দারবিশ pdf by লতিফুল ইসলাম শিবলী - Darbish Bangla

0

    সাহিত্যিক ও গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলীর প্রকাশিত প্রথম বই 'দারবিশ'৷ বইটি নালন্দা প্রকাশনী থেকে ২০১৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ডাক্তারি পড়তে ঢাকা থেকে আমেরিকা যাওয়া তরুণ যুবক জামশেদ।

    দারবিশ pdf

    দারবিশ pdf হল আমেরিকার ষাট, সত্তুর, আশির দশকে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ভিয়েতনামের যুদ্ব বিরোধী আন্দোলনের ফাঁকে আফরোজা এবং মেলিনির জন্য একবুক ভালোবাসায় সিক্ত এক যুবকের গল্প। 

    দারবিশ কি?

    'দারবিশ' মূলত লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা একটি বই। বইটি জামশেদ নামক এক যুবকের জীবন যুদ্ধের কাহিনী। তৎকালীন আমেরিকার রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে এক তরুণের বেঁচে থাকার সংগ্রাম ও ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য তীব্র আকাঙ্খার ফলাফল এই বইটিতে উঠে এসেছে। 

    দারবিশ by লতিফুল ইসলাম শিবলী

    দারবিশ বইয়ে লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, ৬০ মিলিয়ন লম্বা চুলের হিপ্পি যখন আমেরিকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে, যখন আমেরিকার ঘরে যুদ্ধ, বাইরে যুদ্ধ, ঠিক তখন ছেলেটির জীবনে প্রেম হয়ে আসে মেলিনি নামের প্রখর রাজনীতি সচেতন দেশপ্রেমিক এক আমেরিকান নারী। যাকে রাশিয়ান স্পাই মনে করে হন্যে হয়ে খুঁজছে এফবিআই। এরপর শুরু হল তাদের পলাতক জীবন।

    মাস থেকে চোরাই পথে মেক্সিকো ঢােকার সময় ছেলেটির জীবনে ঘটে এক চরম বিপর্যয়। প্রায় ৭০ বছর বয়স নিয়ে সেই তরুণ আবার ঢাকায় ফেরে, তার ফেলে যাওয়া সেই রােমান্টিক ঢাকা, যাকে সে নাম দিয়েছিল সিটি অফ মিউজিক। পরিচয় হয় এক তরুণীর সাথে, যে তরুণীর মননশীলতা তৈরি হয়েছিল সেই সময়ের এলভিস প্রেসলী, বিটলস, বব ডিলান, জিমি হ্যাক্সি, জিম মরিন, লেড জেপলিন, পিঙ্ক ফুয়েড, ইউ-টু আর নির্ভানা শুনে শুনে। মেয়েটি অদ্ভুত ভাবে লােকটির ৩০ বছর বয়সের সেই লম্বা চুলের হিপ্পির প্রেমে পরে যায়। সমস্যাটা শুরু হয় তখনই।

    এই উপন্যাসের স্থান সত্য, কাল সত্য, ইতিহাস সত্য, কাল্পনিক শুধু এর চরিত্রগুলাে।

    দারবিশ: লতিফুল ইসলাম শিবলী pdf

    দারবিশ: লতিফুল ইসলাম শিবলী PDF পড়তে আরো নিচে যান।

    দারবিশ পিডিএফ থেকে কিছু অংশ পড়ে নিন।

    ওরা একে অন্যকে খুন করতে চায়। দুজনের হাতেই ছুরি আর কাঁটাচামচ। যে কোনাে মুহূর্তে একজন আর একজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। মেয়েটি তার ডান হাতে ধরা কাঁটাচামচটি দিয়ে খোঁচা মারে, ছেলেটি তার বাম হাতেরটা দিয়ে ফেরাতে গিয়ে তিন কাটার ফাঁকে চামচটি আটকে যায়, ফলে চলছে প্রাণপণে টানাটানি। মেয়েটা ছাড়িয়ে নিতে চায়, ছেলেটা চায় আটকে থাকুক। 

    মেয়েটি উঠে দাঁড়িয়েছে তার সর্বশক্তি দিয়ে টান মারার জন্য, এর মাঝে ওয়েটার এসে দাঁড়ায় ওদের সামনে। প্রতিদিন এমন হাজারাে প্রেমের নখরা দেখা ওয়েটারের মুখটা সম্পূর্ণ ভাবলেশহীন। তার ছােট্ট নােটবুকে কলম চেপে জানতে যায় খাবারের অর্ডার। কয়েক টেবিল দূর থেকে এক ভদ্রমহিলা আতঙ্কিত দৃষ্টিতে নজর রাখছিল। ছেলেটি মেয়েটির দিকে কপট তীব্র দৃষ্টি রেখেই খাবারের অর্ডার দেয়। বিরক্ত ওয়েটার খসখস করে টুকে নিয়ে চলে যায়। ঠিক তখনই গিটারটা বেজে ওঠে। অ্যাকুয়াস্টিক গিটার।

    এটা একটা মিউজিক ক্যাফে। ক্যাফের নিজস্ব মিউজিশিয়ানদের পাশাপাশি যে কেউ এখানে এসে নিজেই পারফর্ম করতে পারে। অ্যাকুয়াস্টিক গিটারের সুরটার মধ্যে এমনকিছু ছিল যাতে ছেলেটি মেয়েটি দুজনেই ঘাড় ঘুরিয়ে স্টেজের দিকে তাকায়। গিটারে বাজছে স্প্যানিশ ফ্লেমেনকো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্যাফেটা পরিণত হয়ে গেল আন্দালুসিয়ান উপত্যকার কোনাে সরাইখানায়। ফ্লেমেনকো যেন বৃষ্টির উদ্দাম নৃত্য, শীতের ঋজবদ্ধ স্তব্ধতা শেষে নতুন গজানাে কাঁচা সবুজ পাতায় উপর আলাে আর প্রজাপতির সখ্য যেমন ঠিক তেমনি মিউজিক ক্যাফেটাকে বদলে দিয়েছে। গিটারের মাইনর নােটগুলাে বাক বদল করে ফ্লেমেনকোর উদ্দামকে ধীরে ধীরে নিয়ে যাচ্ছে বিষাদের দিকে। এই সুরকে অবজ্ঞা করা কঠিন, মােটামুটি একধরনের নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে ক্যাফেতে। কেউ কেউ ঘাড় ঘুরিয়ে দারবিশ
    দেখার চেষ্টা করেছে বাদককে। 

    ছেলে মেয়েটির ঝগড়া আর অভিমান পর্ব শেষ, এখন ওরা পরস্পরের হাত ধরে বসা মুগ্ধ শ্রোতা। অনেকের খাবার চিবানাের গতি মন্থর হয়ে এসেছে। অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেমের নিখুঁত আওয়াজ। একজন উদাস হয়ে কফিতে চামচ নেড়েই যাচ্ছে। বাদকের কোনাে দিকেই ক্ষেপ নেই। একধরনের ধ্যানমগ্নতা নিয়ে তিনি বাজিয়ে যাচ্ছেন। এতক্ষণ ক্যাফেতে যারা উচ্চস্বরে কথা বলছিল তারা এখন ফিসফিস করে কথা বলছে । সুর যখন ক্ষমতায় সাম্রাজ্য তখন নির্জনতার।
    মেয়েটির কথায় ছেলেটির ঘাের ভাঙে।
    ‘আমার গিটার মাস্টার পেয়ে গেছি। ‘আই অ্যাম হ্যাপি। ‘তুই হ্যাপি কেন?”
    ‘এই বাজারে এমন বুড়া গিটারিস্ট পাওয়া আমারূজন্য ভাগ্যের ব্যাপার। ‘আরে মামা, গিটার তাে তুমি শিখবা না, শিখব আর্মি, এখানে তােমার ভাগ্যের বিষয় আসছে কেন?'
    ‘শােন, এই ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে বাহাত্তর হাজার হ্যান্ডসাম আর হট গিটারিস্ট শিকারি বাজপার্ধিকমতাে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে সুন্দরী মেয়েগুলােকে ছোঁ মেরে তুলে নেওয়ার জন্যে, সেখানে তাের মাষ্টার হিসেবে এমন বুড়াে গিটারিস্ট পাওয়া কি আমার জন্যে ভাগ্যের ব্যাপার নয়!
    ছেলেটির এই জেলাসটা মেয়েটি সব সময়ই এনজয় করে, লাজুক হেসে আহ্লাদ করে মেয়েটি ছেলেটির গায়ে ঢলে পড়ে। পুলকিত ছেলেটি সিরিয়াস ভাব নিয়ে বলে বুড়া রাজি হবে নাকি কে জানে। মেয়েটি কপট রাগ দেখিয়ে বলে ‘শাট আপ, ডােন্ট কল হিম বুড়া, সি, হাউ হ্যান্ডসাম হি ইজ। তাচ্ছিল্য নিয়ে ছেলেটা বলে ‘লেটস্ ট্রাই। লােকটা তার বাজানাে শেষ করে কফি নিয়ে বসেছে, একা, এক কর্নারে।

    দারবিশ by লতিফুল ইসলাম শিবলী PDF

    প্রথম দেখায় মনে হয় লােকটির ব্যক্তিত্বের মধ্যে এমনকিছু আছে যা সহজেই তার কাছে কাউকে ঘেঁষতে দেয় না, কাছে আসার চাইতে এ জাতীয় লােকদের নিয়ে মানুষ দূর থেকে কথা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বােধ করে ওরা এক ধরনের সমীহ আর ইতস্তত ভাব নিয়ে লােকটির কাছে গিয়ে বলল, দারবিশ ‘আমরা কি একটু বসতে পারি?' লােকটি মাথা ঝাঁকিয়ে মিষ্টি হেসে সম্মতি দেয়। বসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে দেয় মেয়েটি অসাধারণ! জাস্ট অসাধারণ! এত সুন্দর লাইভ গিটার প্লেয়িং আমি জীবনে শুনিনি, ইটস জাস্ট মাইন্ড ব্লোইং, আমি কী বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না, আই মিন... ইউ আর ওসাম'। লােকটি মিটমিট করে হাসছে আর উপভােগ করছে বিহ্বল মেয়েটির প্রশংসা।
    ‘আপনি কি এখানে প্রতিদিন বাজান?”
    নাহ্ আমি সপ্তাহে চার দিন বাজাই, এটা আমার পার্টটাইম জব, বেতন আর ফ্রি ডিনার, আই রিয়েলি ইনজয় দিস জব।।
    লােকটার চোখেমুখে একটা প্রশান্তি খেলে যায়। শেষমেশ মেয়েটি মরিয়া হয়ে জিজ্ঞেস করে? ‘আপনি আমাকে গিটার বাজানাে শেখাবেন? প্লিজ না করবেন না, প্লিজ।

    এই প্রস্তাবে লােকটা বেশ মজা পেয়েছে। খুব আয়েশে কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বলে আমি ঠিক জানি না কীভাবে গিটার বাজানো শেখাতে হয়, আমি শুধু বাজাতে পারি, কোনাে গ্রামার আর নিয়মকানুন ছাড়াই বাজাই, কারণ আমি নিজে যেখানে গিটার বাজানাে শিখেছি সেখানে আমার কোনাে শিক্ষক ছিল না।

    ‘ও মাই গড, ইউ আর রিয়েল জিনিয়াস, শিক্ষক ছাড়া গিটার শিখে এমন বাজানাে সম্ভব, অবিশ্বাস্য!
    ছেলেটি জানতে চায়, কোখায় শিখেছিলেন? এতক্ষণ লােকটা ওদের চোখে চোখ রেখে কথা বলছিল, এই প্রশ্নে চোখটা নামিয়ে নিয়ে স্থির হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল পাশেই রাখা গিটারটার দিকে, তারপর প্রায় স্বগতােক্তির মতাে করে বলল,
    ‘জেলখানায়।

    হঠাৎ যেন ওরা ধাক্কা খায়। ধীরে ধীরে মিইয়ে যায় ওদের উচ্ছ্বাস। ওরা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে আর লােকটিকে মাপতে থাকে। মেয়েটি বলে জেলখানায়! মানে ঠিক বুঝলাম না। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লােকটা বহুদূরে দৃষ্টি মেলে বলে ‘হা আমেরিকায় খুনের দায়ে আমাকে জেলে যেতে হয়েছিল, আমার সেলমেট ছিল ভিত্তরি, ইতালিয়ান আমেরিকান, হি ওয়াজ এ সিরিয়াল কিলার। অসাধারণ গিটার বাজাত। আজ তুমি যেমন আমার বাজানো দেখে মুগ্ধ হচ্ছ আমিও ভিত্তরির বাজানাে দেখে তােমার মতাে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ওর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে এই গিটারটা আমাকে দিয়ে যায়। 
    চিন্তা করতে পার ! পাঁচজন লােকের হত্যাকারী এই গিটারটা বাজাত। ভিত্তরি চলে যাওয়ার পর নিঃসঙ্গ সেলে বসে আর কাজ কী, নিজে নিজে টুং টাং করতে করতেই একদিন বাজাতে শিখে ফেললাম। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যেই সুর আছে, সেটা ধরতে পারলে তুমি যে কোনাে কিছুতেই সুর তুলতে পারবে।

    লােকটি আরও অনেক কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু ওরা তাকে যে সুযােগ না দিয়েই কাচুমাচু মুখে উঠে দাঁড়ায়। ‘একী তােমরা উঠছ কেন? তােমাদের কফি দিতে বলি।' ওরা লােকটাকে ভয় পেতে শুরু করেছে। না থাক, আমরা আজ উঠি।'
    ওরা ধড়ফড় করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। লােকটা সব বুঝে যায় । এতক্ষণ ওরা এক ভয়ংকর খুনির সামনে বসে কথা বললো, যার হাতে আরেক সিরিয়াল কিলারের গিটার, ব্যাপারটা ওদেরকে ঘাবড়ে দিয়েছে। ওদের ঘাবড়ে যাওয়া দেখে লােকটি ভীষণ মজা পেয়ে যায়। লােকটা শিশুর মতাে হাসতে শুরু করে, আর হাসতে হাসতেই বলতে থাকে ‘আরে শােনাে, ভয় পেয়াে না।'
    ততক্ষণে ওরা ক্যাফে থেকে ছিটকে বের হয়ে যায়। লােকটা হাসতেই থাকে, এক সময় শান্ত হয়ে আসে ধরে ধীরে মলিন হয়ে যায় চেহারা। লােকটার ব্যক্তিত্বটাই এমন, শেরগোলের মাঝেও সমস্ত ক্যাফে জুড়ে নেমে আসে হাসিশেষের নীরবতা।
    অফিস মনে করে রােদেলা যে ঠিকানায় এসে পৌছেছে সেটা আসলে একটা বাড়ি। গুলশানের এদিকটা ডিপলােম্যাটিক জোন। বেশ নিরিবিলি । পথে দুইবার তার সিনজি অটোরিক্সা থামিয়েছে পুলিশ। 

    কারণ লােকটা লােহার মেইন গেটে তালা মেরে তারপর রােদেলাকে নিয়ে ড্রইংরুমে ঢুকেছে। চরম অসহায়ত্ব পেয়ে বসেছে রােদেলাকে। কান্না পাচ্ছে। পরিণতির জন্য অপেক্ষা করা আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া এখন আর কোনাে উপায় ওর হাতে নেই।

    প্রায় চল্লিশ মিনিট পরে দোতলার দিকে একটা দরজা খােলার আওয়াজ হল। মানুষের নড়াচড়ার শব্দ। খুব ক্ষীন একটা মিউজিক রয়েছে সাথে, সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়েছে রােদেলা, চেহারাটাকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সিঁড়ির দিকে। ভয়ংকরভাবে ডিবডিব করছে রােদেলার বুক। লােকটার উচ্চতা প্রায় ছয় ফুটের কাছাকাছি। পরিপাটি করে ছাঁটা সাদা দাড়ি আর নীল জিন্স পরনে, সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নামছে। ঠিক মনে হচ্ছে যেন সিড়ির সংখ্যা গুনে গুনে নামছে। অনেকটা শিশুরা যেভাবে গুনে গুনে সিড়ি বায়। পেছনে পেছনে সেই কেয়ারটেকার লােকটা। রােদেলার দিখে না তাকিয়ে লােকটা সরাসরি এসে বসল রােদেলার সামনের সােফাটাতে। লােকটা বসার সঙ্গে সঙ্গে কেয়ারটেকার লােকটির হাতে ধরিয়ে দিল রােদেলার সিভিটা। সিভিটাক দিকে এক নজর তাকিয়ে এবার পরিপূর্ণ ভাবে তাকাল রােদেলার দিকে। রােদেলা এখনও দাঁড়িয়ে আছে।
    বসাে।

    লােকটির আকার-আকৃতির সঙ্গে কণ্ঠস্বরের কোনাে মিল নেই, খুব শান্ত এবং বন্ধুত্বপূর্ণ উচ্চারণ। মুহূর্তেরমধ্যে রােদেলার এতক্ষণের আশঙ্কার অনেকটাই কমে গেল। তুমি চল্লিশ মিনিট আগে চলে এসেছ। রােদেলা নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বােকামিটা টের পায়।

    ‘জি, ভেবেছিলাম টাইমমতাে পৌছাতে পারব কি না।'
    ‘এই চল্লিশ মিনিটের প্রতীক্ষা আর আশঙ্কা কোনােটার জন্যে কিন্তু আমি দায়ী নই। কেয়ারটেকার লােকটা ট্রেতে করে নাস্তা সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। রােদেলা বেশ খানিকটা সহজ হয়ে উঠেছে। পিপাসায় গলা শুকিয়ে গেছে। লােকটা গ্লাসে পানি ঢালার সঙ্গে সঙ্গে সে এক নিশ্বাসে অর্ধেকের বেশি পানি খেয়ে ফেলে। লােকটির সারা মুখে একটা মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে আছে। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে রােদেলাকে।
    ‘নার্ভাসনেস দূর করার জন্য তােমাকে একটা টিপস দিই? টিপসটা পেলে এই ইন্টারভিউটা তােমার জন্য সহজ হয়ে যাবে। নেবে?
    ‘জি স্যার, বলুন।
    ‘তুমি যখন কোনাে ইন্টারভিউ ফেস করবে তখন মনে করবে তুমি ইন্টারভিউ দিচ্ছ না, তােমার সামনের লােকটির ইন্টারভিউ নিচ্ছ তুমি। সে যেমন তার কাজের জন্য একটা যােগ্য লােক খুঁজছে তেমনি তুমিও একজন যােগ্য ইমপ্লয়ার খুঁজছ, যে তােমার চাহিদাগুলাে পূরণ করবে। যতদিন নিজেকে দাতা না ভেবে শুধু গ্রহীতাই ভাববে ততদিন এই ঢকঢক করে পানি খাওয়া নার্ভাসনেসটা কখনােই দূর হবে না।'

    রােদেলা বিষয়টা বুঝে উঠতে কিছুটা সময় নিল। এই প্রথম তার মুখে একটা স্মিত হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। ‘টিপসটা কেমন? ‘সত্যি সত্যি আমার নার্ভাসনেসটা অনেক কেটে গেছে স্যার। ‘তা হলে এখনই একটা প্র্যাকটিস হয়ে যাক। ‘ইয়ে মানে, স্যার, ঠিক বুঝলাম না স্যার।
    ‘মানে হল, এখন আমরা দুজনেই দুজনার ইন্টারভিউ নেব। আমি দেখব তুমিই সেই সঠিক ব্যক্তিটি কি না যাকে আমার প্রয়ােজন আর তুমি দেখবে আমি সেই চাকুরিদাতা কি না যাকে তােমার প্রয়ােজন, ঠিক আছে?
    কেয়ারটেকার লােকটা ধোঁয়া ওঠা দুম কাপ রেখে যায় টেবিলে। ‘তােমার ফেবারিট ড্রিংকস ব্ল্যাক কফি উইথ হানি।
    খুব চমকে ওঠে রােদেলা এই লােকটির তাে এটা কোনােভাবেই জানার কথা না। জ কুঁচকে চোখ বড় বড় করে বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে। ‘আপনি এটা কী করে জানলেন স্যার?
    ‘তার আগে তুমি আমাকে বল আমার মগটাতে চিনি আছে কি নেই?
    প্রশ্নটাতে রােদেলা বেশ মজা পেয়েছে, তাই একটু চিন্তা করেই বলে দিল—
    ‘সুগার ফ্রি।' ‘একদম ঠিক বলছ। কিন্তু কীভাবে বললে?
    অপশন মাত্র দুটো স্যার । সাথে আপনার স্বাস্থ্য আর বয়সটা মিলিয়ে সহজেই অনুমাণ করা যায় আপনি চিনি খান না।
    ‘ইউ আর রাইট।

    দুটি অপশনের মধ্যে সঠিকটা খুঁজে বের করা পর্যন্ত তােমার ক্ষমতা। কিন্তু আমার ক্ষমতা হয়তাে ১৫/২০টা অপশনের মধ্যে সঠিকটা খুঁজে বের করা পর্যন্ত। ৩০টা অপশন থাকলে হয়তাে পারতাম না। যৌক্তিক মনে হচ্ছে।
    ‘হা স্যার, খুবই যুক্তিপূর্ণ মনে হচ্ছে, আর মনে হচ্ছে আপনার সাথে বাজিতে কেউ কখনাে জিততে পারবে না। একথা শুনে লােকটার মধ্যে হঠাৎ একটা চঞ্চলতা প্রকাশ পেল। বদলে গেল মুখের অভিব্যক্তি। 
    ‘বাহ্, এই তাে তুমি আমাকে বুঝতে শুরু করেছ, আর ঠিক ধরে ফেলেছ আমাকে। বাজিতে আমি কোনােদিন হারিনি। অনেক বড় বড় জুয়াড়িরা আমার কাছে এসে ফকির হয়ে ফিরে গেছে। তােমাকে এখনই একটা প্রমাণ দিচ্ছি। আচ্ছা বলাে দেখি আমার মগে চা আছে নাকি কফি? মনে করাে এটাই একটা বাজি। এই বাজিতে তুমি যদি আমাকে হারাতে পার তা হলে এরপর থেকে আমাকে বলতে হবে, রােদেলা আহমেদ নামের একটি মেয়ের কাছে এই জীবনে একবারই আমি বাজিতে হেরেছিলাম। বুঝতেই পারছ এটা আমার জন্য একটা বিশাল বাজি।অরুতুমি যদি জিতে যাও তােমার চাকরি কনফর্ম। মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা স্যালারি।

    তােমার ট্রান্সপাের্টের জন্য থাকবে একটা গাড়ি যেটা শুধু তুমি একাই ব্যবহার করবে। আনলিমেটেড ফোন বিল। তিনটা ফেক্তি বোনাস, ইনক্রিমেন্ট, আরও অনেক কিছু। শুধু একটা উত্তর। মগটা উঠিয়ে লােকটা জানতে চায়, চা, না কফি?' খুব দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় রোঁদে লােকটাকে পাগল ভাবার কোনাে উপায় নেই, কারণ লােকটা যা বলছে তার প্রতিটি কথা রােদেলার বিশ্বাস হচ্ছে। তার পরেও চাকরির ইন্টারভিউতে দেশের নাম, রাজধানীর নাম, মুদ্রার নাম ধরা বাদ দিয়ে কেউ কি বাজি ধরে! অসহায় বােধ করে রােদেলা।

    ‘একটা চাকরি সত্যিই আমার খুব দরকার স্যার।
    ‘আমারও একজন কর্মচারী দরকার, ইমেডিয়েটলি। কারণ আমার হাতেও বেশি সময় নেই।'
    ‘মে আই নাে স্যার, হােয়াট ইজ মাই জব রেসপন্সিবিলিটি, আই মিন এখানে আমার কাজটা কী? যদিও চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে পজিশনের নাম লেখা ছিল পার্সেনাল সেক্রেটারি।'
    ‘তার আগে উত্তর দাও চা না কফি?
    ‘এখানে তাে কোনাে অফিসিয়াল এনভায়রমেন্ট দেখছি না, নাকি আপনাদের অফিস অন্য কোথাও স্যার? 
    দারবিশ ‘চা না কফি?’

    লােকটা একদৃষ্টিতে রােদেলার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই দৃষ্টিতে কোনাে মায়া মমতা বা অনুকম্পা নেই। প্রফেশনাল জুয়াড়ির দৃষ্টি। রােদেলা বেশিক্ষণ লােকটার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না। চোখ নামিয়ে নেয়। হয়তাে লােকটার দৃষ্টির মধ্যেই কিছু-একটা ছিল। রােদেলা নিজের ভিতরে এক ধরনের সাহস অনুভব করে। সে বুঝে গেছে এখন এ বাজিটা তাকে খেলতে হবে, সেও সিরিয়াসলি নিয়েছে বিষয়টা। থমথমে চেহারা নিয়ে বলে ‘ওয়েল, বাজিটা আমি খেলছি।
    ‘সাে, চা না কফি?’ কয়েক মুহূর্ত চোখটা বন্ধ করে খুলে রােদেলা বলে-- ‘কফি।
    লােকটা তার মগে চুমুক দিচ্ছিল। রােদেলার উত্তর শুনে থমকে যায়, কিন্তু সেটা বােঝা যায় না। সশব্দে মগটা রাখে সামনের টেবিলের উপরে । চমকে ওঠে রােদেলা। লােকটার মুখে রহস্যময় হাসি জয়-পরাজয়ের দোলাচালে রােদেলা।

    ‘দ্যাখাে কত সহজ একটা বাজি। অপশন ছিল মাত্র দুটো। অথচ দ্যাখাে আমার ভাগ্য আমাকে হারতে দেয় নি। আই উইন ইউ লুজ। নিভে যাওয়া রােদেলা বলে আমি তাে হেরে গেলাম, চাকরিটা আমার হচ্ছে না, তাই না স্যার?
    লােকটা না-সূচক মাথা নাড়ে।
    ‘চাকরি না হলেও দুঃখ নেই। আপনি আজ আমার অনেক বড় উপকার করে দিলেন স্যার। দুটো জিনিস শিখে গেলাম আপনার কাছ থেকে।

    আজকের পর আর কোনাে ইন্টারভিউতে আমাকে কেউ নার্ভাস করতে পারবে না। আমি আসি স্যার।
    ক্লান্ত রােদেলা উঠে যাচ্ছে। লােকটা নির্বিকার বসে থাকে। রােদেলা ড্রয়িংরুমে দরজার কাছে পৌছানের পর পেছন থেকে লােকটা জিজ্ঞেস করে ‘দ্বিতীয়টা বললে না, কী শিখেছ?”
    ‘বাজি, আমি বুঝেছি বাজি মানে আসলে চ্যালেঞ্জ, চালেঞ্জ সেই নেয় যার সাহস আছে। আর এই পৃথিবীটা সাহসী মানুষদের জন্য।' বলেই দরজা খুলে রােদেলা বের হতে যাবে এমন সময় লােকটি বলে ওঠে; ‘দেন ইউ গট দ্যা জব। ধীরে ধীরে বদলে যায় রােদেলার মুখের এক্সপ্রেশন। দারবিশ।

    দারবিশ pdf free

    লতিফুল ইসলাম শিবলী এর বই দারবিশ PDF পড়ুন এখানে–


    Book Publisher Author  F Size
    দারবিশ নালন্দা লতিফুল ইসলাম শিবলী ৭ মেগাবাইট
    Bookshop Price Language  T Page
    Durdin Magazine Only 250 Taka Bangla 110

    দারবিশ by লতিফুল ইসলাম শিবলী pdf পড়ে আপনাদের কেমন লেগেছে জানাবেন।

    Read More: মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন PDF

    Tags

    Post a Comment

    0Comments
    * Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
    Post a Comment (0)

    #buttons=(Accept !) #days=(20)

    Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
    Accept !