স্বপ্নের ব্যাখ্যা pdf
স্বপ্নের ব্যাখ্যা বইটি নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করব। স্বপ্নের ব্যাখ্যা pdf বইটি পড়তে নিচে যান।
সূচীপত্র — স্বপ্নের ব্যাখ্যা
প্রথম পরিচ্ছেদ
তা'বীর দানকারীর আদব, ভাল-মন্দ স্বপ্নের পার্থক্য নির্ণয়ে সক্ষমতা ও স্বপ্নের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত নীতিমালা।
১-৮ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ স্বপ্নে আল্লাহ তাআলাকে দেখার ব্যাখ্যা ....
৯-১০ তৃতীয় পরিচ্ছেদ।
ফেরেশতা, আম্বিয়া, সালেহীন, উলামা, কাবাঘর, আযান, নামায, হজ্জ ইত্যাদি স্বপ্নে দেখা
১১-১৬ চতুর্থ পরিচ্ছেদ
স্বপ্নযােগে আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজি, কিয়ামত অনুষ্ঠান, জান্নাত, জাহান্নাম, আগুন ইত্যাদি দেখা। পঞ্চম পরিচ্ছেদ। বৃষ্টি, বিদ্যুৎ, বজ্রপাত, ঝর্ণা, নদী-নালা, খাল-বিল, নদীর পানি, নৌকা, চাকা, গােসলখানা, নদী ও কূপের পানি, বাতাস ইত্যাদি দেখা।
২৫-৩৩ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।
যমীন, পাহাড়, প্রান্তর, টিলা, দুর্গ, ইমারত, দোকানপাট, বাড়ী-ঘর, বিস্ফোরণ, ভূমিকম্প ইত্যাদি স্বপ্নে দেখা সপ্তম পরিচ্ছেদ। গাছ, ফল-ফলাদি, উৎপন্ন ফসলাদি, ক্ষেত-খামার, তরি-তরকারি, বাগ-বাগিচা, ইত্যাদির তাবীর ..
৪০-৪৫ অষ্টম পরিচ্ছেদ
দুধ ও পানীয় দ্রব্য পান করা ....
৪৬-৪৮ নবম পরিচ্ছেদ নারী-পুরুষ, মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং পশুর লেদা-গােবর ইত্যাদি স্বপ্নে দেখা
৪৯-৬৪ দশম পরিচ্ছেদ
বিয়ে-শাদী, নারীর গুপ্তাঙ্গ, গর্ভাবস্থা, জন্ম, দুধপান করানাে ইত্যাদি স্বপ্নে দেখা।
৭৭-৮১
৮৪-৮৮
.............
একাদশ পরিচ্ছেদ মৃত্যু, মৃতব্যক্তি, তাদের ও অন্যদের সংবাদ।
৬৯-৭১ দ্বাদশ পরিচ্ছেদ কাপড়, লেবাস-পােশাক ও বিছানাপত্র ইত্যাদি স্বপ্নে দেখা ..............
৭২-৭৬ ত্রয়ােদশ পরিচ্ছেদ।
মণি-মুক্তা, অলংকার-আভরণ, সােনা-রূপা, দীনার-দিরহাম, টাকা-পয়সা, ইত্যাদি স্বপ্নে দেখা চতুর্দশ পরিচ্ছেদ পাত্র, বাটি, হাঁড়ি-পাতিল, সামানপত্র ইত্যাদি স্বপ্নে দেখা ...........
৮২-৮৩ পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ
অস্ত্রশস্ত্র ও এ জাতীয় জিনিস স্বপ্নে দেখা
ষষ্ঠদশ পরিচ্ছেদ
স্বপ্নে ঘােড়া, গাধা, খচ্চর এবং এদের রং দেখা
৮৯-৯৩ সপ্তদশ পরিচ্ছেদ।
উট, গরু, বকরী, ভেড়া- এসবের গােশত ও বর্ণ স্বপ্নে দেখা ...........
৯৪-৯৯ অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ জংলী গাধা, বন্য গরু, বন্য ছাগল, হরিণ ইত্যাদি হালাল পশু ও এসবের দুধ-গােশত স্বপ্নে দেখা
Read More: সোফির জগত
১০০-১০১
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
হাতি, হিংস্র পশু এবং এ জাতীয় প্রাণী দেখা ..
১০২-১০৮ বিংশ পরিচ্ছেদ
সাপ, বিচ্ছ, পােকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি স্বপ্নে দেখা
১০৯-১১৩ ২১ তম পরিচ্ছেদ
স্বপ্নে জলীয় প্রাণী ও তাজা মাছ ইত্যাদি দেখা ...
১১৪-১১৫ ২২ তম পরিচ্ছেদ।
ঈগল, শকুন ইত্যাদি শিকারী পাখী স্বপ্নে দেখা
১১৬-১২১ ২৩ তম পরিচ্ছেদ।
পেশা, শিল্পকর্ম, খেলাধুলা ইত্যাদি স্বপ্নে দেখা
১২২-১২৫ ২৪ তম পরিচ্ছেদ।
স্বপ্নযােগে বিক্ষিপ্ত বিষয়াদি লক্ষ্য করা এবং তার ব্যাখ্যা
১২৬-১৩১ ২৫ তম পরিচ্ছেদ।
স্বপ্নে কোরআন করীমের সূরাসমূহ পাঠ করার ব্যাখ্যা
স্বপ্নের ব্যাখ্যা pdf Bangla
خجلكم الحمد لله رب العلمين وصلى الله على سيدنا محمدن النبى الأممي وعلى اله وصحبه وسلم
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ'র। যিনি জগতসমূহের পালনকর্তা। নাবিয়্যিল উম্মী সাইয়েদুনা মুহাম্মদ, তাঁর পরিবারবর্গ এবং তাঁর সাহাবীগণের উপর সালাম ও শান্তি বর্ষিত হােক।
অতঃপর স্বপ্নের তা'বীর ব্যাখ্যা) সংক্রান্ত বিষয়ে ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সীরীন (রহঃ)-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত এটি এক তথ্য সমৃদ্ধ ও নীরবিহীন কিতাব। যার বিন্যাস পঁচিশটি পরিচ্ছেদে সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রথম পরিচ্ছেদ তা’বীর দানকারীর আদব, ভাল-মন্দ স্বপ্নের পার্থক্য নির্ণয়ে সক্ষমতা ও
স্বপ্নের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত নীতিমালা জানা দরকার-স্বপ্ন নবুওয়তের ৪৬ ভাগের এক ভাগ।
তাই এর তাবীর দানকারী ব্যক্তিকে আল্লাহর পক্ষ হতে তাওফীক পেতে, সঠিক পথ নির্দেশনা লাভ করতে এবং এ বিষয়ে প্রাজ্ঞ মনীষীবৃন্দের তত্ত্বজ্ঞানের পরিচয় জানতে হলে নিমােক্ত বিষয়গুলির বৃত্তে বিচরণকারী ও বিশেষ গুণী হওয়া একান্ত জরুরী।
(ক) পবিত্র কোরআনের বিজ্ঞ আলেম হওয়া। (খ) রসূলে পাক (দঃ) বর্ণিত হাদীসের হাফেয হওয়া।
(গ) আরবী ভাষা, শব্দমূল ও রূপান্তর সম্পর্কে পারদর্শী হওয়া।
(ঘ) মানব-প্রকৃতি ও এর স্তর বিন্যাসে দক্ষতার অধিকারী হওয়া।
(ঙ) তা'বীর তথা ব্যাখ্যার নিয়ম-নীতি সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকা।
(চ) আধ্যাত্মিক পবিত্রতায় ধন্য হওয়া।
(ছ) নৈতিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া।
(জ) আচার-আচরণে সত্যনিষ্ঠার পরিচয় বহন করা।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা পিডিএফ
আল্লাহ্ আমাকে, আপনাকে,
সকলকে তার আনুগত্যের তাওফীক দান করুন।
কেননা, স্বপ্নের তা'বীর বা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে কখনাে যুগ-বিবর্তন, পরিবেশপরিস্থিতি ও সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়, কোন সময় পবিত্র কোরআনের আলােকে, কখনাে নবী করীম (দঃ)-এর হাদীসের মর্ম অবলম্বনে ব্যাখ্যা দিতে হয়। আবার কোন সময় প্রচলিত ধারণা বা রীতির ভিত্তিতে তা'বীর দেয়ার প্রয়ােজন দেখা দেয়। কখনাে স্বপ্ন দেখা ব্যক্তির বদলে তার অনুরূপ ও তুল্য ব্যক্তি অথবা তার একই নামের ব্যক্তির প্রতি সম্পৃক্ত করে ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়ােজন হয়।
একইভাবে স্বপ্নের তা'বীর কখনাে শুধু বাহ্যিক নামের দ্বারা, কোন সময়। কেবল ভাবার্থের দৃষ্টিতে হয়ে থাকে। সময়ে আবার স্বপ্নে দেখা বিষয়বস্তুর বিপরীত অর্থে, কখনাে শব্দমূল কিংবা তার রূপান্তর দৃষ্টে, কখনাে দেখা বিষয়ের মধ্যে বাড়িয়ে বা কমিয়ে ব্যাখ্যা করা হলে মর্ম উদ্ধারে সহায়ক হয়ে থাকে।
পবিত্র কোরআনের আয়াত মর্মে তা'বীর দেয়ার দৃষ্টান্ত-যেমন, স্বপ্নে কোন ব্যক্তি ডিম দেখতে পেলে তার অর্থ হবে নারী। যথা-আল্লাহ্ বলেছেন :
گاهن بيض مكنونه
জান্নাতী হুর-বালাগণ যেন ডিমের ভেতর কুসুমের ন্যায়।
(সূরা সাফফাত : আয়াত ৪৯)।
আলােচ্য আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা জান্নাতী হুর-বালাকে ডিমের সাথে তুলনা করেছেন। অনুরূপ পাথরের তা'বীর নিতে হবে অন্তরের কাঠিন্য ও পাষাণধর্মী অর্থে। যেমন আল্লাহ্ বলেছেন:
ثم قست قلوبگم من بعد ذلك فهي كالحجارة أو أشد قسوة
অতঃপর (এ ঘটনার পর) তোমাদের অন্তরসমূহ পাথরের ন্যায় কঠিন হয়ে গেল, এমনকি তদপেক্ষাও কঠিন।
(সূরা বাকারাহ ৪ আয়াত ৭৪)
আর তাজা গােশত দেখার অর্থ হবে গীবত তথা পরনিন্দা। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
أيحب أحدكم أن يأكل لحم أخيه ميتا فكرهتموه ط
তােমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গােশত খাওয়া পসন্দ করবে ? তােমরা তাে একে ঘৃণা করে থাক। (সূরা হুজুরাত : আয়াত ১২) গীবত বা পরের নিন্দা করাকে এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মৃত ভাইয়ের গােশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। স্বপ্নে কোন ব্যক্তি চাবি দেখতে পেলে এ দ্বারা ধন-সম্পদের প্রতি ইঙ্গিত বুঝতে হবে। কেননা, পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে ?
وأنه من المموز ما آن مفاتحه لتؤء بالعصبة أولى القوة
স্বপ্নের ব্যাখ্যা। আর তাকে আমি এত ধন-সম্পদ দান করেছিলাম যার চাবি বহন করা কয়েকজন শক্তিশালী লােকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। (সূরা কাসাস ঃ আয়াত ৭৬)
কাজেই চাবি দ্বারা মালের অর্থ ধরে নিতে হবে এই কারণে যে, চাবির মাধ্যমেই ধন-ভাণ্ডারের নিকট পৌছা সম্ভব হয়। আর নৌকার অর্থ হবে মুক্তিলাভ করা। কারণ আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন ?
فانجينه و أصحب السفينة
আমি তাকে এবং নৌকায় আরােহী লোেকদের মুক্তিদান করেছি।
(সূরা আনকাবুতঃ আয়াত ১৫) অন্য আয়াতে আছে ?
انجيله ومن معه في الفلك
অতঃপর আমি তাকে (নূহকে) ও নৌকায় তার সঙ্গীদের মুক্তি দিয়েছি।
(সূরা শুআরা : আয়াত ১১৯) অনুরূপ কেউ স্বপ্নে দেখল, কোন ঘর-বাড়ী, শহর-বন্দর অথবা মহল্লায় বাদশাহ্ বা রাষ্ট্রপতি প্রবেশ করেছেন। অথচ তার যত্রতত্র আগমন স্বাভাবিক নিয়মের পরিপন্থী। এমতাবস্থায় এর ব্যাখ্যা হবে এই যে, উক্ত স্থানের বাসিন্দাদের উপর কোন বিপদ পতিত হবে অথবা তারা নিজেরা অচিরেই কোন বিপদ-বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। যেহেতু নিম্নোক্ত আয়াতের মর্ম ও ভাবার্থ এরই প্রতি ইঙ্গিত দেয়।
ان الملوك اذا دخلوا قرية أفسدوها وجعلوا أعيرة أهلها أذلة
বস্তুত (আধিপত্যবাদী) রাজা-বাদশাহগণ কোন জনপদে প্রবেশ করলে সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং তথাকার সম্ভ্রান্ত লােকদেরকে অপদস্থ করে ছাড়ে।
(সূরা নামল : আয়াত ৩৪) স্বপ্নে পােশাক দেখলে একইভাবে নারী অর্থ নিতে হবে। যথা আলকোরআনের ভাষায় 1 1, ) -তারা তােমাদের পরিচ্ছদ, তদ্রুপ তােমরাও তাদের পরিচ্ছদ।
(সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৮৭) এ জাতীয় বহু দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করা যায়।
একইভাবে নবী করীম (দঃ) বর্ণিত হাদীস দ্বারা তা'বীর দেয়ার ক্ষেত্রে (নাম ও বিষয়বস্তুর সাথে) সম্পর্কের প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী। যেমন, স্বপ্নে কোন ব্যক্তি কাক দেখতে পেল। এর ব্যাখ্যা হবে ফাসেক ও অসৎ লােক।
কেননা, নবী করীম (দঃ) কাককে ফাসেক নামে অভিহিত করেছেন। কেউ ইঁদুর দেখতে পেয়েছে। এর স্বপ্নের ব্যাখ্যা ব্যাখ্যা হবে অসৎ নারী।
কারণ, নবী করীম (দঃ) ইদুরকে এক হাদীসে _ এবং অপর হাদীসে (চরিত্রহীনা) বলে আখ্যায়িত করেছেন।
স্বপ্নে এক ব্যক্তি পাজরের হাড় দেখতে পেল, এর অর্থ নারী বা মহিলা নেয়াই সঙ্গত। যেহেতু রসূলে করীম (দঃ) এরশাদ করেছেন ।
المراة ځلقت من ضلع أعوج
“নারী (জাতি)-কে পাজরের বাকা হাড়ের প্রকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে।”
একইভাবে এক ব্যক্তি স্বপ্নে দরজার চৌকাঠ দেখতে পেল। এর অর্থও নারী হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কারণ, হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ্ (আঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে-তিনি প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-কে বলেছিলেন ?
তােমার দরজার চৌকাঠ বদলে ফেল। চৌকাঠ দ্বারা এখানে স্ত্রী বুঝানাে হয়েছিল। এ জাতীয় অসংখ্য উপমা বর্ণিত রয়েছে।
প্রচলিত প্রবাদ বা পরিভাষার ভিত্তিতে তাবীর দেয়ার দৃষ্টান্ত নিম্নরূপ :
এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখতে পেল তার হাত তুলনামূলক লম্বা হয়ে গেছে। এর ব্যাখ্যা হবে- সে ব্যক্তি জনকল্যাণমূলক কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কেননা, পারস্পরিক আলাপ-আলােচনায় আরবরা বলে থাকে ?
১. তােমার চেয়ে এই ব্যক্তির হাত অধিক প্রসারিত। এ কথা দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হল-লােকটি অধিকতর দানশীল।
লাকড়ী সংগ্রহ ও জমা করার ব্যাখ্যা হবে পরনিন্দায় লিপ্ত হওয়া। কারণ, নিন্দা-চর্চায় লিপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে আরবরা বলে থাকে-লােকটি লাকড়ী বা কাঠখড়ি জমা করায় ব্যস্ত আছে।
স্বপ্নে রােগ-ব্যাধি দেখতে পাওয়ার অর্থ-নিফাক বা মিথ্যা-কপটতা। যেমন, অঙ্গীকার পূরণ করে না এহেন লােক সম্পর্কে আরব সমাজে বলা হয়ে থাকে অঙ্গীকার পূরণে লােকটি বেজায় অসুস্থ ।
নকশা কিংবা ফর্মা দেখলে অর্থ হবে পুত্র সন্তান। যেহেতু পারস্পরিক আলাপচারিতায় পিতার আকৃতি সদৃশ পুত্র সম্পর্কে আরব জনতা বলে থাকে। অর্থাৎ, আকারে লােকটি সিংহের আকৃতি পেয়েছে।
এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল-লােকদের প্রতি সে তীর, বন্দুকের গুলী অথবা পাথর নিক্ষেপ করছে।
এর ব্যাখ্যা হবে-সে ব্যক্তি লােকদের নিন্দাচর্চা ও দুর্নাম রটনা করছে। কেননা, আরব সমাজে বলা হয় অমুক লােক অমুক ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে, অথবা তার প্রতি অপবাদ আরােপ করেছে।
এক ব্যক্তি উশনান জাতীয় ঘাস অথবা সাবান ইত্যাদি দ্বারা নিজের হাত ধােয়া দেখতে পেল। এতে কোন বিষয়ে নিরাশ হওয়ার অর্থ প্রকাশ পায়।
কেননা, স্বপ্নের ব্যাখ্যা আরবদের মধ্যে কেউ যদি বলে ?
غسلت يدي بالأشنان عنك آی ايست من خيرك
‘উশনান দ্বারা তােমার বিষয়ে আমি হাত ধুয়ে ফেলেছি।' এর অর্থ তখন এটাই নেয়া হয় যে, তােমার কল্যাণ ও উপকারিতা থেকে আমি নিরাশ হয়ে গেছি।
অনুরূপ স্বপ্নে কেউ ভেড়া দেখতে পেলে তার ব্যাখ্যা হবে সে ব্যক্তি সমাজে গণ্যমান্য ও বরণীয় হবে।
এ জাতীয় অগণিত উপমা সমাজে প্রচলিত প্রবাদ হিসাবে ছড়িয়ে রয়েছে।
নামের প্রকাশ্য অর্থ দ্বারা তা'বীর করার দৃষ্টান্ত- যেমন, কারাে নাম ‘ফযল’ হলে ফযীলত, “রাশেদ’ হলে হেদায়াত ও পথ প্রদর্শন এবং ‘সালেম’ হলে শান্তি-নিরাপত্তা ইত্যাদি অর্থ নিতে হবে।
আর অর্থ ও মর্মদৃষ্টে তাবীর করতে হলে তার উপমা যেমন, নার্গিস ও গােলাপ সম্পর্কে কেউ জিজ্ঞেস করলে কিংবা এর সাথে সম্বন্ধযুক্ত হলে তার অর্থ হবে স্থায়িত্বহীনতা ও আয়ুর স্বল্পতা।
কিন্তু স্থায়িত্ব ও দীর্ঘায়ুর কারণে রায়হান ফুলের সুগন্ধির ব্যাখ্যা এর বিপরীত অর্থবােধক নিতে হবে। (অর্থাৎ, স্বপ্নে কেউ রায়হান ফুল দেখতে পেয়ে এর তাবীর জানতে চাইলে উত্তর হবে-তার আয়ু দীর্ঘ হবে। কেননা, রায়হান ফুলের গাছ বহু দিন বেঁচে থাকে এবং এর সুগন্ধি ও সজীবতা অন্যান্য ফুল বা সুগন্ধির তুলনায় অধিক স্থায়ী হয়।
অনুবাদক স্বপ্নের ব্যাখ্যা pdf
এ জাতীয় বহু দৃষ্টান্ত বাস্তবে লক্ষ্য করা যায়। অনুবাদ।
বিপরীত অর্থে ব্যাখ্যা দেয়ার দৃষ্টান্ত যেমন-
স্বপ্নে এক ব্যক্তি নিজেকে কান্নারত অবস্থায় দেখতে পেল। এর সাথে চিৎকার, আওয়াজ কিংবা কাপড় ছিড়ে ফেলা যুক্ত না হলে অর্থ হবে- আনন্দ ও খুশীর আগমন।
পক্ষান্তরে হাসি-খুশী ও নাচ দেখতে পেলে অর্থ হবে দুঃখ-বেদনা, বিপদ-মুসীবত ও দুশ্চিন্তা।
অনুরূপ দুই ব্যক্তিকে পরস্পর বিবদমান ও কুস্তিরত দেখা গেলে ধরাশায়ী ও পরাজিত ব্যক্তিকেই বিজয়ী ধরে নিতে হবে।
কোন ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল-তার দেহে শিংগা লাগানাে হচ্ছে। এর ব্যাখ্যা-তার প্রতি কোন শর্ত আরােপ করা হবে। অথবা দেখতে পেল তার প্রতি কোন শর্ত লাগানাে হচ্ছে। এমতাবস্থায় অর্থ হবে- তার গায়ে শিংগা লাগানাে হবে। কেননা, শর্ত (6) শব্দটি আরবী ভাষায় শিংগা লাগানাের অর্থে ব্যবহারের প্রচলন বহুল পরিচিত।
অনুরূপ কেউ স্বপ্নে দেখল- তাকে কবরে প্রবেশ করানাে হচ্ছে। এর অর্থ হল, তাকে বন্দী করা হবে। কিন্তু যদি দেখতে পায় তাকে এমন জায়গায় আটক করার আয়ােজন চলছে, যা তার নিকট অজ্ঞাত ও অপরিচিত।
তদুপরি সেখানকার স্বপ্নের ব্যাখ্যা বাসিন্দাদেরকেও সে চিনতে পারে না, তাহলে অর্থ হবে (অচিরেই) সে কবরবাসী হবে, যদি সেখান থেকে বের হয়ে আসার অবস্থা দেখতে না পায়। অনুরূপ স্বপ্নে যুদ্ধ-বিগ্রহ দেখতে পাওয়ার অর্থ- দর্শনকারী ব্যক্তি দুশমন কর্তৃক আক্রান্ত হবে।
কেউ স্বপ্নে দেখল, সে শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছে। এর ব্যাখ্যা হবে- স্থানটি বন্যা কবলিত হবে। পঙ্গপাল দেখার অর্থ- সৈন্যদল আর সৈন্যদলের অর্থ- পঙ্গপাল মনে করতে হবে। এ জাতীয় দৃষ্টান্ত অসংখ্য-অগণিত, যার সীমা-সংখ্যা গণনা দ্বারা শেষ করার মত নয়।
উপরন্তু পঙ্গপাল দেখার অর্থ কখনাে গুপ্তধন হয়ে থাকে। কিন্তু এর জন্য শর্ত হল তার সাথে ভনভন আওয়াজ না থাকা চাই। কিন্তু পঙ্গপালের সাথে ভনভন শব্দ উচ্চারিত হতে থাকলে ব্যাখ্যা হবে ঝগড়া-ফাসাদ, কলহ-বিবাদ। চুল দেখার অর্থ ধন-সম্পদ ও রকমারি চাকচিক্য। কিন্তু চুল বড় হয়ে চেহারায় পতিত হলে কিংবা মুখমণ্ডল অতিক্রম করে গেলে অর্থ হবে, চিন্তা-ভাবনা, দুঃখ-বেদনার নিদর্শন।
অবশ্য কেউ কেউ এ দ্বারা লেবাস-পােশাক অর্থ নিয়ে থাকেন। কেউ যদি মাথার চুল লেপ্টে জড়িয়ে রয়েছে দেখতে পায়, তাহলে অর্থ হবে তার সম্পর্কে দুর্নাম রটানাে হবে, যার প্রতিকার তার পক্ষে সম্ভব হবে না। কেউ স্বপ্নে দেখল তার পাখা বা দুটি ডানা রয়েছে। এর অর্থ হবে, সে ব্যক্তি অর্থ-বিত্তের মালিক হবে। আর পাখায় ভর করে উড়ে গেলে অর্থ হবে, সে লােক সফরে বের হবে।
এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল তার হাত কাটা পড়েছে, কিন্তু খণ্ডিত হাত সে তুলে নিয়েছে এবং সেটি তার সাথেই রয়েছে। এমতাবস্থায় অর্থ হবে-ভাই কিংবা পুত্র দ্বারা সে ব্যক্তি উপকৃত হবে। কিন্তু কাটা হাত তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দেখতে পেলে অর্থ হবে, ভাই অথবা ছেলে দ্বারা তার বিপদ ঘটবে।
কোন রুগ্ন ব্যক্তি সুস্থ হয়ে নিজেকে ঘর থেকে বের হওয়া অবস্থায় দেখতে পেল। বের হওয়া কালে যদি কারাে সাথে কথা বলে, তাহলে সে রােগমুক্ত হবে। আর কথা না বললে তার মৃত্যু হবে। মাকামাতে বর্ণিত আছে-যদি তা বিভিন্ন রং ও বর্ণ বিশিষ্ট না হয়, তাহলে তার অর্থ হবে অপবিত্র ও চরিত্রহীনা নারী।
কিন্তু রং সাদা-কালাে মিশ্রিত হলে অর্থ হবে দিন ও রাত। মাছ দেখলে সংখ্যা জানা থাকলে অর্থ হবে নারী। আর জানা না থাকাবস্থায় অর্থ হবে গনীমতের মাল ও ধন-সম্পদ। এ ধরনের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে- যা বাস্তবে দেখতে পাওয়া যায়।
মানুষের মান-মর্যাদা, ব্যক্তিগত আচার-আচরণ এবং অবস্থার প্রেক্ষাপটেও একই ভাবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিভিন্ন রকম হতে পারে।
যেমন, কোন দ্বীনদার, পরহেযগার ও সৎকর্মশীল ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল, তার হাতে অথবা ঘাড়ে বেড়ি স্বপ্নের ব্যাখ্যা লাগানাে হয়েছে। এটা তার জন্য কল্যাণ ও বিপদ-বিপর্যয় থেকে নিরাপদ থাকার নিদর্শন।
পক্ষান্তরে চরিত্র ও কর্মগতভাবে সে যদি এর বিপরীতধর্মী হয়, তাহলে এটা তার দ্বারা অধিক পরিমাণে পাপকার্য অনুষ্ঠিত হওয়া এবং পরিণামে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া প্রমাণ করে। অসীম করুণা দ্বারা আল্লাহ তাআলা আমাদের তা থেকে রক্ষা করুন। আমীন!
অনুরূপ সময়ের ব্যবধানেও স্বপ্নের ব্যাখ্যায় তারতম্য হতে পারে। যেমন, এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল, সে হাতির পিঠে সওয়ার হয়ে আছে। এ স্বপ্ন যদি রাতের বেলা দেখে, তাহলে অর্থ হবে-সে ব্যক্তি বৃহত্তর কল্যাণধর্মী কাজের মালিক হবে। কিন্তু দিনের বেলা দেখলে তার অর্থ- আপন স্ত্রীকে সে তালাক দিবে।
অনুচ্ছেদ ? জেনে রাখা দরকার যে, রাতের শেষ প্রহরে এবং দিনের বেলা দুপুরে বিশ্রামকালে দেখা স্বপ্নের ব্যাখ্যা সাধারণত সত্যে পরিণত হয়ে থাকে। অনুরূপ ফল পাকার মওসুম এবং বিক্রয়কালীন সময়ে দেখা স্বপ্ন ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। কিন্তু শীতকালে ও বৃষ্টিপাতের সময় দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
অনুচ্ছেদ ? স্বপ্নদ্রষ্টা ব্যক্তির কথা ও বক্তব্য প্রথমত উত্তমরূপে বুঝে নেয়া, অতঃপর তাকে নির্ধারিত নিয়মের সাথে মিলিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা ব্যাখ্যা দানকারীর অন্যতম কর্তব্য। তার কথা যদি সঠিক হয়, ভাবের সাথে বাক্যের পারস্পরিক সম্পর্ক পুরাপুরি বজায় থাকে, তদুপরি তার বক্তব্যের মর্ম সুস্পষ্টরূপে বুঝে আসে, তাহলে মনে করতে হবে এ স্বপ্ন সত্য ও সঠিক।
আর বক্তব্যের অর্থ একাধিক ও বিভিন্ন রকম মনে হলে বিবেচনা করে দেখতে হবে, শব্দের কোন্ অর্থ মূল অর্থের অধিক নিকটবর্তী। অতঃপর সে অনুপাতেই ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং সে অর্থই গ্রহণ করা বিধেয়।
পক্ষান্তরে স্বপ্নের আদি-অন্ত পুরােটাই যদি অবিন্যস্ত ও বিক্ষিপ্ত হয়, নিয়মের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা আদৌ সম্ভব না হয়, তাহলে এ স্বপ্ন আদতে অর্থহীন ও বাতিল ধরে নিতে হবে। স্বপ্নের বিষয়বস্তু একেবারে অস্পষ্ট মনে হলে তার মনের অবস্থা জেনে নিতে হবে।
স্বপ্ন নামায সম্পর্কিত হলে তার নামাযের অবস্থা জিজ্ঞেস করবে, সফর বিষয়ক হলে সফরের অবস্থা আর বিয়ে সম্পর্কিত হলে বিয়ের ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করে অতঃপর সে অনুপাতে ব্যাখ্যা দিবে।
পক্ষান্তরে স্বপ্নের ব্যাখ্যা পাপাচারধর্মী ও মন্দের প্রতি ইঙ্গিতবাহী হলে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা বিধেয়। অথবা উত্তম ব্যাখ্যা দিয়ে এর আসল অর্থ চেপে যাওয়াই সমীচীন।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার নিয়ম
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আসল অর্থ বিবেচনা ব্যতীত যে কোন প্রকারের একটা ব্যাখ্যা দিলেই একে তা'বীর বলা যায় না। এ পর্যায়ে বরং প্রথমত বিষয়টি তলিয়ে দেখা দরকার-এটি কোন্ ধরনের এবং কি জাতের।
সুতরাং প্রকৃতিগতভাবে স্বপ্নে দেখা বিষয়বস্তুর জাত, প্রকার ও স্বভাব অবগত হওয়ার পর সে অনুপাতে তাবীর করা উচিত এবং ব্যাখ্যা দেয়ার কালে আনুষঙ্গিক প্রকার, প্রকৃতি ও স্বভাবের প্রতি লক্ষ্য রাখা দরকার।
অতএব, জাতের দৃষ্টান্ত যেমন গাছ-পালা, পশু-পাখী এ সবই পুরুষ জাতীয়। এখন কথা হল স্বপ্নে গাছ দেখতে পেলে চিন্তা করবে গাছটি কোন্ প্রকারের ? অথবা পশু-পাখী হলে কোন্ ধরনের প্রাণী এগুলি? এতসব চিন্তার আলােকে প্রকার বা ধরন নির্ণয়ের পর সে হিসাবে ব্যাখ্যা দেয়াই বিধিসম্মত।
অতএব, গাছটি যদি খেজুর বৃক্ষ হয়, তাহলে এর ব্যাখ্যা হল-সেটি একজন সম্মানিত আরবী লােক বুঝতে হবে। কেননা, খেজুর গাছের উৎপাদন সাধারণত ও মূলত আরব দেশেই হয়ে থাকে। আর আখরােট হলে আজমী তথা অনারব লােক অর্থ নেয়া সঙ্গত।
কারণ, আখরােট সাধারণত অনারব দেশে উৎপন্ন ফল। অনুরূপ বৃহদাকার পাখী হলে আরবী লােক আর ময়ূর পাখী হওয়া অবস্থায় অনারব লোেক উদ্দেশ্য হবে। এরপর চিন্তা করতে হবে বিষয়টির স্বভাব বা চরিত্র কোন্ ধরনের হতে পারে।
এ পর্যায়ে সেটি খেজুর বৃক্ষ হলে ব্যাখ্যা হবে-লােকটি পূত-পবিত্র অন্তর ও কল্যাণধর্মী গুণের অধিকারী। আর আখরােট গাছ হলে ব্যাখ্যা হবে-সে লােক কলহপ্রিয় এবং তার আচার-আচরণে ধােকাবাজির প্রবণতা রয়েছে। কেননা, আখরােট থেকে খড়খড় আওয়াজ নির্গত হয় এবং পাষাণতুল্য উপরের সুপুষ্ট খােসা ভঙ্গ করা ব্যতীত ভিতরের শাস অর্জন করা যায় না।
স্বপ্নে দেখা বিষয়টি পাখী হলে অর্থ হবে- সে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে বিদেশ সফরে দিন কাটাবে। কেননা, নানা স্থানে উড়ে আর ঘুরে বেড়ানােই পাখীর সহজাত অভ্যাস। কিন্তু পাখীটি ময়ূর হলে অর্থ হবে-সে লােক অনারব সম্পদশালী বাদশাহ্, বিশেষ আঁকজমক ও সৌন্দর্যের অধিকারী, তদুপরি যার ভক্ত অনুসারীর সংখ্যা হবে পরিমাণে অধিক।
এই একই ব্যাখ্যার অধীনে মনে করতে হবে পাখীটি যদি বাজ কিংবা ঈগল জাতীয় হয়। কিন্তু পাখীটি কাক কিংবা পেঁচক জাতীয় হওয়ার অর্থ লােকটি ধর্মহীন, অসৎ এবং পাপাচারে বিজড়িত।
এমন ধরনের চিন্তা-ভাবনা ও তুলনামূলক বিশ্লেষণের দ্বারা ব্যাখ্যা দেয়া বাঞ্ছনীয়। তবেই আল্লাহ্ চাহে তাে সঠিক পথ পাওয়া যেতে পারে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওফীকের আশা করা যায়।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা — দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
স্বপ্নে আল্লাহ তাআলাকে দেখার ব্যাখ্যা স্বপ্নে কোন ব্যক্তি উত্তম অবস্থায় আল্লাহ্ তা'আলার দর্শন লাভে ধন্য হলে এটা
ময়দানে এ অবস্থায়ই আল্লাহর সাক্ষাত লাভে সে ধন্য হবে।
অধিকন্তু পার্থিব জীবনে তার যাবতীয় নেক আমল কবুল হওয়ার দলীল সাব্যস্ত হবে। এ পর্যায়ে আল্লাহ তাআলাকে সে যদি তৃপ্ত নযরে দেখতে পায়, তাহলে পার্থিব জীবনে তার যথাযথ মূল্যায়ন হবে, মান-মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে, উপরন্তু সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল, মহান আল্লাহ্ তাকে কোন পার্থিব জিনিস দান করছেন। এর ব্যাখ্যা হবে, সে কোন রােগে আক্রান্ত হবে, কোন বিপদে পতিত হবে অথবা তার পরীক্ষা নেয়া হবে, পরিণামে যার প্রতিদান এত অধিক পরিমাণে তাকে দেয়া হবে যে, পরিশেষে সে তােক জান্নাতে প্রবেশ করবে।
এক ব্যক্তি আল্লাহ তাআলাকে কোন নির্দিষ্ট জায়গায় অবতরণ করতে দেখতে পেল। এর ব্যাখ্যা হবে সে স্থানের বাসিন্দাদের আনন্দ, কল্যাণ ও সফলতা নসীব হবে।
যদি কোন ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে যে, আল্লাহ্পাক তার সাথে এমন কথা বলছেন, যার মাঝে হুমকি, ধমকি, নিষেধাজ্ঞা ও ওয়াদা-অঙ্গীকার রয়েছে, তাহলে এর ব্যাখ্যা হবে- সে গােনাহ্গার এবং যে কাজে লিপ্ত আছে, সেগুলাে ছেড়ে দেয়া উচিত।
যদি কোন ব্যক্তি স্বপ্নে দেখে আল্লাহ্ পাক স্বয়ং তার বিছানায় উপস্থিত হয়ে তাকে মুবারকবাদ জানাচ্ছেন, তাহলে এর ব্যাখ্যা হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতি রহমত বর্ষিত হবে এবং সে বুযুর্গীপ্রাপ্ত হবে। কেননা, এ জাতীয় স্বপ্ন দেখার ভাগ্য কেবল নেককার-পরহেযগার লােকদেরই হয়।
কেউ যদি আল্লাহ্ তাআলাকে দেখতে পায় যে, তার ছবি বানানাে হয়েছে, অথবা আল্লাহকে দেখছে বলে নিজের কল্পনায় আসে, কিংবা আল্লাহ্র অনুরূপ অন্য কাউকে দেখতে পায়, এমতাবস্থায় এর তা’বীর হল- এহেন স্বপ্নদ্রষ্টা লােকটি অচিরেই মিথ্যাবাদী, আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরােপকারী এবং আচার-আচরণে বেদআতের অনুসরণকারী প্রতিপন্ন হবে।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা কাজেই অতিশীঘ্র তার তওবা-ইস্তেগফারে আত্মনিয়ােগ করা দরকার।
একইভাবে কেউ যদি আল্লাহ্ তাআলাকে অপূর্ণাঙ্গ অবস্থায় দেখতে পায় অথবা মূর্তি-প্রতিমা কিংবা অন্য এমন অবস্থায় দেখতে পায়, যা তার সৌন্দর্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের জন্য শােভনীয় নয়, তাহলেও তার তওবা-ইস্তিগফারে লুটিয়ে পড়া উচিত।
কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা সকল ত্রুটি ও অপূর্ণতা থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। আল্লাহ সর্বজ্ঞানী।
ঘটনা: একবার এক লােক হযরত জাফর সাদেক (রহঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, আমি স্বপ্নে দেখি আল্লাহ্ যেন আমাকে একখণ্ড লােহা দান করেছেন এবং আমাকে এক ঢােক সিরকা পান করিয়েছেন, এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে ? উত্তরে ইমাম জাফর সাদেক (রহঃ) বললেন, লােহা দ্বারা কঠোরতা বুঝানাে হয়েছে।
কেননা, আল্লাহ্ তাআলা এরশাদ করেছেন—
وانزلنا الحديد فيه بأس شديد
আর আমি লােহা নাযিল করেছি, যাতে রয়েছে বিপুল কঠোরতা।
(সূরা হাদীদ ও আয়াত ২৫) তােমার সন্তানদের কেউ সম্ভবত হযরত দাউদ (আঃ)-এর এ কারিগরি বিদ্যা শিখে নিতে পারে।
আর আল্লাহ্ তােমাকে সিরকা পান করানাের অর্থ হল, তুমি কঠিন রােগে আক্রান্ত হবে যার সময়সীমা দীর্ঘ হতে পারে। এই রােগশয্যায় তুমি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হবে। এ অবস্থায় তােমার মৃত্যু হলে আল্লাহ্ তােমার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন এবং তােমার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ — Shopner Bekkha pdf
ফেরেশতা, আম্বিয়া, সালেহীন, উলামা, কাবাঘর,
আযান, নামায, হজ্জ ইত্যাদি স্বপ্নে দেখা। যে ব্যক্তি স্বপ্নে কোন ফেরেশতার দর্শন লাভ করে, এটা তার জন্য দুনিয়াতে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও বুযুর্গী হাসিলের নিদর্শন আর নিজ শহরের অধিবাসীদের সফলতা লাভের পরিচয়। উচ্চ মর্যাদাশালী কোন ফেরেশতা দেখতে পাওয়া কল্যাণ, শাহাদতের মর্যাদা, সজীবতা, উপকারী বৃষ্টিপাত, পর্যাপ্ত রিযিক ও নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যমূল্য হ্রাস পাওয়ার লক্ষণ।
ফেরেশতা যদি মসজিদে দেখতে পায়, তাহলে অর্থ হবে- এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি রয়েছে। তাদেরকে বেশী বেশী দো‘আ-ইস্তেগফার, নামায, সদকা এবং দান-খয়রাত অধিক পরিমাণে করার হুকুম দেয়া হয়েছে। কিন্তু ফেরেশতা বাজার-বন্দরে দেখা গেলে উদ্দেশ্য হবেলােকদেরকে ওজনে কম-বেশী করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর কবরস্তানে দেখা গেলে ব্যাখ্যা নিতে হবে, আলেম-উলামা, ফকীহ ও দ্বীনদার-পরহেযগার লােকদের মধ্যে ব্যাপকহারে রােগ-বালাই ছড়িয়ে পড়বে।
স্বপ্নে কেউ কোন অপরিচিত লােক দেখতে পেল, কিন্তু লােকেরা তাকে ফেরেশতা বলেই উল্লেখ করল, তাহলে বুঝতে হবে ইনি কোন মর্যাদাবান ফেরেশতাই বটেন।
অনুচ্ছেদ: কেউ স্বপ্নে নবী করীম (দঃ)-এর যিয়ারত লাভে ধন্য হল এবং সেখানে কোন অপ্রিয় কথা বা অপ্রীতিকর দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়নি, তাহলে এটা তার জন্য সুসংবাদের আলামত। তার দ্বারা নেক আমল সাধিত হওয়ার লক্ষণ। পক্ষান্তরে স্বপ্নে অপ্রীতিকর কিছু দেখা গেলে বুঝতে হবে- স্বপ্নদ্রষ্টার জীবনে দুঃখ-কষ্ট, অভাব ও সংকট দেখা দেবে।
কেউ নবী করীম (দঃ)-কে অনুর্বর শুষ্ক ভূমিখণ্ডে দেখতে পেলে সে স্থান সবুজ, শস্য-শ্যামল হয়ে উঠবে। কেউ তাকে বিপদ-মুসীবতকালে দেখতে পাওয়ার অর্থ আল্লাহ্ তার সকল বিপদাপদ দূর করে দেবেন।
কেউ স্বপ্নে দেখল, নবী করীম (দঃ) কারাে আঙ্গিনায় উপস্থিত। এর অর্থ- সে স্থানে অগ্নিকাণ্ড কিংবা অন্য কোন উপায়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা যদি দেখতে পায়, আগুনে সে গােশত ভুনা করছে, তবে জনচর্চিত গীবত-নিন্দা থেকে সে নিরাপদে থাকবে।
কিন্তু ভুনা গােশত থেকে সে যদি কিছু অংশ আহার করে, তাহলে সে যৎ সামান্য রিযিক পাবে। আর দুঃখ-যাতনা জুটবে তার অধিক মাত্রায়। কেননা, ভুনা করা মূলত বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্টের আলামত।
আর উক্ত আগুন দ্বারা হাঁড়ির মধ্যে সে যদি খাদ্যদ্রব্য পাকানাে দেখতে পায়, তাহলে কোন এক বিষয়ে বাড়ী থেকে সে উপকার লাভ করবে। কারণ,হাঁড়ি-পাতিল কার্যত পারিবারিক শান্তি-শৃংখলার পরিচায়ক।
কিন্তু হাঁড়িতে খাদ্যদ্রব্য বলতে যদি কিছুই না থাকে, তাহলে অর্থ হবে-কোন ব্যাপারে বাড়ীর মুরব্বীকে সে রাগান্বিত করবে অথবা অবাঞ্ছিত কোন বিষয়ে তাকে উদ্বুদ্ধ করবে।
যদি কেউ স্বপ্ন দেখে আগুনে তার কাপড় কিংবা দেহের কোন অংগ পুড়ে গেছে, তাহলে ব্যাখ্যা হবে-উক্ত কাপড় অথবা সংশ্লিষ্ট অংগে (বিস্তারিত পরে বর্ণিত হবে) কোন বিপদ নেমে আসবে। কাপড় কিংবা অংগ দগ্ধকারী আগুনে যদি শিখা বর্তমান থাকে, তবে বাদশাহ তথা শাসকের পক্ষ থেকে তার ক্ষতি নিশ্চিত হবে। আল্লাহই ভাল জানেন। কিন্তু আগুন যদি শিখাবিহীন সাদামাঠা হয়, তবে এটা বক্ষব্যাধির লক্ষণ।
কোন ব্যক্তি স্বপ্নে যদি শিখাবিহীন স্বাভাবিক আগুন খাওয়ার অবস্থা দেখতে পায়, তার অর্থ সে ইয়াতীমের মাল আত্মসাতে তৎপর রয়েছে। আর উক্ত আগুনে যদি শিখার দাপট থাকে, তবে তার ব্যাপারে লােক সমাজে এমন চর্চা হবে, যার ফলে তার মন আঘাতে দগ্ধ হয়ে পড়বে।
কেউ স্বপ্নে দেখল, তার গায়ে অগ্নিশিখার ছোঁয়া লেগেছে, এর অর্থ সে লােকদের আলােচনার বস্তু হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে এবং লােকেরা তার নিন্দা-চর্চায় মেতে উঠবে। শরীরে আগুন দিয়ে দাগ লাগানাে দেখতে পাওয়া দাগের সমপরিমাণ মন্দ কথা শুনতে পাওয়ার পূর্বধ্বনি।
অগ্নিস্ফুলিঙ্গ মন্দ কথা ও কটুবাক্যের আলামত। যদি দেখে স্ফুলিঙ্গ তার প্রতি এগিয়ে আসছে, তবে সে কটুকথার শিকার হবে এবং মন্দ কথা শুনতে পাবে। যদি তার গায়ে অগ্নিকণার বিরূপ প্রবাহ আঘাত করে, তবে সে নির্যাতনের শিকার হবে। নিজ হাতে যদি কেউ অগ্নিস্ফুলিঙ্গের অবস্থান দেখতে পায়, তবে সে বাদশাহ বা শাসকের পক্ষ থেকে বিড়ম্বনার শিকার হবে।
কেউ যদি বাজারে কিংবা দোকানে অগ্নিপাত দেখতে পায়, তবে এটা মালের খাযনা অথবা বিক্রি অধিক, কিন্তু মূল্য হারাম হওয়ার পরিচায়ক।
যদি কেউ দেখতে পায় উজ্জ্বল আলাে তার ঘরে দীপ্তিমান, তাহলে এটা সে ঘরের বরকত ও কল্যাণের নিদর্শন। কিন্তু আলাে যদি ক্ষীণ হয়, তবে সে অনুপাতে ঘরের অবস্থা বুঝতে হবে। আর আলাে যদি নিভে যায় অথচ এর কোন কারণ।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা করেছে। এর অর্থ- সে মারাত্মক অপরাধ ও বড় বড় গুনাহের কাজে লিপ্ত হবে। এটা মূলত বেহেশত দেখতে পাওয়ার বিপরীত অর্থবােধক। বস্তুত স্বপ্নযােগে জাহান্নাম দেখতে পাওয়া ধ্বংস ও বিপর্যয়ের নিদর্শন।
কাজেই জাহান্নাম দর্শনকারী ব্যক্তির অতিশীঘ্র তওবা-ইস্তিগফারে আত্মনিয়ােগ করা এবং আত্মশুদ্ধি ও সঙ্কর্মে ঝাপিয়ে পড়া উচিত। যদি দেখে জাহান্নামে ঢুকেছে বটে, কিন্তু তাতে তার কোন কষ্ট-যাতনা অনুভব হয়নি, এর ব্যাখ্যা হবে- যে পরিমাণ জাহান্নাম সে দেখতে পেয়েছে, তার সমপরিমাণ পার্থিব দুঃখ-কষ্টের সে শিকার হবে।
পার্থিব আগুন দর্শন করা ও স্বপ্নযােগে পার্থিব আগুন দেখতে পাওয়ার ব্যাখ্যা কয়েক প্রকারে দেয়া হয়। যেমন কেউ দেখল-অনুর্বর বিরান ভূমির কোন শহর, জনপদ কিংবা বাড়ীঘরে আগুন লেগেছে। আগুনের লেলিহান শিখা যেখানে পতিত হয়, তাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলে, তদুপরি তার বিকট আওয়াজ ও ভয়াবহ গর্জনও শুনতে পাওয়া যায়। এর ব্যাখ্যা হবে-যে পরিমাণ জায়গা অগ্নিশিখা বেষ্টন করে নিবে, সেখানটা যুলুম-নির্যাতনের তান্ডব গ্রাস করে নিবে।
কিন্তু জায়গাটা বিরানভূমি না হয়ে যদি উর্বর হয়, তাহলে সে অঞ্চলে মহামারী আকারে প্লেগ, বসন্ত, বক্ষব্যাধি ইত্যাদি রােগের কারণে মানুষের মৃত্যু হবে। আর আগুনে যদি ব্যাপ্তি ও শিখার প্রচণ্ডতা না থাকে, গর্জন শুনা না যায়, আবার কিছু দগ্ধ করে আর কিছু দগ্ধ না করে অক্ষত ছেড়ে দেয়, তাহলে এটা দ্বারা সেখানে রােগব্যাধি ও
সংকট-দুর্ঘটনা দেখা দেয়ার পদধ্বনি বুঝতে হবে।
স্বপ্নে যদি দেখা যায়- আকাশ থেকে অগ্নিশিখা নেমে এসেছে, কিন্তু কোন কিছু দগ্ধ করতে দেখা যায়নি, তাহলে এর পরিণতি ভয়াবহ এবং কঠিন সমস্যার ইঙ্গিতবাহী। বাকবিতন্ডা তীব্র আকার ধারণ করবে, বাকযুদ্ধ প্রচন্ড হবে।
অবশ্য তাতে কোন ক্ষতি হওয়ার আশংকা নেই। কিন্তু আগুনের মধ্যে যদি ধোয়া আছে বলে মনে হয়, তবে এটা সমস্যা সহজ ও শীতল হওয়ার অর্থবােধক। আর যদি যমীন থেকে অগ্নিশিখা আকাশপানে উঠে যেতে দেখা যায়, তাহলে এর ব্যাখ্যা হবে।
উক্ত স্থানের বাসিন্দারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অভিযােগ দাড় করিয়ে, জঘন্য অপবাদ দিয়ে নােংরা পাপাচারে লিপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে।
স্বপ্নে কেউ যদি আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পায় এবং সে ব্যক্তি নিজে কিংবা অন্য কোন লােক তাতে হাত-পা তাপিয়ে নিচ্ছে, তবে এর অর্থ হবেদর্শনকারী এমন ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে, যা দ্বারা তার উপকার হবে এবং তার অভাব-অনটন দূর হবে। কেননা, শীতলতা দারিদ্র্যের লক্ষণ আর উষ্ণতা গনীমতের মাল পাওয়ার ইঙ্গিতবাহী।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা অনুচ্ছেদ ও কিয়ামত বিষয়ক স্বপ্ন:
কেউ স্বপ্নে দেখল কিয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। এর ব্যাখ্যা যে স্থানে কিয়ামত কায়েম হয়েছে মর্মে সে দেখতে পেয়েছে, ব্যাপকহারে সেখানে ন্যায়-নীতি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে। সুতরাং সে অঞ্চলের বাসিন্দারা অত্যাচারী যালিম হলে আল্লাহ্ তাদের থেকে প্রতিশােধ গ্রহণ করবেন এবং তাদের যথাযােগ্য শাস্তির বিধান করবেন।
কেননা, কিয়ামতের দিন মূলত ও কার্যত মীমাংসা, ন্যায়-ইনসাফের বাস্তব অনুশীলন এবং প্রতিকার-প্রতিশােধ গ্রহণেরই নির্ধারিত অনুষ্ঠান। পক্ষান্তরে স্থানীয় বাসিন্দারা মযলুম ও নির্যাতিত জনগােষ্ঠী হলে তাদের প্রতি আল্লাহর সাহায্য নেমে আসবে। স্বপ্নযােগে কোন ব্যক্তি মহান আল্লাহর সামনে নিজেকে দন্ডায়মান দেখতে পেলে তার ব্যাপার বড় কঠোর ও কঠিন ধরে নিতে হবে।
বস্তুত এস্বপ্ন সত্য-সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা একশ’ ভাগ। কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা সম্পর্কে যে লােক কোন কিছু দেখতে পায়, তার অবস্থাও ঠিক একই ধরনের হবে।
অনুচ্ছেদ ও জান্নাত বিষয়ক স্বপ্ন ও জান্নাতে প্রবেশ করেছে মর্মে কেউ স্বপ্ন দেখল। এটা তার কৃত সৎকর্ম ও নেক আমলের সুসংবাদ। যার ইঙ্গিতে বুঝা যায় অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেউ যদি দেখতে পায় সে জান্নাতের ফল খেয়েছে অথবা কেউ তাকে জান্নাতের ফল দিয়েছে, তাহলে জান্নাতী ফলের অর্থ মধুর বচন, সুমিষ্ট কথা। যেহেতু সত্য, ন্যায় ও উত্তম কথা আলােচ্য ফলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থ বহন করে।
কিন্তু যদি দেখে জান্নাতী ফল লাভ তাে করেছে, অথচ তা থেকে সে কিছুই খায়নি অথবা খেতে সক্ষম হয়নি, তাহলে ব্যাখ্যা হবে-তার দ্বীনী বিষয়ে কল্যাণ নিহিত আছে সত্য, কিন্তু এ দ্বারা তার ব্যক্তিগত কোন উপকার সাধিত হবে না। কোন কোন সময় এ দ্বারা ইলম ও হিকমত অর্জনের ব্যাখ্যা দেয়া হয়, যা দ্বারা তার পক্ষে উপকার লাভ করা সম্ভব হবে না।
কেউ স্বপ্ন দেখল, সে জান্নাতী ঝর্ণাধারা থেকে পানি পান করেছে অথবা জান্নাতী পােশাক পরিধান করেছে। এমতাবস্থায় ব্যাখ্যা হবে-দুনিয়া ও আখেরাতে সে আশানুরূপ কল্যাণ হাসিল করতে সমর্থ হবে। অধিকন্তু তাকওয়া-পরহেযগারীর পুরস্কারস্বরূপ তার উদ্দেশ্য পূরণ হবে।
আর যদি জান্নাতের সুশােভিত বাগ-বাগিচা, প্রবহমান ঝর্ণাধারা এবং হুর-বালা দেখতে পায়, তাহলে ব্যাখ্যা হবে-ইহকাল ও পরকালে সে কল্যাণ, তাকওয়া-পরহেযগারী এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে ধন্য হবে। অধিকন্তু তার স্বপ্ন দেখা অনুগ্রহের সমপরিমাণ পার্থিব নেয়ামত হাসিল করা তার জন্য সহজসাধ্য হবে।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা করল। ঘটনা শুনে তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল এবং আপন হাতে পেট চেপে ধরে তিনি দাড়িয়ে গেলেন। অবস্থাদৃষ্টে তার বােন জিজ্ঞেস করল, ব্যাপার কি ! সহসা আপনার চেহারায় বিবর্ণতার চিহ্ন কেন ? উত্তরে তিনি বললেন: এরূপ কেন হবে? এ মহিলার বিবরণ দ্বারা বুঝা যায়, সাত দিন পরই আমি কবরবাসী হব। সুতরাং সপ্তম দিনেই তাকে কবরে দাফন করা হয়। আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন।
হাদীস অনুযায়ী স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার নিয়ম
ঘটনা: বর্ণিত আছে-এক ব্যক্তি হযরত জাফর সাদেক (রহঃ)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আরয করল, স্বপ্নে নিজেকে আমি চাঁদের কণ্ঠলগ্ন অবস্থায় দেখতে পেয়েছি।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কি অবিবাহিত ? লােকটি বলল: জী-হ। ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বললেন: যুগশ্রেষ্ঠ অনুপম সুন্দরী এক নারীর সাথে সহসাই তােমার বিয়ে হবে। এরপর লােকটি দীর্ঘদিন নিরুদ্দেশ থাকে।
সহসা এক দিন উপস্থিত হয়ে লােকটি বলতে লাগল ও হুযূর! মদীনাবাসী এক নিরুপম সুন্দরী নারী আমি বিয়ে করেছি, সে তল্লাটে যার তুলনা নেই। কিন্তু গত রাতে স্বপ্নে দেখি আমি যেন চাদ কোলে তুলে নিয়েছি। ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বললেন : এ স্ত্রীর গর্ভজাত তােমার এক অনিন্দ্য সুন্দর পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে, রূপের ভুবনে যার কোন তুলনা নেই এবং বর্তমানে সে অন্তঃসত্ত্বা।
লােকটি বলল: হুযূর। ঘটনা তাই, আল্লাহ্র কসম, আমার স্ত্রী এখন গর্ভবতী। কিছু দিন পর বাস্তবে তাই হল, যে ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছিলেন। আল্লাহ্ তার প্রতি রহম করুন।
ঘটনা: বর্ণিত আছে—গর্ভাবস্থায় ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর জননী একবার স্বপ্নে দেখেন, তার দেহ থেকে বৃহস্পতি গ্রহটি বের হয়ে মিসর ভূখণ্ডে পতিত হয়েছে। অতঃপর উক্ত গ্রহের স্ফুলিঙ্গ দূর-দূরান্তের প্রতিটি নগর বন্দরে দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়েছে।
সুতরাং বাস্তবে দেখা গেল, ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর জ্ঞানের আলাে এবং তার মাযহাবের মর্মকথা প্রতিটি জনপদে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং ইমাম শাফেঈ (রহঃ) জ্ঞান ও প্রজ্ঞাবলে মর্যাদার শীর্ষ আসনে অধিষ্ঠিত হন। ইমাম জাফর সাদেক (রহঃ) যার ইঙ্গিত করেছিলেন। তাঁদের সকলের প্রতি আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ বর্ষিত হােক।।
টীকা :
১. এ কিতাবের বর্ণনা ও ভাষ্য এতটুকুই। কিন্তু আসল ঘটনা হল-ইমাম শাফেঈর (রহঃ) জননী এক পর্যায়ে স্বপ্নের বৃত্তান্ত ইমাম জাফর সাদেকের (রহঃ) নিকট ব্যক্ত করেছিলেন। ঘটনা প্রবাহের আলােকে তাই প্রতীয়মান হয়। এর পরই তার এ ব্যাখ্যার অবতারণা। পরবর্তী পর্যায়ে বিষয়টি আলােচিত হবে। তদুপরি স্বয়ং বাক্যের ধারাবিন্যাস ও শব্দের গাঁথুনী দ্বারাও বিষয়টি স্পষ্টত বুঝা যায়। আসল ব্যাপার হল-পরবর্তী কোন নকল নবীসের অনুলিখন থেকে বাক্যের কিছু অংশ বাদ পড়ে গেছে, একথা জোর দিয়ে বলা যায়।
(উর্দু অনুবাদক)
স্বপ্নের ব্যাখ্যা তাই স্বপ্নে কেউ যদি তারকার মধ্যে কোন পরিবর্তন কিংবা কল্যাণকর কিছু দেখতে পায়, তাহলে এর অর্থ হবে-উক্ত শহর বা জনপদের অভিজাত ও শরীফ লােকদের মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটবে। মঙ্গলগ্রহ দেখতে পাওয়ার ব্যাখ্যা শাহী সেনানায়ক হয়ে থাকে। শনিগ্রহের অর্থ শাস্তিদাতা আর বৃহস্পতির অর্থ ধন-সম্পদের খাঞ্চী , আইন-শৃংখলা বিধানকর্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
আবার কোন সময় উচ্চমানের আলেম বুঝানাে হয়। যুহরা তারকা দ্বারা সম্রাজ্ঞী বা রাজরাণী আর বুধগ্রহ দ্বারা কেরানী ও সচিব অর্থ নেয়াটাই অধিকতর সামঞ্জস্যশীল। সুতরাং কেউ যদি স্বপ্ন দেখে সে বহু তারকা অথবা কয়েকটি তারকার মালিক হয়েছে, তাহলে এর অর্থ হবে-যে পরিমাণ তারকা সে দেখতে পেয়েছে তার সমপরিমাণ কুলীন-অকুলীন লােকের উপর সে শাসন ক্ষমতা লাভ করবে।
কেউ স্বপ্নে দেখল, সে তারকারাজির দেখা-শােনা ও তত্ত্বাবধান কর্মে নিয়ােজিত, তাহলে সে মানুষের সমস্যা সমাধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে। কেউ স্বপ্নে দেখল, আকাশের সকল গহপুঞ্জ অথবা তার কিছু সংখ্যক সে খেয়ে ফেলছে। এর ব্যাখ্যা হবে- সে ব্যক্তি সম্ভ্রান্ত লােকদের টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করছে। কেউ যদি আকাশের গ্রহরাজি একত্র অবস্থায় দেখতে পায়, এর অর্থ হবে- শরীফ লােকদের সমস্যা সমাধানকল্পে সে প্রচেষ্টা চালাবে।
তারকারাজির আকাশ থেকে যমীনে পতিত হওয়া অকুস্থলে আযাব ও গযব নাযিল হওয়ার নিদর্শন। নিজ হাতে কেউ আকাশের তারা গ্রহণ করা তার সুপুত্র লাভের বার্তা। আকাশ থেকে তারকার পতন দেখতে পেলে দর্শনকারী ধনী হলে দারিদ্র্যের কবলে পতিত হবে আর গরীব হলে শহীদী মৃত্যু বরণ করবে।
কেউ যদি পশ্চাদগামী একটি তারকা দেখতে পায়, এটা তার জন্য অশুভ লক্ষণ। কেউ স্বপ্নে দেখল, আকাশ তাকে চক্রাকারে আবর্তনের শিকার বানিয়েছে। এটা তার বিদেশ ভ্রমণের আগাম সংবাদ।
আলােচ্য পরিচ্ছেদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কয়েকটি ঘটনা। ঘটনা: বর্ণিত আছে-জনৈকা মহিলা একবার মুহাম্মদ ইবনে সীরীন (রহঃ) -এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল, আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি। তিনি বললেন, শুনাও।
মহিলা বলল, আপনি খাওয়া শেষ করুন, তারপর শুনাব। আহার শেষ করে তিনি বললেন: এখন শুনাও কি দেখেছ। স্ত্রীলােকটি বলতে লাগল- স্বপ্নে চাদকে আমি দেখতে পেলাম সপ্তর্ষিমণ্ডলস্থ সুরাইয়া তারকার অন্তরে ঢুকে পড়েছে। আর কে যেন পিছন থেকে আমাকে ডেকে বলছে- হে নারী! মুহাম্মদ ইবনে সীরীনের নিকট গিয়ে তাকে এর বৃত্তান্ত শুনাও। তিনি মহিলাটির হাতে আঁকুনি দিয়ে বললেন: কি দেখেছ আবার বল।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা কিভাবে করতে হয়
স্বপ্নের ব্যাখ্যা ঢেকে ফেলেছে, তাহলে অর্থ হবে-হয় সে নিজে রােগাক্রান্ত হবে, না হয় রাষ্ট্র কিংবা মাতা-পিতার কোন একজনের ব্যাপারে দুশ্চিন্তার শিকার হবে।
ঘটনা ও বর্ণিত আছে- এক ব্যক্তি হযরত জাফর সাদেক (রহঃ)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আরয করল: আমি স্বপ্নে দেখি আমার দেহে সূর্যোদয় ঘটেছে। তিনি ব্যাখ্যা দিলেন, রাষ্ট্র অথবা বাদশাহর পক্ষ হতে তুমি উচ্চতর সম্মান পাবে- সাথে পার্থিব বস্তু সামগ্রীও।
অপর এক ব্যক্তি এসে বলল: আমি স্বপ্নে দেখেছি আমার দুই পায়ে সূর্য উদিত হয়েছে- দেহের অন্য কোন অঙ্গে নয়। এর ব্যাখ্যায় তিনি বললেন: তুমি যেখানেই যাবে, যে যে স্থানে তােমার পদচারণা ঘটবে রুজি-রােযগার হিসাবে তুমি গম, খেজুর এবং ভূমি থেকে উৎপন্ন শস্য প্রচুর পরিমাণে পেয়ে যাবে, যেগুলাে দ্বারা তােমার উপকার সাধিত হবে। আর এসব পাবে তুমি সমকালীন শাসকের পক্ষ হতে।
অনুচ্ছেদ: চাঁদ দেখা: চাঁদের তা'বীর কখনাে মন্ত্রী-মিনিস্টার, কোন সময় স্ত্রী অথবা সুন্দর-সুশ্রী পুত্র দ্বারা করা হয়।
কেউ স্বপ্নে দেখল, সে চাদের মালিক হয়েছে অথবা চাদ আয়ত্ত করেছে, সে মন্ত্রিত্ব লাভ করবে। যদি দেখতে পায় চাঁদে গ্রহণ লেগেছে অথবা চাদ লােহিত বর্ণ ধারণ করেছে কিংবা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে, তাহলে এটা যার বা যে জিনিসের সাথে চাঁদ সম্পৃক্ত হবে, তার মধ্যে সে পরিবর্তন বা ত্রুটি দেখা দেয়ার লক্ষণ।
কেউ কোন তারকা দেখতে পেলে অর্থ হবে-মন্ত্রী অথবা কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষ হতে সে বিশেষ সম্মানে ভূষিত হবে।
বলা বাহুল্য, স্বপ্নে কোন কোন সময় অপ্রিয় বিষয়বস্তুও দেখতে পাওয়া যায়।
কেননা, চাঁদ দেখা সময়ে কার্যত গণক ও জ্যোতিষের প্রতিও ইঙ্গিত দেয়। কেউ স্বপ্নে দেখল, চাঁদ তার কোলে এসে গেছে এবং সে এটাকে হাতে তুলে নিয়েছে, এ দ্বারা ইঙ্গিত হল তার ঘরে পুত্র জন্ম নিবে এবং সে ছেলে পিতার জন্যে কল্যাণ বয়ে আনবে।
নিজের ঘরে কিংবা বিছানায় চাদ দেখতে পেলে স্বপ্নে চাঁদের যে পরিমাণ কিরণ দেখতে পেল, তার সমতুল্যের সুন্দরী স্ত্রী সে লাভ করবে। পক্ষান্তরে দর্শনকারী লােকটি মহিলা হলে সুন্দর-সুশ্রী পুরুষের সাথে তার বিয়ে হবে।
কেউ স্বপ্নে দেখল (প্রথম রাতের) চাদ তার উদয়স্থলে উঠেছে বটে, কিন্তু দিনটি মাসের প্রথম তারিখ ছিল না, তাহলে ব্যাখ্যা হবে সরকারের প্রশাসনিক কোন দায়িত্ব সে পালন করবে বা তার ঘরে সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে, পালিয়ে যাওয়া লােক ফিরে আসবে অথবা নতুন কোন সমস্যা দেখা দিবে। অনুচ্ছেদ ও তারকার ব্যাখ্যায় সাধারণত শরীফ লােক বুঝানাে হয়ে থাকে।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা মিনারা ও স্বপ্নযােগে কেউ দেখতে পেল মসজিদের মিনারা ভেঙ্গে পড়েছে, এটা স্থানীয় লােকজনের বিভিন্ন মাযহাবে বিভক্ত হয়ে পড়ার নিদর্শন। কেউ স্বপ্নে দেখল সে আযান দিয়েছে বটে, কিন্তু সম্পূর্ণ করতে পারেনি, অথচ ব্যক্তি হিসাবে সে ন্যায় ও সত্যপরায়ণ, অধিকন্তু তার এ আযান দেয়া হয়েছে হজ্জের মাসগুলােতে, এমতাবস্থায় সে হজ্জের সফরে যাবে ঠিক, কিন্তু হজ্জ সম্পাদন তার পক্ষে সম্ভব হবে না।
তার আযান যদি হজ্জের মওসুম ব্যতীত ভিন্ন সময় দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে এর অর্থ হবে, সে চুরি করবে। আর এ চুরি দ্বারা তার বৈষয়িক কোন উপকার হবে না। অথচ চোর হিসাবে তার দুর্নাম লােক সমাজে ছড়িয়ে পড়বে।
কেউ স্বপ্নে দেখল- সে মসজিদ নির্মাণ করেছে। এর ব্যাখ্যা হবে একদল লােকের সাথে সে কোন কল্যাণমূলক কাজে ভূমিকা পালন করবে অথবা কারাে বিয়ে সম্পাদন কর্মে সে শরীক থাকবে। এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল-সে এমন ভাষায় আযান দিচ্ছে, যে ভাষা তার অজ্ঞাত। এর অর্থ, সে একজন পাকা চোর।
এক লােক স্বপ্নে দেখল-সে হাঁচি দিয়েছে এবং এর জবাবে “ইয়ারহামুকাল্লাহ্” বলা হয়েছে। এটা তার জন্য হজ্জ ও উমরা করার সুসংবাদ। কেউ স্বপ্নে দেখল- সে মাথা মুণ্ডন করেছে। স্বপ্ন যদি হজ্জের মওসুমে হয়, তাহলে সে হজ্জে গমন করবে। কিন্তু সময়টা হজ্জ মওসুম না হলে অর্থ হবে, তার মূলধন শেষ হয়ে যাবে। এর বিস্তারিত বর্ণনা ইনশাআল্লাহ্ পরে যথাস্থানে প্রদত্ত হবে।
কেউ স্বপ্নে দেখল, মিম্বরে দাড়িয়ে সে ওয়ায করছে। সে যদি এর যােগ্য লােক হয়, তবে সেটি তার বুযুর্গী ও শাসন ক্ষমতা লাভের নিদর্শন। কিন্তু সে ওয়াযের যােগ্য না হলে তার মৃত্যুদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘটনা: বর্ণিত আছে- এক ব্যক্তি মুহাম্মদ ইবনে সীরীন (রহঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বিবরণ দিল-স্বপ্নে আমি আযান দিতে দেখতে পেয়েছি। এর ব্যাখ্যায় তিনি বললেন: তােমার দুই হাত কাটা যাবে।
লােকটি এখনাে মজলিস ত্যাগ করেনি, ইত্যবসরে দ্বিতীয় এক লােক হাজির হয়ে একই স্বপ্ন ব্যক্ত করল: হযরত! স্বপ্নে দেখলাম, আমি আযান দিচ্ছি। ব্যাখ্যায় তিনি বললেন ঃ তুমি হজ্জ করবে। উপস্থিত লােকেরা প্রশ্ন করল ঃ হুযূর! স্বপ্ন তাে একই, তাহলে এই পার্থক্যের রহস্য কি?
উত্তরে তিনি বললেন: প্রথম লােকটিকে দেখে মনে হল, তার চেহারায়
এ
ثم أن مؤتي ايتها العير ام لسارقون
(অতঃপর একজন ঘােষক ডেকে বলল ঃ হে কাফেলার লােকজন! অবশ্যই তােমরা চোর। সূরা ইউসুফ ৪ আয়াত ৭০)-এর আলােকে তা'বীর দিয়েছি।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ — Shopner Bekkha
স্বপ্নযােগে আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজি, কিয়ামত অনুষ্ঠান,
জান্নাত, জাহান্নাম, আগুন ইত্যাদি দেখা এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল, সে আকাশে উঠে গেছে এবং তার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এর ব্যাখ্যা হবে-সে শাহাদতের মর্যাদা লাভ করবে, আল্লাহর নৈকট্যশীল মর্যাদায় ভূষিত হবে, অনায়াসে পুলসিরাত অতিক্রম করবে, তদুপরি লােক সমাজে তার সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। কেউ স্বপ্নে দেখল, সে আকাশে বিরাজমান এবং সেখানে অবস্থান করছে, কিন্তু কখন উঠেছে সে কথা মনে নেই।
এর ব্যাখ্যা হবে প্রথমত পার্থিব জীবনে সে সম্মানের অধিকারী হবে। অতঃপর শাহাদতের মর্যাদা লাভে ধন্য হবে। | সূর্য দর্শন ও সূর্য দেখার ব্যাখ্যা কোন সময় রাজত্ব, কোন সময় পিতা-মাতার মধ্য হতে কোন একজনের সাথে সম্পর্ক। কেউ স্বপ্নে দেখল সূর্যকে সে ধরে ফেলেছে এবং সূর্য তার পূর্ণ আয়ত্তে এসে গেছে। এর ব্যাখ্যা হল-এর আলাে যদি পরিষ্কার উজ্জ্বল হয় এবং তার সাথে কিরণের প্রখরতা তীব্র থাকে, তাহলে সূর্যের যে পরিমাণ অংশ সে ধারণ করেছে, সে অনুপাতে সে রাজত্বের অধিকারী হবে।
আর সূর্য কিরণের ন্যায় কোন জিনিস যদি কেউ দেখতে পায় এবং তার জ্যোতি দর্শনকারীর উপর প্রতিফলিত হয়েছে বলে অনুভব করে, তাহলে অর্থ হবে-সে ব্যক্তি বিশাল সাম্রাজ্যের শাসন ক্ষমতা লাভ করবে। অনুরূপ সূর্যগ্রহণ, কোন পরিবর্তন অথবা তার মধ্যে কোন ত্রুটি দেখতে পেলে তার প্রভাব হয় দেশে কিংবা অঞ্চলে অথবা পিতা-মাতার কোন একজনের উপর প্রতিফলিত হবে।
কিন্তু একই স্বপ্নের লক্ষণে যদি বুঝে আসে দেশ ও জাতির মধ্যে পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা নেই, তাহলে এ পরিবর্তন তার পিতা-মাতার কোন একজনের মধ্যে সাধিত হবে। কেউ স্বপ্নে দেখল সূর্যের সাথে সে ঝগড়া করেছে, এর অর্থ হবে তার দেশে বিবাদ শুরু হবে অথবা পিতা-মাতার কোন একজনের সাথে তার বিবাদের কারণ ঘটবে।
কেউ স্বপ্নে দেখল, তার নিজ ঘরে সূর্য উদিত হয়েছে। এর ব্যাখ্যা হলঅবিবাহিত হলে সে বিয়ে করবে আর বিবাহিত হলে রাষ্ট্রের পক্ষ হতে উচ্চতর সম্মানে ভূষিত এবং প্রাচুর্যের অধিকারী হবে।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে তার আপত্তি অথবা সন্দেহ রয়েছে। কেউ স্বপ্নে দেখল কেবলার বিপরীতমুখী হয়ে নামায পড়েছে। অর্থ হবে-সে যেন কদরিয়া (তথা ভ্রান্ত কোন মতবাদের অনুসারী) হয়ে গেল। আর যদি দেখতে পায় পশ্চিমমুখী হয়ে নামায আদায় করেছে, তাহলে এটা তার জবরিয়া সম্প্রদায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ার নিদর্শন।
কেননা, পূর্বদিক নাসারা তথা খৃস্টানদের কেবলা আর পশ্চিমদিক ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের। অনুরূপ কেউ স্বপ্নযােগে দেখতে পেল- সে ইয়াহুদী, খৃস্টান কিংবা অগ্নিপূজকে পরিণত হয়েছে। এর ব্যাখ্যা হল-সে তাদের প্রিয়ভাজন হবে এবং তাদের বিপদে দ্রুত এগিয়ে যাবে। কেউ দেখতে পেল, সে মূর্তিপূজায় লিপ্ত আছে। এর অর্থ হলসে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরােপ করবে এবং মিথ্যা ও ভ্রষ্টতার কথা বলে বেড়াবে।
তদুপরি সে ব্যক্তির মদ্যপানে অভ্যস্ত হওয়া এবং পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। উপাস্য মূর্তিটি রূপার তৈরী হলে হয়তাে সে পাপকর্মের নিকটবর্তী হয়ে পড়বে অথবা কোন নারী সম্পর্কে মিথ্যা রটনায় জড়িয়ে যাবে।
মূর্তিটি সােনার তৈরী হলে নিজের জন্যে ক্ষতিকর, অপসন্দনীয় বিষয়ের সম্মুখীন হবে। মূর্তিটি কাঠের তৈরী হলে সে দ্বীনের দৃষ্টিকোণ থেকে পাপাচারী লােকের সুহৃদ ও অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে ঘনিষ্ঠ হবে। কিন্তু মূর্তিটি যদি লােহা কিংবা তামার তৈরী দেখতে পায়, তাহলে এটা তার দুনিয়া-অন্বেষী হওয়ার নিদর্শন। | কেউ স্বপ্নে দেখল, সে অগ্নিপূজায় লিপ্ত আছে। এটা তার দ্বীনী ব্যাপারে শয়তানের প্ররােচনা ও অবৈধ হস্তক্ষেপ দেখতে পাওয়ার আলামত।
উপাস্য আগুনে যদি শিখা না থাকে, বরং স্বাভাবিক হয়, তাহলে সে অবৈধ সম্পদ ও হারাম মাল অন্বেষণকারী হবে। কেউ স্বপ্নে দেখল, সে লােকদের ইমামতির দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু যদি তার কেবলা সঠিক থাকে, তাহলে ব্যাখ্যা হবে-সে ব্যক্তি একদল লােকের অধিনায়ক বা আমীর নিযুক্ত হবে এবং অধীনস্থদের প্রতি ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু কেবলা যদি ঠিক না থাকে, তবে শাসন আমলে অধীন লােকদের উপর সে যুলুম-নির্যাতন চালাবে।
স্বপ্নের ব্যাখ্যা নিয়ম
অনুচ্ছেদ: আযান বিষয়ক স্বপ্ন: হজ্জের মওসুমে কেউ স্বপ্নে আযান শুনতে পেল, এটা তার হজ্জ আদায় করার আলামত। কোন সময় এর অর্থ আবার এটাও হতে পারে-দ্বীনের ব্যাপারে তার উন্নতি ও বুযুর্গী হাসিল হবে। কিন্তু হজ্জের মাসগুলাে ছাড়া অন্য সময় যদি আযান শুনতে পায় অথবা স্বপ্নের মধ্যে সব সময়, সকল মওসুমে এবং পথে-ঘাটে আযান হচ্ছে মর্মে যদি আওয়াজ শুনতে পায়, তাহলে এটা লােকের মধ্যে সঠিক ও সুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পূর্ব-লক্ষণ।


