদের সহায়তা নেয়া হয়েছে। বাংলা অনুবাদ করার ক্ষেত্রে
বিশেষ করে অনুসরণ করা হয়েছে জন ডব্লিউ ব্যাসুর, গ্যারেথ ডি উইলিয়ামস্ এবং পেঙ্গুইন বুকসের গ্রেট আইডিয়া সিরিজের সি.ডি.এন. কস্তার করা অনুবাদ। পলিনাস হচ্ছেন সেনেকার আত্মীয়। সম্ভবত তার স্ত্রীর পরিবারের সাথে সম্পর্কিত। রােমের শস্য বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তাকে উদ্দেশ্য করে মূলত এই প্রবন্ধটি লিখেন সেনেকা। ৩ চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপােক্রেটিসের বিখ্যাত বাণী।
বরং আমরাই এর অপব্যয় করে ছােট করে ফেলি । আমাদের সময় অল্প নয় বরং আমরা এর যথেষ্ট অপচয় করি। খারাপ মালিকের কাছে পড়লে অনেক বড় জমিদারের বিশাল জমিদারিও লাটে উঠে আবার অল্প সম্পত্তিও ভালাে মালিকের হাতে পড়লে ফুলে ফেঁপে উঠে। ঠিক এমনিভাবেই আমাদের জীবনও অনেক বড় হতে পারে যদি সেই জীবনকে সুশৃঙ্খল করে চালানাে যায়।
প্রকৃতি নিয়ে আমাদের এত অভিযােগ কেন? সে তাে আমাদের প্রতি বেশ দয়ার্দ্র । তুমি যদি সময়কে কাজে লাগাতে জানাে তাহলে জীবন অনেক দীর্ঘ। কিন্তু মানুষকে কী দেখাে? কেউ অপূরণীয় লােভ দ্বারা তাড়িত । কেউ অর্থহীন কাজ বেগার শ্রম দিয়ে করে যাচ্ছে। কেউ মদে বুদ হয়ে আছে । কেউ আলস্যের দরুন পঙ্গু হয়ে আছে।
কারাে উচ্চাকাঙ্ক্ষার ঠিকাদারি আরেকজনের কাছে। আর সওদাগর লােভের দাস হয়ে সাগর-ভূমি চষে বেড়াচ্ছে। আবার যুদ্ধের প্রতি প্রগাঢ় প্রেম রয়েছে কারাে কারাে। অন্যের ক্ষতি বা আত্মক্ষয় তাদের ব্যাপক ভালােবাসার বিষয়। আবার কেউ কেউ বড় লােকদের দাসত্ব করে জীবন পার করে দিচ্ছে। অধিকাংশ মানুষই অন্যের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বা নিজেদের নিয়ে অনুযােগ করে কাটাচ্ছে।
বেশিরভাগেরই স্থির কোনাে লক্ষ্য নেই । বেশ যেন অস্থির, কেবল এদিক ওদিক ঘুরছে, আর বেশ্যঅসন্তুষ্ট। কেউ নতুন নতুন পরিকল্পনা করেই কাটিয়ে দেয়। জীবনকে কোন দিকে চালাবে সে বিষয়ে অনেকেরই নিজস্ব কোনাে পরিকল্পনা নেই । কিন্তু তাদের এই আলস্য যাপন বা দিনরাত্রি কাটিয়ে দেওয়ার মাঝে তকদির তাৰ্থ শর্থ করে নেয়। এটাই একেবারে করুণ সত্য যেটাকে কবি অনেক সুন্দর উপস্থাপন করেছেন। তার সেই দৈববাণীর মতাে কথাটি হচ্ছে: ‘জীবনের যে অংশটা আমরা সত্যিকারের মতাে বাঁচি সেটা আসলে খুবই ছােট।
কেননা জীবনের বাকি অস্তিত্বটা ঠিক জীবন নয়, শুধু সময় মাত্র। | আমাদের আশপাশে বদগুণের সমাবেশ। সেগুলাে আমাদেরকে উঠতে দেয়
, উপরের দিকে দৃষ্টি তুলে সত্যকে দেখতে দেয় না। বরং তারা আমাদেরকে নিচে নামিয়ে আনে, আমাদেরকে পরাস্ত করে দেয়। আমরা লালসার দাস হয়ে যাই। এর শিকার হওয়া ব্যক্তিরা আর তাদের নিজের কাছে ফেরত আসতে পারে।
যদিও বা তারা কিছু সময়ের জন্য মুক্তি পায় কিন্তু ঝড় শেষ হলেও যেমন সাগরে কিছু ঢেউ অবশিষ্ট থাকে তেমনি তারাও পুরনাে বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকে। তারা তাদের লালসার সমুদ্রে টালমাটাল হয়ে পড়ে থাকে। তাদের কথা একটু ভেবে দেখেছ কি যেসব হতভাগারা তাদের দোষ স্বীকার করেছে?
তাদের দিকে তাকাও, সাধারণ মানুষ যাদের মতাে প্রতিপত্তি অর্জন করতে চায়। যাদের একটু সুদৃষ্টিতে পড়তে পারলে বর্তে যায়। কতজনের কাছে সম্পত্তি একটা বােঝা! আর কতজনের মুখের জজবা আর ক্ষমতার দাপটের কারণে নিত্য রক্তের বন্যা বইছে! ভােগ করতে করতে কতজন ফ্যাকাশে হয়ে গেল!
আর কতজনের কাছে খদ্দেরদের দীর্ঘ লাইন কতজনের ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে কেড়ে নিল!
এই যে বিভিন্ন তলার মানুষকে দেখছ তাদেরকে ভালাে করে খেয়াল করােকেউ একজন উকিল খুঁজছে, উকিল আবার মক্কেল খুঁজছে, কেউ আছে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে, কেউ তার পক্ষে কথা বলছে, কেউ তার বিচার করছে । নিজের উপরেই কারাে দখল নেই।
অন্যের জন্যই নিজের জীবন চলে যাচ্ছে বেশিরভাগের। যাদের নামে অনেক স্তুতি শােন তাদের দিকে খেয়াল করাে । দেখবে ‘ক’ যে ‘খ’কে স্তুতি করছে, আবার ‘খ’ যে ‘গ’ এর গান গাচ্ছে। নিজের উপরই কারাের দখল নেই। আবার কিছু মানুষ আছে যারা তার উপরের পদের মানুষদের সমালােচনা করেই কাটিয়ে দেয়। তারা আবার তাদের জন্যই সবসময় প্রস্তুত থাকে যেন ডাক পারলেই উপস্থিত হওয়া যায়। আচ্ছা, আরেকজনের ঔদ্ধত্যের সমালােচনা কীভাবে করতে পারাে যদি তুমি নিজেইনজের দিকে মনােযােগ দিতে না পারাে?
যে যাই বলুক, বড় মানুষেরা কিন্তু তোমার দিকে নজর দেয়, সে যতই অহংকারী হউক না কেন। তােমার কথা শােনার জন্য সে কান পাতে, তার পাশে হাঁটতে অনুমতিও দেয় সে। কিন্তুসমর্সা হলাে কি, তুমিই তাে তােমার পাশে দাঁড়ানাের সাহস করছ না। নির্জের কথা শােনার সময় নাই তাে তােমার।
এই যে মানুষকে এত সময় দিচ্ছ জোর জন্য কি মনে করাে তারা তােমার কাছে ঋণী? তােমাদের এইসব সেবাকর্মের জন্য কাউকে তােমার কাছে ঋণী মনে কোরাে না। স্রেফ অন্যের সঙ্গ কামনার জন্য তুমি এটা করােনি বরং তুমি নিজেই নিজের সঙ্গ উপভােগ করছিলে না।
যুগে যুগে মনীষীরা এই একটি বিষয়ের উপর মনােযােগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মানব মনের এই গাঢ় অন্ধকার দিকটি ভালােভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হননি। দেখবে মানুষ তার সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ একটুও সহ্য করে না । তাদের সম্পত্তির এতটুকুন অংশ নিয়ে ঝামেলা শুরু হলেই অস্ত্র-শস্ত্র ও পাথর হাতে মরিয়া হয়ে আসে। এই মানুষগুলােই, যারা তাদের সম্পত্তিতে এতটুকু হস্ত ক্ষেপ সহ্য করে না তারাই আবার তাদের জীবনের উপর অন্যদেরকে ভাগ বসিয়ে দিতে দেয়।
বরং তারা এক সরেস এগিয়ে গিয়ে হাতে তুলে দিয়ে আসে । নিজের টাকাকড়ি বিনা কারণে কাউকে দিয়ে দেয় এমন কতজন পাওয়া যাবে? কিন্তু আশপাশে কতজনকে দেখব যারা জীবনের বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন জনকে বিলিয়ে দেয়। নিজেদের অর্থকড়ি দেখভালের সময় হাড়কিপটের মতাে আচরণ করে। কিন্তু সময় ব্যয় করায় বেশ বেহিসেবি থেকে যায়। অথচ এ ব্যাপারটাতেই সবচেয়ে কিপটে হওয়ার কথা ছিল।
শতায়ু বুড়ােদের আটকে ধরে জিজ্ঞেস করতে চাই : ‘আমি দেখেছি তুমি মানবজীবনের অন্তে এসে পৌঁচ্ছেছ। তুমি শতবর্ষ পূরণ করতে যাচ্ছে, বা তা ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাতে আছ।
এবার দাঁড়াও, জীবনের একটু হিসেব করে দেখাে তাে! দেখবে, কত সময় চলে গেল মহাজনের কাছে, প্রেমিকা নিয়ে গেল কত সময়, কর্তাবাবু নিয়ে গেল কত সময়। মক্কেল নিয়ে গেল কত সময় আর বউয়ের সঙ্গে কলহ করেই বা গেল কত সময়। কর্মচারীদের শাস্তি বিধান করতে গিয়ে গেল কত সময় আর শহরে বিভিন্ন সামাজিক দায় মেটাতে গিয়ে চলে গেল কত সময় । আপন দোষে রােগবালাই নিয়ে গেল কত সময়? আর যে সময়টাতে তুমি কিছুই করােনি, স্রেফ অলস কাটিয়েছ সেটাসহ যদি হিসাব করাে তাহলে দেখবে তােমার হিসাবের খাতায় খুব অল্প বছরই বরাদ্দ ছিল।
স্মৃতির দিকে মুখ ফেরাও, দেখাে কোন সময়টাতে তােমার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল। কোন দিনগুলাে তুমি তােমার পরিকল্পনামত কাটাতে পেরেছ, কোন সময়টার উপর তােমার নিজের নিয়ন্ত্রণ ছিল। কোন সময়টাতে তােমার মুখমণ্ডল প্রসন্ন ছিল, কোন সময়টাতে তুমি অবিচল ছিলে । তােমার এই দীর্ঘ জীবনটাতে কী-ইবা অর্জন করলে। আর কতটুকু জীবন নিজের অজান্তেই হারিয়ে ফেলেছ বা অন্যের লুট করে নিয়ে গেল?
কতটুকু সময় উড়িয়ে দিয়েছ অহেতুক দুঃখবিলাস করে, বােকাদের মতাে আনন্দবিলাস করে, লােভাতুর আকাক্ষা নিয়ে, সমাজের প্রলােভনে পড়ে? দেখবে তােমার নিজের জন্য কত অল্প সময়ই না বরাদ্দ রেখেছিলে। অনুধাবন করবে কীভাবে জীবন শুরু করার আগেই তুমি মায়াগ্ৰাচ্ছ!'
তাহলে এর কারণটা কী দাঁড়াল? তুমি যখন জীবন যাপন করাে তখন মনে করাে যেন অমর থাকবে। মৃত্যুর কথা তােমাদের মাথাতেই আসে না। কত সময় পার হয়ে গেল টেরই পাও না। তুমি এমনভাবে সময় অপচয় করাে যেন কোনাে কূপ থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাচ্ছ । কিন্তু ওই দিনটাতে ওই মুহূর্তটা যে পার করলে, কাউকে যে সময়টা দিলে সেটা হয়তাে তােমার শেষ মুহূর্ত। তােমার ভয়গুলাে সব মরণশীল প্রাণির আর আকাঙ্ক্ষাগুলাে মৃত্যুহীনদের ।
অনেককেই বলতে শুনবে : ‘পঞ্চাশ বছরের পর অবকাশে যাব, ষাট হলে সকল ধরনের জন-সংশ্লিষ্টতা থেকে ছুটি নিয়ে নেব। তুমি যে অতটুকু বাঁচবে তার গ্যারান্টি কী? তােমার পরিকল্পনা অনুযায়ীই সবকিছু যাবে তার নিশ্চয়তা কী?
তােমার লজ্জা লাগে না! জীবনের খুচরা অংশটা বরাদ্দ রাখছ সব বড় কাজের জন্য? সে সময়টা বরাদ্দ রাখছ যে সময়টাতে অন্য কোনাে কাজই করতে পারবে না? তােমার জীবনের শেষ ঘণ্টা যখন বাজতে শুরু করবে তখন তুমি বাঁচার সর্বোচ্চ পরিকল্পনাটা করছ! মৃত্যুকে ভুলে থাকার কী সুন্দর পরিকল্পনা!
দার্শনিক সেনেকা এর অন দ্য শর্টনেস অব লাইফ pdf বইটির অরজিনাল বাংলা অনুবাদ পড়ে আপনাদের কেমন লেগেছে জানাতে পারেন বই নিবো পিডিএফ রিভিউজ টিমকে।