“হাতের তাসগুলাে আমরা বদলাতে পারি না, আমরা শুধু পারি খেলার ধারা বদলাতে”
— রেনডি পাউচ
দ্য লাস্ট লেকচার শিরােনামে অনেক প্রফেসর বক্তৃতা দিয়েছেন। তাদের বলা হয়েছিল নিজেদের কালাতিক্রম সম্পর্কে বলতে এবং এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলাে রােমন্থন করতে। যখন তারা। কথা বলতেন, তখন দর্শকদের মনে হতাে যদি এটি। আমাদের শেষ সুযােগ হয়; তবে বিশ্বে আমরা কি রেখে যাব? যদি আমরা আগামীকালই শেষ হয়ে যাই তবে আমাদের কি উত্তরাধিকার রেখে যাব? যখন কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের প্রফেসর র্যানডি পউশকে এ-রকম একটি লেকচার দিতে বলা হয়েছিল, তখন তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে এটিই তার শেষ সুযােগ, কারণ। এর পর পরই তার মধ্যে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। কিন্তু সত্যিকারের শৈশবকালীন স্বপ্নপূরণ শিরােনামে তার ভাষণে মরে যাওয়া নিয়ে কিছুই ছিল না।
দ্য লাস্ট লেকচার - জীবনের জন্য শিক্ষা
এটি ছিল প্রতিবন্ধকতা ডিঙানাে, অন্যকে স্বপ্নপূরণে সাহায্য করা এবং প্রতিটি মুহূর্তকে ধরে রাখার গুরুত্ব নিয়ে (কারণ সময় হলাে আপনার সবকিছু...এবং আপনি একদিন দেখবেন যা ভেবেছিলেন, তা থেকে অনেক কর্মই করতে পেরেছেন’)। এগুলাে ছিল র্যানডির সমুদয় বিশ্বাসের নির্যাস। এগুলাে ছিল বেঁচে থাকা নিয়ে কথা।
বইটিতে র্যানডি হাস্যরস, উদ্দীপনা এবং বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় ঘটিয়েছেন যা তার লেকচারকে এমন এক মাত্রা দিয়েছে যা সবার মনে অম্লান হয়ে থাকবে। র্যানডি পউশ কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স, হিউম্যান কম্পিউটার ইন্টারেকশন অ্যান্ড ডিজাইন-এর প্রফেসর। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত তিনি ভার্জেনিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছেন। তিনি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক ও গবেষক। কাজ করেছেন এভােব, গুগল, ইলেক্ট্রনিক আর্টস, ওয়াল্ট ডিজনি ইমাজিনারিং-এর সঙ্গে। তিনি এলিস। প্রজেক্টের একজন অগ্রসৈনিক। তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ভার্জেনিয়ায় থাকতেন। জেফরী জেসলাে : ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একজন কলামনিস্ট, যিনি দ্য লাস্ট লেকচার-এ যােগদান করেছিলেন এবং সেই গল্পটি লিখেছেন যা সারাবিশ্বে আলােড়ন তুলেছে। তিনি ডেট্রয়েটের উপশহরে স্ত্রী শেরী এবং কন্যা জর্ডন, এলেক্স এবং ইডেনকে নিয়ে বাস করছেন।
দ্য লাস্ট লেকচার ভূমিকা
আমার একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যা রয়েছে।বেশিরভাগ স্থান জুড়ে আমি ভয়ংকর ফিজিক্যাল আকারে রয়েছি। আমার লিভারে এখন দশটি টিউমার রয়েছে এবং আমার আয়ু আর অল্প কয়েক মাসের!
আমি তিনটি তরুণ শিশুর পিতা এবং আমার স্বপ্নের এক রাজকন্যার সঙ্গেই আমার বিয়ে হয়েছিল। আমি যখন নিজের জন্য খুব সহজে সরি অনুভব করি, এই সরি বলাটা তাদের বা আমার জন্য ভালাে কিছু করতে পারে না। তাই ভাবছি কীভাবে এই সীমিত সময়টা কাটিয়ে দিতে পারি।
স্পষ্টতই দৃশ্যমান অংশে আমার পরিবারের সঙ্গে, তাদের প্রতি খেয়াল রেখে। যেহেতু আমি এখনও পারছি, তাদের সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত আলিঙ্গন করছি এবং যৌক্তিক কাজগুলাে করে যাচ্ছি যাতে আমাকে ছাড়া তাদের জীবন চলার পথ সহজ হয়ে যায়।
কম স্পষ্ট অংশ হলাে, কীভাবে আমার শিশুদের শেখাতে পারি যা আমার পরবর্তী ২০ বছরে ওদেরকে শেখাবার কথা। তাদের বয়স এখনও এসব আলােচনার উপযুক্ত নয়। সব পেরেন্টই চায় তাদের শিশুদেরকে মদ থেকে ভালাে আলাদা করা, যা আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি এবং কীভাবে জীবনে আসা চ্যালেঞ্জগুলাে নিয়ে কাজ করা যায়। আমরা নিজেদের জীবনের কিছু গল্পও ওদেরকে শােনাতে চাই। প্রায়ই তাদের জীবন কীভাবে পরিচালন করবে তার পদ্ধতি হিসেবে এগুলাে শােনাতে চাই। এসব করার জন্য আমার আকাঙ্খ আমাকে কার্নেগী মেলােন ইউনিভার্সিটিতে নিয়ে
দ্য লাস্ট লেকচার গেল।
এসব লেকচার রুটিনমাফিক ভিডিয়াে টেপ করা হয়েছিল। আমি জানতাম সেদিনই এসব করা হয়েছিল। একাডেমিক লেকচারের মধ্যেও আমি চেষ্টা করেছি নিজের কথা বােতলে বন্দি করতে, যা একদিন আমার সন্তানেরা বিচে ধুয়ে বের করবে। যদি আমি চিত্রকর হতাম, তবে আমি তাদের জন্য আমার কথাগুলাে ছবিতে প্রকাশ করতাম। যদি আমি মিউজিশিয়ান হতাম, তবে আমি তাদের জন্য মিউজিক কম্পােজ করে দিতাম। কিন্তু আমি একজন লেকচারার। তাই আমাকে লেকচার দিতে হয়। আমি জীবনের আনন্দ নিয়ে কথা বলেছি। কথা বলছি—জীবনকে আমি কতটুকু অ্যাপ্রিশিয়েট করেছি তা নিয়ে, এমনকি নিজের জন্য তার কিছুই ধরে রাখিনি।
আমি কথা বলেছি সততা, সাধুতা, কৃতজ্ঞতা এবং অন্যান্য বিষয় যা আমি খুবই আন্তরিকভাবে ধরে রেখেছিলাম সেসব নিয়ে। সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি যাতে এসব কাজে অধৈর্য না হয়ে যাই। স্টেজে আমি যা শুরু করেছিলাম, এই বই তারই ধারাবাহিকতা। কারণ, সময় খুবই মূল্যবান এবং আমি যা পারি সবই আমার সন্তানদের জন্য ব্যয় করতে চাচ্ছিলাম। জেফরি জেসলােকে বললাম আমাকে সাহায্য করতে। প্রতিদিন আমার পড়শি এলাকায় সাইকেল চড়তাম, স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়ােজনীয় ব্যায়াম করতাম। তেপান্নটি লম্বা বাইক রাইডে আমি জেফ-এর সঙ্গে সেল ফোনে কথা বলেছি। সে তখন অসংখ্য ঘণ্টা ব্যয় করে আমার গল্পগুলাে লিখে নিয়েছে, আমার মনে হয় বলা উচিত তেপান্নটি লেকচার—যা এই বইতে লেখা হয়েছে।
আমরা জানি প্রথম থেকেই এর কোনােটিই জীবিত থাকা মা-বাবার বিকল্প নয়।
কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং কখনাে পারফেক্ট সমাধান হতে পারে না—এটি হলাে আপনার সীমিত রিসাের্স নিয়ে সবচেয়ে ভালাে করার চেষ্টা করা। লেকচার এবং বই উভয়েই এই বিষয়ে একটি প্রচেষ্টামাত্র।
আহত হওয়ার পরও সিংহ চায় গর্জন দিতে
অনেক প্রফেসর এসব আলােচনার শিরােনাম দিয়েছেন, দ্য লাস্ট লেকচার। হয়তাে আপনি তার একটি দেখেছেন। এটি কলেজ ক্যাম্পাসে এক সাধারণ এক্সারসাইজ হয়ে গিয়েছিল। প্রফেসরদের বলা হতাে, তাদের বিপর্যয়গুলাে বিশ্লেষণ করতে এবং যা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল তার স্মৃতি রােমন্থন করতে। যখন তারা কথা বলতেন, দর্শকদের একই প্রশ্ন নিয়ে ভাবা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না--যদি আমরা জানি এটিই আমাদের শেষ সুযােগ তবে পৃথিবীতে আমরা কী জ্ঞানের বার্তা রেখে যাব? যদি আমাদেরকে আগামীকালই শেষ হয়ে যেতে হয়, তবে আমাদের উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা কী রেখে যেতে চাইব?
অনেক বছর ধরে, কার্নেগী মেলনে একটি লাস্ট লেকচার সিরিজ চলছিল, কিন্তু তখন সংগঠকরা আমাকে ধরলেন প্রােগ্রামটি করার জন্য। তারা সিরিজটির নাম পরিবর্তন করে রাখলেন, জাজি। কিছু বাছাই করা প্রফেসরদের জিজ্ঞেস করলেন, তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত যাত্রার প্রতিক্রিয়াগুলাে জানাতে। এগুলাে খুব যে উত্তেজনাকর ছিল এমন না। তারপরও আমি কাজ চালিয়ে যেতে রাজি হলাম। আমাকে দেওয়া হলাে সেপ্টেম্বরের সুট। এইসময়ে আমার পেনক্রিয়েটিক ক্যান্সার ধরা পড়ে গেছে, কিন্তু আমি ছিলাম আশাবাদী। হয়তাে-বা আমি সেরকম একজন ভাগ্যবান হয়ে যেতে পারি, যে এরপরও বেঁচে যাবে
দ্য লাস্ট লেকচার।
যখন আমার চিকিৎসা শুরু হলাে, যারা ঐ লেকচার সিরিজ পরিচালনা করত তারা আমাকে মেইল করতে থাকল, ‘আপনি কী নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছেন? তারা জিজ্ঞেস করল, দয়া করে আমাদেরকে একটি সারাংশ পাঠান। একাডেমিয়াতে একটি আনুষ্ঠানিকতা ছিল যা কোনােভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যেত না, যদিও কেউ অন্য কোনাে কারণে খুবই জড়িয়ে পড়ে, যেমন মৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম। আগস্টের মাঝামাঝি আমাকে জানাননা হলাে, প্রােগ্রামের একটি পোেস্টার রেডি হয়ে আছে যা প্রিন্টে যাবে। তাই আমাকে টপিক নিয়ে সিদ্ধান্তটা নিতে হচ্ছে।
সেই বিশেষ সপ্তাহে খবর এল—আমার ওপরে সাম্প্রতিক করা চিকিৎসাগুলাে কাজ করছে না। আমার হাতে মাত্র কয়েকটি মাস আছে। জানতাম, এ অবস্থায় আমি লেকচারটি ক্যানসেল করতে পারব। প্রত্যেকেই ব্যাপারটা বুঝবে। হঠাৎ করে অনেকগুলাে করণীয় বিষয় চলে এল। যারা আমাকে ভালােবাসতাে তাদের সঙ্গে আমাকে দুঃখ ও বেদনা নিয়ে দেখা করতে হবে। আমার পারিবারিক বিষয়গুলােকে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে সাজিয়ে দিতে হবে। কিন্তু এত কিছুর পরও আমি লেকচারের সেই আইডিয়া ঝেড়ে ফেলতে পারলাম না। আমি একটি লাস্ট লেকচার দিতে অনুপ্রাণিত হলাম। যা বাস্তবেও হবে আমার লাস্ট লেকচার। আমি কী বলতে চাইব? এটিকে কীভাবে গ্রহণ করা হবে? আমি কি আসলেই তা করতে পারব? তারা আমাকে হয়তাে বাদ দেবে। স্ত্রীকে বললাম। কিন্তু আমি তা আসলেই করতে চাই এবং জাই (উচ্চারণ ‘জেই’) সবসময় ছিল আমার উদ্দীপনাদানের নেত্রী। আমি যখন উৎসুক হয়ে উঠতাম, সেও তাই হয়ে যেত। কিন্তু সে-ই এই পুরাে লাস্ট লেকচার আইডিয়া নিয়ে সতর্ক অবস্থান নিল।

সে মাত্র পিটসবার্গ থেকে সাউদার্ন ভার্জিনিয়াতে গিয়েছে যাতে আমার মৃত্যুর পর জেই এবং বাচ্চারা তাদের পরিবারের কাছাকাছি থাকতে পারে। জেই অনুভব করল, আমার এই মূল্যবান সময়টা লেকচারের স্ক্রিপ্ট লিখে এবং পিটসবার্গে গিয়ে এগুলাে প্রদান করে নষ্ট না করে বাচ্চাদের সঙ্গে অথবা নতুন বাড়ির উদৃবােধন ব্যয় করাই উচিত। বলতে পারাে, আমি স্বার্থপর! জেই আমাকে বলল, কিন্তু আমি তােমাকে পুরােপুরি চাই। লেকচার লিখে যে সময় নষ্ট করবে তা বেকার যাবে, কারণ এই সময়টা আমি ও বাচ্চাদের থেকে তােমাকে দূরে থাকতে হবে। বুঝলাম কথাগুলাে কোথেকে আসছে। যখন আমি অসুস্থ হয়ে গেলাম, নিজের সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করলাম দ্য লাস্ট লেকচার।
আমি বেড়ে উঠি। আমাদের পরিবারে টাকা কখনাে ইস্যু ছিল না। এর বেশিরভাগ কারণ আমার পেরেন্টসরা টাকা খরচের প্রয়ােজন কখনাে মনে করেননি। তারা ছিলেন মিতব্যয়ী। খুব কমই তারা ডিনার করতে বাইরে যেতেন। আমরা বছরে একবার কী দুবার মুভি দেখতে যেতাম। টিভি দেখ’ পেরে বলতেন, ‘এটি ফ্রি। অথবা ভালাে হয় লাইব্রেরিতে গিয়ে একটা বই হাতে নাও। আমার যখন দুবছর বয়েস, বােনের চার, মম আমাদের সার্কাসে নিয়ে গেলেন। বয়স নয় হলে আমি আবার যেতে চেয়েছিলাম, ‘তােমার ওখানে যাওয়ার প্রয়ােজন নেই। মম বললেন, এখন নিজেই সার্কাসের মধ্যে পড়ে গেছ।
আজকালকার স্ট্যান্ডার্ডে এটিকে দমনমূলক মনে হবে, কিন্তু এটি আসলে ছিল একটি ম্যাজিকাল শৈশবকাল। আমি নিজেকে আসলেই একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখতে পেরেছিলাম, যার ওপরে ওঠার অবিশ্বাস্য পা আছে কারণ আমার একজন মা এবং একজন বাবা ছিলেন যারা এত বেশি বিষয় সঠিকভাবে সামাল দিতে পারতেন।
আমরা খুব বেশি কেনাকাটা করতাম না কিন্তু আমরা সবকিছু নিয়েই ভাবতাম। কারণ আমার ড্যাডের ছিল বর্তমান ঘটনাবলি, ইতিহাস, আমাদের জীবন, এসব নিয়ে এক সংক্রামক ধরনের উৎসুকতা।
বাস্তবে, বেড়ে ওঠার সময়ে আমি ভাবতাম দু ধরনের পরিবার আছে :
১. যাদের ডিনারের সময়ে একটি ডিকশনারির প্রয়ােজন হতাে।
২. যাদের দরকার হতাে না।
আমরা ছিলাম প্রথম শ্রেণিভুক্ত। প্রতিরাতে আমরা ডিকশনারির বিভিন্ন বিষয়ে আলােচনা করে শেষ করতাম, যা আমাদের ডাইনিং টেবিল থেকে মাত্র ছয়ফুট দূর একটি শেলফে রাখতাম। যদি তােমাদের কোনাে প্রশ্ন থাকে। আমার পরিবারের লােকেরা বলতেন, তাহলে উত্তর খুঁজে নাও।'
আমাদের পরিবারের সহজাত প্রবৃত্তিই ছিল কুঁড়েদের মতাে বসে অবাক হতে থাকা নয়। আমরা তারচেয়ে ভালাে পন্থা জানতাম।
এনসাইক্লোপিডিয়া খুলাে, ডিকশনারি খুলাে। তােমার মনটাকে খুলে রাখ।
ড্যাড ছিলেন অবিশ্বাস্য চমৎকারভাবে গল্প বলতে পারা লােক। তিনি সবসময় বলতেন গল্পগুলাে, কোন কারণে বলতে হয়। তিনি মজার মজার ঘটনা জানতেন যেগুলাে নৈতিকতার গল্পে রূপান্তরিত হয়ে যেত।
র্যাঞ্চ হাউসের এলিভেটর
আমার কল্পনাগুলাে সবসময়ই ধরে রাখা কঠিন হতাে এবং হাইস্কুলের পথ ধরে অর্ধেক পথ অতিক্রম করত। মাথায় থাকা এসব চিন্তাগুলাের কিছু শৈশবের বেডরুমের দেওয়ালে ঝাঁপটা দিয়ে বসিয়ে দিতে চাইতাম।
মা-বাবার কাছে এর অনুমতি চাইলাম। আমি দেওয়ালে কিছু ছবি আঁকতে চাই। আমি বললাম। ‘যেমন? তারা জানতে চাইল।
‘যেসব জিনিস আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমি বললাম ‘এসব বিষয় মনকে শীতল করে দেবে, আপনারা দেখবেন।
ব্যাখ্যাটা বাবার কাছে যথেষ্ট মনে হলাে। সেজন্যই তিনি এত উঁচুমানের লােক। তিনি আপনার দিকে চেয়ে এমন হাসি দেবেন যা দিয়ে বুঝিয়ে দিবেন যে বিষয়টা যাতে ক্রিয়েটিভ হয়। তিনি উৎসুকতা জুলে ওঠে—দেখতে ভালােবাসতেন। তিনি আমাকে বুঝতেন এবং প্রচলিত নিয়মের বাইরে নিজেকে প্রকাশ করার আমার চাহিদাকে ভালােবাসতেন।
তাই তিনি ভেবে নিলেন যে আমার দেওয়াল-পেইন্টিং-এর অ্যাডভেঞ্চার একটি দারুণ আইডিয়া।
পুরাে দুঃসাহসিক এই অভিযানে মা তত উচ্ছসিত ছিলেন না। কিন্তু আমার উত্তেজিত হয়ে ওঠা দেখে দ্রুত নরম হয়ে গেলেন। তিনি জানতেন ড্যাড সাধারণত এসব বিষয়ে জিতে যান। তিনি শান্তিপূর্ণভাবেই সারেন্ডার করতেন। আমার বােন, টাম্মি এবং বন্ধু জ্যাক শেরিফ-এর সাহায্যে দুদিনে বেডরুমের দেওয়াল পেইন্ট করে ফেললাম। বাবা লিভিং রুলে বসে নিউজপেপার পড়ছিলেন এবং ধৈর্য ধরে মােড়ক উন্মােচনের অপেক্ষা করছিলেন।
মা পুরােপুরি নার্ভাস হয়ে হলরুমে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি আমাদের ওপর দোষারােপ করে যাচ্ছিলেন, মাঝে মাঝে উঁকি মারছিলেন, কিন্তু আমরা ব্যারিকেড দিয়ে রাখছিলাম। মুভিতে বলা ডায়লগের মতাে, এটি হলাে, ‘একটি বন্ধ সেট। আমরা যা এঁকেছি।' | ভালাে, আমি চেয়েছি দেওয়ালে একটি কোয়াড্রেটিক ফর্মুলা এঁকে রাখতে, কোনাে না-জানা পরিমাপের সর্বোচ্চ পাওয়ার হলাে স্কয়ারে। আমি ভাবলাম সবসময় আনকোড়া খুব উপভােগ্য হবে। দরজার ডানদিকে আমি পেইন্ট করে লিখলাম 2a।
| জ্যাক ও আমি একটি বিরাট সিলভার এলিভেটর ডােরে পেইন্ট করলাম। ডােরের বাম পাশে আমরা আপ’ ও ‘ডাউন বাটন আঁকলাম। এক থেকে ছয় পর্যন্ত ফ্লোর নাম্বার দিয়ে আমরা একটি প্যানেল আঁকলাম। নাম্বার তিন’ ছিল আলােকিত। আমরা একটি রেঞ্চ হাউসে ছিলাম; যা ছিল মাত্র একটি লেবেলে। তাই আমাকে ছয়টি লেবেল ভেবে নিতে ভালাে ফ্যান্টাসির আশ্রয় নিতে হয়েছিল। তাই পেছন দিকে তাকালে প্রশ্ন আসে, কেন আমি আশি বা নব্বইটি আঁকলাম না? এটি ছিল সেরকম বিগ-শট স্বপ্নচারী, কেন আমার এলিভেটর তিন-এ থেমে গেল? আমি জানি না। হয়তাে এটি আমার জীবনের উচ্চাকাঙ্খ এবং বাস্তবতা এ দুয়ের মাঝখানে ব্যালেন্সের একটি প্রতীক। আমাকে প্রদত্ত সীমিত আর্টিস্টিক স্কিল দিয়ে আমি ভেবেছিলাম, সবচেয়ে ভালাে হতাে যদি আমি এসব বিষয়ের স্কেচ বেসিক জ্যামিতিক সেইপে করতে পারতাম। তাই আমি ফিস (fins)। দেওয়া রকেটশিপ আঁকলাম, স্নাে হােয়াইট মিরর আঁকলাম লাইন দিয়ে। মনে রাখবে যখন আমি তােমাকে বলব যে তুমি সবচেয়ে ভালাে করেছ? ভেবে নিও আমি মিথ্যা বলছি!’ | সিলিং-এ জ্যাক ও আমি লিখলাম, I'm trapped in the attic!' আমরা অক্ষরগুলাে লিখলাম পেছনমুখি করে, এতে মনে হলাে আমরা। কাউকে এখানে কারাবন্দি করে রেখেছি এবং সে আঁচড় কেটে লিখছে S.O.S।
যেহেতু আমি দাবা পছন্দ করি, টাম্মি দাবার গুটি এঁকে দিল (আমাদের মধ্যে একমাত্র তারই ছবি আঁকার প্রতিভা ছিল)। যখন সে এটি নিয়ে ব্যস্ত ছিল, আমি তখন বাংক বেডের পাশে একটি পানিতে ডুবন্ত (lurking) সাবমেরিনের ছবি এঁকে দিলাম। বেডের ওপরে আমি শত্রুদের জাহাজের খুঁজে একটি উড্ডয়মান পেরিস্কোপের ছবি এঁকে ফেললাম। পার্ক রাত ৮টা পর্যন্ত খােলা।
The Last Lecture by Randy Pausch
সামার ২০০৬ সালে আমার মেডিক্যাল ওডেসি শুরু হয়ে গেল। যখন আমি ওপরের পাকস্থলীতে হালকা, ব্যাখ্যাতীত ব্যথা অনুভব করতে থাকলাম, জন্ডিস হয়ে গেল, ডাক্তাররা সন্দেহ করল আমার হেপাটাইটিস হয়ে গেছে। সিটি স্ক্যান থেকে জানা গেল, আমার পেনক্রিয়াটিক ক্যান্সার হয়ে গেছে। দশ মিনিট সময়েই আমি গুগল থেকে জানলাম সংবাদটি কত খারাপ ছিল। অন্য সবধরনের ক্যান্সার থেকে পেনক্রিয়াটিক ক্যান্সারে মৃত্যুহার অনেক বেশি। যাদের মধ্যে এ রােগ নির্ণয় করা হয়, তাদের ৫০% ছয় মাসের মধ্যে মারা যায়। ৯৬% মারা যায় পাঁচ বছরের মধ্যে।
একজন বৈজ্ঞানিক হিসেবে আমি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলাম যেমন অনেকগুলাে বিষয় আমি হাতে নিয়ে থাকি। এবং যেভাবে আমি তথ্য সংগ্রহের জন্য অনেক অনেক প্রশ্ন করে থাকি। ডাক্তারদের সঙ্গে আমিও হাইপােথেসিস দাঁড় করাই। তাদের সঙ্গে কথাগুলাের আমি অডিয়াে রেকর্ড রাখি যাতে বাড়িতে এসে তাদের ব্যাখ্যাগুলাে ভালাে করে শুনতে পারি। বিভিন্ন জার্নালের আর্টিকেলগুলাে জড়াে করে আমি তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে দেখা করি। ডাক্তাররা আমার সঙ্গে আলােচনা করতে চান না। বাস্তবে অনেকে ভাবেন আমি এক মজার রােগী কারণ সবকিছুর সঙ্গে আমার অতিরিক্ত জড়িয়ে থাকা (আমার সঙ্গে অ্যাডভােকেট আমার বন্ধু এবং সহকর্মী জেসিকা হেডজিন-কে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ায়ও ডাক্তাররা কিছু মনে করেননি। হােডজিন আমার সঙ্গে গিয়ে সাপাের্ট দেওয়ার পাশাপাশি তার দ্য লাস্ট লেকচার।
বিভিন্ন মেডিক্যাল রিপাের্ট ব্যাখ্যা করার রিসার্চ স্কিল কাজে লাগাত।
আমি ডাক্তারদের বলেছিলাম যে, ওদের যে-কোনাে অপারেশন বা যেকোনাে ওষুধ খেতে আমার আপত্তি নেই। কারণ আমার একটি উদ্দেশ্য আছে, আর তা হলাে যতদূর সম্ভব বেশিদিন জেই ও আমার বাচ্চাদের সঙ্গে বেঁচে থাকা। পিটসবার্গের সার্জন হার্ভ জেহ-এর সঙ্গে প্রথম অ্যাপয়েন্টমেন্টে আমি বললাম, ‘পরিষ্কারভাবে বলছি। আমার গােল হলাে কমপক্ষে দশ বছর বেঁচে থাকা। আমি সেই অল্পসংখ্যক রােগীর একজন হতে চাই যে কিনা হুইপল অপারেশন থেকে ভালাে কিছু পেতে পারে। তিরিশ-এর দশকে একজন ডাক্তার এই জটিল অপারেশন প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছিলেন। ১৯৭০ পর্যন্ত এই সার্জারি ২৫%-এর বেশি রােগীকে মেরে ফেলেছে যারা এ ধরনের অপারেশন করেছেন।
২০০০ সালের দিকে যদি অভিজ্ঞ সার্জন এই অপারেশন করে থাকেন তবে মৃত্যুর হার ৫%-এর চেয়ে কমে যাবে। আমি জানতাম এটি একটি কঠিন সময় কারণ এ-রকম সার্জারির পর কেমােথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি চালাতে হয়। সার্জারির অংশ হিসেবে ড. জেহ শুধু টিউমার কাটলেন না সঙ্গেসঙ্গে তিনি আমার গলব্লাডার। পাকস্থলীর তিনভাগের এক অংশ, পেনক্রিয়াসের তিনভাগের এক অংশ এবং আমার ক্ষুদ্রান্তের কয়েক ফুট কেটে আনলেন।
এগুলাে থেকে রি-কভার হওয়ার পর আমাকে দুমাস সময় হাউস্টনের এমডি অ্যান্ডারসন ক্যান্সার ক্লিনিকে ছিলাম, এসব পাওয়ারফুল কেমােথেরাপি নিলাম, এর সঙ্গে প্রতিদিন আমার পাকস্থলীতে হাই-ডােজের রেডিওথেরাপি। আমার ওজন ১৮২ থেকে ১৩৮-এ চলে এলাে এবং শেষে কোনােমতে শুধু হাঁটতে পারতাম। জানুয়ারিতে পিটসবার্গের বাড়িতে এলাম। আমার সিটি স্ক্যানে আর কোনাে ক্যান্সার ধরা পড়ল না। আস্তে আস্তে শরীরে শক্তি ফিরে পাচ্ছিলাম।
আগস্টে আমার ত্রৈমাসিক চেকআপের সময়। জেই ও আমি বাচ্চাদেরকে বেবি-সিটারের জিম্মায় রেখে দৌঁড়ালাম হাউস্টনে এমডি অ্যান্ডারসনের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য। আমরা এই ট্রিপকে রােমান্টিক কিছু বলেই গণ্য করলাম। আগের দিন বিরাট এক ওয়াটার পার্কে গেলাম, স্পিড স্লাইড চড়লাম। তারপর ২০০৭ সালের আগস্ট ১৫, বুধবারে আমরা এমডি অ্যান্ডারসনে সিটি স্ক্যানের রিপাের্ট নিতে অঙ্কোলজিস্ট রবার্ট উলফের ভাই রেন্ডি পাউশ এর দ্য লাস্ট লেকচার শুনতে গেলাম।