দ্য হোয়াইট ক্যাসল : ওরহান পামুক — The White Castle

0

    ওরহান পামুকের নোবেলজয়ী নতুন বই।

    দ্য হোয়াইট ক্যাসল

    ' দ্য হােয়াইট ক্যাসল ' ওরহান পামুকের লেখা প্রথম উপন্যাস এবং বাংলা ভাষায় আমরাই প্রথম তার বই অনুবাদ করেছি। ২০০৬ সালের নােবেল বিজয়ী সাহিত্যিক ওরহান পামুক সাতটি উপন্যাসের জনক, এর মধ্যে পাঁচটি ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তুরস্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক তিনি, পেয়েছেন অসংখ্য আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার, এর মধ্যে রয়েছে। ইমপ্যাক অ্যাওয়ার্ড। মাই নেম ইজ রেড’ গ্রন্থের জন্য এ পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।
    Book Publish Author  Size
    দ্য হোয়াইট ক্যাসল জোনাকী ওরহান পামুক 8 মেগাবাইট
    Shop Price Lang  Page
    Durdin Magazine Only 180 Taka Bangla 126

    দ্য হোয়াইট ক্যাসল pdf

    ইউরােপের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ লেখকদের অন্যতম ওরহান পামুকের বই ২০টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। পামুকের সাম্প্রতিকতম গ্রন্থ ‘ইস্তাম্বুল’ আসলে তাঁর স্মৃতিকথা। পামুক ইস্তাম্বুলে সপরিবারে বাস করেন। ' দ্য হােয়াইট ক্যাসল ' তুর্কি ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ভিক্টোরিয়া হলরুক। এ বইয়ের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি ১৯৮২ সালে ইবজে শহরের সরকারি আর্কাইভ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন ইতিহাসবিদ ফারুক দারভিনােগলু। পাণ্ডুলিপির বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক মূল্যের পাশাপাশি কাহিনির বৈচিত্র্য এবং ভাষাশৈলী মুগ্ধ করে তাঁকে। এ বইতে যেসব ঐতিহাসিক স্থান-কাল-পাত্রের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, বহুলাংশে তা সত্যি। অনুবাদক চেষ্টা করেছেন মূলের সঙ্গে সংগতি রক্ষা করে চলতে। আশা করা যায় দ্য হােয়াইট ক্যাল উপভােগ করবেন পাঠক।

    — প্রকাশক

    দ্য হােয়াইট ক্যাসল by ওরহান পামুক 

    ভেনিস থেকে নেপলসে যাচ্ছি, এমন সময় হাজির হলাে তুর্কি নৌবহর। মােট তিনটে জাহাজ। কিন্তু কুয়াশা ভেদ করে ওগুলাের গ্যালি দেখে মনে হচ্ছিল বহরের বুঝি শেষ নেই। ভয় পেলাম আমরা, আতঙ্কিত এবং হতবুদ্ধি হয়ে পড়ল আমাদের লােকজন, ছড়িয়ে পড়ল সবখানে। আমাদের দাড়িরা, বেশির ভাগ তুর্কি এবং মূর, সােল্লাসে চেঁচাতে লাগল। আমাদের নৌ যানের বাে ঘুরে গেল পশ্চিমে, জমিনের দিকে, অন্য দুটোর মতাে। কিন্তু ওদের মতাে দ্রুতগতি নয় আমাদের জাহাজ। আমাদের ক্যাপ্টেন ভয় পেলেন ভেবে ধরা পড়তে শাস্তি হবে। এই ভয়ে বৈঠা বাইবার দায়িত্ব থাকা বন্দিদেরকে চাবকানাের হুকুমও দিতে পারলেন না। পরে ভেবেছি কাপুরুষতার ওই মুহূর্ত আমার গােটা জীবন বদলে দিয়েছিল।

    এখন মনে হচ্ছে আমার জীবন বদলে যেতে পারত যদি আমাদের ক্যাপ্টেন হঠাৎ করে ভয়ে কাবু হয়ে না পড়তেন। অনেকের ধারণা, জীবনে যা ঘটে সবকিছুর মধ্যে কাকতালীয় একটা যােগাযােগ থাকে। আমি এ মুহূর্তে আমার পুরানাে টেবিলে বসে বই লিখছি, তবে মানস চক্ষে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি কুয়াশা ভেদ করে তুর্কি জাহাজগুলাে যেন অপচ্ছায়ার মতাে আসছে।

    The White Castle

    আমাদের ক্যাপ্টেন মনে জোর পেলেন দেখে অপর দুটি জাহাজ তুর্কি বহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কুয়াশার মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেছে। অবশেষে দাঁড়িদের ধরে প্রহার করার সাহস তার হলাে। কিন্তু ততক্ষণে আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি। বেত মেরেও কাজ হলাে না। স্বাধীনতার আবেগে মশগুল দাড়িরা পিটুনি গ্রাহ্য করছে না। কুয়াশার দেয়াল ভেদ করে নানা রঙের ঢেউয়ের মধ্যে কমপক্ষে দশটি তুর্কি নৌবহর ঢুকে পড়েছে, ছুটে আসছে আমাদের দিকে। আমাদের ক্যাপ্টেন অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন লড়বেন। তবে আমার ধারণা তিনি শত্রর বিরুদ্ধে নয়, আসলে ভয় তাড়াতে এবং নিজের লজ্জা কাটাতে তিনি লড়াই করতে চেয়েছেন। তিনি ক্রীতদাসদের নির্দয়ভাবে বেধড়ক পিটুনি দিয়ে হুকুম দিলেন সবগুলাে কামান প্রস্তুত রাখতে। কিন্তু যুদ্ধের উৎসাহ ফুৎ করে নিভে গেল। 

    দ্য হােয়াইট ক্যাসল pdf

    আমরা যদি আত্মসমর্পণ না করি, আমাদের জাহাজ ওদের গােলার আঘাতে নির্ঘাৎ ডুবে যাবে। তাই আত্মসমর্পণের পতাকা উড়িয়ে দেয়া হলাে।

    আমি আমার কেবিনে ঢুকলাম। ছােট ট্রাংকটি খুলে বের করলাম কিছু বইপত্র। ডুবে গেলাম নিজের ভাবনায়। ফ্লোরেন্স থেকে কিনে আনা একটি ভলমের পাতা ওল্টাতে গিয়ে অশ্রুসজল হয়ে উঠল চোখ। চিৎকার চেঁচামেচি, মানুষজনের ছুটন্ত পদশব্দ শুনতে পাচ্ছি। জানি যেকোনাে মুহূর্তে কেউ এসে হাত থেকে কেড়ে নেবে বইটি। তবু ওসব না ভেবে বইতে কী লেখা আছে তা-ই ভাবতে চাইলাম। বইয়ে লেখা বাক্যগুলােতে যেন ধরা আছে আমার অতীত জীবন যে জীবন হারাতে আমার ভয়; আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে লেখা পড়ছি, যেন প্রার্থনার শ্লোক আওড়াচ্ছি। বইয়ের পুরােটাই মস্তিষ্কে গেঁথে নিতে চাইছি আমি যাতে ওরা যখন আসবে, ওদের কথা ভাবব না আমি, ভাবব না ওরা আমাকে কীভাবে নির্যাতন করবে। বরং স্মৃতিচারণা করব আমার বর্ণিল অতীত নিয়ে। | ওই সময় আমি অন্যরকম একজন মানুষ ছিলাম। এমনকি আমার মা, প্রেমিকা এবং বন্ধুরাও আমাকে আলাদা নামে ডাকত। মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখি ওই লােকটি যে ছিল আমি কিংবা বিশ্বাস করি ওই লােকটিই আসলে ছিলাম আমি, ঘুম থেকে জেগে উঠি ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে। এই লােকটি আমার স্মৃতিতে নিয়ে আসে বর্ণহীন রং, স্বপ্নের মতাে সেইসব ভূমি যার আসলে কোনাে অস্তিত্ব নেই, সেই সব প্রাণী আদতে যার বিচরণ নেই, অবিশ্বাস্য কিছু অস্ত্র যা আমরা বছরের পর বছর ধরে আবিষ্কার করেছি, ওই সময় ওই লােকটির বয়স ছিল তেইশ, সে ফ্লোরেন্সে বিজ্ঞান এবং শিল্পকলা’ নিয়ে পড়াশােনা করত, বিশ্বাস করত জ্যোর্তিবিদ্যায়, মনে করত সে অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা এবং চিত্রকলা সম্পর্কে কিছু জ্ঞান রাখে। তার সমকক্ষ কেউ ছিল না। সে জানত সে অন্য যে কারও চেয়ে বুদ্ধিমান এবং সৃষ্টিশীল ।। | সংক্ষেপে সে ছিল গড়পড়তার এক তরুণ। ভারতেও যন্ত্রণা জাগে বুকে, যখন নিজের জন্যে একটি অতীত আবিষ্কার করার প্রয়ােজন হয়ে পড়ে আমার, এই যুবকটি যে তার প্রেয়সীর সঙ্গে নিজের আবেগ নিয়ে গল্প করত, বলত নিজের পরিকল্পনা, পৃথিবী এবং বিজ্ঞান নিয়ে, প্রেমিকার প্রশংসা যার কাছে খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার ছিল, সে প্রকৃতপক্ষে আমি। তবে নিজেকে সান্ত্বনা দিই এ ভেবে একদিন অন্তত কিছু মানুষ ধৈর্য ধরে আমার এ লেখা পড়বে এবং বুঝতে পারবে আমি সেই যুবক ছিলাম না।

    দ্য হােয়াইট ক্যাসল : বাংলা পিডিএফ

    এবং সম্ভবত ধৈর্যশীল ওই পাঠককুল ভাববে, যেমনটি আমি এখন ভাবছি, যে ওই যুবকের গল্প, যে তার মূল্যবান বইগুলাে পড়তে পড়তে বিসর্জন দিয়েছে প্রাণ। তুর্কি নাবিকরা লাফিয়ে উঠে এল জাহাজে। আমি বই ট্রাংকে পুরে রেখে উঁকি দিলাম বাইরে। জাহাজে যেন নরক ভেঙে পড়েছে। ওরা সবাইকে গরু-ছাগলের মতাে তাড়িয়ে একত্রিত করছে। তারপর নগ্ন হতে বাধ্য করছে। একবার ভাবলাম লাফিয়ে পড়ি পানিতে। কিন্তু সাগরে লাফিয়ে পড়লেও লাভ হবে না। ওরা ঠিকই গুলি করবে কিংবা পানিতে নেমে আমাকে পাকড়াও করবে। শেষে খুন করবে। তাছাড়া আমি জানিও না জমিন থেকে কতটা দূরে রয়েছি। অবশ্য প্রথমে কেউ আমার ধারে কাছেও ঘেষল না। শিকল মুক্ত হয়ে মুসলিম ক্রীতদাসরা আনন্দে চিল্কার করছিল। একদল তাদেরকে উসকে দিচ্ছিল যারা এতদিন ওদেরকে চাবকেছে তাদের ওপর প্রতিশােধ নেয়ার জন্য।

    শীঘ্র ওরা আমাকে কেবিনে খুঁজে পেল। ঢুকে পড়ল ভেতরে। লুট করল হাতের কাছে যা পেল সব। ট্রাংক উল্টেপাল্টে দেখল সােনার খোঁজে। আমার সমস্ত জামাকাপড় নিয়ে নিল ওরা, কিছু বইও। আমি কিছু বইযের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়লাম ইচ্ছে করেই । কিন্তু একজন আমাকে ঘাড় ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে চলল তাদের এক ক্যাপ্টেনের কাছে। | ক্যাপ্টেন, পরে জেনেছে তার নাম গিনােয়িস কনভার্ট, আমার সঙ্গে সদয় আচরণ করলেন। জানতে চাইলেন আমি কী কাজ করি, পেশা কী। যাতে বৈঠা বাইতে না হয় সেজন্য ঘােষণা করলাম জ্যোতির্বিদ্যা এবং নৈশ জাহাজ চালনার ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে আমার। কিন্তু এতে ক্যাপ্টেনের চেহারায় কোনাে ভাবান্তর ঘটল না। বললাম আমি একজন ডাক্তার। আমার কাছে এক লােককে নিয়ে আসা হলাে। লােকটির একটি হাত নেই। আমি আপত্তি করলাম। বললাম আমি শল্য চিকিৎসক নই। এতে রেগে গেল ওরা। আমাকে তখুনি বৈঠা বাইবার কাজে লাগিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু ক্যাপ্টেন, তিনি আমার বইগুলাে লক্ষ করেছেন, জিজ্ঞেস করলেন মূত্র এবং নাড়ির স্পন্দন সম্পর্কে কিছু জানি কি না। বললাম জানি। তখন বৈঠা বাইবার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে গেলাম। কিছু বইও রক্ষা করা গেল এ সুবাদে।

    কিন্তু এর মাশুল আমাকে দিতে হয়েছে, বন্ধুগণ। যেসব ক্রিশ্চিয়ান বৈঠা বাইছিল তারা আমাকে তক্ষুণি ভৎর্সনা করল। ওরা সুযােগ পেলে খােলের মধ্যে আমাকে হত্যা করতো।

    দ্য হােয়াইট ক্যাসল ওরহান পামুক

    রাতে ওখানেই থাকতে হতাে সবাইকে। কিন্তু খুন করতে ভয় পেয়েছে। কারণ খুব দ্রুত তুর্কিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিলাম আমি। আমাদের কাপুরুষ ক্যাপ্টেন হট্টগােলের মধ্যে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। যেসব নাবিক ক্রীতদাসদের বেত মেরেছে, তাদের নাক এবং কান কেটে সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হলাে। অন্যদের প্রতি এটা ছিল সতর্কবাণী। | আমি কয়েকজন তুর্কিকে সুস্থ করে তুললাম। তবে এতে শারীরবিদ্যার জ্ঞানের চেয়ে নিজের কমনসেন্স কাজে লেগেছে বেশি। আহতরা সেরে ওঠার পরে তাদের বিশ্বাস হলাে আমি একজন ডাক্তার। তবে ঈর্ষাকাতর কেউ কেউ তুর্কিদের বলছিল আদপে আমি কোনাে ডাক্তার নই। অথচ এরাই রাতে খােলে শুয়ে তাদের ক্ষতের চিকিৎসার জন্যে অনুরােধ করেছে আমাকে।

    বিশেষ এক অনুষ্ঠানে যােগদানের জন্যে ইস্তাম্বুল অভিমুখে আমাদের যাত্রা শুরু হলাে। বলা হলাে বালক সুলতান উত্সব দেখছেন। ওরা প্রতিটি মাস্তুলে টাঙিয়ে দিল পতাকা। মাস্তুলের নিচে থাকল আমাদের পতাকা। উল্টে থাকল আমাদের আরাধ্য কুমারী মেরী এবং ক্রুস। আকাশে তােপধ্বনি করা হলাে। এত দীর্ঘ সময় ধরে অনুষ্ঠান চলল যে অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে অনেক দর্শক রােদের তাপে অজ্ঞান হয়ে পড়ল।

    সন্ধ্যা নাগাদ কাশিমপাশায় নােঙর করলাম আমরা। সুলতানের সামনে নিয়ে যাওয়ার আগে ওরা আমাদের গায়ে শিকল জড়াল, মশকরা করার জন্যে আমাদের সৈন্যদের গায়ে উল্টোভাবে চড়ানাে হলাে বর্ম, আমাদের কর্মকর্তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিল লােহার আংটা এবং জাহাজ থেকে কেড়ে নেওয়া শিঙা ফুকিয়ে, ভেড়ি বাজাতে লাগল ওরা বিজয় উল্লাসে। এভাবে নিয়ে চলল প্রসাদে। এভিনিউগুলােতে সারবেঁধে দাঁড়িয়ে আছে শহরের লােকজন। আমাদেরকে কৌতূহল এবং মজা নিয়ে দেখছে। সুলতান কিছু ক্রীতদসকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছেন। ওরা আমাদেরকে। গােল্ডেন হর্ন পার হয়ে গালাটায় নিয়ে গেল এবং সাদিক পাশা’র কারাগারে ঢুকিয়ে দিল ঠেলাধাক্কা দিয়ে।

    জেলখানাটা নরক বিশেষ। ছােট, স্যাতসেঁতে প্রকোষ্ঠের মধ্যে গাদাগাদি করে আছে শত শত বন্দি। এদের অনেকেই আহত, রােগাক্রান্ত। আমি চিকিৎসা করে এদের কয়েকজনকে সুস্থ করে তুললাম। রক্ষীদের পিঠ কিংবা পা ব্যথার ওষুধ লিখে দিলাম। 

    দ্য হােয়াইট ক্যাসল : নোবেল পুরস্কার জয়ী বই 

    এখানেও ওরা অন্যদের চেয়ে আমার সঙ্গে তুলনামূলক ভালাে ব্যবহারই করল। থাকতে দিল উন্নত কারা প্রকোষ্ঠে যেখানে সূর্যের আলাে প্রবেশের সুযােগ পায়। অন্যদের করুণ দশা আমি দেখেছি। তার তুলনায় বেশ ভালােই আছি বলা যায়। কিন্তু একদিন সকালে ওরা আমাকে অন্যান্য কয়েদিদের সঙ্গে ঘুম থেকে তুলে বলল কাজে যেতে হবে। আপত্তি জানিয়ে বললাম আমি একজন ডাক্তার, আমি ওষুধপত্র এবং বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশােনা করেছি, এসবের খবর রাখি। ওরা আমার কথা শুনে শুধু হাসল।

    পাশা’র বাগানে দেয়াল তুলতে হবে। লােক দরকার। প্রতিদিন সকালে, সূর্য ওঠার আগে আমাদেরকে শিকলে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতে লাগল শহরের বাইরে। সন্ধ্যায় যখন টলতে টলতে ফিরতাম কারাগারে সারাদিন পাথর তােলার কাজ শেষ করে , তখনাে আমাদের গায়ে শিকল পরানাে। আমি এখানে ক্রীতদস বৈ কিছু নই।

    তবে আর দশটা সাধারণ ক্রীতদাসের মতাে আমি নই। লােক শুনেছে আমি ডাক্তার। তাই কারাগারের ক্রীতদাস বন্দিদের আমার চিকিৎসা করতে হলাে। শুধু ওরা নয়, অন্যদেরও চিকিৎসা করতে হচ্ছে। ডাক্তারি করে যে পয়সা পেতাম, বেশির ভাগ চলে যেত রক্ষীদের পকেটে। ও আমার টাকা কেড়ে নিত। আমার কাছে লুকানাে টাকা-পয়সা দিয়ে এক লােকের কাছে তুর্কি ভাষা শিখতাম। আমার শিক্ষক বয়সে পৌঢ়, পাশার ছােটখাটো কাজ করে দেয়। আমি দ্রুত তুর্কি ভাষা আয়ত্ত করে ফেলছি দেখে সে খুব খুশি। বলত আমি শীঘ্র মুসলমান হয়ে যাব। সে টাকা নিতে চাইত না। কিন্তু আমি জোর করে তাকে টাকা দিতাম। তাকে খাবার কেনার জন্যেও টাকা দিতাম। কারণ শরীর স্বাস্থ্য তাে ভালাে রাখা চাই।

    এক কুয়াশাচ্ছন্ন সন্ধ্যায় এক কর্মকর্তা ঢুকলেন আমার কারাগার-প্রকোষ্ঠে। বললেন পাশা আমাকে তলব করেছেন। দেখা করবেন। বিস্মিত এবং উত্তেজিত আমি তক্ষুণি রেডি হয়ে গেলাম। ভাবলাম বাড়ির কোনাে আত্মীয়, হয়তাে আমার বাবা কিংবা শ্বশুর নিশ্চয় আমাকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিপণ পাঠিয়েছেন। সরু, কুয়াশাভেজা রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় হঠাই মনে হলাে আমি যেন বাড়ি চলে এসেছি, এখনই দেখা হয়ে যাবে প্রিয়তমার সঙ্গে। যেন জেগে উঠব এক স্বপ্ন থেকে। সম্ভবত ওরা কাউকে এখানে পাঠিয়েছে। আমাকে মুক্ত করে নিয়ে যাওয়ার জন্য কথা

    দ্য হােয়াইট ক্যাসল : অনুবাদক অনীশ দাস অপু

    বলতে। হয়তাে এই কুয়াশাচ্ছন্ন রাতেই আমাকে তুলে দেয়া হবে জাহাজে, আমি ফিরে যাব বাড়ি।

    পাশার প্রাসাদে প্রবেশ করার পরে বুঝতে পারলাম আমার মুক্তি এত সহজে মিলবে না। এখানে লােকজন পা টিপে পিটে হাঁটে। প্রথমে ওরা আমাকে একটি লম্বা হলঘরে নিয়ে গেল। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর নিয়ে যাওয়া হলাে একটি ঘরে। ছােটখাটো একটি মানুষকে দেখলাম ডিভানে টানটান শুয়ে আছেন কম্বল মুড়ি দিয়ে। তারপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে পেশিবহুল শরীরের এক লােক। ডিভানে শুয়ে থাকা মানুষটিই পাশা। আমাকে ইঙ্গিত করলেন তাঁর দিকে এগিয়ে যেতে।

    আমার কথা বললাম। উনি আমাকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন। বললাম আমার পড়াশােনার মূল ক্ষেত্র ছিল জ্যোতির্বিদ্যা, অঙ্কশাস্ত্র এবং কিছুটা সীমিত আকারে প্রকৌশল বিদ্যা। তবে মেডিসিন নিয়েও আমি যথেষ্ট পড়ালেখা করেছি এবং বহু রােগীর চিকিৎসা করার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে, তিনি আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করে গেলেন। আমি যথারীতি জবাব দিয়ে গেলাম। তিনি বললেন যেহেতু আমি খুব দ্রুত তুর্কি ভাষা শিখে নিয়েছি কাজেই ধরে নিতে হয় আমার মাথায় অনেক বুদ্ধি। তিনি যােগ করলেন তাঁর স্বাস্থ্য ভালাে যাচ্ছে না। ডাক্তার দেখিয়েও কোনাে ফল পাননি। তাকে কেউ সুস্থ করে তুলতে পারেননি, আমি ডাক্তার শুনে খরব পাঠিয়েছেন। যাতে একবার তাঁকে পরীক্ষা করে দেখি। | তিনি এমনভাবে তাঁর সমস্যার কথা বলতে লাগলেন যে শেষে বাধ্য হলাম এ উপসংহারে আসতে যে তিনি এক দুরারােগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। এবং এ রােগটি শুধু তারই হয়েছে কারণ তার শুত্ররা ঈশ্বরের সঙ্গে প্রতারণা করেছিল। আসলে পাশা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। আমি তাঁকে কয়েকটি প্রশ্ন করলাম, কাশতে বললাম, তারপর রান্নাঘরে গিয়ে পুদিনাপাতা দিয়ে কফের একটি সিরাপ পান করলাম। তিনি চেয়ে চেয়ে দেখলেন। পাশা আমাকে গােপনে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। কেউ যেন দেখতে না পায়। চুপিসারে যেন ফিরে যাই কারাগারে।

    The White Castle : দ্য হোয়াইট ক্যাসল

    পরে ওই কর্মকর্তা ব্যাখ্যা করেছেন পাশা চাননি আমার কারণে অন্য ডাক্তাররা ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। পরদনি আবার এলাম আমি। পাশার কাশির শব্দ শুনে সেই একই ওষুধ খেতে দিলাম।

    The White Castle by Orhan Pamuk Pdf

    শিশুর মতাে উজ্জ্বল দেখাল তার চেহারা যখন কয়েকটি পাতা তার তালুর ওপর রাখা হলাে। কারাগারে ফেরার সময় প্রার্থনা করলাম মানুষটা যেন তাড়াতাড়ি ভালাে হয়ে যায়। পরদিন উত্তুরে হাওয়া বইতে লাগল। মৃদুমন্দ শীতল এ বাতাসে কেউ সুস্থ না থাকতে চাইলেও সুস্থ হয়ে যায়। তবে পাশার কাছ থেকে কোনাে খবর পেলাম না।

    মাসখানেক বাদে, এক মাঝরাতে আমাকে আবার তলব করা হলাে। পাশাকে এবার দেখলাম ডিভান ছেড়ে খাড়া হয়েছেন, হাসিখুশি চেহারা। তিনি কয়েকজনকে জোরে ধমক দিলেন। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম তাকে আর শ্বাসকষ্টে ভুগতে হচ্ছে না দেখে। আমাকে দেখে খুশি হলেন তিনি। বললেন তাঁর শরীর ঠিক হয়ে গেছে। বললেন আমি একজন ভালাে ডাক্তার। তাঁর কাছে আমি কি চাই? আমি জানতাম চাইলেও তার পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই আমি কারাগারে আমার প্রকোষ্ঠ নিয়ে অনুযােগ করলাম। বললাম আমাকে প্রচুর খাটুনির কাজ দেয়া হয়। যার ফলে শরীরের সমস্ত শক্তি যায় নিঃশেষ হয়ে। অথচ এ শক্তি আমি জ্যোতির্বিদ্যা এবং মেডিসিনের পেছনে ব্যয় করতে পারতাম। জানি না উনি আমার কথা কতটুকু শুনেছেন। তিনি আমাকে যে পরিমাণ অর্থ দিলেন তার সিংহভাগ রেখে দিল রক্ষীরা। | সপ্তাহখানেক পরে, এক রাতে এক কর্মকর্তা এলেন আমার কারা-প্রকোষ্ঠে। আমি পালিয়ে যাব না এ শপথ করার পরে শৃঙ্খলমুক্ত হতে পারলাম। আমাকে আবার কাজে নিয়ে যাওয়া হলাে তবে এবারে আমার সঙ্গে সদয় আচরণ করল। ক্রীতদাস-চালকরা। তিনদিন পরে কর্মকর্তা আমাকে নতুন জামাকাপড় কিনে দিলেন। বুঝতে পারলাম পাশা আমার যত্ন নিচ্ছেন।

    রাতের বেলা এখনাে নানান প্রাসাদে আমার ডাক পড়ে। আমি বাতরােগে আক্রান্ত বুড়াে জলদস্যুদের ওষুধ দিই। পেটের ব্যথায় আর্তনাদ করা তরুণ নাবিকদেরকেও ওষুধ দিই। একবার এক ভৃত্যের তােতলা ছেলেকে সিরাপ খাইয়ে তােতলামি সারিয়ে ফেললাম। সে আমাকে একটি কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়ে দিল।

    এভাবে কেটে গেল শীতকাল। বসন্ত এলাে। শুনতে পেলাম পাশা ভূমধ্যসাগরে বেরিয়ে পড়বেন নৌবহর নিয়ে। গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে ক্লান্ত দিনগুলােতে আমার হতাশা ও নিরাশ চেহারা দেখে লােকে বলল, আমার কোনাে কিছু নিয়ে অনুযােগ করা উচিত নয়। কারণ ডাক্তার হিসেবে নাকি আমি ভালােই কামাচ্ছি। বহু বছর আগে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়া এক ক্রীতদাস আমাকে পরামর্শ দিল আমি যেন পালিয়ে যাই। কাজে লাগে এরকম ক্রীতদাসদের ওরা রেখে দেয়, যেভাবে আমাকে রাখছে। এদেরকে তারা কখনােই দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয় না। তবে আমি যদি তার মতাে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি, আমি নিজেই স্বাধীন হয়ে যেতে পারব, এর বেশি কিছু নয়। | আমি লােকটিকে বললাম পালিয়ে যাওয়ার কোনাে ইচ্ছে আমার নেই। আসলে ইচ্ছে নয়, পালাবার সাহসই আমার নেই। যারা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছে তারা। খুব বেশি দূরে যেতে পারেনি। তার আগেই ধরা পড়েছে। এরপর সেই হতভাগ্যদের প্রচণ্ড প্রহার করা হয়। আমি সেই রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত শরীরের ক্রীতদাসদের চিকিৎসাও করেছি রাত্রে।

    | কাছিয়ে আসছে শরৎকাল, পাশা তার নৌবহর নিয়ে ফিরলেন; কামান দেগে সুলতানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন, আগের বারের মতাে উল্লাসিত করে তুলতে চাইলেন নগরবাসীকে। তবে এবারের যাত্রায় যে পাশা বিশেষ সুবিধে করতে পারেননি তা তাঁর ক্রীতদাসদের সংখ্যা দেখেই বােঝা যায়। মাত্র অল্প কয়েকজন ক্রীতদাস সংগ্রহ করতে পেরেছেন তিনি। এদেরকে কারাগারে ঢােকানাে হলাে। পরে শুনেছি ভেনেশিয়ারা দুটি জাহাজ পুড়িয়ে দিয়েছে। বাড়ি থেকে সংবাদ পাবার আশায় আমি সুযােগ খুঁজছিলাম ক্রীতদাসদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। ক্রীতদাসদের অধিকাংশ স্প্যানিশ; তবে এরা ভীতু, নিশ্ৰুপ, মূখ। খাবার কিংবা সাহায্যের দরকার হলে তারা মুখ খােলে না।।

    Read More: লাল কেশবতী PDF

    এদের একজন শুধু আমার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাল: এ লােকের একটি হাত নেই, তবে সে আশা নিয়ে শােনাল তার এক পূর্বপুরুষও এক ব্যর্থ অভিযানে একটি হাত খুইয়েছিলেন। তবে বাকি হাতখানা দিয়ে তিনি রােমান্টিক গল্প-কবিতা লিখেছেন। এ লােকের বিশ্বাস সে-ও এমন কিছু করতে পারবে। পরবর্তীতে, গল্প লেখার জন্য বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখত।।

    কিছুদিন পরে কারাগারে একটি সংক্রামক রােগ ছড়িয়ে পড়ল। মহামারির মতাে এ রােগে কারাগারের অর্ধেক কয়েদিই মরে সাফ হয়ে গেল।

    এ রােগের কবল থেকে যারা বেঁচে রইল তাদের নতুন কাজে লাগিয়ে দেয়া হলাে। কিন্তু আমি গেলাম না। সন্ধ্যাবেলা ওরা ফিরে এসে গল্প করত কীভাবে তারা গােল্ডেন হর্ন-এ গেছে, ওখানে মুচি, চিত্রকর, পােশাক-বিক্রেতা প্রভৃতি লােকজনের

    দ্য হোয়াইট ক্যাসেলের লেখক ওরহান পামুক

    তত্ত্বাবধানে নানান কাজ করতে হয়েছে। তারা কাগজের মণ্ড দিয়ে জাহাজ, প্রাসাদ, অট্টালিকা ইত্যাদি বানিয়েছে।

    একদিন সকালে পাশার প্রাসাদে ডাক পড়ল। আমি প্রাসাদে রওনা হতে হতে ভাবলাম পাশার শ্বাসকষ্টটা নিশ্চয় আবার ফিরে এসেছে। পাশা কী যেন কাজে ব্যস্ত, আমাকে একটি ঘরে বসতে বলল ওরা। আমি বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম কিছুক্ষণ পরে খুলে গেল আরেকটি দরজা। আমার চেয়ে বয়সে পাঁচ/ছয় বছরের বড় এক লােক ঘরে ঢুকল। তার দিকে মুখ তুলে চাইলাম আমি। চমকে উঠলাম দারুণভাবে, সেই সঙ্গে আতঙ্কিত!

    বাকি পৃষ্টাগুলো পড়তে নোবেল পুরস্কার জয়ী জনপ্রিয় লেখক ওরহান পামুকের দ্য হোয়াইট ক্যাসল বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন রকমারি অথবা আমাদের ফেসবুক পেইজ থেকে।

    অনুবাদক: অনীশ দাস অপু

    The White Castle Pdf
    Tags

    Post a Comment

    0Comments
    * Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
    Post a Comment (0)

    #buttons=(Accept !) #days=(20)

    Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
    Accept !