ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট by সৈয়দ হালিম – অপরাধ ও শাস্তি PDF

0

    'ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট' হল ফিওদর দস্তয়ভস্কি এর অপরাধ ও শাস্তি নিয়ে লেখা জনপ্রিয় উপন্যাস। বইটি ১৮৬৬ সালে রুশ ভাষায় প্রকাশিত হয়। বইটির বাংলা অনুবাদ করেছেন সৈয়দ হালিম।৮০ পৃষ্টার এই বইটিকে বলা হয় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দশ বইয়ের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বই।

    ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট 

    'ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট' একটি রাশিয়ান উপন্যাস বই। বইটির লেখক ফিওদর দস্তয়ভস্কি একজন গুনী মানুষ। এই বইটির গল্প রাশিয়ার তৎকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমাজব্যবস্থায় শ্রেণী বৈষম্যে জর্জরিত এক যুবকের গল্প। নাম তার রাসকলনিকভ। আইনে পড়ুয়া এই যুবক যখন টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ করে দিলেন, বাসা ভাড়া দেওয়ারও কোন উপায় রইলো না, তখন তিনি একটি ভুল করে ফেললেন। একজনকে খুন করে ফেললেন। কিন্তু কোন প্রমাণ রাখেন নি। ঝামেলটা শুরু হয় তখন, যখন তিনি এই খুনের জন্য মন থেকে অনুতপ্ত হওয়া শুরু করেন।

    ক্রাইম এণ্ড পানিশমেন্ট এর শুরুটা হয়েছে গ্রীষ্মের এক সন্ধ্যায় সেন্টপিটারসবার্গ শহরে নেভা নদীর নিকটবর্তী একটি পাঁচতলা বাড়ী হইতে বাহির হইয়া একটি রুশ যুবক লক্ষ্যহীনভাবে ধীরপদক্ষেপে নিকটস্থ সাঁকোর দিকে অগ্রসর হইতে লাগিল। বাড়ীটি সাধারণ ভাড়াটে বাড়ী। সে যে ঘরখানিতে থাকে তাহারই নীচে স্বয়ং গৃহস্বামিনীর রায়াঘর এবং সিড়ি দিয়া নামিয়া আসিতে গেলে তাহার রন্ধনশালার অগ্নিকুণ্ডের তাপ লাগা অনিবাৰ্য্য হইয়া উঠে। ঐ যুবকটি যথনই সিড়ি দিয়া ওঠা-নামা করে তখনই তাহার মনে হয় যেন কোন শত্রুালিত অগ্নিকুও তাহারই জন্য নিশিদিন জ্বলিতেছে। তাহার কেমন একটু ভয় করে, যেন তাহার একটা মস্ত অবমাননা আসয় ; অথচ সেই আসম অবমাননার জন্য পরক্ষণেই তাহার বিরক্তি আসে—তাহার যুগল কুঞ্চিত হয়। গৃহমিনীয় নিকট সে ঋণী এবং সেই জন্যই তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ হইবার কল্পনাতেও সে ত্রস্ত হইয়া ওঠে।

    Crime and Punishment pdf bangla

    কিন্তু দুর্ভাগ্য তাহাকে আতঙ্কগ্রস্ত করে নাই, দারিদ্র্যও তাহাকে নিষ্পেষিত করিতে পারে নাই। তবু কয়েকদিন যাবৎ মন যেন ভাঙিয়া পড়িয়াছে, যখন তখন তাহার সমস্ত স্নায়ু যেন শিথিল হইয়া আসে। কোন সংসর্গই আর তাহাকে আনন্দ দিতে পারে না এবং ক্রাইম এণ্ড পানিশমেন্ট মানুষের সঙ্গ এড়াইতে এড়াইতে আজ যে কোন মানুষের মুখ দেখিলেই তাহার বিরক্তি বােধ হয়। দারিদ্র্যের জন্য দুঃখ করা সে ছাড়িয়া দিয়াছে। জীবিকা অর্জনের জন্য যা কিছু সে করিত তাহাও এখন পরিত্যাগ করিয়াছে। কৰ্ম্মহীন অখণ্ড অবকাশের মধ্যে সে মনে মনে তাহার গৃহস্বামিনীকে বিদ্রুপ করে। ঐ রমণীটি কী করিতে পারে তাহার? সে আপন মনে হাসিয়া উঠে। কিন্তু তবু তাঁহারই সঙ্গে কথাকাটাকাটি বা বিবাদ কিংবা অনুনয় বিনয়ের অভিনয় হইবে এই আশঙ্কায় সে নিঃশব্দে তস্করের মত সিড়ি বাহিয়া নীচে নামিয়া আসে। আজ পথে নামিয়া তাহার এই কাপুরুষতায় সে অত্যন্ত বিস্মিত না হইয়া পারিল না। কেন এই তুচ্ছ ব্যাপারটাকে সে এত বড় করিয়া দেখিতেছে? সে কি সর্বাপেক্ষা ভয়ঙ্কর কিছু একটা করিতে যাইতেছে না? এই কাপুরুষতাই মানুষকে বিপদের মধ্যে টানিয়া লইয়া যায়। তাহার জানিতে ইচ্ছা করে, মানুষের পক্ষে সর্বাপেক্ষা ভয়ঙ্কর কি?"

    "না সে আর কিছু চিন্তা করিবে না। ভয়ঙ্কর যাহাই হােক, সে চিন্তার পরিবর্তে কাজ করিবে। আজ একমাস ধরিয়া সে ঘরের কোণে বসিয়া মনে মনে অনর্গল বকিয়া চলিয়াছে। কি হইবে ইহাতে ? যে কাজ করিতে সে কৃতসংকল্প সে কাজ করিবার মত শক্তি কি তাহার আছে ? সে কি সত্যই কৃতসঙ্কল্প? একেবারেই না। মাঝে মাঝে যেন উপকথার দৈত্যরা আসিয়া তাহার ঘাড়ে চাপিয়া বসে। এই সমস্তই তাহার অলস মস্তিষ্কের উদ্ভট-কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

    শহরের রাজপথে একটা ভারী তপ্ত আবহাওয়ায় যেন খাস রুদ্ধ ক্রাইম এণ্ড পানিশমেন্ট হইয়া আসে। সেন্টপিটারসবার্গ শহরের জনতা, ইট চুনে তৈরী হৰ্ম্ম-শ্রেণী সব কিছু মিলিয়া যেন এই যুবকটিকে আরও পীড়িত করিয়া তুলিল। সর্বোপরি পথের দুইধারে অসংখ্য নিম্নশ্রেণীর পানশালা, মদের গন্ধ এবং উন্মত্ত-মদ্যপের দল, শহরের এই পরিচিত দৃশ্যকে আরও বীভৎস করিয়া তুলিয়াছে। আমাদের এই কাহিনীর নায়কটির সারা অন্তঃকরণ তিক্ত হইয়া উঠিল। তাহার দিকে তাকাইলে সর্বপ্রথম চোখে পড়ে যে তাহার সুদর্শন মুখে বেদনাতুর ছায়া পড়িয়াছে। তবুও তাহার দেহের সৌন্দৰ্য চক্ষু এড়াইয়া যায় না। তাহার দীর্ঘ, ঋজু দেহ, ঈষৎ স্বর্ণাভ কেশ, উজ্জ্বল চক্ষু-দুটির গভীর দৃষ্টি তাহাকে সুন্দর করিয়া তুলিয়াছে। পথ চলিতে চলিতে অকস্মাৎ সে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হইয়া গেল। দেখিতে দেখিতে তাহার নিকট এই পথ, এই জনতা সব লুপ্ত হইয়া গেল। আপন মনে কি যেন বলিতে বলিতে সে মুচ্ছগ্রস্তের মতো চলিতে লাগিল। ইহা তাহার অভ্যাসে দাড়াইয়াছে। ক্ষণকাল পরেই তাহার মনে হইল যেন তাহার সকল চিন্তাই একাকার হইয়া যাইতেছে, বড়ো দুৰ্বল সে আজ দুই দিন হইল কি খাইয়া যে বাঁচিয়া আছে তাহা সে কিছুতেই মনে করিতে পারিল না। 

    তাহার মত জীর্ণ পরিচ্ছদ পরিয়া আর কেহ হয়ত দিবালােকে গৃহের বাহির হয় না। কিন্তু যদিও দারিদ্রের পরিচয়ে এখন সে ব্যথা পায় তবু এই শতধাজীর্ণ পরিচ্ছদে আজ আর তাহার লজ্জা নাই। জগতের প্রতি তাহার বিদ্বেষ এবং ঘৃণা চরম সীমায় পৌছিয়াছে। পথ চলিতে চলিতে হঠাৎ সে থমকিয়া দাড়াইল। একটি মাতাল ক্রাইম এণ্ড পানিশমেন্ট তাহাকে দেখাইয়া পথিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছে। কি কারণে জানি না, মাতালটিকে একটি মালবােঝাই শকটে কোন রকমে টানিয়া লইয়া যাওয়া হইতেছে। সে কিছু না বলিয়া মাতালটির মাথা হইতে টুপীটা তুলিয়া লইয়া পরীক্ষা করিয়া দেখিতে লাগিল।

    ঠিক হইয়াছে। এই টুপীটার সঙ্গে তাহার বেশভূষার অদ্ভুত মিল হইয়াছে। এই টুপীটা মাথায় দিলে আর তাহাকে সহজে কেহ লক্ষ্য করিতে পারিবে না। এখন লােকে তাহাকে যত কম লক্ষ্য করে ততই তাহার পক্ষে সুবিধা। সে তাহার গন্তব্য স্থানের নিকটে আসিয়া পড়িল। আর কয়েক পদ মাত্র অবশিষ্ট। সে গণিয়া রাখিয়াছে—সাতশত ত্রিশ পদ। এক মাস ধরিয়া যে পরিকল্পনা সে করিতেছে অস্পষ্ট স্বপ্নের মতো, তাহাকে কার্যে পরিণত করিবার মত শক্তি তাহার আছে এ বিশ্বাস আজও দৃঢ় হয় নাই। তবে দিন যাইতে যাইতে সে তাহার নিজের দুর্বলতা এবং বলিষ্ঠ ইচ্ছাশক্তির অভাবের জন্য নিজেকে বার বার ভৎসনা করিয়াছে। এবং যদিও নিজের সংকল্প সম্বন্ধে তাহার সংশয় ছিল তবু যে পরিকল্পনাকে সে স্বপ্ন বলিয়া মনে করিত তাহাকেই কাৰ্যে পরিণত করা আজ আর তাহার একেবারে অসম্ভব বলিয়া মনে হয় না। 

    মনে মনে সে যতই তাহার ভবিষ্যৎ কাৰ্য্যাবলীর মহড়া দিতে লাগিল ততই তাহার উত্তেজনা বাড়িয়া চলিল।

    অসংখ্য ভাড়াটে-বাড়ীগুলি যেখানটায় একটি খালের দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইয়া আছে সেই স্থানটায় আসিয়া সে থমকিয়া দাঁড়াইল। এই বাড়ীগুলিতে নানা জাতির নানা শ্রেণীর লােকে বাস করে। ক্রাইম এণ্ড পানিশমেন্ট ছুতার, কামার, পাচক, জাৰ্ম্মাণ ব্যবসায়ী, রাজকর্মচারী হইতে শুরু করিয়া সাধারণ গণিকা পর্যন্ত এই বাড়ীগুলির অধিবাসী। অসংখ্য লােক যাতায়াত করিতেছে। সবগুলি বাড়ীর একটি সাধারণ প্রবেশ পথ, তাহার মধ্য দিয়া প্রবেশ করিলে তবে যে কোন বাড়ীতে যাওয়া যায়। এই প্রবেশ পথে দারােয়ান ছিল। কিন্তু তাহাকে কেহই লক্ষ্য করিল না। সে ঐ দরজা দিয়া প্রবেশ করিয়াই দক্ষিণ দিকের একটি সিড়ি দিয়া একটি বাড়ীর উপরে উঠিয়া গেল। সকল অন্ধকার সিড়ি দিয়া উঠিতে উঠিতে তাহার হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া যেন বন্ধ হইয়া আসে। এই অন্ধকারই যেন তাহাকে বাঁচাইল। যা কেহ তাহাকে দেখে নাই। কিন্তু এ ভয় তাহার কেন? এখনই এত তা করিলে কেমন করিয়া সে তাহার সেই পরিকল্পনা কার্যে পরিণত করিবে ? উপরে উঠিয়া দেখিল একঘর জাৰ্মাণ ভাড়াটে উঠিয়া যাইতেছে, তাহাদের মালপত্র সব নীচে নামানাে হইতেছে। একটি বুড়ীর ঘরে ঘণ্টা বাজাইবার পূর্বে এই ভাবিয়া সে স্বস্তিবােধ করিল, যে এখন কয়েকদিন এই বুড়ীটা এই পাঁচতলায় একাই থাকিবে। 

    ঘণ্টার শব্দ পাইয়া সেই বৃদ্ধা আসিয়া দরজাটা ঈষৎ ফাক করিয়া তাহাকে সন্দিগ্ধ চক্ষে নিরীক্ষণ করিতে লাগিল।এই বৃদ্ধাটির গলায় গরম কাপড়ের গলাবন্ধ। এই গ্রীষ্মে তাহার গলায় গরম গলাবন্ধ এবং তাহারই উপর মাথার তেল গড়াইয়া পড়িতেছে। সে তাহার দিকে অবাক হইয়া চাহিয়াছিল হঠাৎ বৃদ্ধাটি বিষম কাশিতে শুরু করিল এবং কাশি থামিলে পুনরায় সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে এই যুবকটির পানে তাকাইল। 

    ক্রাইম এণ্ড পানিশমেন্ট তাহার এই চাহনিতে যুবকটি ঈষৎ নমস্কার করিয়া বলিল, “আমার নাম রেডিয়ন্ র্যাকনিকফ, আমি একজন ছাত্র। একমাস পূৰ্বে একবার আপনার কাছে এসেছিলাম।”
    “মনে পড়েছে, মনে পড়েছে,” বলিল বটে কিন্তু সন্দেহ তাহার তখনাে যায় নাই।
    রাসূলনিকফ, বলিল, “দেখুন আমি পূর্বেকার মত সেই কারণেই আপনার কাছে এসেছি”
    বৃদ্ধাটি এতক্ষণ চিন্তা করিতেছিল এইবার বাধা দিয়া বলিল, “এসস বাবা ভেতরে এসাে।”
    বৃদ্ধা ঘরের মধ্যে লইয়া গেল, এখন আর তাহার দৃষ্টি সন্দিগ্ধ নহে।

    ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া র্যাকনিকফ, দেখিল ঘরটি ছােট, সমস্ত দেয়াল হলুদ রঙের কাগজে ঢাকা কিন্তু জানালায় মলি-এর পর্দা, সূর্যাস্তের শেষ রশ্মি পর্দার মধ্য দিয়া ঘরের মেঝেয় আসিয়া পড়িয়াছে। সবটা দেখিয়া তাহার মুখ দিয়া বাহির হইয়া আসিল, “সেদিনও তাহলে এমনই সূর্যালােক ঘরের মধ্যে এসে পড়বে!”
    ঘরের মধ্যে চোখে পড়িবার মতাে কোন আবাব নাই, তবে ঘরটি খুবই পরিচ্ছন্ন, কোথাও এককণা ধুলিও বােধকরি নাই। পাশের ঘরে বুড়ীটা শয়ন করে এবং ঐ ঘরেই তাহার টাকাকড়ি এবং গহনাপত্র থাকে। বৃদ্ধাটি তাহাকে পুনরায় নিরীক্ষণ করিয়া অবশেষে জিজ্ঞাসা করিল, “কি চাই তােমার?”
    “এমন কিছু নয়। আমি একটা জিনিস বাধা দিতে এসেছি।” সে পকেট হইতে একটি রূপার পকেট ঘড়ি বাহির করিল। 

    ক্রাইম এণ্ড পানিশমেন্ট : ফিওদর দস্তয়ভস্কি 

    ছাড়া  “কিন্তু আমার পাওনা তাে এখনো শােধ দিলে না। দু'দিন আগে তােমার টাকা মিটিয়ে দেবার কথা।”
    “আপনি একটু ধৈর্য্য ধরে থাকুন। আমি তার জন্য আর এক মাসের সুদ দিচ্ছি।”
    “ধৈৰ্য্য আমার আছে বৈকি বাছা, তা না হলে তােমার জিনিস আমি কবে বিক্রী করে দিতুম।”
    “আচ্ছা, এই ঘড়িটার জন্য আপনি কতাে দিতে পারেন ?”
    “ও ঘড়ির কি আর দাম বাছা, কিই বা ওর আছে। সে বারে দুরাবল দিয়ে তােমার আংটিটা রাখলুম। ও রকম আংটি স্যার দোকানে দেড় রাব-এ কিতে পাওয়া যায়?”
    “আচ্ছা আমাকে চার রাবল দিন্। এটা আমার বাবার ঘড়ি —আমার টাকার বড়ো দরকার তাই।” “দেড় রাব দিতে পারি বাছা। আর সুদটা আমি এর থেকেই নিয়ে রাখবে।”

    “দেড় রাবল!” র্যাকনিকফের মুখ দিয়া অস্ফুট স্বর বাহির হইল। “খুশী হয় নাও, না হয়—না নিও” বলিয়া বুড়ীটা তাহার হাতে ঘড়িটা ফেরৎ দিল, সেও ঘড়িটা সেইয়া চলিয়া যাইতেছিল, অকস্মাৎ তাহার মনে পড়িল এই বুড়ীটি ছাড়া টাকা ধার দিবার তাহার আর কেহ নাই। ইহা ছাড়া এখানে তাহার যেন আরও কোন উদ্দেশ্য ছিল।

    অপরাধ ও শাস্তি pdf

    অপরাধ ও শাস্তি নিয়ে ফিওদর দস্তয়ভস্কি এর উক্তি মনে পড়লে যেসব কথা উঠে আসে তা হল: 

    ঘরের মধ্যে পুনরায় ফিরিয়া আসিয়া বিকৃতম্বরে ব্যাকনিকফ বলিল, “দাও, তাই দাও।”
    ক্রাইম এও পানিশমেন্ট
    বুড়ীটা তাহার পকেট হাতড়াইয়া ডান পকেট হইতে চাবীর রিং বাহির করিল। পাশের ঘরেই তাহার টাকা কড়ি থাকে। দেরাজের টানা খুলিয়া সে একটা বড় চাবী বাহির করিল। সম্ভবতঃ টানার মধ্যে আর একটা বাক্স আছে সেইটা খুলিয়া টাকা বাহির করিয়া সে বাহির হইয়া আসিল। ব্ল্যাকনিকফ, সমস্তটা লক্ষ্য করিল,—যেন এই ব্যাপারটা সে স্মৃতিপটে মুক্তিত করিয়া রাখিতে চায়। বুড়ীটা যখন এই ঘরে ফিরিয়া আসিল, তখন সে চকিত হইয়া অস্ফুট স্বরে কহিল, “কী ঘৃণিত ! কী কুৎসিত।”

    বুড়ীটা আসিয়াই তাহার প্রাপ্য সুদের হিসাব দিতে লাগিল। পূর্বের টাকার জন্য আগামী এক মাসের সুদ এবং এই টাকাটারও আগামী এক মাসের সুদ কাটিয়া লইয়া সে তাহাকে মােট এক রাব ল পনেরাে কপেক্‌ দিল অর্থাৎ এক রাবল পঞ্চাশ কপেক্ এর মধ্য হইতে উক্ত সুদ বাবদ তাহার পয়ত্রিশ কপে আগাম দিতে হইল। সে একবার প্রতিবাদ করিতে গেল কিন্তু তাহার মহাজনটি হাত নাড়া দিয়া বলিল, “এই তাে তােমার পাওনা হয় বা আর এ সম্বন্ধে কোন কথা না বলিয়া অপেক্ষা করিল। তাহার চলিয়া যাইবার কোন তাড়া নাই। কী একটা বলিবার কিংবা করিবার জন্য সে ব্যাকুল হইয়া উঠিল, সেইটাই যেন তাহার পরম প্রয়ােজন। কিন্তু সেটা যে কী ইহা সে কিছুতেই ভাবিয়া পায় না। অবশেষে কিছু না ভাবিয়াই সে বলিয়া ফেলিল, “দেখুন, আমার একটা রূপাের ‘সিগার কে আছে সেটা বােধ হয় শিগগিরই আপনার কাছে আনব।” 

    ক্রাইম এণ্ড পানিশমেন্ট by ফিওদর দস্তয়ভস্কি

    'ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট' by ফিওদর দস্তয়ভস্কি বইটির বাকি অংশে পাওয়া যায়–, “সে তখন দেখা যাবে বাছা!”
    “আচ্ছা দেখুন, আপনি সব সময় একা থাকেন? আপনার ভগিনী কী কোন দিন আপনার কাছে থাকেন না?”
    কথাটা সে যতদূর সম্ভব নীরস এবং নিস্পৃহ কণ্ঠে বলিল। “আমার বােনের খোঁজে তােমার কী দরকার বাছা?”
    “ন-না-না, তা নয়—আচ্ছা চলুম, নমস্কার?” বলিয়া সে ঘরের বাহিরে চলিয়া আসিল। তাহার বােধ হইল সে অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া উঠিয়াছে।
    নীচে নামিবার সময় সে বার বার থমকিয়া দাড়াইতে লাগিল এই উত্তেজনাকে প্রশমিত করিবার জন্য ! যখন সে পথে নামিয়া আসিল তখন যেন ঘৃণায় তাহার মন বিষাক্ত হইয়া গিয়াছে। কী ঘৃণ্য, কী নারকীয় ! সে কি কোন দিন? অসম্ভব ! কী। মুখ সে! এতটা নীচতা, এতখানি অপযশ সে কেমন করিয়া মাথায় তুলিয়া লইবে? তাহার সমস্ত মন, এই ঘৃণিত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিয়া উঠিল। কিন্তু দীর্ঘ একমার্চ, ধরিয়া তো সে এই চিন্তাই করিয়াছে।

    অপরাধ ও শাস্তি pdf

    আশ্চর্য!
    আপন মনে সে অনেক কথাই বলিয়া চলিল কিন্তু কোন কিছুতেই তাহার মন শান্ত হয় না। যখন নিজেকে বুঝাইবার, সংযত করিবার সকল প্রকার চেষ্টাই ব্যর্থ হইয়া গেল, তখন সে এই ভয়াবহ দুৰ্বলতার হাত হইতে যেন ছুটিয়া পলাইবার জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠিল। মাতালের মতাে পথ চলিতে চলিতে হঠাৎ সে একটা পানশালার মধ্যে ঢুকিয়া পড়িল। ইতিপূর্বে সে এমন স্থানে ক্রাইম এণ্ড পানিশমেন্ট কখনাে আসে নাই। দরজার কাছে দুইটা মাতাল পরস্পর পরস্পরকে গালি দিতেছে। কিন্তু র্যাকনিকফ, সে দিকে দৃকপাত না করিয়া ভিতরে ঢুকিয়া পড়িল। একটুখানি মদের তাহার বড় প্রয়ােজন। তাহার বােধ হইল শূন্য পাকস্থলীই তাহার দুর্বলতার একমাত্র কারণ। পানশালার একটা অন্ধকার কোণে একটি অত্যন্ত জীর্ণ, মলিন টেবিলের ধারে বসিয়া সে চাকরকে মদ আনিতে হুকুম করিল এবং চাকরটি আদেশ পালন করিবামাত্র সে চোখ বুজিয়া এক গ্লাস মদ গলায় ঢালিয়া দিল।

    ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট Pdf

    'ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট' Pdf বইটির সম্পূর্ণ বাংলা পড়তে এখানে ভিজিট করুন। কারণ তৎক্ষণাৎ সে সুস্থ বােধ করিল এবং তাহার চিন্তাশক্তি যেন স্বচ্ছ হইয়া আসিল। অকারণে সে এতটা ত্রস্ত হইয়া উঠিয়াছিল-- সে ভাবিতে লাগিল, এ দুৰ্বলতা নিতান্তই তাহার শারীরিক দুৰ্বলতা। এক গ্লাস বীয়ার এবং কয়েক টুকরা বিস্কুটই তাহাকে সবল করিয়া তুলিবার পক্ষে যথেষ্ট। তাহার সংকল্প স্থির, অটল কোন দুর্বলতাকেই সে প্রশ্রয় দিবে না। 

    যদিও মুখে সে একটা ভয়ঙ্কর সংকল্পের পুনরাবৃত্তি করিল, তবু তার চোখ মুখ উজ্জ্বল হইয়া উঠিল যেন এইমাত্র কী একটা দুৰ্ব্বিসহ বােঝা তাহার ঘাড় হইতে নামিয়া গেল। সে সহজভাবে তাহার চারিদিকে তাকাইতে লাগিল। তবু তখনই তাহার মনে হইতে লাগিল। যেন এই ঘূৰ্ত্তির ভাবটা ঠিক সত্য নয়-হৃদয় তাহার কিসের ভারে যেন নিষ্পেষিত হইয়া যাইতেছে।
    তাহার সম্মুখে যে লােকটি বসিয়াছিল তাহাকে দেখিয়া কোন দোকানদার বলিয়া মনে হয় এবং তাহারই পাশের লােকটি পুরাদস্তুর অপরাধ ও শাস্তির যোগ্য। বইটির PDF পড়ুন এখানে।


    Book Publisher Author  F Size
    ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট  বর্ণনা ফিওদর দস্তয়ভস্কি | সৈয়দ হালিম ৫ মেগাবাইট
    Bookshop Price Language  T Page
    Durdin Magazine Only 85 Taka Bangla 80


    'ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট' একটি মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। বইটির সম্পূর্ণ PDF পড়ে কেমন লেগেছে রিভিউ লিখে আমাদের ওয়েবসাইটে জানাতে পারেন। 

    Read More: The Art of Writing CV and Cover Letter PDF

    Tags

    Post a Comment

    0Comments
    * Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
    Post a Comment (0)

    #buttons=(Accept !) #days=(20)

    Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
    Accept !