এলিজা চাই এর জনপ্রিয় মোটিভেশনাল বই 'সাকসেস ফর্মূলা থিংক এন্ড এচিভ'। বইটির বাংলা অনুবাদ করেছেন শরীফ নাফে আচ্ছাবের। এই বইটিতে জীবনে সাকসেস হওয়ার জন্য যে ফর্মূলা অনুসরণ করা দরকার, তা কিভাবে একজন মানুষ অর্জন করবে, কিভাবে থিংক করবে, এচিভ করবে, সেসব বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
'সাকসেস ফর্মূলা' হল বাংলা ভাষায় এলিজা চাই এর প্রথম অনুবাদ বই। শরীফ নাফে আচ্ছাবের ২০২২ সালে মুক্তদেশ প্রকাশন থেকে বইটি অনুবাদ করেন। এই বইটি পাঠ করলে সহজে কিভাবে সাকসেস অর্জন করা যায়, বিখ্যাত ব্যক্তিরা কি ফর্মূলা মেনে চলেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলবে। আমরা যা থিংক করি তা কতটুকু যুক্তিসম্মত? যে উপায়ে থিংক করি তা কি আমাদের চাহিদা অনুযায়ী কোনকিছু এচিভ করতে যথেষ্ট? আমাদের সাকসেস ফর্মূলায় ভুল কোথায়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হলে অবশ্যই বইটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করতে হবে।
ইতিহাস যখন বলছে মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় আবিষ্কার আগুন, চাকা কিংবা কম্পিউটার। তখন আমি বিশ্বাসের সাথে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলছি মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় আবিষ্কার আগুন নয়, চাকা নয় এমনকি কম্পিউটারও নয়। মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় আবিষ্কার আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম এবং সাকসেস ফর্মূলা।
যে আত্মবিশ্বাসের ফর্মূলায় পাখির উড়া দেখে মানুষ বিমান আবিষ্কার করে, গাধা ছাত্র আইনস্টাইন হয়ে উঠে পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানী। যাকে একসময় বস্তির ছেলে বলে পার্কে ঢুকতে দেয়া হয়নি ছেঁড়া পােশাকের কারণে, সেদিনের সেই বস্তির ছেলে এভু কার্নেগি হয়ে উঠে শ্রেষ্ঠ ধনপতি। দেশের সেরা মেধাবীদের যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বুয়েটে ভর্তির জন্য যুদ্ধে লিপ্ত, ঠিক তখনই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছেলেটি দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীদের পেছনে ফেলে বিসিএস পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় শীর্ষস্থানে চলে যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেও কেউ কেউ হয়ে উঠেন সম্মানিত জজ। এর পেছনে যে কারিশমা লুকিয়ে আছে তা হলাে আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম এবং সাকসেস ফর্মূলা।
যে আত্মবিশ্বাস বলে- আমি পারবােই, ইয়েস! মাকে পারতেই হবে। জন্মের পর একটি শিশু যখন কাঁদে তখন হয়তাে আপনি শুনতে পান ছেলেটি কাঁদছে “ওয়াউ ওয়াউ” বলে। কিন্তু আমি শুনতে পাই সে আসলে বলছে। “WOW! কারণ জন্মের সাথে সাথেই স্টেইতিহাসের বিজয়ীর খাতায় না লিখালাে। কীভাবে? জন্মই আপনার আজ সাফল্য! চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে একটি শুক্রানু আর ডিম্বানুর মিলনের ফুষেই শিশুর জন্ম হয়। মাতৃগর্ভে একটি ডিম্বানুকে নিষিক্ত করতে কোটি কোটি শুক্রানু প্রতিযােগিতায় লিপ্ত হয়। কিন্তু একটি ডিম্বানুকে নিষিক্ত করতে প্রয়ােজন হয় শুধু একটি শুক্রানুর। সেই কোটি কোটি শুক্রানুকে পরাজিত করে যে নির্দিষ্ট শুক্রানুটি সফলভাবে ডিম্বানুকে নিষিক্ত করেছিল, তারই পরিপূর্ণ রূপ আমি, আপনি আমরা সবাই। যে আপনি পৃথিবীতে আসার আগেই মাতৃগর্ভে কোটি কোটি প্রাণকে পরাজিত করেছেন, আজ সেই বিজয়ী আপনি কেন পৃথিবীতে এসে পরাজয়ের ভয় পাচ্ছেন? জন্মের আগেই আপনি দেখিয়ে দিয়েছেন আপনার সফলতার অসীম ক্ষমতা।

আপনি ব্যর্থ হতেই পারেন, কিন্তু হাল ছাড়বেন না। আগামীর সূর্য আপনারই জন্য। এক সূর্যেই সবার সকাল হয়, এক আকাশের নিচেই সবার আশ্রয়; অথচ কেউ কেউ শুধু নােবেল পদকগুলাে বানিয়েই যায়, আর কেউ কেউ বিশ্বজয় করে সে নােবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়। আপনি কি নােবেল পদক নির্মাতা শ্রমিক হবেন, নাকি নােবেল পদকে ভূষিত বিজয়ী বীর হবেন- সে সিদ্ধান্ত আপনার। আগুন নেভাতে কোন ধরনের পানি লাগে? মিনারেল ওয়াটার, ফুটন্ত পানি নাকি বৃষ্টি কিংবা পুকুরের পানি? ভাই, আগুন নেভাতে শুধু পানিই দরকার। সেটা পুকুরের পানি হােক কিংবা নর্দমার পানিই হােক। আপনার সফলতার জন্যও তেমনি কিছু ফর্মূলা প্রয়োজন।
সাকসেস ফর্মূলা pdf
'সাকসেস ফর্মূলা pdf' অনুসারে আপনার অতীতের ভালাে ব্যাকগ্রাউন্ড, দামি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা নামি মানুষের সাথে সম্পর্ক লাগবে না। আপনার সফলতার জন্য শুধু আপনাকেই লাগবে। ইয়েস, শুধুই আপনাকে। আপনি চাইলেই আপনার ইতিহাস লেখা হবে নতুন করে। আপনিই হচ্ছেন আপনার ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ স্থপতি।
আপনি যখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করবেন, তখন হয়তাে আপনার পাশের বন্ধুটি এসে বলবে- “ছেড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখাে না।” তখন আমার কাছে আসেন, আমি আপনার সাথে হ্যান্ডশেক করে বলে দিব, যারা লাখ টাকার স্বপ্ন দেখেছেন তারা লাখপতি নয়, কোটিপতিও নয়, শ্রেষ্ঠ ধনপতি হয়েছেন। তারা স্বপ্ন দেখার সময় ঐ ছেঁড়া কাঁথাটুকুও পাননি।
শৈশবে স্কুলে ভর্তি হতে মাত্র ১২০ টাকার জন্য ভিক্ষা করেছিলেন যে ছেলেটি, পরবর্তীতে তিনিই হয়েছিলেন বাংলাদেশের গভর্নর। কী অবিশ্বাস্য গল্প আতিউর রহমানের। যে একসময় ভিক্ষা করেছিল, পরে তার স্বাক্ষর ছাড়া টাকাই তৈরি হয় না। যে এন্ড্রু কার্নেগিকে বস্তির ছেলে বলে পার্কে ঢুকতে দেয়া হয়নি, সে কি না কিনে নিল পার্কটি আর হয়ে গেল শ্রেষ্ঠ ধনপতি। বিশ্বাস করেন এমন কাহিনি যা গল্পকেও হার মানায়, এসব লিখতে গিয়ে আমারই গায়ের লােম সব দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
গরু জন্মের সাথে সাথেই দৌড়াতে পারে, কিন্তু জন্মের পর একটি মানব শিশু হাঁটা তাে দূরে থাক বসতেও পারে না। বসতে গেলেই সে ব্যর্থ হয়, হাঁটতে গেলেও সে ব্যর্থ হয়। অথচ বিধাতা মানুষকেই বলেছেন- শ্রেষ্ঠ জীব, গরুকে নয়। যে মানব শিশুটি জন্মের পর হাঁটতেই পারে না, পরবর্তীতে সে-ই হয়ে যায় ইতিহাস বিখ্যাত শ্রেষ্ঠ দৌড়বিদ। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এখানেই! সে ব্যর্থ হতে হতেই শ্রেষ্ঠ হয়।
Winners aren't people who never fail, but people who never quit.
যারা ব্যর্থ হয়ে ছাড়েনি, তারাই চূড়ান্ত বিজয় দেখেছে। আজকের ব্যর্থতাই কালকের অনুপ্রেরণা। আপনার দুর্বলতায় আপনার প্রধান শক্তি। পাহাড়ের বাধা পেয়ে, আঁকাবাকা পথ বেয়ে পানি আসে বলেই ঝরনার দৃশ্য এত সুন্দর!
নেলসন মান্ডেলা বলেছেন-
“Don't judge me by my success, judge me by how many times i fell down & got back up again.”
ছন্দময় কবিতায়ও মাঝে মাঝে দাঁড়িকমার বাধা আসে, দাঁড়িকমা আসলেই আবৃত্তিশিল্পীকে একটু থামতে হয়। কেন এই থেমে যাওয়া? এর মানে কবিতা থেমে যাওয়া নয়, বিরামচিহ্নের এই বাধা আসে কবিতার ছন্দ আরাে বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। আমি বিশ্বাস করি, আপনার জীবনের বাধাগুলােও আপনার সফলতার পথের কাঁটা নয়, বরং জীবনের সৌন্দর্য। সফল অনেকেই হয় কিন্তু বিখ্যাত সফল তারাই হয় যারা বাধা ডিঙাতে পেরেছে।
একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ, অনড় সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে জীবনের সব হিসেবনিকেশ। আপনি যখন দু'কদম হেঁটেই ক্লান্ত হয়ে যান, তখন ইতিহাস স্বাক্ষ্য দিচ্ছে। অলিম্পিক প্রতিযােগিতায় উসাইন বােল্ট ২০০ মিটার দৌড়ে বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে এনেছেন; মুসা ইব্রাহিম এভারেস্ট জয় করে এনেছেন। দুধে টক পড়লে আপনি যখন দুধ নষ্ট হলাে বলে আক্ষেপ করেন, ঠিক তখন আমি দুধের সাথে টকের মিশ্রণে সুস্বাদু দই বানাই। ঘটনা একই শুধু চিন্তাটা ভিন্ন। যে কাজটি করতে গিয়ে আপনি হতাশায় ভুগছেন, ইতিহাস খুঁজে দেখেন সেই একই কাজে কেউ একজন চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসে আসেন। আপনি যখন বলছেন, আমি কিছুই পারি। তখন আমি বলছি এমন কোনাে কাজ নেই যা আপনি পারেন না। আপনি যখন বলেছেন, আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না। তখন আমি বলছি আপনাকে ছাড়াই কিছু হবে না। বাতাস পেলে ঘুড়ি উড়ে, কাগজ উড়ে, পালক উড়ে কিন্তু পাখি বাস ছাড়াই আকাশে উড়ে। বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজটি করার ক্ষমতাও বিধাতা আপনাকে দিয়েছেন। প্রতিযােগিতায় হয় আপনি জিতবেন, না হয় শিখবেন। কিন্তু হেরে যাওয়ার কোনাে অপশন নেই।
স্বার্থ হওয়া মানে এটাই প্রমাণ করা আপনিই সেই ব্যক্তি যিনি ঐ প্রতিযােগ্রিতায় চ্যাম্পিয়নের সাথে লড়াই করেছেন। স্কুলের বাস্কেটবল টিম থেকে বাদ পড়া ছেলেটি যদি পরের দুই যুগে বাস্কেটবলের ইতিহাসে বেস্ট প্লেয়ার মাইকেল জর্ডান হতে পারে, তবে আমি চ্যালেঞ্জ করেই বলছি আপনার অসাধ্য ইমর কিছুই থাকতে পারে না। আপনার এখনাে অনেক কিছুই দেখানাে বাকি, আপনার ভাগ্য ১ ইঞ্চি তাবিজে নয়, কয়েক ইঞ্চি হাতের রেখায় নয়, আপনার ভাগ্য জ্যোতিষীর গণনায়ও নয়; আপনার ভাগ্য আপনার হাতের মুঠোয়।
আপনি যখন চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলবেন- ৩৩ তম বিসিএস এ প্রিলিতে ফেল করা ওয়ালিদ যদি ৩৪ তম বিসিএস এ ফার্স্ট হতে পারে; টমাস আলভা এডিসন যদি হাজারবার ব্যর্থ হওয়ার পরও হাল ছেড়ে না দেয়ার কারণে ইতিহাস বিখ্যাত বিজ্ঞানী হতে পারেন; হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে যদি ২ বারের চরম ব্যর্থতা ও “চর্যাপদ আবিষ্কারের পথ থেকে এক চুলও বিচ্যুত করতে না পারে; মাধ্যমিকও পাশ না করা নজরুলের বই যদি দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলাের পাঠ্যপুস্তক হতে পারে; তবে আমার অসাধ্য বলতে কিছুই থাকতে পারে না। ঠিক এমন কঠিন শপথে যখন আপনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করবেন, আপনার নেতিবাচক বন্ধটি হয়তাে মুচকি হেসে বলবে- “পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।” ঐ মুহূর্তে একবার আমার কাছে আসেন, আপনার সাথে হ্যান্ডশেক করে আমি প্রমাণ করে দিব পিপীলিকার পাখা মরিবার তরে গজায় না; পিপীলিকার পাখা গজায় উড়িবার তরে।
সাকসেস ফর্মূলা by এলিজা চাই
হ্যালাে, সাহস এখনাে জাগেনি আপনার? এলিজা চাই তার সাকসেস ফর্মূলা বইয়ে বলছেন–, তবে শুনুন আমি আপনাকে বলছি! যে আপনি জন্মের পর কথা বলতে পারতেন না, সে আপনিই আজ শ্রেষ্ঠ বক্তা। যে আপনি একসময় সামান্য দাঁড়াতে গেলেই ব্যর্থ হতেন, সে আপনি আজ শ্রেষ্ঠ। দৌড়বিদ। যে আপনি সাইকেল চালাতে গিয়ে শতবার আছাড় খেয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন, সে আপনিই আজ পাইলট। যে আপনি বাবার হাত না ধরে ছােটবেলায় ঘরের চৌকাঠ পার হতে পারতেন না, সে আপনিই আজ পাইলট হয়ে সীমান্ত পাড়ি দেন একাই; নিয়ে যান হাজারাে মানুষকে।
হে মানুষ! তুমিই শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়েছ বারবার। তােমার অসাধ্য কিছু নেই! যে কাজে আপনি সফল হতে চান, তবে সে কাজে যদি আগে কেউ সফল হয় তবে তাকে অনুসরণ করুন। যদি কেউ সে কাজে আগে সফল না হয়, তবে আপনি নিজেই হয়ে যান ইতিহাসের উদাহরণ। দাঁতে দাঁত চেপে, মুষ্টিবদ্ধ হাতে একবার কি বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ইয়েস! আমি পারবােই।। আপনার সফলতার পথে পুরাে পৃথিবী বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেও কেউ একজন আপনার মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকবে। তিনি হলেন মহান সৃষ্টিকর্তা, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেই বলেছেন- “সৃষ্টির সেরা জীব।” সুতরাং আপনি সফল হওয়া মানেই বিধাতায় সেই কথাটি প্রমাণ হয়ে যাওয়া।
ব্যর্থতার চূড়ায় সাফল্যের পদচিহ্ন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস এর নাম- আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। অনার্স পাশ করা যেকোনাে ছেলে বা মেয়ের কাছে সবচেয়ে বিব্রতকর প্রশ্ন “তুমি এখন কি করাে”? কোনাে আত্মীয়ের বাসায় গেলে, গাড়িতে কারাে সাথে হঠাৎ দেখা হলে, স্কুলের সেই প্রিয় স্যার এর সাথে দেখা হলে, কোনঅনুষ্ঠানে মা কাউকে সালাম করতে বলে পরিচয় করিয়ে দিলে- সবার তখুন একটাই প্রশ্ন “বাবা, তুমি এখন কি করাে”? আপনি কী করছেন সেটাই যেন এক জাতীয় সমস্যা! রাস্তায় কিংবা গাড়িতে বা কোন অনুষ্ঠানে হঠাৎ পুরনাে বন্ধুর সাথে দেখা হলে তারও একই প্রশ্ন, “দোস্ত এখন কি করিস”?
আপনার আজকের একটা কঠিন সিদ্ধান্তই আগামীতে উত্তর নিয়ে আসতে পারে এমন প্রশ্নের। পৃথিবীতে এমন লােকও পাওয়া যাবে না, যে কিনা সফল হতে চায় না। তবে “আমার দ্বারা হবে না” এ কথা বলা লােকের সংখ্যা কিন্তু প্রচুর। যে বলে “আমার দ্বারা হবে না” সে নিজেও কিন্তু সফল হতে চায়। শুধু ভয় তার ব্যর্থতার । একটা কাজে ব্যর্থ হলে সে আর অন্য কাজে হাত বাড়াতে চায় না। চুন খেলে গাল পুড়ে গেলে তখন দই দেখলেও ভয় লাগে। ব্যর্থতাও জীবনের এক শিক্ষা।
এ.পি.জে আবদুল কালাম বলেছেন-
Don't read success stories, you will get only message. Read failure stories, you will get some ideas to get success.
যদি আপনি জীবনে ক্রমাগত ব্যর্থই হয়ে থাকেন, তবে আজ আমি সত্যজিৎ আপনাকে একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম। যদি আপনি হতাশ না হয়ে কাজ করে যান, তবে আপনি সফল হবেনই হবেন, চ্যালেঞ্জ!! কথা হল একজন নব্য এএসপির সাথে, আজ থেকে ৩ বছর আগেও নাকি কেউ তাকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখালে তিনি তাকে পাগল বলতেন। এতটাই অবিশ্বাস হচ্ছিল উনার এই সফলতা! আরেকজন বলেছেন, তিনি নাকি ম্যাজিস্ট্রেট হবেন এটা শুনে তার বন্ধুরা হাসাহাসি করত সামান্য একটা সেকেন্ড ক্লাস জবও হচ্ছিল না বলে। হ্যা, সত্যি তাঁর কোন ব্যাংক, সেকেন্ড ক্লাস জব কোথাও চাকরি হয়নি। কিন্তু বিধাতার কি অপূর্ব খেলা, যার একটা সেকেন্ড ক্লাস জবও হয় না, সেই তিনি আজ ফার্স্ট ক্লাস গেজেটের অফিসার; মানে ম্যাজিস্ট্রেট।
তাঁর যে বন্ধুরা এতদিন তাঁর স্বপ্ন নিয়ে হাসাহাসি করেছিল, আজ তারাই বলছে“জানতাম তুই পারবি।” দেখেছেন কিভাবে মুখের কথা বদলে যায় একটি সফলতায়। মনে রাখবেন- “আপনি যদি প্রশিক্ষণের মাঠে ঘাম না ঝরান, তবে যুদ্ধের ময়দানে আপনাকে রক্ত ঝরাতে হবে। প্রসব বেদনা ছাড়া কেউ কখনাে মাতৃত্বের স্বাদ পায়নি। আপনি কেন আশা করছেন কষ্ট ছাড়াই সফরতার স্বাদ পাবেন? সাহসীরা যখন উচ্চারণ করে Do or Die...! তখন আমি সত্যজিৎ আরাে কঠিন আত্মবিশ্বাসে চিৎকার দিয়ে বলি, DO BEFORE DIE...!
জীবন তখনই মহা মূল্যবান হয়ে যায়, যখন আপনার ছােট একটি স্বাক্ষর হয়ে যায় বহু আকাঙ্খিত মানুষের প্রিয় অটোগ্রাফ। যদি চ্যালেঞ্জ নিয়ে সঙ্গে কিছু করার তবে সেটা মরার আগেই করতে হবে। স্পিড ব্রেকার কবে থামাতে পেরেছে গাড়ির গন্তব্যে পৌছানাে, রাস্তার ঐ লাল বাতিটি দেখে গাড়ি কখনাে পেছনে যায় না শুধু অপেক্ষা করে একটি সবুজ সংকেতের। সবুজ বাতি জ্বললেই সে আবার দৌড়াবে তার গন্তব্যে। মাঝখানে শুধু থেমে থাকা। যিনি হতাশ হয়ে পেছনে চলে যান, তিনি কখনাে গন্তব্যে পৌছান না। জীবনের আসল মানে বুঝবেন কদিন যখন আপনার বন্ধুটি ফোন করে বলবে, “দোস্ত, কাল পার্টি আছে, আমি চাকরিটা পেয়ে গেছি”। এ সুসংবাদটি পাওয়া মাত্র আপনার মনে হবে কেউ আপনার কানে গরম তেল ঢেলে দিল। কারণ এ ছেলেটিই আপনার ক্লাসমেট।
সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি শুরু করেছিল বলেই আজ সে সরকারি কর্মকর্তা। আর আপনি...?
পরের দিন একান্ত বাধ্য হয়ে পার্টিতে যােগ দিয়ে দেখবেন, আপনারই অনেক সমবয়সী ভিজিটিং কার্ড দিচ্ছে আপনাকে। এখন জনাব আমার প্রশ্ন আপনার কাছে, আপনার ভিজিটিং কার্ডটি কোথায়? কয়েক ইঞ্চি একটা ভিজিটিং কার্ডেও যে এত সম্মান লুকিয়ে আছে জীবনে এই প্রথম অনুভব করলেন। যখন পার্টিতে বসে চিকেন টিক্কা খাচ্ছেন তখন মনে হবে যেন নিজের মাংস নিজেই খাচ্ছেন!! উফ! এত কষ্ট বেকারত্বের।
Success Formula by Elijah Chai
According to success formula, Elijah Chai told: ব্যর্থতার আকাশেই জীবন্ত সফলতার উড়ন্ত ঘুড়ি দেখা যায়। কে কবে মাতৃত্ব পেয়েছে প্রসব বেদনা ছাড়া! পিচঢালা মসৃন রাজপথে কিংবা দামী টাইলস বা মােজাইকের উপর কখনাে ফসল জন্মায় না, ফসল হয় কাদা মাখা বিশ্রি মাঠে। যখনই হতাশা আপনাকে ঘিরে ধরবে, ব্যর্থতা আপনাকে পেছনে টেনে রাখবে তখনই ব্যর্থতাকে ব্যর্থ করে দিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলবেন- I will not immediately but definitely.
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যাদুশিল্পীর নাম কি আপনার জানা আছে, যিনি চাইলেই সব করতে পারেন! শ্ৰেষ্ঠ যাদুশিল্পীটি কে জানেন? আর কেউ নয়; সেই পৃথিবী বিখ্যাত যাদুশিল্পীটি আপনি নিজে। আপনিই পৃথিবী বিখ্যাত সেই শ্রেষ্ঠ স্থপতি যার অসাধ্য বলতে কিছু নেই। সফলতার উদাহরণ দেয়ার জন্য এডিসন, আইনস্টাইন, আব্রাহাম লিংকন কিংবা ড. আতিউর রহমানের নাম জানার দরকার নাই। আপনি নিজেই সফলতার এক বিরাট দৃষ্টান্ত। আজকের যে আপনি চাকরিপ্রার্থী, সে আপনিই কাল হয়ে যাবেন চাকরিজীবী। যে আপনি আজ বেকারত্বের সাইনবাের্ড ঝুলিয়ে এপ্লিকেশন লেটার নিয়ে ঘুরেন, কাল সে আপনিই আইডেন্টিটি কার্ড ঝুলিয়ে এপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে অফিসে যাবেন। শুধু মাঝখানের ব্যর্থতার হতাশাটুকু কালিয়ে উঠতে পারলেই আপনিও হয়ে যাবেন কিংবদন্তি।
কিংবদন্তীরা ব্যর্থতার উপর ভর দিয়েই জন্মায়।
মেডিকেলে কখনাে সুস্থ হৃদপিণ্ডের গ্রাফ দেখেছেন? তো সুস্থ হৃদপিণ্ডের ECG এর গ্রাফ থাকে Ups & Downs. অথ্যাৎ হৃর্পণ্ডের গ্রাফটি যদি উঠানামা করে তার মানে আপনি সুস্থ। একমাত্র মৃত ব্যক্তির হৃদপিণ্ডের মাঝে কোনাে Ups & Downs নেই। আপনার ব্যক্তিগ-জীবনেও সফলতা ব্যর্থতায় জীবনে উত্থানপতন আসবেই। আর আমি বিশ্বাস করি এগুলাে আসা মানেই আপনি এখনাে জীবন্ত, ঠিক সেই হৃদপিণ্ডের ECG গ্রাফ এর মত। পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেলে বলা আছে, “নরকের পথ সৎ উদ্দেশ্যে তৈরী।” তেমনি আপনার সকল ব্যর্থতাও বড় কোনাে সফলতা প্রাপ্তির জন্যই সৃষ্টি। জীবন আপনার, সফলতা-ব্যর্থতাও আপনার; সুতরাং জীবনের কঠিন সিদ্ধান্তটি আপনাকেই নিতে হবে।
সাকসেস ফর্মূলার জন্য আত্মহত্যা
আত্মহত্যা! যে মেয়েটি গােলাপের পাপড়ি ঘেঁড়া নিয়ে প্রিয়তম মানুষটির সাথে অভিমান করে, সে কী করে নিজের জীবনকেই জীবন থেকে ছিড়ে ফেলে; কেন সে সাকসেস ফর্মূলার জন্য আত্মহত্যা করে? যে যুবকটি তার প্রেয়সীর হাতের আঙ্গুল কাটার রক্ত দেখে চোখের জলে পাপড়ি ভেজায়; গভীর রাতে মুঠোফোনে যে যুবকটি হাতে মেহেদী রাঙানাের স্বপ্ন দেখায়; কেন সে একদিন নিজের পুরাে শরীরই রক্তে রাঙিয়ে দেয়, কেন সে আত্মহত্যা করে? যে ছেলেটি আত্মহত্যা করেছিল, সে আসলে বাঁচতে চেয়েছিল। বাঁচার জন্যই আত্মহত্যা; মরার জন্য নয়।
নিঃশ্বাসের আড়ালে বেঁচে থাকার নাম যদি জীবন হয়, তবে দীর্ঘায়ু অভিশাপ। যে ছেলেটি কথা দিয়েছিল চাকরিটা পেলেই প্রেয়সীকে ঘরে তুলবে; আজ তার চাকরির বয়স শেষ। কোটা প্রথার দৌরাত্ম আর ঘুষের টাকার অভাবে তার চাকরিটা জুটল না। তার প্রেয়সীর রাঙা মেহেদি আজ ছুঁয়ে আছে অন্য কারাে হাত। বেকারত্ব আর প্রেম হারানাে যন্ত্রণা নিয়ে ছেলেটি আজ মরতে চায়। কী বলে সান্তনা দিবে আজ তুমি তাকে? আমি বিশ্বাস করি- সে আসলে মরতে চাইনি, চেয়েছিল প্রেয়সীর সাথে পড়ন্ত বিকেলে ফুসকা খাওয়ার দৃশ্যটি ভুলতে। সে চেয়েছিল বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায়, কদমফুল হাতে আসতে দেরি করার অভিযােগে প্রেমিকার অভিমান করা মুখটি স্মৃতি থেকে মুছে দিতে। কারণ তার প্রেয়সী আজ অন্য কারাে। কিন্তু স্মৃতি দুর্গার সহজ উপায় হিসেবে সে মৃত্যুকে বেছে নিল।
যে মেয়েটি স্বপ্ন বুনেছিল একটি সুন্দর ছােট্ট সংসারের। কোনাে এক প্রতারক তার প্রেমের নামে ছলনার আগনে মেয়েৰ্চির গর্ভে সন্তান এনেই পালিয়ে গেল। মেয়েটি লজ্জায় আজ মরতে চায়। সে আসলে মরতে চাইনি, চেয়েছিল এই কলঙ্কটি থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু এমন কলঙ্কে তার পাশে কাউকে না পেয়ে সে আজ নিজেকেই মুক্ত করে দিল পৃথিবী থেকে। যে সন্তানটি মায়ের গর্ভেই মারা গেল জ্বণ অবস্থায়, তুমি কি পরিচয়ে বাঁচাবে তাকে। জন্মানাের আগেই যে জীবন মৃত হয়, তার কলঙ্কের ভার কার? যে মেয়েটি মুখ ঝলসে গেল এসিডের দহনে; যে ছেলেটির চাকরি হয় না ঘুষের কারণে, যে মেয়েটি বিশ্বাস করে কলঙ্কিত হয়েছে কিংবা যে মেয়েটি ধর্ষিত হয়েছে; যে ছেলেটি ব্যর্থ প্রেমে মাদকসেবন করে; কী বলে তাদের তুমি মৃত্যু থেকে বাঁচাবে? এরা কেউই তাে মরতে চাইনি, আজ তারা শুধু বেঁচে থাকার কারণটিই হারিয়ে ফেলেছে।
আমরা তাদের বেঁচে থাকার কারণ না দেখিয়ে এড়িয়ে চলেছি বলেই আজ তারা মৃত। এরা সবাই তাে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখেছিল। জীবন সাজাতে যখন এক প্রান্তের মানুষ ব্যস্ত, অন্য প্রান্তে কেন মানুষ জীবনের বােঝা বইতে না পেরে আত্মহত্যা করবে? চলুন জীবনে জীবন আনি। এ জীবন কোনাে ঘটনার কাছে হেরে যাবার জন্য জন্মায়নি; এ পৃথিবীটাও নয় কোনাে ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন। আমি বিশ্বাস করি, এ জীবন বিধাতার শ্রেষ্ঠ উপহার! একে সাজাতে হয়, বাঁচাতে হয়, স্বপ্ন দেখাতে হয়। বিধাতার শ্রেষ্ঠ উপহারকে হত্যা করার কোনাে অধিকার তােমার নেই। যে তুমি নতুন কোনাে জীবনের সৃষ্টি করতে পারাে না, সে তুমি কেন বিধাতার সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ জীবনকে হত্যা করতে চাও! আসুন বাঁচতে শিখি, বাঁচতে শিখায়। ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে বরং চলুন ঘটনাকেই প্রভাবিত করি। যে হতাশা, ব্যর্থতা বা বাঁচার কারণ খুঁজে না পাওয়া মানুষগুলাে আত্মহত্যা করে; সে একই কারণে আত্মহত্যা না করে আপনি যদি বেঁচে থেকে নতুন জীবন সাজাতে পারেন, তবেই আপনিই হবেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিল্পী; আপনার জীবনটাই হবে শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম।
Success Formula bangla book Pdf
সবচেয়ে সেরা সাকসেস ফর্মূলা কি জানেন? প্রিয়জনকে অন্তত একবার মিথ্যা করে হলেও বলুন, “জানি তুমি সফল হবেই; বৃথা যাবে না তােমার পরিশ্রম।” তবে দেখবেন আপনার ক্যারিয়ার অসচেতন প্রিয় মানুষটিও আপনার এই মিথ্যা প্রশংসায় অনুপ্রাণিত হয়ে বা তার প্রতি আপনার বিশ্বাস সত্যি করার জন্য হলেও তিনি অন্যদিনের তুলনায়তকটু বেশি পরিশ্রম করবেন। নতুন করে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শুরু করবে। হয়তাে একদিন সত্যি তিনি সফল হয়ে উঠবেন।
প্রতি ঘণ্টায় একটি করে সিগারেট খাওয়া ছেলেটিও কয়েক ঘণ্টা সিগারেট ছাড়াই দিব্যি কাটিয়ে দেয় তার প্রিয়সীর সাথে ঘুরতে গিয়ে; কারণ তার প্রেয়সীর বিশ্বাস ছেলেটি ধূমপান করে না। এই একটি মিথ্যা বিশ্বাসকে সত্যি করতে কত চেইন স্কোকার সারাটা দিন ধূমপান ছাড়াই কাটিয়ে দিল প্রিয়সীর সাথে লং ড্রাইবে গিয়ে, তা শুধু ঐ ছেলেটিই জানে। ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করা বন্ধুটিকে একবার মিথ্যা করে হলেও বলুন, “তাের ইংরেজি উচ্চারণ খুব সুন্দর।” দেখবেন মনে অগােচরে সেই বন্ধুটি সবার সাথে ইংরেজিতে কথা বলছে। অল্প আধটু ইংরেঝি জানা ছেলেটিও এভাবে একদিন IELTS এ সর্বোচ্চ স্কোর নিয়ে বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে আসে।
অল্প একটু গান জানা প্রিয়জনকে মিথ্যা করে হলেও বলুন, “তুমি খুব ভালাে গান করতে পারাে।” তবে দেখবেন আপনার এই মিথ্যা প্রশংসায় অনুপ্রাণিত হয়ে বা তার প্রতি আপনার বিশ্বাস সত্যি করার জন্য হলেও তিনি অন্যদিনের তুলনায় রােজ ৫ মিনিট বেশি গান অনুশীলন করবে। হয়তাে একদিন সত্যি সত্যিই তিনি ভালাে শিল্পী হয়ে উঠবেন। কথাগুলাে বিশ্বাস হচ্ছে না? “তােমার হাসিটা খুব সুন্দর” এমন প্রশংসা যে মেয়েটি শুনেছে, সে কতশত বার যে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কারণ ছাড়াই হেসেছে তার হিসেব ঐ মেয়েটির কাছে আছে।
যে ছেলেটিকে “হেয়ার স্টাইলের প্রশংসা করা হয়, সে দিনে অন্তত কয়েকবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলের যত্ন নিবে। কেন এমনটি হয়? কারণ আমরা প্রিয় মানুষের বিশ্বাসগুলােকে মিথ্যা হতে দিতে চাই না। তাই অন্তত মিথ্যা করে হলেও প্রিয় মানুষটিকে একবার বলুন “জানি তুমি পারবেই”। আপনার এই একটি মিথ্যা প্রশংসাকে সত্যি করতে হলেও, সে একদিন পারবেই। পৃথিবীর কত গুণের যে জন্ম হয়েছে মিথ্যা প্রশংসাকে আর প্রিয়জনের বিশ্বাসকে প্রাধান্য দিয়ে তা শুধু ইতিহাসই জানে। এজন্যই আমি নিজেও আমার সকল হতাশাগ্রস্ত প্রিয় মানুষগুলােকে সবসময় বলি, “এগিয়ে যান, সাফল্য আসবেই।” মনে রাখবেন, নেতিবাচক চিন্তা একটি ছোঁয়াচে রােগ! হতাশা একটি ঘাতক ব্যাধি; নীরবেই ধ্বংস করে দেয় সাফল্যের পথটুকু। তাই ছাড়ন হতাশা, বাঁচান আশা; আপনার হাতের মুঠোয় সফলতা।
ক্যারিয়ার কথনে সাকসেস ফর্মূলা
হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়া মানে থেমে থাকা নয়; বরং এটিই প্রমাণ করা, আপনিই সেই ব্যক্তি যিনি শ্রেষ্ঠ দৌড়বিদের সাথে লড়াই করেছিলেন। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু দালানটি প্রথমে মাটির সবথেকে নিচে ফাউন্ডেশন গড়েছিল একটি ভবন কত উঁচু হবে সেটা নির্ভর করবে, ভবনটির ফাউন্ডেশন নিচে কতটুকু গেল তার উপর। একটি ফুটবল কত স্পিডে গােলপােস্টে যাবে, সেই নির্ভর করবে আপনি কত পেছনে গিয়ে বলটি কিক করেছেন তার উপন্তু আমিও বিশ্বাস করি, একজন পরাজিত মানুষ যত পেছনে পড়ে থাকেন,যেঠিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারলে তিনিই সবচেয়ে বড় সাফল্যটি ছিনিয়ে আনতে পারেন।
প্রতিদিন নানা নিয়ােগ বিজ্ঞপ্তি আসে পত্রিকায়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়ােগ বিজ্ঞপ্তি। জজ, ম্যাজিস্ট্রেট, এএসপি, ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব নিয়ােগ কার জন্য? অবশ্যই আপনার জন্য। শুধু আপনি স্বপ্ন পূরণ করবেন বলেই প্রতিদিন এত নিয়ােগ বিজ্ঞপ্তি আসে সরকারি ওয়েবসাইটে। আপনার পাশের যে বিলাশবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং সেন্টারটি আছে, বলুনতাে সেটা কার জন্য তৈরি? সেটা জনাব আপনার জন্যই তারা সাজিয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী রেস্টুরেন্টটি দেশি-বিদেশি খাবারে তারা সাজিয়ে রেখেছে শুধু আপনার জন্য। শুধু আপনি থাকবেন বলেই চারিদিকে তৈরি হচ্ছে লাক্সারি এপার্টমেন্ট। কিন্তু আপনি প্রস্তুত তাে এসব উপভােগ করার জন্য?
আপনি চাকরি নিয়ে ঠিক তখনই ব্যর্থতার ভয় পাচ্ছেন, যখন আপনি অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করে সফলতার একটা ইতিহাস ইতােমধ্যে তৈরি করেছেন। আপনি আপনার সেই বন্ধুটির কাছে যান, যে প্রাইমারি স্কুল থেকে হাই স্কুলেই যেতে পারল না কিংবা সেই বন্ধুটির কাছে যান, যে কলেজেই উঠতে পারল না।
তারা বুঝিয়ে দিবে তাদের তুলনায় আপনি কতটুকু সফল। যারা স্কুলের চৌকাঠ পেরিয়ে কলেজের বারান্দায় হাঁটার সুযােগ পায়নি, তারা তাে চাকরির পরীক্ষার যুদ্ধের জন্য নিজেকে যােদ্ধা হিসেবেও পরিচয় দিতে পারছে না।
আর সে জায়গায় আপনি বিসিএস ফরমে ১ম চয়েস এডমিন দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হবেন নাকি পুলিশ কিংবা অন্য কোন সম্মানজনক পদের জন্য লড়বেন সে চিন্তা করছেন! সফলতা এমন একটি অর্জন যেটা পাওয়ার আগ পর্যন্ত আপনার কাছে স্বপ্ন মনে হবে, আর আপনি সফলতা পেয়ে গেলে অন্যদের কাছে তা ভাগ্য মনে হবে। কিন্তু আমার কাছে পুরােটাই পরিশ্রমের প্রাপ্তি। কে কবে দেখেছে স্বপ্নহীন মানুষ গন্তব্যে পৌছাতে। চোখ বন্ধ করুন আর ভাবুন, আপনি একজন ম্যাজিস্ট্রেট, গাড়ি থেকে নামলেন। আপনার সামনে পেছনে পুলিশ গার্ড দিচ্ছে। তারা আপনাকে স্যার স্যার বলে সম্বােধন করছে। আপনি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করছেন। আপনাকে দেখে ঐ কোটিপতি ক্ষমতাবান লােকটিও চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
আপনি চোখ বন্ধ করুন আর ভাবুন, আপনি একজন পুলিশের এএসপি; যে আপনি ছােটবেলায় পুলিশ দেখলে লুকিয়ে থাকতেন, আজ সে আপনিই গাড়ি থেকে নামামাত্র একঝাক পুলিশ আপনাকে স্যালুট জানাতে এক ঘণ্টা আগে থেকে প্রস্তুত। কি সুখের অনুভূতি! আপনি একজন সহকারী জজ। ভাবুন এবার আপনি আদালতে বসে বিচার করছেন, আর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে একসময়ের ক্ষমতাবান মন্ত্রী। এই বিচার কাজটি সম্পন্ন করছেন আপনি। আপনার রায়ের উপর নির্ভর করছে সাবেক মন্ত্রীর ভবিষ্যৎ।
বিশ্বাস করেন, আমার নিজেরই গায়ের লােম সব দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। ভাবুন আপনি একজন সম্মানিত বিসিএস ক্যাডার, আপনার একটি স্বাক্ষর ছাড়া কারাে মূল্যবান সার্টিফিকেট সত্যায়িত হচ্ছে না। এ যে কেমন এক সুখের অনুভূতি তা কল্পনা করতেও অর্ধেক স্বাদ পেয়ে যাচ্ছেন। ভাবুন, যে আপনি ছােটবেলায় একশত টাকা পেলে দশ টাকার আইসক্রিম খাওয়ার পর বাকি নব্বই টাকা কি করবেন তারই হিসেব মিলাতে পারতেন না; আজ সেই আপনিই বাংলাদেশ ব্যাংকের এসিস্ট্যাস্ট ডিরেক্টর পদে নিয়ােগ পেয়ে লক্ষ কোটি টাকার হিসেব মিলাচ্ছেন। এমন স্বপ্নই আপনাকে ঠিক পথে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে। পৃথিবীর সকল সফল ব্যক্তিই বড় স্বপ্নবাজ ছিলেন।
এমন স্বপ্নে যখন আপনাকে কোনাে এক নেগেটিভ ব্যক্তি এসে বলবে, “ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখাে না।” ঠিক তখনই আমি আপনাকে বলছি, যারা লাখ টাকার স্বপ্ন দেখেছেন তারা ঐ ছেড়া কাঁথাটুকুও পাননি। যে বস্তির ছেলে এভু কার্নেগিকে ছেড়া শার্টের কারণে পার্কে ঢুকতে দেয়া হয়নি, সেই বস্তির ছেলেটি একসময় পুরাে পার্কটি কিনে নিয়েছিলেন, হয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ ধনপতি। কি এমন অসাধ্য আছে মানুষের! এখানে একটিও কাল্পনিক কথা নয়; সবটুকুই আপনার পরিচিত ঘটনা।
হে যােদ্ধারা! চলুক তবে যুদ্ধের প্রস্তুতি। এ যুদ্ধ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ, এ যুদ্ধ মা-বাবার মুখে হাসি ফুটানাের যুদ্ধ, এ যুদ্ধ একটি আত্মপরিচয় নির্মাণের যুদ্ধ। যদি এখন আপনার সামনে গিয়ে চিৎকার কর জিজ্ঞেস করা হয়, হে যােদ্ধা তুমি কি প্রস্তুত নিতে আছাে আগামী যুদ্ধের? তবে কি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে একবার বলবেন , “ইয়েস, আমি প্রস্তুত যুদ্ধের জন্য?” চলুন স্বপ্ন গড়ি একসাথে।
একদিন জীবনটা গল্প হবে। এতটাই অবিশ্বাস্য গল্প হবে যে, সেই গল্পের নায়ককে একটিবার দেখতে ইচ্ছে হবে। ইচ্ছে হবে তার সাথে একটি সেলফি তুলতে, নিজের যত্ন করে রাখা ডায়েরিটাতে ইচ্ছে হবে সেই গল্পের নায়কের একটা অটোগ্রাফ নিতে। কে সে গল্পের নায়ক? দিনরাত পরিশ্রম করে যে পড়াশুনা করে, মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যে স্বপ্ন দেখে নিজে। কিন্তু বারবার সে ব্যর্থ হয়। যারা এতদিন তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল, একদিন তাদের স্বপ্নও মরিচীকা হয়ে যাবে। যারা একদিন আপনার পরিশ্রম আর সাধনা দেখে বিশ্বাস করেছিল, “আপনি পারবেন। কিন্তু আপনার বারবার ব্যর্থতা একদিন তাদের বিশ্বাসের জায়গাটা দুর্বল করে দিবে। যারা এতদিন ভেবেছিল আপনি অবশ্যই পরিবেন, আপনার ক্রমাগত ব্যর্থতার কারণে একদিন তাদের বিশ্বাস করতেই কষ্ট হবে যে, আপনি আসলেই পারবেন তাে! বই প্রতিযােগিতায় নামলেন, রেজাল্ট আসল। এবারও শুনতে হল No. ভাই No মানে না নয়, আজ থেকে বলুন No মানে Next Opportunity.
পৃথিবী বিখ্যাত সফলরা কি কখনােই ব্যর্থ ছিলেন না? এরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যর্থ মানুষ ছিলেন এক সময়। শুধু হাল ছুঁড়েন নি বলে, পরিশ্রমের কারণেই তারা আজ সফল ব্যক্তি। ব্যর্থতার পর নিজেকে আরেকবার সুযােগ দিয়েছিল বলেই আমরা বাংলা সাহিত্যের চর্যাপদ পেয়েছিলাম। কারণ এটি আবিষ্কার করতে দিয়ে ২বার ব্যর্থ হয়েছিলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। ব্যর্থতার পর নিজেকে আরেকবার সুযােগ দিয়েছিলেন বলেই আমরা এডিসনকে পেয়েছিলাম, যিনি হাজার বার ব্যর্থ হয়েছেন বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করতে। কিন্তু আবিষ্কার করে শেষ হাসিটা তিনিই হাসলেন। পৃথিবীর যত বিখ্যাত সফল ব্যক্তি আছেন তারা সবাই নিজেকে আরেকটিবার সুযােগ দিয়েছিলেন প্রতিযােগিতায়। আজ যারা সচিব, ম্যাজিস্ট্রেট, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আছেন তাঁরা সবাই কি প্রথম চেষ্টায় সফল হয়েছিল? একবার ভাবুন সেই জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা এএসপির কথা যিনি ৪র্থ বারে গিয়ে চাকরিটা পেয়েছিলেন। যদি ৩য় বারের ব্যর্থতার পর তিনি হাল ছেড়ে দিতেন তবে কি ৪র্থ বারের এমন সাফল্য তার হাতে ধরা দিত?
আপনার চূড়ান্ত পরাজয় কেবল তখনই হবে যখন আপনি হাল ছেড়ে দিবেন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আপনি জীবনে যত বারই ব্যর্থ হােন না কেন, যদি হাল ছেড়ে না দেন তবে আপনাকে পরাজিত করবে এমন কেউ নাই। বিধাতাও আপনার পাশে আছেন, কারণ আপনি তারই সৃষ্টি। কেন আপনি এত হতাশায় ভুগেন? আপনি কি জানেন, আপনি অনেকের কাছে এক উজ্জ্বল উদাহরণ! অনেকে আপনার মত একটা জীবন চেয়েও পায়নি। কত মা-বাবাই চেয়েছিল তার সন্তানটি আপনার মত কলেজে/ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। কিন্তু পারেনি, আপনি তাদের কাছে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। আর এমন নক্ষত্রের কাছে কেউ হতাশা আশা করে না।
যে আপনি আজ চিন্তায় থাকেন, হতাশায় ভুগেন শুধু একটি চাকরির জন্য; সে আপনিই একদিন সফলতার কথা বলবেন, আর আজকের এই হতাশা নিয়ে তখন নিজে নিজে মুখ লুকিয়ে হাসবেন। তাই চলুন সব হতাশা, দুঃশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে যুদ্ধে নামি। আজকের দিনটিই হচ্ছে আপনার সেই ভবিষ্যৎ, যা নিয়ে আপনি গতকাল, গতমাস, গতবছর চিন্তিত ছিলেন। আজ অন্তত এমন কিছু করুন, যা নিয়ে আগামী মাস কিংবা আগামী বছর আপনাকে ভাবতে না হয়। ছাড়ন হতাশা, বাঁচান আশা, আপনার হাতেই আগামীর সফলতা।
আপনি সফল হওয়ার পর আপনার ব্যর্থতা কেউ মনে রাখবে না। যদিও কেউ কখনাে আপনার ব্যর্থতার কথা বলে তখন সেটা অনুপ্রেরণা হিসেবে নিবে সবাই। চলুন, আবার শুরু করা যাক একটা যুদ্ধ। বিজয়ের মঞ্চ প্রস্তুত। আগামীর মঞ্চে আমিই হব মুকুটধারী বিজয়ী এই মন্ত্রে শপথ নিই। আর কত অন্যের সফলতা শুনে মুগ্ধ হব, আর কত অন্যের সফলতার গল্প শুনিয়ে অন্যদের মুগ্ধ করার, সময় এসেছে এবার নিজের সফলতার গল্প শুনিয়ে অন্যদের মুগ্ধ করার, সময় এসেছে এবার বিজয়মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাত তালি নেওয়ার । আমি আবার দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করছি- সফলতার ভাগ্য হাতের রেখায় নয়, হাতের মুঠোয়।
একটি চাকরির বিজ্ঞপ্তি মানেই লাখাে প্রার্থীর স্বপ্নের যাত্রা। যে ছেলেটি টেকনাফে বসে প্রস্তুতি নিচ্ছে তার প্রতিযােগি তৈরি হচ্ছে তেঁতুলিয়ার শেষ প্রান্তে । টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাঠুরিয়া; ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রতি ইঞ্চিতেই এক বেকারের বিপরীতে চাকরিযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে লাখাে প্রতিযােগি। যে ছেলেটি ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিল কিংবা যে ছেলেটি ৩৩ নাম্বারের জন্য যুদ্ধ করত পরীক্ষার আগের রাতে, যে মেয়েটি সবসময় বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্টের দিন মনে মনে আল্লাহকে ডাকত যেন সব বিষয়ে এ প্লাস থাকে, কিংবা যে মেয়েটি শুধু চেয়ে থাকতো পরীক্ষায় কমন পড়েছে কি না সেও আজ 'সাকসেস ফর্মূলা pdf' বই অনুসরণ করে নিজের সফলতা অর্জন করে নিয়েছে, তাহলে আপনি পারবেন না কেন? সো থিংক এন্ড এচিভ।
পরিশ্রম ছাড়া যেমন সফল হওয়া যায় না, তেমনি সাকসেস ফর্মূলা PDF ছাড়া জীবনে উন্নতি করা সম্ভব নয়। তাই এলিজা চাই বলেছেন বেটার থিংক এন্ড এচিভ সাকসেস।