তওফিক মাহবুব এর লেখা প্রথম আত্মউন্নয়নমূলক বই আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছো। ২০২১ সালে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। আজকে আমরা এই বইটির Pdf পড়া নিয়ে আলোচনা করব।
আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছো হলো সত্য মিথ্যা যাচাই করার পদ্ধতি নিয়ে লেখা একটি জনপ্রিয় বাংলা বই। বইটির লেখক তওফিক মাহবুব একজন পেশাদার পুলিশ কর্মকর্তা। তার বহুদিনর কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা এই বইয়ে রয়েছে সহজে মিথ্যাবাদী মানুষ চেনার কলাকৌশল।
তুমি কি মিথ্যা বলছো এটা আমি খুব সহজেই বুঝে ফেলতে পারি। কারণ তওফিক মাহবুব তার বইয়ে মিথ্যা কথা বোঝার সকল টিপস এন্ড ট্রিকস তুলে ধরেছেন।
আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছো হল সহজে মিথ্যা কথা যাচাই করার টিপস নিয়ে লেখা একটি আত্মউন্নয়নমূলক বই। বইটির লেখক অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা তওফিক মাহবুব।
অপরাধ-সংশ্লিষ্ট পেশার সাথে জড়িত থাকার কারণে লেখক তওফিক মাহবুব সত্য মিথ্যা যাচাই করার জন্য অপরাধীদের উপর গবেষণা করার পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছেন। তার বহুদিনের কর্মঅভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে তিনি সহজভাবে মিথ্যা কথা বলার ধরণ, ভঙিমা, উদ্দেশ্য এবং অন্যান্য রূপ এই বইটিতে তুলে ধরেছেন।
আমি জানি তুমি মিথ্যা। তুমি যা বলছো সব মিথ্যা। তোমার যা কিছু আছে সব মিথ্যা। তুমি কখনো কখনো সত্য বলো। আমি ধরতে পারি সব। তোমার কথা থেকেই সব বুঝে ফেলি। বলো তো কিভাবে আমি বুঝতে পারি তুমি মিথ্যা বলছো?
আমাকে যদি সবার শেষে কেউ প্রশ্ন করেন, এই যে মানুষ চেনা নিয়ে আপনি এতদিন ধরে এত লেকচার দিলেন, আপনি নিজে কি মানুষ চিনেছেন?
আমি বলব অনন্ত জ্ঞানশাস্ত্রের যেমন শেষ নেই, তেমনি মানুষ চেনারও শেষ নেই। এক একটি লােক এক একটি লােক থেকে আলাদা। চিনতে গেলে পৃথিবীর ৫০০ কোটি লােকের সঙ্গে সারাজীবন ধরে মিশতে হবে। মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানাে যেমন পাপ, তেমনি মানুষকে অতিরিক্ত বিশ্বাস করাটাও অন্যায়। সরল বিশ্বাস বস্তুটা বােকামির লক্ষণ। বিশ্বাসের মধ্যেও কিছুটা Scepticism রাখতে হবে।
ধরুন, আপনার এক অতি বিশ্বাসী বন্ধুকে অসময়ে টাকা ধার দিয়েছেন। টাকাটা তিনি ফেরৎ দেবেন এটা যেমন বিশ্বাস আছে তেমনি একটি ক্ষীণ অবিশ্বাসও রাখতে হবে যে টাকাটা নাও পেতে পারেন। এক্ষেত্রে টাকা যখন দিলেন তখন সেই না পাওয়ার ঝুঁকি নিয়েই আপনি দিচ্ছেন।
আমি এসব কথাগুলাে বলছি তার কারণ মনুষ্যচরিত্র (স্ত্রীচরিত্র বলে শুধু মেয়েদেরই দোষ দিতে চাই না) দেবা ন জানন্তি কুততা মনুষ্যাঃ। আমরা যারা মানুষের মন নিয়ে কারবার করি তারা বলতে পারি কে কোন টাইপের মানুষ । কিন্তু মনের অতলে ডুবুরি নামাবার ক্ষমতা আমাদের নেই যদি না কেউ আমাদের কাছে এসে নানা ধরণের মনস্তাত্বিক পরীক্ষার সম্মুখীন হয়।
মানুষকে চেনা এত সহজ নয় এই কারণে যে মানুষের চিন্তাধারা দ্রুত বদলায়। আজ আপনি যাকে সৎ বলে জানছেন, কাল সে অসৎ হয়ে যেতে পারে। প্রলােভনের মুখে যতক্ষণ কেউ না পড়ছে ততক্ষণ সে সৎ থাকে। রামকৃষ্ণদেব কামিনী কাঞ্চনে আসক্তি ত্যাগ করতে বলে গেছেন। কারণ কামিনী কাঞ্চনে প্রলােভন আসে। যেসব চাকরিতে ঘুষ খাওয়ার সুযােগ নেই, সেসব চাকরি যাঁরা করেন তাঁরা মােটামুটি সৎ থাকেন। কারণ অসাধু হওয়ার সুযােগ তাঁদের নেই বললেই চলে। কিন্তু পুলিশের চাকরি, শুল্ক বিভাগে চাকরি, পৌরসভার চাকরি, লাইসেন্স পারমিট দেওয়ার চাকরি, পারচেজের চাকরিতে ঘুষ খাওয়ার সুযােগ খুবই বেশি। এখানে কেউ যদি ঘুষ না খান, তাহলে তাঁকে সত্যিকারের সৎ বলা যায়। এমন লােক যে নেই তা নয়, আমি অনেককে দেখেছি। তবে তাঁরা সংখ্যায় কম।
এমনও দেখেছি ট্রাফিক পুলিশে একজন অফিসার কর্তৃপক্ষকে অনুরােধ করছেন তাঁকে ট্রাফিক গার্ডের ওসি না করে পরিসংখ্যান দফতরের ওসি করা হােক। কারণ ট্রাফিকগার্ডে প্রচুর ঘুষ। সেখানে তিনি ভীষণ প্রলােভনের মুখে পড়বেন। আর পরিসংখ্যান বিভাগে পয়সা নেই। তাই তিনি সেখানে যেতে চান।
আপনারা জানেন নিশ্চয়ই, হাওড়া শিয়ালদা স্টেশান, বড় বড় থানায় বদলি হওয়ার জন্য নীলামে ডাক হয়। যে অফিসার ডেকে নেবেন তাঁকে সেখানে পাঠানাে হবে। এরজন্য তিনি যা খরচ করবেন, দুগুণ উশুল করবেন। আমার এক বন্ধুর মেয়ের বিয়ে হয় এক পুলিশ অফিসারের সঙ্গে। পদমর্যাদায় সে ছিল এ এস আই। বিয়ের সময় ট্রেনিং চলছিল। ট্রেনিং এর পর পােস্টিং এর সময় বউ এর মাধ্যমে শ্বশুরকে এবং শ্বশুরের মাধ্যমে আমাকে ধরল তাকে বড়বাজার থানায় প্রথম পােস্টিং দিতে। কারণ ওখানে নাকি সবচেয়ে বেশি টাকা। এখন এই সব ছেলেদের প্রথম থেকেই ধরে নেওয়া যায় যে তাদের টাকার প্রতি প্রচন্ড লােভ। তারা দুর্নীতি করার জন্য মানসিকভাবে তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু খুব সৎ চরিত্রবান একটি ছেলেকে জানতাম সে শুল্ক দারােগা হয়ে নষ্ট হয়ে গেল।
এমন জায়গায় চাকরি পেল যেখানে প্রচুর টাকার প্রলােভন। কাঁচাটাকা বড় আপদ। প্রথমে ওই টাকায় লােকে মদ খেতে শেখে। মদ আর রেস্টুরেন্টে পেটপুরে তেল ঘি এর খাবার আর চর্বিযুক্ত মাংস খেতে শুরু করে। বছরখানেকের মধ্যে ঘুষখাের ও দুনীতিপরায়ণদের একটা বিশেষ ধরনের চেহারা হয়ে যায়। প্রচণ্ড মেদ জমিয়ে ফেলে তারা। বয়স হলে ক্লোরেস্টরেল বাড়ে। চোখের নিচে চর্বি জমে। মদ আর খাওয়াদাওয়া রাত না হলে জমে না। রাত্রি জাগরণের ফলে তাদের চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ পড়ে।
এরপর অনেকে বারবধূর সন্ধান করে। তাদের পিছনে টাকা ওড়ায়। শেয়ারে, জুয়ায়, রেসে অনেক টাকা ওড়ায়। বাড়ি তৈরি করে, ভিসিআর ভিসিপি কেনে। অন্যের নামে গাড়ি কিনে সেই গাড়ি ভাড়া খাটায়। ঘুষের টাকায় বড়লােক হলে শত্রুও বাড়তে থাকে। অফিসে শত্রু বাড়ে। যারা ঘুষ দেয় তারাই আবার গর্ব করে বলে বেড়ায় অমুক অফিসারকে অত টাকা দিয়ে এলাম। এতে পাড়াপড়শীরা জানতে পারে লােকটি দুনম্বরি করে। কিন্তু টাকা হাতে আছে বলে চটায় না। কিন্তু ইনকামট্যাক্স, চোরডাকাত ও মস্তানদের ভয়ে লােকটি সিঁটিয়ে থাকে।
আমি যার কথা বলছি সেই ছেলেটি সব স্বীকার করে আমায় চিঠি লেখে– স্যার, সবাই এখানে দুহাতে টাকা নিচ্ছে। আমিও নিচ্ছি। এই ছেলেটি শুল্ক বিভাগে না গিয়ে যদি অধ্যাপনায় যেত তাহলে সেখানে ঘুষ খাওয়ার কোনও প্রশ্নই উঠত না। কারণ অধ্যাপনায় ঘুষের সুযােগ নেই । দুধরণের লােভী মানুষ আছে। এক যারা জন্ম থেকেই লােভী। আর এক যারা পরিবেশের চাপে বা সঙ্গদোষে লােভী। যারা জন্ম থেকে লােভী তারা ছেলেবেলা থেকে লােভের পরিচয় দেয়। ছেলেবেলা থেকে এটা ওটা চুরি করা তাদের স্বভাব।
আমি ছেলেবেলায় দেখতাম আমাদের কিছু সহপাঠী ট্রেনের আলাের বাল্ব খুলে সেগুলি চোরাবাজারে বিক্রি করত। এরা কৃচ্ছসাধনের মধ্য দিয়ে জীবন সংগ্রামে অভ্যস্ত হতে পারেনা। আমার এক আত্মীয় আমার নাম করে মিথ্যা কথা বলে লােকের কাছে টাকা চাইত। তারপর সেই টাকায় ফুর্তি করত। আমি তাকে হাতের কাজ শেখাবার জন্য একটি পলিটেকনিকে ভর্তি করে দিলাম। সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে চোরাই মাল বিক্রি করে বেশি টাকা রােজগারের স্বপ্ন দেখল।
আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছো।
আমি যখন সীমান্ত জেলাগুলিতে যাই তখন দেখি মােটরসাইকেল নিয়ে এক একটি মস্তান দল গজিয়ে উঠেছে। যারা এপার ওপার মাল পাচার করে বহু টাকা রােজগার করে। চোরাই চালান পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত জেলায় একটা সমান্তরাল শিল্প। শিয়ালদা স্টেশনে অনেক রাতের ট্রেনে কত মেয়ে বাড়ি ফিরছে। রাতের বাসে কত মহিলা ফিরছে।
এদের মধ্যে কেউ কেউ দেহ বিক্রি করে পয়সা রােজগার করে। কিন্তু সবাই টাকার জন্য যে এই পথে নামে তা নয়। আমি সুদূর আন্দামানে গিয়ে দেখেছি কলকাতার কত বেকার তরুণ, জাহাজে করে মাল নিয়ে গিয়ে ডিগলিপুর বাজারে বিক্রি করছেন। কেউ যাচ্ছেন লিটল আন্দামান কেউ ক্যাম্বেল বে—কি নিদারুণ পরিশ্রম। একবার ভাবুন যে হকারটি এই ভিড়ের ট্রেনে কাঁধে বিরাট ভারি সফট ড্রিঙ্কের টিন নিয়ে বিক্রি করছে। কত টাকা তারা রােজগার করে প্রতিদিন? দিনে বড়জোর পঞ্চাশ টাকা।
স্মাগলিং এ দিনে পাঁচশ থেকে হাজার আয়। তবে সবাই স্মাগলিং করে না কেন? যে মেয়েটি রাতদিন সেলাই করে সে মাত্র দশ টাকা রােজগার করে। তবে সে অন্যপথে যাচ্ছে না কেন? এর কারণ সবারতাে যেন তেন প্রকারে অর্থের প্রতি লােভ থাকেনা। কাজেই তারা সৎপথে থেকে প্রচুর পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করে। মানুষ হিসাবে এরা উচ্চস্তরের। তবে এই মানুষেরই আবার পরিবেশের গুণে স্বর্গ থেকে পতন হতে পারে।
আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছো Pdf
একবার প্রলােভনের মধ্যে গিয়ে পড়লে মাথা ঠিক রাখা মুশকিল। নেশা করতে বারণ করা। হয় কেন ? না একবার নেশার প্রলােভনে পড়লে অধিকাংশ মানুষ সীমারেখা রাখতে পারেনা। আপনি যদি রােজ এক পেগ করে ব্রান্ডি কিংবা হুইস্কি খান এবং আপনার শরীর যদি সুস্থ স্বাভাবিক থাকে এবং আপনার যদি পয়সা কডির অভাব না থাকে, তাহলে ডাক্তাররা বলেন, এটি আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল।
দেখলি গা-ম্যাজমেজে ভাবটা কেমন কেটে যাচ্ছে। কিন্তু এক পেগের মধ্যে ড্রিঙ্ক সীমাবদ্ধ রাখা খুবই কঠিন। এক থেকে দুই, দুই থেকে তিন। তিন থেকে চার—এইভাবে আপনার নেশা বেড়েই চলবে। তাছাড়া যেদিনই খাবেন না সেদিন গা ম্যাজ ম্যাজ করবে। এইজন্যে ও পথের পথিক না হওয়াই ভাল। কিন্তু বহু ভাল ভাল ছেলে এমন চাকরিতে ঢুকেছেন যেখানে মদ খাওয়াটা সংস্কৃতির লক্ষণ। তাঁরা মদের ফাঁদে পা দিয়ে মদ্যপ হয়ে গিয়েছেন। সেদিন দেখি একটি ছেলে মদ খেয়ে তার সৌম্য একহারা চেহারাটিকে নষ্ট করে ফেলেছে। অথচ এই ছেলেটিকে খুব বাচ্চাবয়স থেকে জানতাম, কথাবার্তা কম বলত। সংযমী, পরিশ্রমী। দেখে মনে হল, ছেলেটি শীগ্রই লিভারের অসুখে পড়বে।
সশস্ত্র বাহিনীতে মদ অর্ধেক দামে পাওয়া যায়। বিনাপয়সাতেও মদের ছড়াছড়ি। সিগারেট কিনতেও আর্মির লােকদের শুল্ক লাগেনা। এর ফলে মদ্যপানকে বা ধূমপানকে সেখানে উৎসাহ দেওয়া হয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও সেখানে বহু অফিসার ও জওয়ান মদ স্পর্শ করেন না। এদের চরিত্রবল প্রশংসা করার মত। সিনেমা লাইনে একটা পারমিসিভ সমাজ গড়ে উঠেছে।
১. সাধারণের কাছে যে যে আচরণ দৃষ্টিকটু, সিনেমার নটনটীদের জীবনে তা শুধু স্বাভাবিক নয় বরং গৌরবের। একাধিক বিয়ে, ডিভাের্স, বিয়ে না করে একত্র বসবাস, মদ্যপান, জুয়াে, রেস, আয়কর ফাঁকি দেওয়া, কালােটাকা করা এ লাইনে কৃতিত্বের। এমনকি ফৌজদারি অপরাধ করলেও জনপ্রিয় তারকাদের ক্ষেত্রে সাতখুন মাপ।
কিন্তু এর মাঝেও সমস্ত প্রলােভনকে তুচ্ছ করে বহুলােক চিত্রজগতে আছেন যাঁরা স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন যাপন করেন। মদ খাননা এবং তাঁদের চরিত্র নিয়ে কোনও বদনাম নেই।
একনজরে মানুষ চেনার জন্য সর্বাগ্রে দেখে নিন
কোনও মানুষের ব্যবহারে পূর্বাপর সঙ্গতি আছে কিনা। স্বার্থ থাকলে বহু বড় বড় মানুষও সামান্য মানুষের কাছে নতজানু হয়ে অনুগ্রহ ভিক্ষা করেন। আপনার চেয়ে সবদিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন যিনি, বিনা স্বার্থে তিনি আপনার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করছেন।
ভােটের সময় প্রার্থীরা গরিব কৃষক মজুরদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সুখ দুঃখের খোঁজ নেন, কিন্তু ভােট শেষ হয়ে গেলে চিনতে পারেন না এমন ব্যক্তি অত্যন্ত কপট ও ধূর্ত।
২. আপনার সহকর্মী, অন্তরঙ্গ বন্ধু বা বহুদিনের পরিচিত কোনও ব্যক্তি এমন পদে চলে গেলেন যেখান থেকে অনুগ্রহ বণ্টনের সুযােগ আছে যথেষ্ট। আপনি তাঁর কাছে পুরনাে পরিচয়ের সুযােগ নিয়ে দেখা করতে গেলে যদি দেখেন তাঁর ব্যবহার একদম বদলে গেছে বুঝবেন, লােকটি কোনকালেই খাঁটি ছিলনা। এতদিন পরে পরীক্ষায় সেটি ধরা পড়ল।
কোনও মানুষকে চট করে চিনতে গেলে দেখবেন সে কথা দিয়ে কথা রাখে কিনা। অধিকাংশ লােকই বাতকে বাত হিসাবে একটা কথা বলে দেয়, যেমন আমি অমুককে বলে দেব, ওটা করে দেব, আরে ওতাে আমার বহুদিনের বন্ধু । কিন্তু পরে প্রয়ােজনের সময় আর তাকে পাওয়া যায়না। তাই হেঁদো কথায় ভুলবেন না। কে মাল পৌঁছে দিতে পারে তার নিরিখেই বিচার করুন মানুষকে।
৪. মানুষের মন পদ্মপাতায় জল। তাই কারও কথা পুরােপুরি বিশ্বাসও করবেন না, অবিশ্বাসও করবেন না। ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রাণের বন্ধুকেও বিশ্বাস করবেন না। সব কিছু লিখিত পডিত চুক্তি করে নেবেন। আজ যদি কেউ আপনাকে বলে, তুমি আমার প্রাণের বন্ধু, তােমার সঙ্গে আমার জীবনে বিচ্ছেদ হবেনা—একথা শুনে মনে মনে হাসবেন।
বহু দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং সুগভীর প্রেম পরবর্তীকালে অতি সামান্য কারণে ভেঙে টুকরাে টুকরাে হয়ে গিয়েছে। পৃথিবীতে কোনও সম্পর্কই স্থায়ীময়। আমি মা ছেলের সম্পর্কের মধ্যেও পরম বৈরীতা দেখেছি। আবার দেখেছি অনাত্মীয় মহিলাকে মা বলে তার পদবি পাতানাে ছেলে গ্রহণ করেছে।
কখনও নিজেকে নিঃশেষ করে বিলিয়ে দেবেন না। নিজের জন্য কিছুটা অবশিষ্ট রাখবেন। বিদ্যাসাগর মশাইও নিজের বাড়ি ঘরদোর ব্যবসাপত্র সব রেখে তবে উদ্ধৃত্ত অর্থ অকাতরে দান করেছেন। হর্ষবর্ধন যজ্ঞে সব কিছু দান করে কোপণ পরে প্রাসাদে ফিরেছেন। কিন্তু প্রাসাদে তাঁর আরও অনেক সেট পােশাক ছিল। যাকে ভাল বাসছেন সব সময় ভাববেন, এ যদি চলেও যায় তাহলেও আমি বেঁচে থাকব। আপনাকে কেউ মিথ্যা বলছে কিনা তা পরীক্ষা করার মন্ত্র কি? মন্ত্র একটাই, আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছো বই।