দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট বাংলা pdf বইয়ের লেখক সালমান হকের অনুবাদের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলবে এমন পাঠক খুঁজে পাওয়া ভার।
এদিকে দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট সালমান হকের উপন্যাসে লাশ আবিষ্কারের পর উঠে পড়ে লাগলাে এক ডিটেক্টিভ। ইয়াসুকোকে আপাত দৃষ্টিতে নির্দোষ মনে হলেও কোথাও যেন খুঁত আছে তার গল্পে। তদন্তের স্বার্থে সে সাহায্য চাইলাে ডিটেক্টিভ গ্যালেলিও নামে পরিচিত পদার্থবিজ্ঞানের এক অধ্যাপকের কাছে। কিন্তু খুব দ্রুতই বুঝতে পারলাে, ঠান্ডা মাথার এক প্রতিভাবান মানুষের মুখােমুখি হয়েছে তারা। প্রখ্যাত থ্রিলার লেখক অ্যালেক্স মাইকেলাইডসের লেখা এবং সালমানহকের অনুবাদ করা এই অনবদ্য বাংলা থৃলারটি পাঠককে ভাবাতে বাধ্য করবে একদম শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত।
‘চমৎকার একটি ব্রেইন-নট থ্রিলার...আমার পড়া সবচেয়ে অসাধারণ আর বুদ্ধিদীপ্ত পরিসমাপ্তি।
— লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস
‘দুর্দান্ত একটি মার্ডার থ্রিলার ভাবলে ভুল করবেন পাঠক...নতুন করে ভাবতে শেখাবে অনেক কিছু।
— লাইব্রেরি জার্নাল
‘এই উপন্যাসের প্লটটি একেবারেই অনন্য।'
— নিউ ইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউ
‘সূক্ষ্ম, কৌতুহলােদ্দীপক আর টেনশনে ভরপুর...যার শেষটা আপনাকে চমকে দেবে।
— বােস্টন গ্লোব
দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট
সকাল সাতটা পঁয়ত্রিশ।
দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট খ্যাত সালমান হকের জীবনে আরেকটা সাধারণ দিনের শুরু। ঠিক এই সময়টাতেই সে প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়। আজও তার কোন ব্যতিক্রম হলাে না। বাসার সামনের রাস্তায় পা রাখার ঠিক আগমুহূর্তে তার চোখ আপনাআপনিই চলে গেলাে বিল্ডিঙের সাইকেল স্ট্যান্ডটার দিকে। সবুজ বাইসাইকেলটা আজকেও নেই।
মার্চ মাস এসে পড়লেও শীতের তীব্রতা কমেনি একটুও। ভেতরের হাড়সুদ্ধ কাঁপিয়ে দিচ্ছে। মাথাটা স্কার্ফ দিয়ে ভালােমত পেঁচিয়ে হাটতে শুরু করলাে সে। পশ্চিমে বিশ কদম হাটলেই শিনােহাসি রােড। ওটার সামনের মােড় থেকে পুবদিকে গেলে পড়বে এডােগাওয়া আর পশ্চিমদিকে গেলে নিহনবাশি। নিহনবাশির ঠিক আগেই চোখে পড়বে সুমাইদা নদীর ওপর শিনােহাসি সেতু। বাসা থেকে ইশিগামির কর্মস্থলে পৌছানাের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত রুটটা হচ্ছে পশ্চিমে। এক প্রাইভেট স্কুলের গণিতের শিক্ষক সে। স্কুলটা সেইচো গার্ডেন পার্কের ঠিক আগেই। তার বাসা থেকে সােয়া মাইলের মত দূর হবে। হাঁটতে হাটতে শিনােহাসি ব্রিজের ওপর পৌছে গেলাে ইশিগামি। শীতল বাতাসের একটা ঝাপটা এসে লাগলাে তার নাকে-মুখে। পরনের কোটটা বাতাসের দমকে উড়তে লাগলাে। পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাটার গতি বাড়িয়ে দিলাে সে।
আকাশটা কেমন যেন গােমড়া হয়ে আছে। সূর্যের দেখা নেই। যতদূর চোখ যায় কেবল ধূসর মেঘ। আর এই ধূসরতার প্রতিফলন যেন সুমাইদা নদীর পানিতেও। কিন্তু অন্যান্য সময়ের চেয়ে আজ আরাে বেশি ধোঁয়াশা নদীর ওপর। উজানে একটা ছােট নৌকা হারিয়ে যাচ্ছে দিগন্তে। সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাে ইশিগামি। | ব্রিজের আরেক পাশে এসে পাশের সিড়িটা দিয়ে নিচে নেমে গেলাে। সুমাইদা নদীর পার ধরে হাটা শুরু করলাে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সেতুর সারি সারি কলাম। নদীর একদম তীরঘেঁষে কংক্রিটের ফুটপাথ তৈরি করে দেয়া আছে পথচারিদের জন্যে। নদীর পাড়ে আগে মাঝে মাঝেই প্রেমিকপ্রেমিকাদের দেখা যেত। নির্জনে কিছুটা সময় কাটাতে এখানে আসত তারা, কিন্তু ইদানিং আর চোখে পড়ে না এই দৃশ্য। এর একটা কারণও আছে অবশ্য। নদীর এপাশটাতে ব্রিজের নিচের দিকে তাকালেই দেখা যাবে সারি সারি কার্ডবাের্ড দিয়ে তৈরি কতগুলাে ঘর। নীল রঙের ভিনাইল শিট দিয়ে ঘেরা ওগুলাে। স্থানিয়রা এ ধরণের ঘরকে ‘শ্যান্টি বলে। এখানেই বাস্তুহারাদের মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাই। নদীর পশ্চিম পাশে, একটা এক্সপ্রেসওয়ে ওভারপাসের ছায়ায়। ইশিগামির ধারণা ওভারপাসটা একটু হলেও বৃষ্টি আর তীব্র বাতাসের হাত থেকে বাঁচায় নিচের বাসিন্দাদের। নদীর ওপাশে কিন্তু একটা ঘরও নেই। তাই সালমান হকের উপন্যাসের ভাই ইশিগামির ধারণা ভুল হবার সম্ভাবনাও কম। অবশ্য এটা হতে পারে, একবার একজন তেমন কিছু না ভেবেই একটা ঘর তুলেছিল এখানে। এরপর অন্য সবাই তাকে অনুসরণ করে এসে পড়েছে। মানুষ দলবদ্ধভাবেই বাস করতে পছন্দ করে।

অসচেতনভাবে হলেও সেটা হয়েই যায়। আর নদীর ওপাশে একা একা থাকার চেয়ে এখানে অনেকের মাঝে থাকাটা কিছুটা হলেও নিরাপদ। ইশিগামি শ্যান্টিগুলাে দেখতে দেখতে হাঁটতে লাগলাে। ওগুলাে দেখে মনে হয়, একজন মানুষ খুব কষ্টে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবে ভেতরে। কিছু কিছু অবশ্য কোমর সমান উচ্চতার। ওগুলােকে দেখে চৌকো বাক্স ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। কোনমতে ঘুমানাের জন্যেই যেন বানানাে হয়েছে।
ঘরগুলাের বাইরে কিছু প্লাস্টিকের লন্ড্রি হ্যাঙ্গার দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও ছন্নছাড়া মানুষের বসবাসের অন্য কিছু চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখানে সেখানে। একটা লােককে দেখা গেলাে পানির পাশে রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত ব্রাশ করছে। ইশিগামি আগেও খেয়াল করেছে তাকে। বয়স কমসে কম ষাট হবে। ধূসর চুল লম্বা পনিটেইল করে বাঁধা। মনে হয় না লােকটা কোন কাজ করে, না-হলে এই সময়ে এখানে থাকতাে না। কারণ ছােটখাটো যত কায়িক শ্রমের কাজ আছে সব সকাল সকালই শুরু হয়ে যায়। ওগুলােতে কর্মসন্ধানিদের ভিড়ও থাকে প্রচুর। বেকার সংস্থার যে অফিস আছে সেখানেও এ যাবে না। কোন চাকরির সন্ধান পেলেও ইন্টারভিউতেই তাকে বাদ দিয়ে দেবে এই লম্বা চুল দেখে। আর বয়সটাও বাড়তির দিকে।
Salman Haque books pdf
আরেকজন লােককে তার ঘরের পাশে দেখা গেলাে। পা দিয়ে কতগুলাে টিনের ক্যান পিষছে সে। ইশিগামি এর নাম দিয়েছে ক্যানমানব।' ক্যান-মনবের বয়স পঞ্চাশের আশেপাশে হবে। তার কাপড়চোপড়গুলাে অন্যদের তুলনায় বেশ ভালাে। একটা সাইকেলও আছে। সাইকেল নিয়ে ক্যান সংগ্রহ করার কাজ অন্যদের তুলনায় একটু ব্যস্তই রাখে তাকে। তার ঘরটা ব্রিজের একদম নিচে, একটা সুবিধাজনক অবস্থানে। এখানকার সবচেয়ে পুরনাে বাসিন্দা দর একজন সে।কার্ডবাের্ডের শ্যান্টিগুলাের একটু দূরে একটা বেঞ্চে এক লােক বসে আছে। তার পরনের কোটটা একসময় নিশ্চয়ই হলুদ রঙের ছিল কিন্তু এখন সেটা দেখে আর বােঝার উপায় নেই। মলিন হয়ে গেছে, জায়গায় জায়গায় ঘেঁড়া। ওটার নিচে আবার একটা সাদা রঙের শার্ট পরে আছে সে। ইশিগামির ধারণা, তার পকেটে খুঁজলে হয়তাে একটা টাইও পাওয়া যাবে। তার নাম সে দিয়েছে ইঞ্জিনিয়ার। কারণ কিছুদিন আগে একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেড ম্যাগাজিন গভীর মনােযােগ দিয়ে পড়ছিল সে। বেকার সংস্থাতে হয়তাে যেতে পারে, কিন্তু তার আগে তার এই গভীর আত্মসম্মানবোেধটা ঝেড়ে ফেলতে হবে। এখনও সে নদীর পাড়ে এভাবে উদ্বাস্তু জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি। ঐ নীল রঙের ভিনাইল শিটের ঘরগুলাের বাসিন্দাদের তুলনায় নিজেকে উচ্চপর্যায়ের ভেবে অভ্যস্ত সে। তবুও তাকে এখানেই থাকতে হচ্ছে নিয়তির নির্মম খেলায়।
ইশিগামি সামনের দিকে হাটতে থাকলাে। কিয়ােসু ব্রিজের একটু আগে এক মহিলার সাথে দেখা হলাে তার। তিনটা ছােট জাতের কুকুর নিয়ে হাটতে বের হয়েছেন তিনি। কুকুর তিনটার গলায় আবার তিন রঙের কলার। লাল, সবুজ আর গােলাপি। সে আরাে সামনে এগােতে মহিলাও লক্ষ্য করলাে তাকে। সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে মাথা নেড়ে বলল, “গুড মর্নিং।”
“গুড মর্নিং,” ইশিগামিও মাথা নেড়ে জবাব দিলাে। “বেশ ঠান্ডা আজকে, তাই না?” “জি, বেশ ঠান্ডা,” ইশিগামি বলল। এরপর আর কথা না বাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন মহিলা।
কিছুদিন আগে ইশিগামি তাকে দেখেছিল একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ হাতে নিয়ে যেতে। কয়েকটা স্যান্ডউইচ ছিল ওটাতে। ওনার সকালের নাশতা হবে হয়তাে। তার ধারণা মহিলা একাই থাকেন। এখান থেকে বেশি দূরে নয় তার বাসা। কারণ তার পরনে ছিল ঘরে পরার স্যান্ডেল। ওগুলাে পরে কোনভাবেই গাড়ি চালানাে সম্ভব নয়। তার স্বামী হয়তাে বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। এই তিনটা কুকুর নিয়েই একটা অ্যাপার্টমেন্টে বাস করেন তিনি। | কিয়ােসু ব্রিজের গােড়ায় এসে ইশিগামি সিঁড়ি বেয়ে উপরে রাস্তায় উঠে গেলাে। স্কুলটা ব্রিজের ওপাশেই। কিন্তু ঘুরে বিপরীত দিকে হাটা শুরু করলাে সে।
রাস্তার পাশে একটা সাইনবাের্ড, সেখানে লেখা : বেন্টেন-টেই। ওটার নিচে একটা ছােট দোকানে বক্স-লাঞ্চ বিক্রি করা হয়। ইশিগামি কাঁচের দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেলাে। | “গুড মর্নিং, আসুন আসুন,” একটা পরিচিত কণ্ঠ অভ্যর্থনা জানালাে তাকে। শুনে প্রতিবারই কেমন যেন একটা অনুভূতি হয় ইশিগামির। ইয়াসুকো হানাওকা কাউন্টারের পেছন থেকে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। তার মাথায় একটা সাদা রঙের হ্যাট।
ভেতরে অন্য কোন কাস্টমার না দেখে আরাে বেশি ভালাে লাগলাে ইশিগামির। তারা দু-জন বাদে আর কেউ নেই।
“আমি একটা স্পেশাল লাঞ্চ নেবাে।”
“একটা স্পেশাল লাঞ্চ। নিশ্চয়ই,” উৎসাহি গলায় বলল ইয়াসুকো। মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করতে ব্যস্ত ইশিগামি অবশ্য তার চেহারা দেখতে পাচ্ছে না এ মুহূর্তে। তার মনে হচ্ছে কিছু একটা বলা উচিত। হাজার হলেও তারা প্রতিবেশি। পাশাপাশি ফ্ল্যাটেই থাকে। কিন্তু বলার মত কিছুই আসলাে না মাথায়। | “আজকে বেশ ঠান্ডা, তাই না?” অবশেষে বলল সে। কিন্তু অন্য একজন কাস্টমার ঠিক এই সময়টাতেই ভেতরে ঢােকায় তার কথাটা ইয়াসুকোর কান অবধি পৌছুল না। তার সমস্ত মনােযােগ এখন নতুন কাস্টমারের দিকে।
লাঞ্চের বক্সটা হাতে নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে গেলাে ইশিগামি। এবার সােজাসুজি স্কুলের দিকে। বেল্টেন-টেই’তে তার ভ্রমণের আজকের মত এখানেই পরিসমাপ্তি।
দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট pdf
সকালের কর্মব্যস্ততা এখন একটু কমে এসেছে বেন্টেন-টেই’তে। অন্তত দোকানের সামনের দিকে। পেছনে অবশ্য লাঞ্চ তৈরির কাজ চলছেই। স্থানীয় কিছু কোম্পানিতে দুপুরের খাবার সরবরাহ করতে হয় বারােটার সময়, তাই কাস্টমারদের আসা কমে গেলে ইয়াসুকো পেছনে গেলাে একটু হাত লাগাতে। বেল্টেন-টেই’তে চারজন কর্মচারি। ইয়ানােজাওয়া হচ্ছে ম্যানেজার। তাকে সাহায্য করে তার স্ত্রী সায়ােকো। ক্যানকোর কাজ হচ্ছে সাইকেলে করে লাঞ্চ-বক্স বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা। পার্ট-টাইম চাকরি তার। দোকানে আগত কাস্টমারদের সামলায় ইয়াসুকো।
এখানে কাজ করার আগে ইয়াসুকো কিনশিকোর এক নাইটক্লাবে কাজ করতাে। সায়ােকো ছিল ক্লাবের মেয়েদের প্রধান। ইয়ানােজাওয়া নিয়মিত যাওয়া আসা করতাে সেখানে। অবশ্য সায়ােকো চাকরি ছেড়ে দেয়ার আগপর্যন্ত তাদের সম্পর্কের কথাটা ইয়াসুকো জানতাে না।
“সে এই ক্লাবের কাজ ছেড়ে ভদ্রমহিলাদের মত লাঞ্চশপে কাজ করতে চায় এখন,” ইয়ানােজাওয়া বলেছিল তাকে। “তােমার কি বিশ্বাস হয় এ কথা?”
তারা চলে যাওয়ার পরে অবশ্য ইয়াসুকো শুনেছিল, এরকম একটা লাঞ্চশপ দেয়ার স্বপ্ন তাদের অনেক দিনের। এজন্যেই সায়ােকো ক্লাবে চাকরি করতাে, টাকা জমাতাে সে।
বেন্টেন-টেই খােলার পরে ইয়াসুকো এখানে দু-একবার এসেছিল দেখা করতে ওদের সাথে। ব্যবসা ভালােই চলছিল। এতটাই ভালাে যে একবছর পরে তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, সে এখানে তাদের সাথে কাজ করতে আগ্রহি কিনা। দু-জনের পক্ষে সামাল দেয়াটা নাকি খুবই কঠিন হয়ে উঠছিল।
“নাইটক্লাবের এই কাজটা তাে তুমি সারাজীবন করতে পারবে না, ইয়াসুকো,” সায়ােকো তাকে বলেছিল। “তাছাড়া মিশাতেও বড় হচ্ছে। তার মা নাইটক্লাবে কাজ করে এটা তাকে স্কুলের বন্ধুবান্ধবদের কাছে একটু হলেও হেয় করবে, তাই না? অবশ্য এটা সম্পূর্ণ তােমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।” মিশাতে হচ্ছে ইয়াসুকোর একমাত্র মেয়ে। পাঁচবছর আগে ইয়াসুকোর দ্বিতীয়বারের মত ডিভাের্স হয়ে যায়। সায়ােকো না বললেও এটা সে জানতাে, নাইটক্লাবের কাজটা তার পক্ষে আর বেশিদিন করা সম্ভব হবে না, কারণ মিশাতের ব্যাপারটা ছাড়াও তার নিজের বয়সের কথাটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।
“কিন্তু আমার তাে নির্ধারিত কোন ছুটির দিন নেই। যেদিন কোন কারণে দোকান বন্ধ থাকে সেদিনগুলােতেই কেবল আমি বাদ দেই।”
“এজন্যেই তাে ব্যাপারটা আরাে বেশি সন্দেহজনক,” সায়ােকো একবার চোখ টিপ দিয়ে বলল। “সে তাে তােমার পাশেই থাকে। আমার ধারণা সে তােমাকে প্রতিদিন কাজে বের হবার সময় দেখে। এজন্যেই সে জানে, কোন দিনগুলােতে তুমি এখানে আসাে না।”
“কিন্তু আমি তাে তাকে কোনদিন বের হবার সময় দেখিনি। একবারও ,” ইয়াসুকো মাথা নেড়ে বলল। “তাহলে হয়তাে অন্য কোনও জায়গা থেকে তােমার উপর নজর রাখে সে। জানালা দিয়ে হতে পারে।”
“আমার মনে হয় না তার জানালা দিয়ে আমাদের বাসার দরজাটা দেখা যায়।”
“যাই হােক না কেন, সে যদি তােমার প্রতি আসলেও দূর্বল হয়ে থাকে, তাহলে আজ নয়তাে কাল সেটা তােমাকে বলবেই," ইয়ানােজাওয়া বলল।
“আসলে আমাদের দেখার বিষয় হচ্ছে, তােমার জন্যে আমরা একজন নিয়মিত কাস্টমার পেয়েছি। তা সেটা যে কারণেই হােক না কেন। কিনশিকোতে তােমার ট্রেইনিং কিছুটা হলেও কাজে লাগছে।” | ইয়াসুকো একটা শুকনাে হাসি দিয়ে বাকি চাটুকু খেয়ে নিলাে। মনে মনে স্কুল টিচারটার কথা ভাবছে সে।
দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট সালমান হক
তার নাম ইশিগামি। নতুন বাসায় ওঠার দিন তার সাথে একবার পরিচিত হতে গিয়েছিল ওরা। তখনই সে জানতে পারে, ভদ্রলােক একজন হাই-স্কুল টিচার। পেটানাে শরীর, চোখগুলাে গােলগােল, মুখের তুলনার একটু বেশিই ছােট। চুল খানিকটা পাতলা হয়ে এসেছে। তাই তাকে দেখে পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি বলে মনে হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার বয়স আরাে কম হবে। পােশাক আশাক নিয়েও অতটা সচেতন বলে মনে হয়নি তাকে। এই শীতে লাঞ্চ কিনতে আসার সময় ইয়াসুকো তাকে একই কোট পরতে দেখেছে প্রতিবার। আর নিজের কাপড়চোপড় নিজেই ধুয়ে বারান্দায় শুকাতে দেন। ইয়াসুকোর ধারণা, ভদ্রলােক চিরকুমার।
সে মনে মনে বের করার চেষ্টা করলাে ইশিগামি আসলেও তাকে কোনদিন আকার ইঙ্গিতে কিছু বােঝানাের চেষ্টা করেছে কিনা। কিন্তু সেরকম কিছু মনে পড়লাে না। আসলে ইয়াসুকোর কাছে ইশিগামিকে দেয়ালের একটা ফাঁটলের চেয়ে বেশি কিছু মনে হয় না। অবচেতন মনে সে জানে, ওটা ওখানে আছে। কিন্তু কোনদিন বিশেষভাবে মনােযােগ দেয়ার প্রয়ােজনবােধ করেনি। | যতবারই দেখা হয়েছে তাদের প্রতিবারই হালকা কুশল বিনিময় হয়েছে। একবার শুধু অ্যাপার্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলাপ হয়েছিল। কিন্তু ওটুকুই। আর কিছু না। ইয়াসুকো আসলে লােকটা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। এই সেদিন তার বাসার বাইরে পুরনাে এক বান্ডিল গণিতের বই দেখে বুঝতে পেরেছে ভদ্রলােক আসলে গণিতের শিক্ষক।
ইয়াসুকো চায় না সে তাকে কোনপ্রকার প্রস্তাব দিক। এটা ভেবে নিজমনেই একবার হেসে উঠলাে। ওরকম কিছু করার সময় লােকটার চেহারা কেমন হবে সেটা ভেবে মজাই লাগছে তার।
প্রতিদিনের মতই দুপুরের আগেই বেন্টেন-টেই’তে ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেলাে। একটা নাগাদ চলল এরকম। তারপর কাজের চাপ একটু কমতে শুরু করলাে। | ক্যাশ রেজিস্টারে হিসেব মিলাচ্ছিল ইয়াসুকো এ সময়ে কাঁচের দরজাটা খুলে কেউ ভেতরে ঢুকলাে। “আসুন আসুন,” অভ্যাসবশত কথাটা বলে আগুন্তুকের দিকে তাকিয়েই জমে গেলাে সে। কথা আটকে গেলাে গলায়।
“বাহ্, সুন্দর দেখাচ্ছে তাে তােমাকে,” লােকটা হাসতে হাসতে বলল। কিন্তু ঐ হাসির মধ্যেও যেন অশুভ কিছু একটা আছে।
“তুমি...তুমি আমাকে কিভাবে খুঁজে পেলে?”
“এত অবাক হওয়ার কী আছে? আমার আগের বউ কোথায় কাজ করছে এটা তাে আমি চাইলেই খোঁজ নিয়ে বের করতে পারি, দোকানের চারপাশে নজর বুলাতে বুলাতে বলল লােকটা। হাতদুটো তার কোটের পকেটে ঢােকানাে। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, অন্যসব কাস্টমারদের মতই লাঞ্চ কিনতে এসেছে যেন।
“কিন্তু কেন? এখন কেন?” ইয়াসুকো নিচু কিন্তু তীক্ষ স্বরে জিজ্ঞেস করলাে। সে চায় না ভেতরের কেউ তাদের কথা শুনে ফেলুক।
“এত ভয় পেয়াে না। তােমার সাথে আমার সেই কবে শেষ দেখা হয়েছে বলাে তাে? একটা হাসি তাে দিতে পারতে আমাকে দেখে।” | রাগে ইয়াসুকোর গা জ্বলে উঠলাে, “তুমি যদি আমার সাথে এই ফালতু প্যাচাল পারতে এখানে এসে থাকো তবে বলবাে, এখনই এখান থেকে বিদেয় হও। সময় বেঁচে যাবে।”
“আসলে আমি এখানে এসেছি একটা কারণে। একটু সাহায্য দরকার আমার। বেরুতে পারবে তুমি?”
“বােকার মত কথা বােলাে না। দেখছাে না আমি কাজে ব্যস্ত এখন?” কথাটা বলেই ইয়াসুকো পস্তাতে লাগলাে। শুনে মনে হচ্ছে, কাজ না থাকলে সে ঠিকই কথা বলতাে ওর সাথে।
“তােমার ছুটি হবে কখন?”
“যখনই হােক না কেন, আমি তােমার সাথে কোন কথা বলতে চাই। না। দয়া করে এখান থেকে চলে যাও।”
“চলে যাবাে?!” “কি আশা করেছিলে তুমি?”
ইয়াসুকো একজন কাস্টমারের আশায় বাইরে তাকালাে, কিন্তু কাউকে দেখা গেলাে না দরজার সামনে।
“ঠিক আছে। সােজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল কিভাবে বাঁকা করতে হয় জানা আছে আমার,” লােকটা বলল।
“কি বলতে চাও তুমি?”
“মানে, আমার বউ যদি আমার সাথে কথা না বলতে চায়, তার মেয়ে তাে অবশ্যই বলবে। ওর স্কুল খুব কাছেই, তাই না?”
“ওকথা মাথাতেও এনাে না।” “আমাকে সাহায্য করাে, তাহলে আর মেয়েকে ঘাঁটাবাে না।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইয়াসুকো বলল, “আমার ছটা পর্যন্ত কাজ করতে হবে।” | “সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত? এতক্ষণ কাজ করতে হয়। প্রতিদিন?”
“সেটা তােমার দেখার বিষয় নয়।” “ঠিক আছে। আমি তাহলে ছ-টার সময় আবার আসবাে।”
“না, এখানে না। দোকান থেকে বের হয়ে ডানের রাস্তা ধরে কিছুটা হাটলে একটা রেস্তোরাঁ দেখতে পাবে। ওখানেই থেকো সাড়ে ছটার সময়।”
“ঠিক আছে। এসাে কিন্তু, না-হলে...” “আমি আসবাে। এখন যাও এখান থেকে।”
“যাচ্ছি যাচ্ছি। এতবার বলতে হবে না,” লােকটা আশেপাশে আরেকবার দেখে বের হয়ে গেলাে দোকান থেকে।
সে বের হওয়ামাত্র ইয়াসুকো মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাে। কেমন যেন বমি বমি লাগছে তার। মনে হচ্ছে বুকের ভেতরে কিছু একটা দলা পাকিয়ে আসছে।
দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট অরিজিনাল পিডিএফ বইটি পড়ার পর আপনাদের মতামত কামনা করছি। আপনিও রিভিউ লিখে পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের ইমেইলে। সম্পাদক কর্তৃক যাচাই-বাছাই করে আপনার লেখাটিও প্রকাশ করা হবে।