Sofir Jogot Pdf - GH Habib- সোফির জগত

18 minute read
0
Sophir Jogot pdf Bangla

Sofir Jogot pdf

নন্দনকানন

সোফির জগৎ পড়ুন এখানে। 

কোনাে এক পর্যায়ে কোনাে একটা কিছু নিশ্চয়ই শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছিল...

স্কুল থেকে বাসায় ফিরছে সােফি অ্যামুন্ডসেন। প্রথমে, খানিকটা পথ, জোয়ানার সঙ্গে হাঁটছিল সে। রােবট নিয়ে কথা বলছিল ওরা। জোয়ানার ধারণা, মানব-মস্তিক উন্নত একটা কম্পিউটারের মতাে। সােফি ঠিক সায় দিতে পারছিল না ওর কথায়। মানুষ নিশ্চয়ই স্রেফ এক টুকরাে হার্ডওয়্যার নয়?

সুপারমার্কেট পর্যন্ত এসে দু'জন যার যার পথ ধরল। এলােমেলােভাবে ছড়িয়ে পড়া একটা শহরতলির প্রান্তে থাকে সােফি, জোয়ানার বাসা থেকে স্কুলের দূরত্বের দ্বিগুণ দূরত্বে। ওর বাগানের পরে আর কোনাে বাড়ি নেই । আর তাতে করে মনে হয় ওর বাসা যেন পৃথিবীর একেবারে শেষ প্রান্তে। এখান থেকেই বনের রু।

মােড় ঘুরে ক্লোভার ক্লোজে পড়ল সােফি। রাস্তাটার শেষ মাথাটা হঠাৎ বেঁকে গেছে। উইকেন্ড ছাড়া লােকজন খুব একটা যায় না ওদিকে।

মে মাস শুরু হয়েছে মাত্র । ড্যাফোডিলের ঘন ঝাড়গুলাে ফলের গাছগুলােকে ঘিরে আছে কিছু কিছু বাগানে। বার্চ গাছে এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে হালকা সবুজ পাতা।

বছরের এই সময়টাতে সবকিছু যে কীভাবে এক সঙ্গে প্রাণ পেয়ে ওঠে তা সত্যি আশ্চর্যের! উষ্ণতা পেলেই আর তুষারের শেষ চিহ্ন অদৃশ্য হয়ে যেতেই প্রাণহীন মাটির ভেতর থেকে সবুজ গাছপালার এই দঙ্গল লকলকিয়ে ওঠে কেন?

বাগানের গেটটা খুলে চিঠির বাক্সে উঁকি দিল সােফি। সাধারণত বেশ কিছু সাদামাটা চিঠিপত্র আর কয়েকটা বড়সড় খাম থাকে তার মায়ের জন্যে, সেগুলাে সে রান্নাঘরের টেবিলে ডাই করে ফেলে রেখে তার কামরায় উঠে যায় হােমওয়ার্ক শুরু কতে।

মাঝে মধ্যে কিছু চিঠি আসে তার বাবার কাছে, ব্যাংক থেকে। কিন্তু তাই বলে ভাববার কোনাে কারণ নেই যে তার বাবা আর দশজন বাবার মতাে সাধারণ কোনাে লােক। একটা বড় অয়েল ট্যাংকারের ক্যাপ্টেন তিনি, বছরের বেশির ভাগ সময় বাড়ির বাইরেই কাটান। 

অল্প যে ক'টা হপ্তা তিনি একটানা বাড়িতে থাকেন, সােফি আর তার মায়ের জন্য বাড়িটাকে সুন্দর ও আরামদায়ক করার কাজেই ব্যয় করেন সময়টা। কিন্তু যখন সমুদ্রে থাকেন, তখন তাকে যেন খুব দূরের মানুষ বলে মনে হয়। চিঠির বাক্সে মাত্র একটা চিঠি এবং সেটা সােফির জন্যে। সাদা খামটার ওপর লেখা 'সােফি'। 

সোফির জগত pdf


২ সােলর জগৎ আমুন্ডসেন, 
৩ ক্লোভার ক্লোজ। 

ব্যাস, এই। কে পাঠিয়েছে তা লেখা নেই। এমনকি কোনাে ডাকটিকেটও নেই খামটার ওপর।

গেটটা বন্ধ করে দিয়ে খামটা খুলল সােফি। মাত্র এক টুকরাে কাগজ সেটার ভেতর, খামের চেয়ে কোনােভাবেই বড় হবে না সেটা। তাতে লেখা কে তুমি?

কেবল এই দুটো শব্দ আর কিছু না, হাতে লেখা, শেষে একটা বড় প্রশ্নবােধক চিহ্ন। আবার তাকাল সােফি খামটার দিকে। চিঠিটা যে তার কাছেই লেখা তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। কিন্তু কে রাখতে পারে ওটা চিঠির বাক্সে?

দ্রুত লাল বাড়িটার ভেতর ঢুকে পড়ে সােফি। সে দরজা বন্ধ করার আগেই তার বেড়াল শিয়াকান বরাবরের মতাে ঝােপের ভেতর থেকে বেরিয়ে, সামনের সিড়িতে লাফ দিয়ে পড়ে চট করে ঢুকে পড়ল ভেতরে।

মনমেজাজ খারাপ থাকলে সােফির মা বাড়িটাকে বলেন মিনেজারি'; মিনেজারি হচ্ছে পশুপাখির একটা সংগ্রহ। সােফির একটা মিনেজারি আছে এবং সেটা নিয়ে সে বেশ সন্তুষ্টও বটে। তিনটে গােল্ডফিশ নিয়ে শুরু হয়েছিল সংগ্রহটা-গােন্ডটপ, রেড রাইভিংহুড আর ব্ল্যাকজ্যাক। 

এরপর সে পায় স্মিট আর স্মিউল নামের দুটো বাজারিগার’, তারপর কচ্ছপ গােবিন্দ আর সব শেষে মামালেড বেড়াল শিয়াকান। সােফির মা শেষ বিকেলের আগে কাজ থেকে বাড়ি ফেরেন না আর জাহাজে চেপে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ানাের কাজে তার বাবা বড্ড বেশি বাড়ির বাইরে থাকেন বলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে দেয়া হয়েছে এই জন্তুগুলাে।

স্কুল ব্যাগটা মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলল সােফি, তারপর শিয়াকানের জন্য বের করল এক বাটি বেড়ালের খাবার। এরপর সে রান্নাঘরের একটা টুলের ওপর বসে পড়ল রহস্যময় চিঠিটা হাতে নিয়ে ।

কে তুমি?

সােফির কোনাে ধারণা নেই। অবশ্যই সে সােফি অ্যামুন্ডসেন, কিন্তু কে সে? ব্যাপারটা সে আসলে ভেবে দেখেনি, অন্তত এখন পর্যন্ত।
তাকে একটা অন্য নাম দেয়া হলে কী হতাে? ধরা যাক, অ্যানি টসেন। সে কি তবন অন্য একজন হয়ে যেত?

হঠাৎ তার মনে পড়ল বাবা আসলে তার নাম রাখতে চেয়েছিল লিলেমাের। সােফি ভাবতে চেষ্টা করল লিলেমাের অ্যামুন্ডসেন হিসেবে হাত মেলাচ্ছে আর নিজের পরিচয় দিচ্ছে সে, কিন্তু ব্যাপারটা একেবারেই এগােল না। আরেকটি মেয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে যেতে থাকল।

হঠাৎ লাফিয়ে উঠল সে, গােসলখানায় ঢুকে পড়ল অদ্ভুত চিঠিটা হাতে নিয়ে। আয়নার সামনে গিয়ে দাড়াল, তারপর তাকাল তার নিজের চোখের দিকে ।  আমি সােফি আমুন্ডসেন,' বলল সে।

১. Budgeriger, টিয়া পাখির মতাে দেখতে, প্রধানত উজ্জ্বল সবুজ রঙের অস্ট্রেলীয় পাখি
অনুবাদক।

আয়নার মেয়েটা একটু মুখ বাঁকানাে ছাড়া আর কোনাে প্রতিক্রিয়া দেখাল না। সােফি যা করে, সে-ও ঠিক তাই করে। সফি তার প্রতিচ্ছবিকে হারানাের জন্য খুব তুরিত গতিতে নড়ে উঠল একবার, কিন্তু অন্য মেয়েটা ঠিক তার মতােই দ্রুত। 

‘তুমি কে?' জিজ্ঞেস করল সফি।

Sofir Jogot - GH Habib


এ-প্রশ্নেরও কোনাে জবাব পেল না সে, তবে ক্ষণিকের জন্য তার বুঝতে অসুবিধে হলাে প্রশ্নটা সে করেছে নাকি তার প্রতিবিম্ব।

সােফি আয়নার ভেতরের নাকটার ওপর তার তর্জনী চেপে ধরে বলল, “তুমি হচ্ছে আমি।
কথাটায় কোনাে সাড়া না পেয়ে বাক্যটা সে ঘুরিয়ে বলল এবার, ‘আমি হচ্ছি তুমি।

নিজের চেহারা নিয়ে মাঝে মাঝে অসষ্টিতে ভােগে সােফি। তাকে অনেকবারই বলা হয়েছে যে তার চোখ দুটো সুন্দর, পটলচেরা, কিন্তু সেটা সম্ভবত এই কারণে বা যে তার নাকটা খুব ছােট আর মুখটা বেশ একটু বড়। 

আর তার কান দুটো চোখেৰ বুব। কাছাকাছি। সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হচ্ছে তার সােজা চুল, যা দিয়ে কোনাে কিছু করা অসম্ভব। মাঝে মাঝে, ক্লদ দেবুসি-র কোনাে গান শােনার পর, বাবা তার চুলে হাত বুলিয়ে তাকে শনের চুলের মেয়ে' বলে ডাকতেন। তিনি তা বলতেই পারেন, তাকে তাে আর সােজা চুল দিয়ে জীবনযাপন করার সাজা দেয়া হয়নি। 

মুস (mousse) কিংবা স্টাইলিং জেল, কোনাে কিছুই একবিন্দু পরিবর্তন আনতে পারেনি সােফির চুলে। মাঝে মধ্যে নিজেকে সােফির এতাে কুৎসিত লাগে যে তার মনে হয় সে কোনাে ত্রুটি নিয়ে জন্মেছিল কিনা। তার মা তাে প্রায়ই বলেন ওর জন্মের সময় তাকে কী ভীষণ কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে । কিন্তু কার চেহারা কেমন হবে সেটা কি এর ওপরই নির্ভর করে?

সোফির জগৎ পিডিএফ


ব্যাপারটা কি খুব উদ্ভট নয় যে সে জানে না সে কে? আর এটাও কি খুব যৌক্তিক যে সে দেখতে কেমন হবে সে-ব্যাপারে তার নিজের কোনাে মতামত নেয়া হয়নি? তার চেহারাটা তার ওপর স্রেফ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। সে তার বন্ধু-বান্ধব পছন্দ করে নিতে পেরেছে, কিন্তু নিশ্চয়ই নিজেকে বেছে নেয়নি।

মানুষ আসলে কী? আয়নার মেয়েটার দিকে ফের মুখ তুলে তাকাল সােফি।

আমি বরং ওপরে গিয়ে আমার বায়ােলজি হােমওয়ার্ক করি,' প্রায় কৈফিয়তের সুরে বলল সােফি। হল ঘরে বেরিয়ে আসার পর সে ভাবল, না, তারচেয়ে বরং বাগানে যাই।
কিটি, কিটি, কিটি!'
বেড়ালটাকে তাড়িয়ে বাইরে বাড়ির দোরগােড়ার সিড়ির ধাপে নিয়ে এলাে সােফি, তারপর বন্ধ করে দিল দরজাটা।

রহস্যময় চিঠিটা হাতে নিয়ে সােফি যখন নুড়ি-বিছানাে পথে দাঁড়িয়ে আছে, খুবই অদ্ভুত এক চিন্তা এসে ভর করল তার ওপর। নিজেকে তার মনে হলাে একটা পুতুলের মতাে, একটা জাদুদণ্ড বুলিয়ে যার মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করা হয়েছে। 

২.
Claude Debussy, ১৮৬২-১৯১৮, ফরাসি সূর্ষা -অনুবাদক।

ঠিক এই মুহূর্তে সে যে সােফির জগৎ পৃথিবীর বুকে চমৎকার এক অভিযানে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেটা কি সত্যিই এক অসাধারণ ব্যাপার নয়!
হালকা চালে লাফিয়ে নুড়ি-বিছানাে পথটা আড়াআড়িভাবে পেরিয়ে গিয়ে শিয়াকান ঢুকে পড়ল একদঙ্গল লাল-কিশমিশ ঝোপের ভেতর। কী প্রাণবন্ত একটা বেড়াল, ওর মসৃণ শরীরের সাদা জুলফি থেকে পাকানাে লেজের ডগা পর্যন্ত শক্তির ফুণ পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। 

এই বাগানে এখন এই বেড়ালটাও আছে, কিন্তু সােফি যেমন নিজেকে নিয়ে ভাবছে, শিয়ার্কান তাে মােটেই করছে না। বেচে থাকা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করতেই লােফি উপলব্ধি করতে থাকে চিরদিন সে বেঁচে থাকবে না। সে ভাবল, আমি এখন এ-পৃথিবীতে আছি, কিন্তু একদিন চলে যাবাে।

মৃত্যুর পরে কি কোনাে জীবন আছে? বেড়ালটা ভাগ্যবান, এই প্রশ্নটা নিয়েও একবিন্দু মাথাব্যথা নেই ওর। 

সােফির দাদি মারা গেছেন বেশি দিন হয়নি। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিনই তার কথা মনে হয়েছে সােফির। এটা খুবই বাজে ব্যাপার যে জীবন ফুরিয়ে যায়!

নুড়ি-বিছানাে পথের ওপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে সােফি। বেঁচে থাকা নিয়ে আরও বেশি করে ভাববার চেষ্টা করে, যাতে সে যে একদিন বেঁচে থাকবে না এ-কথাটা ভুলে যেতে পারে সে। কিন্তু তা সম্ভব হলাে না। যখনই সে এ-মুহূর্তে বেঁচে থাকার বিষয়টাতে মনােযােগ দিল, সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর চিন্তাও এসে পড়ল তার মনের মধ্যে। 

সোফির জগৎ pdf

উল্টোভাবেও ঠিক একই ব্যাপার ঘটল; একদিন যে সে মারা যাবে এই ব্যাপারে একটা তীব্র অনুভূতি মনের মধ্যে সৃষ্টি করার মাধ্যমেই কেবল সে উপলব্ধি করতে পারল বেঁচে থাকাটা কী অসাধারণ রকমের ভালাে একটা জিনিস। ব্যাপারটা যেন একটা মুদ্রার দুটো পিঠ আর, মুদ্রাটা সে বারে বারে উল্টে দিচ্ছে। সেটার একটা পিঠ যতই আরও বড় আর স্পষ্ট হয়ে উঠছে, অপর পিঠটাও হয়ে উঠছে তত বড় আর ততই স্পষ্ট।

সে ভাবল, একদিন যে মারা যেতেই হবে সেটা উপলব্ধি না করে কারাে পক্ষে বেঁচে থাকার ব্যাপারটা বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। কিন্তু এ-কথাটাও ঠিক যে, বেঁচে থাকাটা যে কী অসম্ভব রকমের আশ্চর্যের একটা ব্যাপার সেটা না ভেবে এটা উপলব্ধি করা অসম্ভব যে আমাদেরকে একদিন মরতে হবে। সােফির মনে পড়ল দাদি অনেকটা এধরনেরই একটা কথা বলেছিলেন যেদিন ডাক্তার তাকে প্রথম বললেন যে তিনি অসুস্থ। দাদী বলেছিলেন, ঠিক এই মুহূর্তটির আগে আমি বুঝতে পারিনি জীবন কত সমৃদ্ধ।

ব্যাপারটা কী দুঃখজনক যে অসুস্থ হওয়ার পরেই কেবল বেশিরভাগ লোেক বুঝতে পারে বেঁচে থাকাটা কত বড় একটা উপহার। আর নয়ত তাদেরকে একটা রহস্যময় চিঠি পেতে হয় ডাকবাক্সের ভেতর!

এখন বােধহয় তার গিয়ে দেখা উচিত আর কোনাে চিঠি এলাে কিনা। গেটের কাছে ছুটে গিয়ে সবুজ ভাকবাক্সের ভেতর তাকাল সােফি। সেখানে ঠিক প্রথমটার মতােই আরেকটা সাদা খাম দেখে চমকে গেল সে। কিন্তু সােফি নিশ্চিত প্রথম চিঠিটা যখন সে নিয়েছিল তখন বাক্সটা খালি ছিল! এ-খামটার ওপরেও তার নাম লেখা। 

बमनकानन

ইয়স্তেন গার্ডার এর বই pdf


মুখ ছিড়ে খামটা খুলল সে, তারপর ভেতর থেকে বের কল সেই প্রথমটার আকারের একটা চিঠি।

তাতে লেখা পৃথিবীটা কোথা থেকে এলাে?
আমি জানি না, ভাবল সােফি। নিশ্চয়ই কেউ-ই আসলে জানে না সেটা। 

কিন্তু তারপরেও, সােফির কাছে মনে হলাে এটা একটা সঙ্গত প্রশ্ন। জীবনে এই প্রথমবারের মতাে সে উপলব্ধি করল যে পৃথিবীটা কোথা থেকে এলাে এ-ব্যাপারে অন্তত প্রশ্ন না করে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা ঠিক নয়। 

রহস্যময় চিঠি দুটো সােফির মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। সে ঠিক করল গুহায় গিয়ে বসবে।গুহাটা সােফির খুবই গােপনীয় একটা লুকানাের জায়গা। সে যখন খুবই রেগে থাকে, খুবই কষ্টে থাকে, কিংবা খুবই খুশিতে থাকে তখন ওখানে যায় সে। আজ স্রেফ হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছে সে।

অনেকগুলাে ফ্লাওয়ার বেড, ফলের ঝাড়, নানান ধরনের ফলের গাছ, একটা গ্লাইডার আর ছােট্ট একটা কুঞ্জ এ-সব নিয়ে বড়াে একটা বাগান লাল বাড়িটাকে ঘিরে আছে; জনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ওঁদের প্রথম সন্তান মারা গেলে দাদা এই কুটা তৈরি করে দিয়েছিলেন দাদিকে। বাচ্চাটার নাম ছিল মেরি। ওর কবরের ফলকে সেবা। আছে; 'ছােট্ট মেরি এসেছিল মােদের কাছে, শুভেচ্ছা জানিয়ে আমাদের সে আবার চলে গেছে।'  

ব্যাস্পবেরি ঝাড়গুলাের পেছনে, বাগানের এক কোনায় ঘন একটা ঝােপ আছে, ফুল বা বেরি কোনাে কিছুই জন্মায় না ওখানে। আসলে ওটা একটা পুরনো বেড়া, এসময় জঙ্গলের সীমানা নির্দেশ করত, কিন্তু গত বিশ বছরে ওটা কেউ ছেটে-টেটে দেয়নি বলে ওটা এখন জট পাকানাে দুর্গম পিণ্ড হয়ে দাড়িয়েছে। 

দাদি প্রায়ই বলতেন, যুদ্ধের সময় মুরগিগুলাে যখন বাগানের মধ্যেই অবাধে ঘােরাফেরা করত তখন ওই ঝােপটার কারণেই শেয়ালের পক্ষে মুরগি চুরি করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সােফি ছাড়া আর সবার কাছেই ওটা বাগানের অন্য কোনার খরগােশের খােপগুলাের মতােই অদরকারি হয়ে পড়েছিল। 


 সোফির জগৎ - জি এইচ হাবীব Free read online 

তবে সেটা কেবল এই কারণে যে তারা সােফির গােপন রহস্যটা জানতে পারেনি।
সােফির স্মরণ নেই ঝােপটার গায়ের ছােট্ট ফোকরটার কথা সে কখনাে মনে করতে পারত না কিনা। ওটার ভেতর দিয়ে হামাগুড়ি দিলে ঝােপের ভেতরে একটা গুবরের মধ্যে এসে পড়ে সে। জায়গাটা ছােট্ট একটা বাড়ির মতাে।

ও জানে, কেউই তাকে খুঁজে পাবে না এখানে। বাম দুটো দুহাতে আঁকড়ে ধরে বাগানের মধ্যে দিয়ে দৌড় দেয় সােফি, উবু হয়ে বসে ঢার হাত-পায়ে, তারপর পােকার মতাে ঢুকে পড়ে বেড়ার ভেতর দিয়ে। গুহাটা এতাে উঁচু যে ও প্রায় সােজা হয়ে দাঁড়াতে পারে, কিন্তু আজ সে দুমড়ে যাওয়া কিছু শেকড়ের একটা খোপের ওপর বসে পড়ল। 

এখান থেকে লতা-পাতার ক্ষুদে ক্ষুদে ছিদ্রের ভেতর দিয়ে বাইরে তাকাতে পারছিল সে। ছিদ্রগুলাে কোনােটিই যদিও ছােট্ট একটা ৬ সােফির জগৎ পয়সার চেয়ে বড় নয়, তবুও গােটা বাগানটা দিব্যি দেখতে পাচ্ছে সে।

ছােটবেলায় মা-বাবা ওকে যখন গাছ-গাছালির মধ্যে খুঁজে বেড়াতেন, ও দেখে খুব মজা পেত। এই বাগানটাকে সােফি সব সময়ই তার একান্ত নিজের জগৎ বলে ভেবে এসেছে। 

বাইবেলের নন্দনকাননের কথা শুনলেই সে ভাবত যে বসে বসে সে তার ছােট্ট স্বৰ্গটা নিরীক্ষণ করছে। পৃথিবীটা কোথা থেকে এলাে? বিন্দুমাত্র ধারণা নেই ওর এ-ব্যাপারে। সােফি কেবল জানে পৃথিবীটা মহাশূন্যের একটা ছােট্ট গ্রহ। কিন্তু এই মহাশূন্যটাই বা এলাে কোথা থেকে? এমনও হতে পারে যে মহাশূন্যটা সবসময়ই ছিল; সেক্ষেত্রে তাকেও আর বার করতে হবে না সেটা কোথা থেকে এলাে । 

কিন্তু তার মনের ভেতরের কোনাে একটা কিছু এ-ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বসল। যা কিছু বর্তমান রয়েছে সে-সবের। নিশ্চয়ই একটা শুরু ছিল? কাজেই মহাশূন্যও নিশ্চয়ই কোনাে এক সময়ে অন্য কিছু থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু মহাশূন্য যদি অন্য কোনাে কিছু থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে সেই অন্য কিছুও নিশ্চয়ই কিছু একটা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। সােফির মনে হলাে প্রশ্নটা সে কেবল দীর্ঘ-ই করে যাচ্ছে।

সোফির জগত ইয়স্তেন গার্ডার


কোনাে এক পর্যায়ে কোনাে একটা কিছু নিশ্চয়ই শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সেটা কি সম্ভব? সেটা কি ওই ব্যাপারটির মতােই অবাস্তব নয় যে আগাগােড়াই পৃথিবীর অস্তিত্ব ছিল? ওরা স্কুলে শিখেছে পৃথিবী ঈশ্বরের সৃষ্টি। নিজেকে সােফি এই বলে সান্ত্বনা দিতে চাইল যে এটাই সম্ভবত পুরাে সমস্যাটার সবচেয়ে ভালাে সমাধান। 

কিন্তু তারপরই আবার চিন্তায় পেয়ে বসল তাকে। ঈশ্বর যে মহাশূন্য সৃষ্টি করেছেন এটা সে মেনে নিতে পারে। কিন্তু ঈশ্বরের নিজের বেলা? তিনি কি নিজেই নিজেকে শূন্য থেকে সৃষ্টি করেছেন? তার মনের গভীর থেকে আবার কে যেন প্রতিবাদ করে উঠল। সব ধরনের জিনিস ঈশ্বর তৈরি করতে পারলেও নিজেকে অন্তত তিনি তৈরি করতে পারতেন না যদি না সে-কাজটা করার আগে নিজেকে তৈরি করার জন্য তার একটা সত্তা' থাকত। কাজেই বাকি থাকে কেবল একটাই মাত্র সম্ভাবনা ঈশ্বর সবসময়ই ছিলেন। 

কিন্তু ধারণাটা যে সে এরই মধ্যে বাতিল করে দিয়েছে! অস্তিত্বশীল সব কিছুরই একটা শুরু থাকতেই হবে। ওহ, অসহ্য! আবার খুলল সে খাম দুটো। কে তুমি? পৃথিবীটা কোথা থেকে এলাে? কী বিরক্তিকর দুটো প্রশ্ন! তাছাড়া আরও একটা ব্যাপার, এই চিঠি দুটোই বা কোথা থেকে এলাে? এ-ব্যাপারটাও প্রায় একই রকম রহস্যময়।

তার রােজকার অস্তিত্ব থেকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে কে সােফিকে দাঁড় করিয়ে দিল মহাবিশ্বের বিশাল ধাধাগুলাের সামনে? | তৃতীয়বারের মতাে ডাকবাক্সের কাছে ফিরে গেল সােফি। ডাকপিয়ন মাত্র কিছুক্ষণ আগে দিয়ে গেছে আজকের ডাক।

नमगवाम्म १

বাক্সের ভেতর হাতড়ে জাংক মেইলের একটা বড়ােসড়াে তাড়া, কিছু সাময়িকপত্র আর তার মায়ের কাছে আসা গােটা দুয়েক চিঠি বের করল সােফি। 

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এক সমুদ্র-সৈকতের ছবিঅলা একটা পােস্টকার্ডও ছিল ওখানে। কার্ডটা ওটাল সে। সেটার গায়ে নরওয়ের একটা ডাকটিকেট আর জাতিসংঘ বাহিনীর একটা পােস্টমার্ক। বাবার কাছ থেকে আসেনি তাে চিঠিটা? কিন্তু তিনি তাে রয়েছেন একেবারেই ভিন্ন একটা জায়গায়, তাই না? তাছাড়া হাতের লেখাটাও তার নয়।

পােস্টকার্ডটা কার নামে এসেছে তাই দেখে সােফির নাড়ির গতি বেড়ে গেল খানিকটা। হিভা মােগার ন্যাগ, প্রযত্নে সােফি মুন্ডসেন, ৩ ক্লোভার ক্লোজ...। 

ঠিকানার বাকি অংশে কোনাে ভুল নেই। কার্ডটাতে লেখা।

প্রিয় হিন্ডা, শুভ ১৫ তম জন্মদিন । আশা করি তুই বুঝতে পারবি, আমি তােকে এমন একটা উপহার দিতে চাই যা তােকে বড় হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। সােফির প্রযত্নে কার্ডটা পাঠানাের জন্য দুঃখিত । কিন্তু এটাই ছিল সবচেয়ে সহজ পথ। বাবার শুভেচ্ছা রইল।


এক ছুটে বাড়ির ভেতরে, রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকল সােফি। তার মনের মধ্যে ঝড় বইছে । কে এই হিন্ডা যার জন্মদিন ওর নিজের জন্মদিনের ঠিক এক মাস আগে? 

টেলিফোনের বইটা বের করল সােকি। মেলার নামে অনেক লােক আছে ওখানে, ন্যাগ নামেও আছে বেশ কয়েকজন। কিন্তু গােটা ডিরেক্টরিতে মােলার ন্যাগ নামে কেউ নেই।

রহস্যময় কার্ডটা আরও একার খুঁটিয়ে দেখল সােফি। মােটেই জাল মনে হচ্ছে ওটাকে; একটা ডাকটিকেট আর পােল্টমার্ক আছে বামটার গায়ে।

জন্মদিনের একটা কার্ড একজন বাবা সােফির নামে পাঠাবেন কেন, যখন সেটা নিশ্চিতভাবেই অন্য জায়গায় যাওয়ার কথা? এ আবার কেমনতর বাবা, যিনি তার নিজের মেয়েকে ধোকা দেন তার জন্মদিনের কার্ডটা ইচ্ছে করে ভুল ঠিকানায় পাঠিয়ে?
এটা কী করে সবচেয়ে সহজ পথ' হয়? আর সবচেয়ে বড় কথা, সে কী করে বুকে পাবে হিল্ডা নামের এই মেয়েটিকে?

সোফির জগৎ - জি এইচ হাবীব pdf


কাজেই নােফিকে এখন আরেকটা সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে। সে তার চিন্তা-ভাবনাগুলােকে গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল।

আজ বিকেলে, মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে, তিনটে সমস্যা উপহার দেয়া হয়েছে তাকে। প্রথম সমস্যা হচ্ছে কে তার চিঠির বাক্সে দুটো সাদা বাম রেলছে। 

এই খামগুলাের মধ্যে কঠিন যে প্রশ্নগুলাে আছে সেটা দ্বিতীয় সমস্যা। আর তৃতীয়টি হচ্ছে, এই হিন্ডা মােলার ন্যাগ কে হতে পারে আর তার জন্মদিনের কার্ড সােফির নামে পাঠানাে হলাে কেন। 

সে নিশ্চিত, এই তিনটে সমস্যার মধ্যে একটা যােগাযােগ আছে, তার কারণ, আজকের আগ পর্যন্ত সে নিতান্তই সাদামাটা একটা জীবন কাটিয়েছে।

ভালাে দার্শনিক হওয়ার জন্য একমাত্র যে-জিনিসটি আমাদের প্রয়ােজন তা হলাে বিস্মিত হওয়ার ক্ষমতা।

সােফি নিশ্চিত অজ্ঞাত পরিচয় পত্রলেখকের কাছ থেকে আবার চিঠি আসবে । আপাতত এ-ব্যাপারে কাউকে কিছু বলবে না বলে ঠিক করল সে।

স্কুলে শিক্ষকদের কথায় মনােযােগ দেয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়াল সােফির জন্যে। ওর মনে হলাে তারা কেবল গুরুত্বহীন ব্যাপার নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। মানুষ কী বা পৃথিবী কী এবং সেটা কীভাবে সৃষ্টি হলাে সে-ব্যাপারে তারা কিছু বলেন না কেন?

এই প্রথমবারের মতাে সে এ-ব্যাপারে সচেতন হলাে যে স্কুলে, কিংবা বলা চলে সব জায়গাতেই, লােকজন কেবল তুচ্ছ বিষয়েই মাথা ঘামাচ্ছে। অথচ এরচেয়ে গুরুতর অনেক সমস্যা রয়েছে যেগুলাের সমাধান হওয়া দরকার।

কারাে কি এ-সব প্রশ্নের উত্তর জানা আছে? সােফির কাছে মনে হলাে ইরেগিউলার ভার্ব' মুখস্ত করার চেয়ে এ-সব প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামানােটা অনেক বেশি জরুরি।

শেষ ক্লাসের পরে ঘণ্টা পড়তেই সে এতাে দ্রুত স্কুল থেকে বেরিয়ে এলাে যে দৌড়ে ওর নাগাল ধরতে হলাে জোয়ানাকে। কিছুক্ষণ পর জোয়ানা জিজ্ঞেস করল, আজকে সন্ধ্যায় কার্ড খেলবি?'

সােফি কাঁধ ঝাকাল। কার্ড খেলার ব্যাপারে আমার আর উৎসাহ নেই'। 
অবাক দেখাল জোয়ানাকে। 
‘নেই? তাহলে চল, ব্যাডমিন্টন খেলি।

ফুটপাতের দিকে দৃষ্টি নামাল সােফি, তারপর মুখ তুলে তাকাল বন্ধুর দিকে। ব্যাডমিন্টনের ব্যাপারেও আমার আর আগ্রহ নেই। ফাজলামি করছিস তুই। জোয়ানার গলায় ঝাঝ, টের পেল সােফি। 

“তাের বলতে অসুবিধে আছে হঠাৎ কী এত জরুরি হয়ে গেল? সােফি ঘাড় নাড়ল শুধু। ব্যাপারটা ব্যাপারটা একটু গােপনীয়।' ‘ই বুঝেছি! তুই প্রেমে পড়েছিস!'

কিছুক্ষণ কোনাে কথা না বলে হাঁটল মেয়ে দুটো। ওরা ফুটবল মাঠের কাছে পৌছাতে জোয়ানা বলে উঠল, 'আমি মাঠটার ওপর দিয়ে যাবাে।

মাঠের উপর দিয়ে জোয়ানার অবশ্য ওদিক দিয়েই সবচেয়ে তাড়াতাড়ি হয়, কিন্তু বাসায় মেহমান থাকলে বা দাঁতের ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট থাকলে তবেই সে ও-পথটা ব্যবহার করে।

ওর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার জন্য খারাপ লাগল সােফির । কি আর কী-ই বা সে বলতে পারত? ও কি বলতে পারত যে সে কে আর পৃথিবীটা কোথা থেকে এলাে, এই নিয়ে হঠাৎ করেই সে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে ব্যাডমিন্টন খেলার কোনাে সময়ই নেই তার? জোয়ানা কি ব্যাপারটা বুঝতে পারত?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর এক হিসেবে, সবচেয়ে স্বাভাবিক প্রশ্ন নিয়ে চিন্তিত হওয়াটা এত কঠিন ব্যাপার কেন?

সােফি টের পেল, ডাক বাক্সটা খােলার সময় তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। প্রথমে, তার মায়ের কাছে ব্যাংক থেকে আসা একটা চিঠি আর কিছু বাদামি রঙের বাম পেল সে। যত্তসব! সােফি দেখতে এসেছে অজ্ঞাত প্রেরকের কাছ থেকে কোনাে চিঠি এসেছে কিনা।

গেটটা বন্ধ করার সময় সে খেয়াল করল একটা বড় খামের ওপর তার নাম লেখা আছে। সেটা উন্টে সে দেখল ওটার ওপর লেখা রয়েছে : দর্শন বিষয়ক কোর্স। যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করুন। 

নুড়ি-বিছানাে পথ ধরে ছুট লাগাল সােফি, স্কুল ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলল সিড়ির উপর। ডােরম্যাটের নিচ দিয়ে অন্য চিঠিগুলাে খুঁজে দিয়ে দৌড়ে পেছনের বাগানে চলে এসে গুহার ভেতর আশ্রয় নিল সে। বড় চিঠিটা খােলার এটাই একমাত্র স্থান। 

শিয়াকান-ও ওর পিছু নিল লাফাতে লাফাতে এবং সােফিকে ব্যাপারটা মেনে নিতে হলাে। সে জানে, বেড়ালটা নাছােড়বান্দা। 

দেখা গেল, খামটার ভেতরে একটা পেপার ক্লিপ দিয়ে আটকান টাইপ করা তিনটে পৃষ্ঠা আছে। সােফি পড়তে শুরু করল।
দর্শন কী?

Sofir World by Yesten Garner


প্রিয় সােফি, অনেক লােকেরই অনেক হবি থাকে। কেউ কেউ পুরনাে মুদ্রা (কয়েন) বা বিদেশি ডাকটিকেট সংগ্রহ করে, কেউ সেলাই করে, অন্যরা আবার তাদের অবসরের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করে বিশেষ কোনাে খেলার পেছনে। 

অনেক মানুষ আছে যারা পড়তে ভালােবাসে। তবে পড়ার রুচি একেক জনের একেক রকম। কেউ শুধু খবরের কাগজ বা কমিক্স পড়ে, কেউ ভালােবাসে উপন্যাস পড়তে, আবার অন্যরা পছন্দ করে জ্যোতির্বিদ্যা, বন-জঙ্গল আর জন্তু-জানােয়ার বা প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের ওপর লেখা বইপত্র।

ঘােড়া বা দামি পাথরের ব্যাপারে আমার উৎসাহ থাকলেই আমি আশা করতে পারি না যে প্রত্যেকেই ও-সব বিষয়ে আমারই মতাে উৎসাহী হবে। আমি হয়ত খেলাধুলা বিষয়ক সমস্ত অনুষ্ঠান টিভিতে দেখতে খুবই আনন্দ পাই, কিন্তু সেই সঙ্গে আমাকে এ-ব্যাপারটা মেনে নিতে হবে যে অন্যদের কাছে খেলাধুলা জিনিসটা রীতিমত একঘেয়ে একটা বিষয়।

এমন কিছু কি নেই যা সবাইকেই আকর্ষণ করে? এমন কিছু কি নেই যা সবাইকে উদ্বিগ্ন করে, তা তাদের পরিচয় যা-ই হােক না কেন বা তারা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক কেন? 
হা, প্রিয় সােফি, কিছু কিছু প্রশ্ন বা প্রসঙ্গ আছে যে-ব্যাপারে সবারই আসলে আগ্রহ বােধ করার কথা। ঠিক এইসব প্রশ্ন নিয়েই এই কোর্স।

জীবনের সবচেয়ে জরুরি জিনিসটি কী?

যে-মানুষটি অনাহারের দ্বারপ্রান্তে বাস করে তাকে যদি প্রশ্নটি করা হয় সেক্ষেত্রে উত্তরটি হবে, খাদ্য। 

শীতে মরণাপন্ন লােকটিকে জিজ্ঞেস করলে জবাব আসবে, উষ্ণতা। 

এই একই প্রশ্ন যদি এমন কোনাে মানুষকে করা যায় যে নিঃসঙ্গ বােধ করছে আর ভাবছে সে সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন, তাহলে সম্ভবত উত্তরটি হবে, অন্য মানুষের সাহচর্য। 

কিন্তু এ-সব মৌলিক চাহিদার সমাধান যখন হয়ে যাবে, তখনাে কি এমন কিছু রয়ে যাবে যা প্রত্যেকেরই দরকার? 

দার্শনিকরা সে-রকমই মনে করেন। তারা বিশ্বাস করেন মানুষ কেবল অন্ননির্ভর নয়। 
এ-কথা অস্বীকার করার যাে নেই যে সবারই খাদ্য দরকার এবং সবাই ভালােবাসা ও আদর-যত্ন চায়। 

কিন্তু এসবের বাইরেও কিছু রয়েছে যা সবারই দরকার আর তা হচ্ছে এটা জানা যে আমরা কে এবং আমরা কেন পৃথিবীতে রয়েছি।

Sofir World pdf


আমরা কেন পৃথিবীতে রয়েছি তা জানার ব্যাপারে উৎসাহী হওয়াটা ডাকটিকেট সংগ্রহের মতাে কোনাে ‘খেয়ালি' বিষয় নয়। যারা এ-প্রশ্ন করছেন তারা এমন এক বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন যে-বিতর্ক মানুষ এই গ্রহে বসবাস শুরু করার পর থেকেই চলে আসছে।

সর্বশেষ অলিম্পিকে সবচেয়ে বেশি সােনার পদক কে পেয়েছে এই প্রশ্নের চেয়ে অনেক বড় আর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে এই মহাবিশ্ব, পৃথিবী এবং জীবন কী করে সৃষ্টি হলাে।

দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সবচেয়ে ভালাে উপায় হচ্ছে দর্শনবিষয়ক কয়েকটি প্রশ্ন করা।
পৃথিবী কী করে সৃষ্টি হয়েছে? যা ঘটে তার পেছনে কি কোনাে ইচ্ছা বা অর্থ রয়েছে? 

মৃত্যুর পরে কি জীবন আসে? কী করে এ-সব প্রশ্নের জবাব দেব আমরা? আর সবচেয়ে যেটা জরুরি, কীভাবে জীবনযাপন করা উচিত আমাদের ? অনাদি কাল ধরে এ-সব প্রশ্ন করে আসছে মানুষ। মানুষ কী এবং পৃথিবীটা কোথা থেকে এসেছে, এই প্রশ্ন দুটি নিয়ে মাথা ঘামায়নি এমন কোনাে সংস্কৃতির কথা জানা যায় না।

আসলে কিন্তু খুব বেশি দার্শনিক প্রশ্ন করার নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলাের কয়েকটি আমরা এরই মধ্যে করে ফেলেছি। কিন্তু ইতিহাস আমাদেরকে প্রতিটি...

Sophir Jogot Pdf Bangla 

Book Name:  সোফির জগত

File Type: Google Drive Direct Link 


File Size: 19 MB


Author: ইয়স্তেন গার্ডার pdf

অনুবাদক: জি এইচ হাবীব pdf






জি এইচ হাবীব সোফির জগৎ পিডিএফ,  ইয়েস্তন গার্ডার এর sofir jogot pdf পড়ুন এখানে। সোফির জগত ইয়স্তেন গার্ডার। Sofir world by Yesten Garner.

প্রকাশনা প্রসঙ্গে সোফির জগত pdf


সােফির জগৎ প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে। স্পষ্টতই, এখানে নরওয়েজীয় লেখক ইয়স্তাইন গাের্ডারের Sofies erden উপন্যাসের পলেট মােলারকৃত ইংরেজি অনুবাদ Sophie's World-এর জি এইচ হাবীব রচিত বঙ্গানুবাদটির কথা বলা হচ্ছে। 

প্রকাশক সন্দেশ-এর সঙ্গে মূল নরওয়েজীয় বইটির প্রকাশনা সংস্থা H. Aschehoug & Co-এর চুক্তি শেষ হয়ে গেলে ভাষান্তর বইটির বাংলা অনুবাদ স্বত্ব কিনে নেয়। বর্তমান সংস্করণটি ভাষান্তর'-এর পক্ষ থেকে সংহতি প্রকাশন বের করছে। 

কাজেই একে একটি যৌথ প্রকাশনাও বলা যেতে পারে। আশা করছি, নতুন এই সংস্করণটি ক্রেতা-পাঠক এমনকি নিন্দকনন্দিত হবে।

ফেব্রুয়ারি, ২০১০
জি এইচ হাবীব,
স্বত্বাধিকারী ভাষাত্তর।


কৃতজ্ঞতায় সোফির জগৎ pdf Bangla 


সিরি ভানেভিগ-এর সহায়তা ও উৎসাহ ছাড়া এ-গ্রন্থরচনা সম্বব হতাে না। পাণ্ডুলিপি পাঠ ও গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের জন্যে মাইকেন ইমস্-কেও ধন্যবাদ, সেই সঙ্গে ধন্যবাদ ট্রভ বার্গ এরিকসেন-কে তার দীর্ঘদিনের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ও বুদ্ধিদীপ্ত সহযােগিতার জন্যে।


  1. সোফির জগত বাংলা পিডিএফ
  2. সোফির জগত pdf


Tags

Post a Comment

0Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Post a Comment (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !