আরব্য রজনী pdf | sahasra ek arabya rajani pdf | সহস্র এক আরব্য রজনী | Arabya Rajani Adult Book

0
    আরব্য রজনী pdf  হলো সহস্র এক আরব্য রজনী ১, সহস্র এক আরব্য রজনী ২ বইয়ের সমন্বয়ে অখন্ড Arabya rajani adult book. যেখানে আরব দেশের কল্পকাহিনীকে বিশ্ব দরবারে হাজির করা হয়েছে। আব্বাসীয় খলিফা হারুন অর রশিদকে কেন্দ্র করে আরব্য রজনী pdf বইটি লেখা হয়েছে। 

    আরব্য রজনী pdf

    অনেক, অনেক দিন আগে আরব্য রজনী pdf বইয়ের এক গল্পে এক নদীর ধারে বাস করত এক ধনী চাষি। বিরাট বিশাল ফসলের ক্ষেতের মালিক ছিল সে। আর ছিল অনেক মেষ-ছাগল ইত্যাদি পশু। 

    একটা গাধা আর একটা বলদও ছিল তার। একদিন বলদটা গােয়ালে ঢুকে দেখে, যবের ভূষি মাখানাে জাবনা খেয়ে পেটটা টাই করে, বিচালি পাতা গদির উপর শুয়ে দিব্যি নাক ডাকাচ্ছে গাধা। তেমন কোনাে কাজ নেই গাধাটার। রােজ তার পিঠে চড়ে খামারের চারপাশে একবার চক্কর দিয়ে আসে মনিব, তারপরেই গাধার ছুটি। এরপর সারা দিন- আরব্য রজনী শুধু খাওয়া আর ঘুম। বলদ ঘরে ঢুকতেই সাড়া পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল গাধার । দুঃখ করে বলদ বলল, কী সুখেই-না আছ তুমি, ভাই । খাচ্ছ দাচ্ছ আর ঘুম আর খাও কী ভালাে ভালাে। এমন জিনিস চোখে দেখার ভাগিও আমাদের নেই। এই সময় গােয়ালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল মনিব । পশু-পাখির ভাষা বুঝত সে। এক আরব্য জিনের কাছে শিখেছিল। এ সব কথা কাউকে না জানাতে নিষেধ করে দিয়েছিল সেই আরব্য জিন । বলেছিল, অন্য কাউকে বলার সাথে সাথে মৃত্যু ঘটবে মনিবের। যাই হােক, বলদের কথা কানে যেতেই বাইরে বেড়ার আড়ালে কান পেতে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে পড়ল সে।
    Arabya Rajani Pdf
    বলদ বলছে, আমার মতাে তােমাকে খেটে খেতে হয় না, ভাই। সারাদিন খেটে খেটে দেখাে না কেমন হাড় জিরজিরে অবস্থা হয়েছে আমার । আর তােমার শরীরে যেন তেল চুইয়ে পড়ছে। তােমার তাে সকালে শুধু একটুখানি কাজ। মনিবকে পিঠে নিয়ে ক্ষেতের চারপাশে ঘােরা। আর সেই ভােরে আমার কাঁধে যে জোয়াল চাপে, সাঁঝের আগে আর নামে না।
    বলদের কথা শুনে গাধার খুব দুঃখ হল । বলল, শােন, এক ফন্দি শিখিয়ে দিই তােমাকে। কাল সকালে চাকরটা তােমাকে নিয়ে যেতে এলে কিছুতেই যাবে না । খুব মারবে তােমাকে ব্যাটা। তা মারুক। উঠবে না তুমি। শেষে জোরাজুরি করে যদি নিয়ে যায়ও, মাঠে গিয়ে কিছুতেই ঘাড়ে জোয়াল চাপাতে দেবে না। হয়তাে জোর করেই চাপাবে । ব্যস, দু-এক পা এগিয়েই ধপাস করে মাটিতে পড়ে যাবে। নিশ্চয়ই আবার মার খাবে । সহ্য করে যাবে, কিন্তু মাটি থেকে উঠবে না । ওরা ভাববে তােমার অসুখ-বিসুখ করেছে। ছুটি দিয়ে দেবে তােমাকে।
    কান পেতে বলদ আর গাধার সব কথাই শুনল মালিক।

    পরদিন সকালে গাধার কথামতাে অভিনয় করে গেল বলদ। অনেক মার খেল, কিন্তু তাকে দিয়ে জোয়াল বাওয়াতে পারল না কোন আরব্য চাকর।
    বলদের কাজ কারবার সবই দেখল মনিব । মুচকি হাসল । আরব্য চাকরকে বলল, বলদটার বােধহয় অসুখ করেছে। এক কাজ কর, ওটাকে গােয়ালে রেখে গাধাটাকে দিয়ে জোয়াল বাওয়া। গাধাটাকে এনে জোয়াল পরাল চাকর। সারাদিন ঠাঠা রােদে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটাল সে গাধাকে দিয়ে। দিনের শেষে ক্লান্ত, অবসন্ন দেহে গােয়ালে ফিরে এল গাধা।
    দোয়া করল বলদ, আল্লাহ তােমার ভালাে করবেন, ভাই। তােমার বুদ্ধিতেই একটু সুখের মুখ দেখলাম আজ। কোনাে কথা বলল না গাধা। গম্ভীর হয়ে রইল। মনে মনে পস্তাচ্ছে। নিজের বােকামির জন্যই এই নিদারুণ কষ্টে পড়েছে।


    PDF পড়তে নিচে যান

    পরদিন সকালে এসে আবার গাধাটাকে ধরে নিয়ে গেল সেই আরব্য রজনী গল্পের চাকর। হালে জুড়ল। কড়া রােদে আবার সারাদিন সেই হাড়ভাঙা খাটুনি। অভ্যেস নেই। অসহ্য ব্যথা হয়ে গেল সারা শরীরে, জোয়ালের ঘষায় ঘাড়ের ছাল উঠে গেল। ক্ষোভে-দুঃখে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এল গাধার । মনে মনে আবার ফন্দি আঁটতে আঁটতে দিনের শেষে গােয়ালে এসে ঢুকল সে ।।
    গােয়ালে ঢুকেই আগের দিনের মতাে কোনাে কথা না বলে খেয়েদেয়ে আরব্য রজনীতে চুপটি করে গিয়ে শুয়ে পড়ল গাধা।

    মুখ বাড়িয়ে ডাকল বলদ, আরে, গাধা ভাই, এসেই শুয়ে পড়লে যে? এস না একটু গল্পসল্প করি...
    দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল গাধা, কী আর গল্প করব রে, ভাই । কাল থেকে তাে আর তােমাকে পাব না। যা শুনলাম আজ... 

    কী, কী শুনলে? আঁতকে উঠে বলল বলদ। আমাকে জবাই-টবাই করে ফেলবে তাে আবার...কী শুনেছ বল না, ভাই! বেচে দেব এক আরবের কসাইয়ের কাছে। আরব্য রজনীর চাকরকে ডেকে বলছিল মনিব, বলদটা বােধহয় বাঁচবে না। মরে গেলে অনেকগুলাে টাকা লােকসান যাবে। তারচেয়ে কসাইয়ের কাছেই বেচে দিই। মােটা তাগড়া আছে এখনও, বেশ ভালােই দাম পাওয়া যাবে। চাকরটাকে বােধহয় এতক্ষণে কসাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে মনিব । কালই আসবে কসাই। খবরটা মুখ ফুটে কী করে যে বলব তােমাকে, ভাবছিলাম...

    বলে আমার কী যে উপকার করেছ তুমি, ভাই, কৃতজ্ঞতায় গদগদ হয়ে উঠল বলদ। তােমাকে যে কী বলে শুকরিয়া জানাব। কাল সকালে চাকরটা এলেই লাফিয়ে উঠে দাঁড়াব। বােঝাব, অসুখ-টসুখ কিছু নেই আমার। একেবারে ভালাে হয়ে গেছি।
    বেড়ার বাইরে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনল মালিক আজও। সে তাে হেসেই বাঁচে না। হাসতে হাসতে নিজের ঘরে এসে ঢুকল সে।

    আরব্য রজনী pdf বইয়ের এক গল্পে স্বামীকে এমন নিজে নিজে হাসতে দেখে অবাক হল তার বৌ । জিজ্ঞেস করল, তােমার হল কী গাে? এমন একা একা হাসছ যে? পাগল-টাগল হয়ে যাওনি তাে।
    আরে না না, পাগল হব কেন? একটা দারুণ মজার ব্যাপার ঘটেছে। শুনলে তুমি হাসতে হাসতেই মরবে। বলেই জিনের কথা মনে পড়ল লােকটার। বৌকে যদি এখন "ধা আর গরুর কথা বলে, বৌ জানতে চাইবে তার স্বামী ভাষা বুঝল কী করে। এক কথা দু’কথায় সব কথা বলতে হবে তখন বৌকে । নইলে তার যা বৌ, কোনােমতেই ছাড়বে না। সাবধান হয়ে গেল স্বামী। কী কাণ্ড ঘটেছে, বার বার স্বামীর কাছে জানতে মইল বৌ । কিন্তু স্বামীর সেই এক জবাব । শুনলে তুমি হাসতে হাসতে মরে যাবে।

    এটা কোনাে কথা হল? আরব্য রজনীর সেই বৌ ভাবল, আসলে তাকে নিয়েই কোনাে কারণে হেসেছে তার স্বামী, এখন ভয় পেয়ে গিয়ে আর বলতে চাইছে না। কথাটা মনে হতেই রেগে আগুন হয়ে গেল বৌ। ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদুনি গাইতে লাগল, তুমি আমাকে দেখে। হাসছ। আমাকে ঠাট্টা করছ। আমাকে কেন আর তােমার ভালাে লাগে না। গলায় দড়ি দেব আমি। কুয়ােয় লাফিয়ে মরব। অনেক করে বােঝাতে লাগল চাষি বিশ্বাস করো তােমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছি না আমি। খােদার কসম, অন্য কারণ তাছে। তােমাকে সব বললে হাসতে হাসতেই মরে যাবে, এই ভয়ে শুধু বলছি না। বুড়াে হয়ে গেছি আমরা। তােমাকে নিয়ে একশাে কুড়ি বছর ঘর করেছি। তুমি আমার চাচার মেয়ে, আমার ছেলেমেয়েদের মা, আমার আদরের বিবিজান । প্রাণ দিয়ে তােমাকে ভালােবাসি। আমার কলিজা তুমি ।

    কিন্তু কার কথা কে শােনে? চাষির বৌয়ের একই কথা, তাকে নিয়ে হাসছে তার স্বামী। শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বলল চাষি, না শুনে যখন ছাড়বেই না, তাে কী আর করব! এক কাজ কর, মৌলভিদের খবর দাও। পাড়াপড়শিদের ডাকো। তাদের সামনেই বলব সব কথা । শেষে আবার খুনের দায়ে পড়তে চাই না।

    ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শি, মৌলানা-মৌলভিরা অনেক করে বােঝাল আরব্য বৌটাকে : তােমার স্বামী এই বুড়াে বয়েসে তােমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে যাবে কেন? আর তা ছাড়া তুমি যদি সত্যিই হাসতে হাসতে মরে যাও, এতবড় সংসার, হলাে ছেলেমেয়ে কে দেখাশােনা করবে? তােমার স্বামী বুড়াে মানুষ, একা সামলে উঠতে পারবে না। কিন্তু আরব্য রজনী গল্পের সে চাষির বৌয়ের সেই এক গো। সব না শুনে সে ছাড়বে না। কথা শুনে হাসতে হাসতে আবার মারা যায় নাকি লােকে? সব মিথ্যে কথা। আসলে তাকে নিয়েই হাসছে তার স্বামী।

    আরব্য চাষি বেচারা শেষে লোক ডেকে আগে থেকেই বৌয়ের জন্য একটা কবর খোঁড়াল। মনে তার ভরি দুঃখ । তার আদরের বৌটা শেষকালে তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

    বিশাল এক তাগড়া মােরগ ছিল মালিকের। মােরগটার হারেমে পঞ্চাশটা মুরগি। পরিবারের সবাই বেশ হাসিখুশি। মােরগের বিরুদ্ধে কোনাে অভিযােগ নেই মুরগিদের । পঞ্চাশ বৌকে নিয়ে বেশ সুখে নেচেকুঁদে বেড়ায় মােরগ, খায়-দায়-ঘুমােয়। মনিবের দুঃখের খোঁজ রাখে না।

    মােরগের এই ব্যবহারে খেপে গেল চাষির কুকুরটা। রেগে গিয়ে বলল, তুমি কেমন মােরগ হে? এদিকে শােকে দুঃখে মালিকের আমাদের খাওয়া-ঘুম হারাম হয়ে গেছে । আর তুমি তারই খেয়ে তারই পরে, বৌ নিয়ে নাচছ। বলি লজ্জা-শরম বলেও তাে কিছু একটা থাকতে হয়।

    আরব্য রজনী pdf বইয়ের সে কুকুরের বকাবকিতে অবাক হল মােরগ। কুকুরকে বলল, তাই তাে ভাই, কী হয়েছে আমাদের মনিবের? জানি না তাে! একটু খুলে বল না । চুপচাপ কুকুরের মুখে সব শুনল মােরগ । তারপর বলল, ও, এই কথা? এর জন্য মন এত খারাপ মনিবের? আসলে বেশি সাদাসিধে লােক তিনি। নইলে একটা বৌকে বাগ মানাতে পারেন না। আর আমি দেখাে না, পঞ্চাশটা মুরগিকে কবজা করে রেখেছি। কারাে কোনাে অভিযােগ, কোনাে গােলমাল নেই । এখন মনিব জামের ডাল দিয়ে আচ্ছা কয়েক ঘা যদি লাগাতে পারেন মনিবানিকে, দেখাে, সব ঠিক হয়ে যাবে ।

    কাছেই বসেছিল চাষি। মােরগের কথা কানে যেতেই হুঁশ হল তার । আরে, তাই তাে! মােরগটা তাে মন্দ বলেনি । ঘরে ঢুকে বৌকে বলল, তুমি আমার ঘরে যাও। কেন হেসেছি, সব বলব । বলেই বাগানের দিকে চলে গেল সে।

    মােটা দেখে একটা জামের ডাল ভেঙে লাঠি বানিয়ে নিয়ে এল চাষি । নিজের ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে ছিটকিনি তুলে দিল। বৌয়ের কাছে এসে এক ঘুসিতে মাটিতে ফেলে দিল তাকে। তারপর জামের লাঠি দিয়ে পিটাতে লাগল।


    PDF পড়তে নিচে যান

    ওরে বাবারে! মেরে ফেলল রে! বাঁচাও রে! তােমার পায়ে পড়ি গাে! বলে সমানে চেঁচাতে লাগল বৌ । কিন্তু চাষি কানেও নিল না বৌয়ের চেঁচানি । পিটিয়েই চলল সে । আর সহ্য করতে পারছে না বৌ। শেষমেশ স্বামীর পা জড়িয়ে ধরে কাকুতি-মিনতি করতে লাগল । দোহাই তােমার! আমাকে আর মেরাে না। তােমার হাসির কারণ আর জানতে চাই না! শুধু আমাকে ছেড়ে দাও। আর মেরাে না! আর বেয়াড়াপনা করব না। আর করবি না তাে! মনে থাকবে? হাঁপাতে হাঁপাতে শাসাল চাষি।
    না, না করব না! দেখাে, আর করব না! মনে থাকে যেন! লাঠিটা হাত থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে দুপদাপ পা ফেলে ঘর, থেকে বেরিয়ে গেল চাষি।
    খানিক পরেই ঘর থেকে বেরিয়ে এল বৌটা।
    পাড়াপড়শি, লােকজনকে জানাল, সে আর কোনাে কথা শুনতে চায় না। স্বামীর প্রতি আর কোনাে সন্দেহ নেই তার। খুব খুশি সে । শুনে আর সবাইও খুশি। যার যার বাড়িতে ফিরে গেল তারা। এরপর আরও বহুকাল সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘর করেছিল দুজনে।
    সহস্র এক আরব্য রজনী : Sahasra Ek Arabya Rajani Pdf

    দুনিয়াজাদও এসে বসেছে বড় বােনের পাশ ঘেঁষে। সে-ও গল্পটা শুনেছে। উজিরের কথা শেষ হতেই বলে উঠল দুবােন, বাহ, চমৎকার তাে । হাসছে ওরা।

    আসলে গুছিয়ে বলতে পারলে, সব গল্পই ভালাে । গল্প শােনার নেশা সব মানুষেরই আছে, তবে শােনার মতাে করে বলতে পারা চাই, বলল উজির । শাহরাজাদকে বলল, কেন, গল্পটা বললাম বুঝতে পারছিস তাে, মা?

    ঘাত কাত করল শাহরাজাদ ! হ্যা, আব্বাজান। বুঝেছি। তুমি ওঠো, আর দেরি কোরাে না। বাদশাহর দরবারে নিয়ে চল আমাকে।
    মেয়েকে বিয়ের সাজে সাজতে বলে দরবারে চলে গেল উজির। শারিয়ারকে জানাল, কুমারী মেয়ে পাওয়া গেছে । ছােট বােনকে বুঝিয়ে বলল শাহরাজন। এক তের বেগম হতে চলেছি । আমি তােকে ডেকে পাঠাব। যাবি । আমার কাছে গুরু  রবি । দেখি, এরপর কিছু করতে পারি কিনা ।
    শারিয়ারের সঙ্গে শাহরাজাদের বিয়ে হয়ে গেল । বিয়ের সাজে অপূর্ব দেখাচ্ছে শাহরাজাদকে। কিন্তু তার রূপের দিকে চেয়েও দেখল না শারিয়ার । ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল। ফুপিয়ে কেঁদে উঠল শাহরাজাদ।

    সান্ত্বনা দেবার ভঙ্গিতে বলল শারিয়ার, আহাহা, কাঁদছ কেন, সুন্দরী? কী হয়েছে। বনশাহর বেগম হয়েছ, তােমার ভাবনা কী? বল কী চাই?
    ছােট্ট একটা বােন আছে আমার, জাঁহাপনা। একেবারেই ছেলেমানুষ। আমাকে হেড়ে কোনােদিন থাকেনি । আমার সঙ্গে ছাড়া ঘুমােয়নি। তাকে বড় দেখতে ইচ্ছে রেছে। তাকে পাশে নিয়ে ঘুমাতে মন চাইছে। ও এই কথা? এ আর এমন কী । এখনি লােক পাঠাচ্ছি, তােমার বােনকে নিয়ে আসবে, শারিয়ার বলল।

    খানিক পরেই এসে গেল আরব্য রজনী গল্পের দুনিয়াজাদ। বড় বােনকে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে লাগল । আদর করে, চুমু খেয়ে তাকে শান্ত করল শাহরাজাদ। বােনের গলা জড়িয়ে ধরে অবদারের সুরে বলল, আপা, আজ গল্প বলবে না? রােজ রাতেই তাে তােমার গল্প “ন। কী সুন্দর করেই-না বল, আপা, তুমি! বল না, আজও একটা বল না! আড়চোখে শারিয়ারের দিকে একবার তাকাল শাহরাজাদ । তাদের দুবােনের দিকেই তাকিয়ে আছে আরব্য রজনী pdf বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র শাহরিয়ার।

    Arabya Rajani Adult book 

    আরব্য রজনী সওদাগর আর আফ্রিদি দৈত্য

    আরবে এক সময়ে ছিল এক কোটিপতি সওদাগর। সে সময়ে তার সমান ধনী দুনিয়ায় আর কেউ ছিল না। একদিন, বাণিজ্যের কাজে ঘােড়ায় চেপে চলেছিল সে। দুপুর হয়ে এল । মাথার উপরে উঠে এসেছে সূর্য। মাঠে ঘাটে রােদের কী তেজ! এই সময় বিশাল এক বটগাছ দেখে তার ছায়ায় এসে বিশ্রাম নিতে বসল সওদাগর।
    খিদেও পেয়েছে সওদাগরের : "বার সঙ্গেই আছে। পুঁটুলি খুলে চাপাতি, সবজি আর ফল বের করে খেল সে । তৃপ্তির কুের তুলল। তারপর সামনেই এক পাহাড়ি ঝরনায় মুখ-হাত ধুতে চলল ।
    হাতমুখ ধুয়ে, পানি খেয়ে ফিরেই সার দেখে বিরাট এক আফ্রিদি দৈত্য দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাতে বিশাল শাণিত খড়গ কেক কাছে রােদে। হুঙ্কার ছাড়ল দৈত্য, উঠে দাঁড়াও। তােমাকে খুন করব আমি! ভয়ে কাঁপতে লাগল সওদাগর । জড়সড়াে হয়ে বলল, আ-আমার দোষ কী? 
    দোষ? আমার একমাত্র ছেলেকে হত্যা করেছ তুমি। আমি হত্যা করেছি? কী করে? ফল খেয়ে তার আঁটিটা ছুড়ে মেরেছিলে, গমগম করছে দৈত্যের গলা। তার আঘাতেই মারা গেছে আমার ধন । তােমাকে আমি রেহাই দেব না। প্রাণের বদলা প্রাণ আমি নেবই। হাতজোড় করে আবেদন করল সওদাগর, তুমি দানবদের রাজা । তােমার ছেলেকে হত্যা করার ধৃষ্টতা আমার নেই । বিশ্বাস কর, না জেনে মেরেছি। ঠিক আছে, অন্যায় যখন করেছি, তার শাস্তিও মাথা পেতেই নেব। তবে তােমার কাছে
    আমার একটা অনুরােধ আছে। আমাকে কিছুদিনের সময় দাও। একবার দেশে যাব । আমার যত সহায়-সম্পত্তি আছে, আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে তার একটা বলিব্যবস্থা করেই আবার ফিরে আসব । তখন আমাকে কোতল কোরাে তুমি। বিশ্বাস কর, জীবনে কখনও মিথ্যা কথা বলিনি আমি । জেনেশুনে কোনাে পাপ করি নি। আমার কথা রাখব আমি। বেশ যাও, বলে সওদাগরকে ছেড়ে দিল দৈত্য। কিন্তু কথা ঠিক থাকে যেন!
    দেশে ফিরে এক এক করে সব কাজ শেষ করল আরব সওদাগর । বিষয়সম্পত্তি যাকে যা দেওয়ারর দানপত্র করে দিল। প্রয়ােজনীয় সব কাজ শেষ করে আত্মীয়-স্বজন, বৌ-বাচ্চাদের ডেকে দৈত্যের কথা সব খুলে বলল। সওদাগর সৎ লােক। তাকে ভালােবাসে সবাই। কেঁদে উঠল তারা । দৈত্যকে কথা দিয়েছে, কথা রাখবেই সওদাগর। একে একে সকলের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সে আবার।


    PDF পড়তে নিচে যান

    চলতে চলতে সেই বটগাছের নিচে পৌছল সওদাগর । গাছের তলায় বসে বসে নিজের দুর্ভাগ্যের কথা ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এসেছে তার । এই সময় শিকলে বাঁধা একটা রামছাগলকে টানতে টানতে নিয়ে সেখানে এসে হাজির হল এক শেখ।
    সওদাগরের কাছে এসে সেলাম জানাল শেখ। তারপর জিজ্ঞেস করল, এই দেও-দানবের রাজ্যে এভাবে গাছের তলে বসে কাঁদছ কেন তুমি, ভাই?
    লােকটাকে সব খুলে বলল সওদাগর । শুনে শেখ তাে অবাক। বলল, তােমার মতাে সত্যবাদী লােককে নিশ্চয় রক্ষা করবেন আল্লাহ।
    সওদাগরকে নানাভাবে সান্ত্বনা দিতে লাগল শেখ। এই সময়ে আরেক শেখ এসে হাজির হল সেখানে। তার সঙ্গে দুটো কুকুর। সওদাগরের কাহিনী সেও শুনল । সেও সওদাগরের সত্যবাদিতায় মুগ্ধ হয়ে সান্ত্বনা দিতে লাগল তাকে। এই সময় আরও এক শেখ এসে উপস্থিত। তার সঙ্গে ছাই রঙের একটা মাদি খচ্চর । তারও, একই প্রশ্ন। উত্তর শুনে, সে-ও সান্ত্বনা দিল সওদাগরকে।

    Sahasra ek arabya rajani pdf

    ভীষণ গরম। রােদের তাপে তেতে উঠেছে পৃথিবী। হঠাৎ সামনের বালিতে ঘূর্ণিঝড় উঠল । আঁধার হয়ে এল চারদিক। আকাশের দিকে খাড়া উঠে গেল বালির বিশাল এক স্তম্ভ। চলতে চলতে বটগাছের একেবারে কাছে এসে দাঁড়াল স্তম্ভটা । ধীরে ধীরে বদলে গিয়ে বিশাল এক দৈত্যে পরিণত হল, হাতে সেই খড়গ । সওদাগরের দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার ছাড়ল দৈত্য, কই হে,সওদাগর, এস। কাজ শেষ করে ফেলি। নইলে মনে শান্তি পাচ্ছি না ।। | মরণকে স্বীকার করেই এসেছে সওদাগর । তবু ভয়ে-আতঙ্কে কেঁদে উঠল। তার দুঃখে চোখে পানি এসে গেল তিন শেখেরও। দৈত্যের সামনে দাঁড়িয়ে সেলাম জানাল তারা। হাতজোড় করে প্রথম শেখ বলল, হে দৈত্যরাজ। আমার একটি আর্জি আছে । এই আরব্য রজনী pdf বই থেকে পাওয়া এই রামছাগলের গল্প শােনাব তােমাকে । যদি, ভালাে লাগে, সওদাগরকে মাপ করে দিয়াে ।
    কৌতূহল হল দৈত্যের। বলল, বেশ, শােনাও। যদি আমার ভালাে লাগে, তাে সওদাগরের অপরাধের তিন ভাগের এক ভাগ মাপ করে দেব। গল্প শুরু করল প্রথম শেখ। 

    প্রথম শেখের আরব্য রজনী কাহিনী

    এই যে রামছাগলটা দেখছ, এ কিন্তু আগে জানােয়ার ছিল না । এ হল আমার চাচার মেয়ে, আমার বিয়ে করা বিবি । তিরিশ বছর আমার সঙ্গে ঘর করেছে । ছােটবেলায়ই জাদুবিদ্যা শেখে আমার বিবি। নানারকম জাদু দেখিয়ে কতদিন তাক লাগিয়ে দিয়েছে আমাকে। ওকে আমি খুবই ভালােবাসতাম, কিন্তু কপাল খারাপ। কোন ছেলেপুলে হল না আমার বিবির গর্ভে । কিন্তু ছেলে আমার দরকার । তাই বাড়ির এক দাসীকে রক্ষিতা বানিয়ে তার গর্ভে একটা ছেলে পয়দা করলাম ।
    ছেলের পনেরাে বছর বয়েসের সময় কাজের ধান্দায় একবার ভিন দেশে যেতে হল আমাকে। এই সুযােগে আমার বিবি জাদু করে ছেলেটাকে বাছুর আর তার মাকে গাই বানিয়ে ফেলল । কিছুদিন পরে বাড়িতে ফিরে ছেলে আর তার মাকে দেখলাম না। বিবিকে জিজ্ঞেস করতেই কেঁদেকেটে অস্থির। বলল, হায় হায়, ওরা কি আর আছে গাে! দাসীটা মরে গেছে। তাই মনের দুঃখে দেশান্তরি হয়েছে বাছা আমার! দারুণ দুঃখ পেলাম । মন একেবারে খারাপ হয়ে গেল। আড়ালে আবডালে বসে বসে ছেলেটার জন্য কাঁদি। দিন যায়, রাত পােহায়। দেখতে দেখতে কোরবানীর ঈদ এসে গেল। কোরবানী তাে দিতেই হবে। তাই চাকরটাকে ডেকে গােয়াল থেকে একটা গাই ধরে আনতে বললাম। গােয়াল থেকে গাই বের করল চাকর । একটা বড় ছুরি নিয়ে জবাই করতে গেলাম আমি । অবাক কাণ্ড ! দেখি কী, গাইটার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরছে । অদ্ভুত রকম গােঙাচ্ছে । কেমন যেন মায়া হল। গাইটার গলায় ছুরি চালাতে পারলাম না। চাকরটার হাতে ছুরিটা দিয়ে বললাম, নে, তুই-ই জবাই কর। আমি পারব না। বলে চলে এলাম সেখান থেকে। | হায়রে, তখন কি আর জানতাম। ওই গাইটাই এককালে আমার দাসী, রক্ষিতা ছিল ।
    গাইটাকে জবাই করে ফেলল চাকর। তারপর এক আশ্চর্য ব্যাপার। গাইটা মরার সঙ্গে সঙ্গে সেই দাসীতে পরিণত হল । ভয় পেয়ে ছুটে এসে আমাকে খবর দিল চাকরটা। গিয়ে দেখলাম ঠিকই । খুবই দুঃখ পেলাম। কিন্তু কিছু তাে আর করার নেই।
    চাকরটাকে ডেকে একটা বাছুর ধরে আনতে বললাম। একটা মােটাসােটা বাছুর ধরে আনল চাকর। ছুরি নিয়ে ওটার কাছে এগিয়ে এলাম । সে আরেক কাণ্ড! বাছুরটা আমার পায়ের ওপর লুটিয়ে পড়ল। ওর চোখের দিকে তাকালাম। মনে হল কী যেন .. বলতে চায় বাছরটা। আমি তাে আর জানি না সে-ই আমার ছেলে।
    গাইটা জবাই করতে হয়ে গেল দাসী, বাছুরটাকে জবাই করলে আবার কোন কাণ্ড হয়ে যায়। জবাই করব কিনা দ্বিধা করতে লাগলাম...
    হঠাৎ মােরগ ডাকার শব্দে গল্প থামিয়ে দিল শাহরাজাদ।
    দুনিয়াজাদ বলল, ওহ, কী সুন্দর গল্প, আপা। আর কী মজা করেই-না বল তুমি! থামলে কেন, বল!
    ভাের হয়ে গেছে, দুনিয়া, আজ আর না । জাহাপনা এখন ঘুমােবেন। তবে আগামী রাতে যদি বেঁচে থাকি, আবার বলব।


    PDF পড়তে নিচে যান

    ঠিক আছে, বলে ঘুমিয়ে পড়ল দুনিয়াজাদ।
    শারিয়ার ভাবল, দারুণ গল্প তাে! শেষটা না শুনে মেরে ফেলব মেয়েটাকে? ভাবতে ভাবতেই শাহরাজাদকে কাছে টেনে নিল ।
    অনেক বেলায় ঘুম ভাঙল শারিয়ারের। দরবারে ঢুকতে একটু দেরিই হয়ে গেল। উজির, আমির উমরাহ সবাই উঠে দাঁড়িয়েছেন। কুর্নিশ করে সম্মান জানাল বাদশাহকে। | উজিরের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক গােলাম। তার হাতে একটা সােনার থালা। পান্না দিয়ে চাপা দেয়া একটা তুললাট কাগজ রাখা আছে থালায়। হাত বাড়িয়ে পান্নাটা সরিয়ে তুলােট কাগজটা তুলে নিল উজির । | তুলােট কাগজে আসলে বাদশাহর ফরমান লেখা আছে। প্রতিদিন সকালে নিজের হাতে যে মেয়েকে হত্যা করে শারিয়ার, তারই নাম-ধাম-মৃত্যুদণ্ডের কথা। লেখা থাকে কাগজে। রােজ সকালে বাদশাহ দরবারে এলে সেই তুলােট কাগজ পাঠ করে উজির, সবাইকে ফরমানের কথা জানায়, তারপর দৈনন্দিন দরবারের কাজ শুরু হয়।
    উজির জানে, নিজের মেয়ের মরার খবরই পড়ে শােনাতে হবে আজ। দুচোখ পানিতে ভরে গেছে তার। তুলােট কাগজটা হাতে নিয়ে শারিয়ারের দিকে তাকাল। পড়বে কিনা নির্দেশ চাইছে বাদশাহর কাছে।
    কিন্তু অবাক হল উজির। ইশারায় তাকে কাগজটা পড়তে নিষেধ করছে শারিয়ার। গত তিন বছরে আজ নিয়ম ভাঙল! তবে কি তার আদরের দুলালীকে হত্যা করেনি নির্মম বাদশাহ! এখনও তাহলে বেঁচে আছে শাহরাজাদ!
    সারাদিন দরবার করল বাদশাহ। কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় ফিরে এল খাস মহলে। রাতের বেলা আবার আবদার ধরল দুনিয়াজাদ, আপা, গল্পটা শেষ কর! তারপর কী হল? বাছুরটাকে জবাই করল শেখ?
    জাহাপনার আদেশ না পেয়ে যে গল্প শুরু করতে পারছি না, বােন, আড়চোখে শারিয়ারের দিকে তাকাল শাহরাজাদ।
    হাসল শারিয়ার । বলল, হয়েছে, হয়েছে, নাও শুরু কর এবার। আমারও শুনতে ইচ্ছে করছে ।
    শুরু করল শাহরাজাদ : অবাক হয়ে প্রথম শেখের গল্প শুনছে দৈত্য ।
    শেখ বলছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাছুরটাকে জবাই করতে পারলাম না। চাকরকে বললাম, এটা রেখে অন্য একটা গরু নিয়ে আয়।
    আমার বিবি তখন আমার কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছে । সে বলে উঠল, না, না, এই বাছুরটাকেই জবাই কর। দেখছ না কেমন মােটাসােটা আর কচি । খুব ভালাে মাংস হবে।। | কিন্তু তবু বাছুরটাকে জবাই করতে ইচ্ছে হল না আমার । ওটার মুখের দিকে তাকালেই মায়া লাগে । চাকরকে দিয়ে, ওটাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে অন্য গরু ধরে জবাই করলাম। | সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতে গিয়েছিল চাকরঠা, পরের ভােরে প্রায় ছুটতে ছুটতে এল । বলল, হুজুর, একটা খবর আছে। আমার মেয়ে এক বুড়ির কাছে জাদুবিদ্যা শিখেছিল। সেই বুড়িটাও এখন আমার বাড়িতেই আছে । গতকাল দাসী আর বাছুরটার কথা কথায় কথায় তাদের কাছে বলেছিলাম। বাছুরটাকে দেখতে চাইল বুড়ি। গােয়াল থেকে নিয়ে গিয়ে দেখালাম। ওমা, আমার মেয়ে করল কী, বাছুরটাকে দেখেই নেকাব দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল । আমি তাে অবাক। শেষে জিজ্ঞেস করতেই মেয়ে জানাল, বেগানা পুরুষের সামনে মুখ দেখাতে লজ্জা লাগে তার । আরও অবাক হয়ে গেলাম! মেয়ের কাছেই জানলাম, ওটা বাছুর না, মানুষ। . কী বলছিস তুই, বাছুর আবার মানুষ হয় কী করে! অবাক হয়ে বললাম। . চাকরটা বলল, হ্যা হুজুর, ঠিক বলছি । এরপর আরও অবাক কাণ্ড । আমার মেয়ে একবার হাসে, একবার কাঁদে । তাজ্জব ব্যাপার! কারণ কী জিজ্ঞেস করলাম মেয়েকে।
    মেয়ে কী বলল ? জানতে চাইলাম।
    মেয়ে বলল, ওই বাছুরটা আসলে আমাদের মালিকেরই ছেলে। ওর সৎ-মা জাদু করে বাছুর বানিয়ে রেখেছে। ওর মাকেও গাই করে রেখেছিল। মানুষকে গরু বানিয়েছে, এটা মনে হলেই হাসি পায় আমার ।
    তাহলে কাঁদলি কেন? মেয়েকে জিজ্ঞেস করল চাকর।
    মেয়ে বলল, ওমা, কাঁদব না। একটা মানুষকে জবাই করে মেরে ফেলেছ আজ তােমরা! মেয়ের কথায় থ হয়ে গেলাম। বলে কী! কিসব ভূতুড়ে কাণ্ড। সারাটা রাত ঘুম হল না। মােরগ ডাকতেই উঠে রওনা দিয়েছি আপনাকে জানাতে।
    বাছুরটা এখন কোথায়? জানতে চাইলাম। 
    চাকর জানাল, তার বাড়িতেই আছে। আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম। খুশিতে-আনন্দে এতই অধীর হয়ে উঠলাম, যে আমাকে এত বড় সুখবর দিল তাকে একটু দানাপানি খাওয়াতেও ভুলে গেলাম। আমার তখন একটাই চিন্তা, কখন : ছেলেকে দেখতে পাব ।
    চাকরের সুন্দরী মেয়েটা আমাকে আদর-আপ্যায়ন করে বসাল। বাছুরটা এসে গড়িয়ে পড়ল আমার পায়ের কাছে। মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম, তােমার বাবার কাছে যা বলেছ সব সত্যি, ? সত্যি হবে না? অবাকই হল মেয়েটি। ও তাে আপনার ছেলে। শুনেছি, তুমি জাদু জানাে । আমার ছেলেকে আবার মানুষ বানিয়ে দিতে পারবে? তাহলে তুমি যা চাইবে তা-ই দেব, মেয়েটাকে অনুরােধ করলাম। | মানুষ বানিয়ে দিতে পারি, মালিক, বলল মেয়েটা। যদি আপনার ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে দেন। আর জাদু করে আপনার বিবিকে আমার ইচ্ছেমতাে একটা = জানােয়ার বানাব, এতে মানা করতে পারবেন না । জাদু শিখে তার অপব্যবহার করলে। মস্ত পাপ হয়। সেই পাপই করেছে আপনার বিবি । তাকে শাস্তি দিতেই হবে। আপনি আমার শর্তে রাজি তাে, মালিক?


    PDF পড়তে নিচে যান

    বিনা দ্বিধায় রাজি হয়ে গেলাম। বললাম, আমি রাজি, মা তােমার সঙ্গে আজই আমার ছেলের বিয়ে দেব। আমার একমাত্র ছেলের বৌ হবে তুমি। আমার যা বিষয়-সম্পত্তি আছে সব তােমাদের দুজনের হবে। আমার বিবিকে যা ইচ্ছে বানাও তুমি। আমার কোনাে আপত্তি নেই। শুধু আমার ছেলেকে আবার মানুষ বানিয়ে দাও। | ছােট্ট একটা তামার বাসনে পানি ভরে নিয়ে এল মেয়েটা। বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ে ফু দিল পানিতে। তারপর সেই পানি বাছুরটার গায়ে ছিটিয়ে দিতে দিতে বলল, আল্লা যদি তােমায় বাছুর বানিয়ে থাকেন, তাহলে বাছুরই থাকবে তুমি। আর যদি কোনাে ডাইনি তােমার এ অবস্থা করে থাকে, তাহলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, এখনি মানুষ বানিয়ে দিন তােমাকে।
    দৈত্যরাজ, কী বলব তােমাকে, ধীরে ধীরে আবার মানুষের রূপ ফিরে পেল আমার ছেলে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে . ধরে কেঁদে ফেললাম । জিজ্ঞেস করলাম, কে তাের এই অবস্থা করেছিল বাবা, জলদি বল আমাকে। ছেলে তার সৎ-মায়ের শয়তানির কথা সব খুলে বলল।
    ছেলেকে বললাম, এই মেয়েটার জন্যই আল্লাহ আবার তােকে আমার কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন, বাবা । তােকে আজই এই মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেব।
    সেই দিনই চাকরের বাড়িতেই ছেলের বিয়ে দিলাম। তারপর ছেলে আর বৌকে সঙ্গে করে ফিরে এলাম নিজের বাড়িতে।
    বাড়িতে এসে প্রথমেই আমার বিবিকে রামছাগল বানিয়ে ফেলল ছেলের বৌ। ছেলে আর তার বৌয়ের হাতে সংসারের দায়িত্ব তুলে দিয়ে, এই রামছাগল বিবিকে নিয়ে দেশ ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম আমি । আজ এই গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় সওদাগরের দেখা পেয়েছি। কাঁদছিল সে। জিজ্ঞেস করে তার দুঃখের কথা জেনেছি। তুমি কথা দিয়েছ, দৈত্যরাজ, আমার গল্প ভালাে লাগলে এর তিন ভাগের এক ভাগ অপরাধ মাপ করে দেবে।
    খুশি হল দৈত্য। কথা রাখল সে। সওদাগরের অপরাধ তিন ভাগের এক ভাগ মাপ করে দিল । এরপর এগিয়ে এল দ্বিতীয় শেখ । কুকুর দুটোকে দেখিয়ে বলল, আমার কাহিনী শুনলে আরও অবাক হবে তুমি, দৈত্যরাজ। রামছাগলের চেয়েও এই দুই কুকুরের গল্প আরও মজার । তবে, যদি তুমি সওদাগরের অপরাধ আরও এক ভাগ মাপ করে দাও, তাে বলি।
    ঠিক আছে, বল, ঘাড় নেড়ে বলল দৈত্য। তবে গল্প ভালাে না হলে তােমারও গর্দান নেব, বলে দিলাম।
    কাহিনী শুরু করল দ্বিতীয় শেখ। 

    দ্বিতীয় শেখের আরব্য রজনী কাহিনী 

    দ্বিতীয় শেখের কাহিনী
    দৈত্যরাজ, এই যে কুকুর দুটো দেখছ, এ দুটো কিন্তু আগে কুকুর ছিল না। এরা আমার মায়ের পেটের বড় দুই ভাই। সবার ছােট আমি ।
    আব্বা মারা যাওয়ার সময় তিন হাজার সােনার মােহর রেখে যান। আমার ভাগের এক হাজার মােহর নিয়ে দোকান খুললাম। আমার দুই ভাইও তাদের ভাগ দিয়ে দুটো দোকান খুলল।
    ব্যবসা ভালােই চলছে। এই সময় আরও বেশি উপার্জনের জন্য আমার এক ভাই এক সওদাগর দলের সঙ্গে মিশে বিদেশে বাণিজ্য করতে চলে গেল। বছরখানেক বাদেই ফিরে এল সে। একেবারে খালি হাতে। রাণিজ্য করতে গিয়ে সব খুইয়েছে । | ভাইকে বললাম, কতবার করে নিষেধ করেছিলাম, বেশি লােভ’কোরাে না। এখন হল তাে? যাক, যা হবার হয়েছে, আল্লারই এই ইচ্ছে ছিল হয়তাে।
    সান্ত্বনা-টান্তনা দিয়ে আমার দোকানে নিয়ে এলাম তাকে । ভালাে করে গােসল করে এলে আমার দামি জামা কাপড় তাকে পরতে দিলাম। একসঙ্গে বসেই খাওয়া দাওয়া করলাম দুই ভাই । তারপর কাজের কথায় এলাম। বললাম, দেখাে ভাইয়া, সব তাে খুইয়ে এলে। এখন এক কাজ কর। তােমাদের দোয়ায় আল্লার রহমতে আমার দোকানের আয়-উন্নতি ভালােই। গত বছরে লাভই হয়েছে হাজার দিনার। তুমি এর অর্ধেকটা নিয়ে গিয়ে আবার দোকান সাজাও। দেখবে, ওতেই বেশ জমিয়ে, ফেলতে পারবে । তবে আবারও বেশি লােভ কোরাে না।...
    আমার টাকায় আমার কথামতাে আবার দোকান সাজাল ভাই। দিন কাটে । বেচাকেনা মােটামুটি মন্দ হয় না তার। তারপর একদিন বড় দুই ভাই এল আমার কাছে। জানাল, একটা সওদাগর দল বাণিজ্যে যাচ্ছে। তারাও সঙ্গে যেতে চায়। দোকানের কেনাবেচায় খাওয়া-পরা চলে তাদের ঠিকই, কিন্তু বড়লােক হতে পারবে । তারা আমাকেও সঙ্গে যাবার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগল ।
    আমি যাব না, মানা করে দিলাম । রাগ করে বড়জনকে বললাম, একবার গিয়েও আক্কেল হয়নি। আবার যেতে চাও কোন সাহসে?..
    সেদিন ফিরে গেল ওরা। কিন্তু কয়েকদিন পরেই আবার এল। আবার বােঝাতে লাগল আমাকে, বাণিজ্যে গেলে বড় লাভ । আবারও বুঝিয়ে শুনিয়ে বকাঝকা দিয়ে নিরস্ত করলাম ওদেরকে । কিন্তু কিছুদিন পরে আবার এসে ধরল, এবারে যাবেই। ওরা। সঙ্গে আমাকেও নিয়ে যাবে ।
    এক কথা কত আর শােনা যায় । শেষে বিরক্ত হয়ে বললাম, ঠিক আছে, এসাে আমাদের লাভ লােকসান কী হয়েছে না হয়েছে গুণে দেখি ।
    গুণে দেখা গেল পুঁজি বাদেও ছয় বছরে মােট ছয় হাজার দিনার লাভ হয়েছে আমাদের । বললাম, বেশ, বাণিজ্যে যাব আমরা। তবে সব টাকাপয়সা সঙ্গে নেব না । লাভের অর্ধেক নিয়ে বেরােব। বাকি দিনারগুলাে এখানেই কোথাও মাটিতে পুঁতে রেখে যাব । যদি সব খুইয়েও বাড়ি ফিরি, একেবারে পথে বসব না। আবার দোকান খুলতে পারব ।
    আমার প্রস্তাবে রাজি হল ভাইয়েরা।

    PDF পড়তে নিচে যান

    তারপর যাত্রার তােড়জোড় করতে লাগলাম। এক হাজার করে দিনার সঙ্গে নিলাম আমরা প্রত্যেকে। নানা ধরনের মনােহারী জিনিসপত্র কিনে বাক্স বােঝাই করে সওদাগরি-নৌকায় তুললাম । তারপর শুভদিন দেখে আল্লার নাম নিয়ে নৌকা ভাসালাম।
    মাসখানেক কেটে গেছে। কয়েকটা বন্দরে নােঙর করে বেচাকেনা করেছি আমরা। কয়েক দিনার লাভও হয়েছে। এই সময় একদিন একটা বড় বন্দরে এসে নৌকা ভিড়ালাম। এখানেই হঠাৎ করে এক রূপসীর সঙ্গে আলাপ হয়ে গেল আমার।
    ভাইয়েরা সওদা করতে শহরে গেছে । আমি নৌকা পাহারা দিতে রয়ে গেছি। এই সময় এল সে। অপূর্ব সুন্দরী যুবতী। যৌবন যেন ফেটে পড়ছে। কিন্তু বড় গরিব মেয়েটা। ছেড়া-ময়লা পােশাকে লজ্জাও ঢাকতে পারছে না পুরােপুরি । নৌকার কাছে এগিয়ে এসে কাতর অনুনয় করল, আমাকে কিছু সাহায্য করবে, মালিক! বড় গরিব আমি । চাইলে তােমার কিছু কাজ করে দিতে পারব । সওদা বয়ে নিয়ে যেতে পারব শহরে। বেচাকেনায় সাহায্য করতে পারব। মােটামুটি ভালােই রাধতে পারি আমি, আমাকে দিয়ে খাবারও পাকিয়ে নিতে পারবে ।
    আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে কে আছে তােমার? কোথায় থাক? মেয়েটা বলল, আপনজন বলতে কেউ নেই আমার । এই শহরেরই পথে পথে ঘুরি, রাতে কারাে দুয়ারের কাছে কোনােমতে নাকমুখ খুঁজে পড়ে থাকি। কেউ দয়া করে খেতে দিলে খাই । কোনাে কাজ পেলে করি । কোনােমতে কেটে যাচ্ছে দিন।
    কাপড় চোপড়ে গরিব, কিন্তু কথাবার্তা আর চেহারাসুরতে তাকে ভালাে বংশের মেয়ে বলেই মনে হল আমার।
    আমাকে নীরব দেখে কী বুঝল মেয়েটা, কে জানে, আরেকটু এগিয়ে এল । বলল, দয়া করে আমাকে আশ্রয় দাও। সত্যি বলছি, তােমাকে সাহায্য করতে পারব আমি। দুঃখিনীকে আশ্রয় দিলে আল্লাহ তােমার ভালাে করবেন ।
    মেয়েটাকে দেখে প্রথম থেকেই মায়া লাগছে আমার। তার কাতর অনুনয়-বিনয়ে মন আরও গলে গেল । বললাম, ঠিক আছে, নৌকায় এস। এখানেই থাকবে । কাজকর্ম যা করতে ইচ্ছে হয়, করে দিয়াে। তবে ভেব না, আশ্রয় দিয়েছি বলেই :প্রতিদান দিতে হবে । এমনিই মায়া লাগল, জায়গা দিলাম তােমাকে । | আরেকটু এগিয়ে এল মেয়েটি। সলজ্জ কণ্ঠে বলেই ফেলল, এতই যখন দয়া দেখালে...তাহলে, তাহলে আমাকে বিয়েই করে ফেল না ।।
    ভাবলাম, কথাটা মন্দ বলেনি যুবতী। রূপ-যৌবন আছে ওর। তা ছাড়া নিঃসঙ্গ পরবাসে সুন্দরী নারীসঙ্গ পেলে আর কী চাই। রাজি হয়ে গেলাম। নৌকায় তুলে নিলাম তাকে । ভেঁড়া-ময়লা জামা-কাপড় খুলে নিয়ে পানিতে ছুড়ে ফেললাম। সাবান দিয়ে ঘষেমেজে পরিষ্কার করলাম তার শরীরের ময়লা। গরম পানি দিয়ে আচ্ছা করে গােসল করালাম । দামি কাপড় পরতে দিলাম, নিজের হাতে সুরমা লাগিয়ে দিলাম চোখে । আতর ঘষে দিলাম ওড়নায় । মদির সুবাসে ভরে উঠল নৌকার বাতাস।
    মখমলের গদিতে বসে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া সারলাম আমরা। গল্প করলাম অনেক । ওর জীবনের নানা বিচিত্র কাহিনী শােনাল আমাকে। আমার জীবনের কাহিনী শােনালাম ওকে। দুজনে দুজনের কাছাকাছি চলে এলাম ধীরে ধীরে ।।
    সে রাতে মধুযামিনী যাপন করলাম আমরা। আকাশে চাঁদ । নিচে নীল পানি। নিঝুম নিশুতি রাত। শুধু মাঝে মাঝে মাথার উপর দিয়ে বিচিত্র আওয়াজ তুলে উড়ে যাওয়া দুয়েকটা নিশাচর পাখি।
    সহস্র এক আরব্য রজনী : Sahasra Ek Arabya Rajani book Pdf

    নৌকার কিনারে বসে চাঁদনি রাতের সৌন্দর্য উপভােগ করলাম আমরা। রাতের মুখে ভাষা নেই । কথা হারিয়ে ফেলেছি আমরাও। শুধু দুজনের হাতে হাত । গভীর থেকে গভীরতর হয় রাত, আরও, আরও বেশি নিঝুম নিস্তব্ধ হতে থাকে। আমাদের মাঝের অন্তরঙ্গতাও গভীর হতে গভীরতর হয়। দিনের গরম বাতাসকে ঝেটিয়ে বিদেয় করছে রাতের হিম । কেমন যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল । দুজনে উঠে চলে এলাম নৌকার ভিতরে।
    দিন যায় । আমাদের দুজনের ভালােবাসা আরও গভীর হতে থাকে। শেষে এমন হল, ওকে মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল করতে পারি না। | ঈর্ষা শুরু করল আমার দুই ভাই। বয়েস হয়েছে ওদের। কোনাে কমবয়েসী সুন্দরী আর চোখ তুলেও তাকায় না ওদের দিকে। আমার সঙ্গে আর ভালাে করে কথা বলে


    সহস্র এক আরব্য রজনী PDF পড়তে নিচে যান


    তারা। এড়িয়ে এড়িয়ে চলে। আমার আড়ালে আবডালে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করে কী কী যেন বলাবলি করে । আমি আর আমার বিবি ঘরে ঢুকলেই ফাঁকফোকর দিয়ে শকুনির মতাে উঁকি মারে তারা । আমরা কী করি লুকিয়ে চুরিয়ে দেখে তাদের বিকৃত বাসনা মেটাতে চায় । বুঝলাম, শয়তান পুরােপুরিই ভর করেছে ওদের ওপর।
    একদিন গভীর রাতে, বিবিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছি । পা টিপে টিপে চোরের মতাে আমাদের ঘরে ঢুকল দুই ভাই । তারপর দুজনকে ধরে তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলে
    দিল গভীর সাগরে । হাবুডুবু খেতে খেতে দেখলাম, আমার বিবি এক বিরাট জিনের রূপ নিয়েছে। আমাকে কাঁধে তুলে নিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে সাগরের মাঝ দিয়েই হেঁটে চলল সে। একটা দ্বীপে নিয়ে গিয়ে নামিয়ে দিল। তারপর চোখের পলকে যেন আঁধারের মাঝে কোথায় হারিয়ে গেল। সারাটা রাত সেই নির্জন দ্বীপে একা একা বসে কাটালাম । সকালে ফিরে এল আমার বিবি । হেসে বলল, বল তাে আমি কে?
    অবাক হয়ে তার বিশাল জিন-রূপের দিকে তাকিয়ে রইলাম। হতভম্বই হয়ে গেছি ।
    আমার বিবি বলল, তােমাকে প্রথমবার দেখেই ভালােবেসে ফেলেছিলাম। মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তােমার রূপে । শেষে মানুষের বেশ ধরে গিয়ে হাজির হয়েছি তােমার কাছে । আমাকে বিয়ে করে আমার ইচ্ছে পূরণ করছ তুমি ? প্রাণ বাঁচানাের জন্য তাকে শুকরিয়া জানালাম ।
    আমার বিবি বলল, স্বামীকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা আমার কর্তব্য...তবে তােমার শয়তান দুই ভাইকে মেরে ফেলৰ তমি। আজ রাতে উড়ে গিয়ে তাদের নৌকাটা ডুবিয়ে দেব।
    শঙ্কিত হয়ে উঠলাম। তাড়াতাড়ি বললাম, না ন. অর যাই কর, ওদের জানে মেরাে না। হাজার হলেও ওরা আমার মায়ের পেটের ভাই : উপকার করেছিলাম ওদের, কিন্তু বােঝেনি ওরা। তবু আমার কর্তব্য আমি করেছি ।
    করতে গিয়েই মরতে বসেছিলে । আমি জিন না হয়ে মানুষ হলে কী হত, ভাব তাে? দুজনেই মরতাম না?
    । সৎ থাকলে কোনাে না কোনােভাবে আল্লা রক্ষা করেনই । কিন্তু যত যাই বল, আমি ওদের ছাড়ব না। প্রতিশােধ নেবই ।
    আমাকে কাঁধে তুলে নিল আমার জিনরূপী বিবি । উড়তে শুরু করল। অনেক অনেক পথ পেরিয়ে এসে নামল আমাদের বাড়ির দরজায় । আমাকে কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে আবার মানুষের রূপ ধরল ।।
    ব্যবসা-বাণিজ্য তাে গেছে। ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখা দিনারের কলসি তুলে নিলাম । যেমন রেখে গিয়েছিলাম, তেমনি আছে। ওগুলাে নিয়ে বাজারে চলে গেলাম । আবার জিনিসপত্র কিনে দোকান সাজালাম। | সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে দেখি, ঘরের দাওয়ায় শিকল দিয়ে বাঁধা দুটো কুকুর । আমাকে দেখেই ঘাউ-ঘাউ করে চেঁচামেচি জুড়ে দিল। আমার কামিজের খুঁট কামড়ে ধরে টানাটানি করতে লাগল । অবাক হয়ে গেলাম । ঘরে গিয়ে বিবিকে জিজ্ঞেস করতেই বলল, তােমার কথা রেখেছি । তােমার ভাইদের জানে মারিনি। তবে আমার বােনকে বলে, জাদু করিয়ে দশ বছরের জন্য কুকুর বানিয়ে দিয়েছি ওদের। আমার বােন ছাড়া আর কেউ ওড়ের মানুষের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে পারবে না।
    দৈত্যরাজ, আমার শালীর সন্ধানে বেরিয়েছি । তাকে পেলে, দেখব অনুরােধ-টনুরােধ করে আমার ভাইদের দুর্দশা থেকে মুক্ত করতে পারি কিনা ।
    পথ চলতে চলতে এই সওদাগরের সঙ্গে দেখা । তার মলিন চেহারা দেখে কারণ জিজ্ঞেস করেছিলাম। শুনে, মায়া হল । তােমাকে অনুরােধ করার জন্যই রয়ে গিয়েছি। আমার সঙ্গের দুই কুকুরের কাহিনী তাে শুনলে । কেমন লাগল ।
    চমৎকার! এমন গল্প জীবনে শুনিনি আমি। যাও, সওদাগরের আরও এক ভাগ অপরাধ মাপ করে দিলাম ।
    খচ্চরের মালিক, তৃতীয় শেখ এগিয়ে এল এবার। দৈত্যকে সেলাম জানিয়ে গল্প শােনানাের অনুমতি চাইল। দৈত্য সওদাগরের বাকি এক ভাগ অন্যায় মাপ করে দেয়ার ওয়াদা করতেই গল্প শুরু করল তৃতীয় শেখ :

    তৃতীয় শেখের আরব্য রজনী গল্প কাহিনী

    দৈত্যরাজ, এই যে খচ্চরটা দেখছ, এককালে এ-ও কিন্তু মানুষ ছিল । আমার বিবি।
    একবার এক কাজে বছরখানেকের জন্য বিদেশ গিয়েছিলাম। কাজ শেষ করে ঘরে ফিরলাম একদিন। মনে কত আশা, কত আনন্দ। অনেকদিন পর বাড়ি ফিরেছি, বিবি আমাকে কতই-না আদর-মহব্বত করবে।
    অনেক রাতে বাড়ি ফিরলাম। সােজা চললাম বিবির ঘরে । ঘরে ঢুকতে যাব, এমন সময় ভিতর থেকে পুরুষের কথা কানে এল । কেমন যেন সন্দেহ হল । দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে উঁকি দিলাম। মাথা ঘুরে উঠল : এ কী! এক নিগ্রো চাকরের কোলে মাথা রেখে খােশগল্পে মেতে রয়েছে আমার বিবি।
    উত্তেজনায় এতই ঝুঁকে পড়েছিলাম, ঠেলা লেগে দরজার পাল্লাটা পুরাে খুলে গেল। আওয়াজ শুনে চমকে উঠে দুজনেই দরজার দিকে তাকাল । তড়াক করে লাফিয়ে উঠল আমার বিবি । একটা পানি-ভরা বাটি নিয়ে ছুটে এল । বিড়বিড় করে কী সব পড়ে ফুক দিল বাটির পানিতে। সেই পানি আমার ওপর ছিটিয়ে দিল বিবি । ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে কুকুরে পরিণত হয়ে গেলাম আমি। লাথি মেরে আমাকে উঠোনে ফেলে দিল বিবি।
    মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম । সারা শহর ঘুরলাম । দারুণ খিদে পেল। ঘুরতে ঘুরতে এক কসাইয়ের দোকানে চলে এলাম। কিছু হাড়গোড় আর পচা মাংস এক জায়গায় ফেলে রেখেছে কসাই । খিদের জ্বালায় তাই চিবুতে লাগলাম। আর বার বার করুণ চোখে তাকাতে লাগলাম কসাইয়ের দিকে।
    আমাকে দেখে কসাইয়ের মায়া হল । যাবার সময় আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে গেল । আমি বাড়ির উঠোনে পা দিতেই চমকে উঠল কসাইয়ের যুবতী মেয়ে । তাড়াতাড়ি মুখে:নেকাব টেনে দিল। বাপকে বলল, আব্বাজান, তুমি জাননা পর পুরুষের সামনে কখনও বেরােই না আমি:} অথচ একটা বেগানা পুরুষকে নিয়ে এসেছ একেবারে অন্দরমহলে । | কসাই অৱীক হয়ে বলল, আরে, পুরুষ কোথায় দেখলি মা? ও-ততা একটা কুকুর।
    আব্বাজান। ও কুকুর না। পুরুষ মানুষ। ওকে জাদু করে কুকুর বানিয়ে দিয়েছে এক শয়তান মেয়েমানুষ।  তুইও তাে জাদু জানিস মা। ওকে ভালাে করে দিতে পারবি না? আরব্য রজনীর গল্প। 
    দাঁড়াও, দেখি চেষ্টা করে। বাড়ির ভিতরে গিয়ে এক পাত্র পানি নিয়ে এল কসাইয়ের মেয়ে । বিড়বিড় করে কী মন্ত্র পড়ে পানিতে ফু দিয়ে সেই পানি আমার গায়ে ছিটাল । ধীরে ধীরে আবার মানুষের চেহারা ফিরে পেলাম আমি।
    মেয়েটির প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার মন ভরে উঠল। ওকে অনেক দোয়া করে বললাম, আমার বিবিকে জাদু করে একটা খচ্চর বানিয়ে দিতে পার? তাকে কিছুটা শাস্তি দিতে চাই। | পারব, বলে ভিতরে গিয়ে আবার এক পাত্র পানি এনে মন্ত্র পড়ল। তারপর সেই পানির পাত্র আমার হাতে দিতে দিতে বলল, আপনার বিবি যখন ঘুমিয়ে থাকবে, এই পানি তার গায়ে ছিটিয়ে দেবেন। তারপর মনে মনে তাকে যা হতে বলবেন, তাই হয়ে যাবে । | বাড়ি ফিরে সেই পানি ছিটিয়ে খচ্চর বানিয়ে ফেললাম আমার বিবিকে। তারপর উঠোনের এক কোণে আমার আরও কয়েকটা খচ্চরের সঙ্গে লম্বা দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে চুপচাপ বসে রইলাম রাতের অপেক্ষায়। আমাকে যেমন লাথি মেরেছে সে, তাকেও সে রকম শাস্তি দেয়ানােই আমার ইচ্ছে। | সন্ধ্যা হতে ক্ষেতখামারের কাজ সেরে বাড়ি ফিরে এল সেই নিগ্রো চাকর । উঠোনে ঢুকতেই তার দিকে ছুটে গেল খচ্চরটা। ব্যা ব্যা করে ডেকে কিছু বােঝাতে চাইল । কিন্তু নিগ্রো তাে খচ্চরের ভাষা বােঝে না। বিরক্ত হয়ে খচ্চরটাকে বিচ্ছিরি গালাগাল দিয়ে ঘরের দিকে রওনা হল সে। তার কাপড়ের খুঁট কামড়ে ধরে ফেরানাের চেষ্টা করল আমার খচ্চর বিবি । ভীষণ খেপে গিয়ে একটা লাঠি নিয়ে এসে দমাদম পিটুনি। লাগাল সে খচ্চরটাকে। শেষমেশ লাঠি ফেলে গােটা কয়েক জোর লাথি ঝাড়ল। একেবারে কাহিল হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল খচ্চর।
    সেই থেকে মেয়েমানুষকে আর বিশ্বাস করি না আমি, দৈত্যরাজ। তাই আর বিয়ে থা করলাম না। আমার খচ্চর-বিবির পিঠে চড়ে দেশ ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম। এই গাছতলায় এসে সওদাগরের সঙ্গে দেখা।


    সহস্র এক আরব্য রজনী PDF পড়তে নিচে যান

    শেখের বিবির সঙ্গে হেসে রসিকতা করল দৈত্য, কী গাে, খচ্চর বিবি, শেখ যা বলল সব সত্যি? মুখ ফিরিয়ে নিল খচ্চরটা। এই সময় মােরগের ডাক শুনে গল্প থামাল শাহরাজাদ। দুনিয়াজাদ আনন্দে গদগদ হয়ে বলল, আপা, কী যে সুন্দর গল্প! ইস্, আরেকটা গল্প যদি শােনাতে! তাে দৈত্য কি সওদাগরকে মাপ করল? | বেঁচে থাকলে কাল রাতে আবার গল্প শােনাব, দুনিয়া। এখন ঘুমাে। জাহাপনার ঘুমের ব্যাঘাত হবে, বলেই পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল শাহজাদ।

    শারিয়ার কিন্তু ঘুমাল না । শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল, শাহরাজাদের গল্পগুলাে তাে . ভারি মজার! আরও নিশ্চয় অনেক গল্প জানা আছে মেয়েটার । সব না শুনে কি তাকে রা উচিত হবে?
    পরদিন সকালে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল সে। পােশাক পরে তৈরি হয়ে দরবারে চলে এল।
    সারাদিন ব্যস্ততার মাঝেও শাহরাজাদের গল্পের কথা মনে পড়ে শারিয়ারের। রােজকার মতােই সন্ধ্যার একটু আগে দরবারের কাজ শেষ হল । খাসমহলে ফিরে এল শারিয়ার।
    দুনিয়াজাদ গল্প শােনার আবদার ধরতেই শারিয়ারের অনুমতি নিয়ে গল্প শুরু করল শাহরাজাদ :
    তৃতীয় শেখের খচ্চর-বিবিকে নিয়ে বেশ হাসি-মস্করা করল দৈত্য। শেখ জিজ্ঞেস করল, আমার গল্প শুনে খুশি হয়েছ তাে, দৈত্যরাজ? দৈত্য বলল, নিশ্চয়ই, খু-উ-ব খুশি হয়েছি আমি। যাও, সওদাগরের সমস্ত অপরাধ মাপ করে দিলাম । সওদাগরকে বলল, তুমি তােমার বাড়িতে ফিরে যাও, সওদাগর। তিন শেখের কাহিনী শুনে যত খুশি হয়েছি, তারচেয়ে বেশি অবাক, বেশি মুগ্ধ হয়েছি তােমার সত্যবাদিতা দেখে। ওয়াদা রক্ষার জন্য নিজের জীবনকেও তুচ্ছ করলে তুমি ... | দৈত্য আবার হাওয়ায় মিলিয়ে যেতেই তিন শেখকে জড়িয়ে ধরল সওদাগর। জীবন ফিরে পাওয়ার আনন্দে চোখে পানি এসে গেছে তার । একে অপরের বন্ধু হয়ে গেল তারা। তারপর বিদায় নিয়ে যে যার পথে রওনা হয়ে গেল।
    গল্পটা শেষ হতেই চুপ করল শাহরাজাদ। দুনিয়াজাদ আবার আবদার ধরল, আপা, রাত তাে এখনও কিছুই না। আরেকটা গল্প বল না।
    অনুমতির জন্য শারিয়ারের দিকে তাকাল শাহরাজাদ। শারিয়ার বলল, আরে ঠিক আছে, ঠিক আছে, বল গল্প। আমি শুনছি।
    আবার শুরু করল শাহরাজাদ :

    জেলে আর দৈত্য
    অনেক দিন আগে এক নদীর ধারে এক জেলে বাস করত । বুড়াে হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তিন কন্যা আর স্ত্রী নিয়ে সুখে-দুঃখে কোনােমতে দিন কেটে যেত জেলের। নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরত সে, তাই বিক্রি করে সংসার চালাত। তবে জেলের জাল ফেলার একটা নিয়ম ছিল । কোনাে দিনই পাঁচবারের বেশি জাল ফেলত না সে। এতে যা মাছ ওঠে নিয়ে চলে যেত বাজারে।
    একদিন একটু বেলা করেই জাল নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে এল জেলে। আল্লার । নাম করে জাল ফেলল নদীতে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে জালটা বসার সময় দিল, তারপর ধীরে ধীরে গুটিয়ে আনতে লাগল । ভীষণ ভারি লাগছে টানতে। জেলে মনে করল বেশ বড়সড় একটা মাছ পড়েছে জালে। তাড়াহুড়াে না করে আস্তে আস্তে জাল টেনে তুলল সে। ওমা, এ কী । জালে মাছ কোথায়! একটা মরা গাধা উঠে এসেছে।
    গাধাটাকে জাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে আবার জাল ফেলল জেলে। এবারও জাল তুলতে বেশ ভারি লাগল । কিন্তু জাল তুলে হতাশ হল জেলে। এবারে উঠেছে একটা গাছের গুঁড়ি । মন খারাপ হয়ে গেল জেলের । দুইবার জাল ফেলল, দুইবারই এই অবস্থা। | আরেকটু সরে গিয়ে আবার জাল ফেলল জেলে। এবারেও জাল তুলতে ভারি লাগল । সাংঘাতিক ভারি । জেলের আশা হল, এবার বড় মাছ না-হয়ে যায় না। টেনেটুনে ডাঙায় জাল তুলল সে। হায় হায়, আজ কী হল!-মাথায় হাত দিল জেলে। বিরাট এক মাটির কলস উঠেছে এবারে, কলসের ভিতরটা কাদায় ভরা। | আরও সরে গিয়ে চতুর্থ বার জাল ফেলল জেলে। এবারেও জাল তুলতে ভারি লাগছে। মনে মনে আল্লাকে ডাকতে ডাকতে জাল টেনে তুলল সে। নাহ্, আজ আর হবে না বােধহয় । না খেয়েই থাকতে হবে আজ। জালে উঠেছে ইট আর কিছু ভাঙা হাঁড়িপাতিল।
    আরেকটু সরে গেল জেলে। জাল রেখে দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে মােনাজাত করল, হে মালিক, আর মাত্র একবার বাকি আছে। এবারেও যদি এসব জিনিসই ওঠে, বৌ-মেয়ে নিয়ে আমাকে উপােস থাকতে হবে।
    পঞ্চমবার জাল ফেলল জেলে । জাল বসার সময় দিয়ে ধীরে ধীরে টানতে লাগল। কিন্তু, এ কী, জাল যে নড়তেই চাইছে না। পানির টুলায় কোনাে পাথরের চাঁইয়ে
    আটকে গেল না তাে! টান বাড়াল জেলে । তারপর অনেক কসরৎ করে গুটিয়ে আনল জাল । তীরে তুলে আনল । কিন্তু মাছ কোথায়? এ যে একটা তামার কলস!
    কলসটা জাল থেকে ছাড়িয়ে নিল জেলে। মুখটায় সিলমােহর করা। তাতে নাউদের পুত্র বাদশাহ সােলায়মানের নাম খােদাই করা রয়েছে।
    একেবারে হতাশ হল না এবার জেলে। মাছ না-ই পাওয়া গেল, কলসটা তাে পেয়েছে। ওটা বিক্রি করেই একটা দিন কোনােমতে চালিয়ে নিতে পারবে ।
    কলসটা নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল জেলে। বেজায় ভারি । জেলে শুনেছে, সােলায়মানি আমলের কলসিতে সােনার মােহর থাকে । আর কলসটা সত্যিই ভারি। ভতরে জিনিস আছে মনে হয়। সােনার মােহরই যদি থাকে? তাহলে তাে রাতারাতি বড়লােক। জেলে ঠিক করল, মুখটা খুলে দেখবে ।
    একটা পাথর দিয়ে ঠুকে ঠুকে সিলমােহরটা ভেঙে ফেলল সে। কলসের মুখের ঢাকনা বেরিয়ে পড়ল। খােলার চেষ্টা করল জেলে, কিন্তু সাংঘাতিক এঁটে লেগে আছে ঢাকনা। পানির তলায় থাকতে থাকতে আরও শক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু জেলে ছাড়ার পাত্র নয়। অনেক কায়দা-কৌশল করে ঢাকনাটা খুলেই ফেলল সে। কিন্তু কলসের ভিতর উঁকি দিয়ে দেখার আগেই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল।
    কলসের ভিতর থেকে ধোঁয়া বেরােতে শুরু করল ! কুণ্ডলী পাকিয়ে পাকিয়ে আকাশে উঠে যেতে লাগল কালাে ধোঁয়া । ধোয়ায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল চারদিক। ধীরে ধীরে ধোয়ার ভিতর থেকে বেরিয়ে এল ও কী! হাঁ হয়ে গেল জেলে । এ যে বিশাল এক আফ্রিদি দৈত্য।
    পা দুটো যেন জাহাজের মাস্তুল। হাত দুটো বিশাল লম্বা গাঁইতির মতাে। আর আকাশে গিয়ে ছুঁয়েছে জালার মতাে বিরাট মাথাটা। যখন হাঁ করল দৈত্য, জেলের মনে হল ওটা পাহাড়ের গুহা । দাঁতগুলাে যেন শ্বেতপাথর দিয়ে বানানাে বিশাল একেকটা মুলাে। বাঁশের চোঙের মতাে নাকের ফুটো। থালার সমান বড় আর আগুনের মতাে টকটকে লাল দুই চোখ । মাথার চুল যেন উলুখাগড়ার জঙ্গল।
    চোখের সামনে জলজ্যান্ত ওই ভয়াবহ দানবকে দেখে তাে ভিরমি খেল জেলে, দাঁতকপাটি লেগে গেল । অবশ অসাড় হয়ে আসতে লাগল শরীর। ওই একবারই তাকিয়েছে, এরপর আর চোখ তুলবার সাহস হচ্ছে না তার। | হঠাৎ কথা বলে উঠল দৈত্য, মেঘের গর্জন উঠল যেন ।


    সহস্র এক আরব্য রজনী PDF পড়তে নিচে যান

    হযরত সােলায়মান আল্লার পয়গম্বর । আল্লাহ আর হযরতকে ছাড়া আর কাউকে মানি না আমি।
    মােনাজাতের ভঙ্গিতে হাত তুলল দানব। কাতর হয়ে বলতে লাগল, হে আল্লার পয়গম্বর, দুনিয়ার বাদশাহ, হে মেহেরবান হযরত সােলায়মান, আমাকে মেরাে না তুমি । তােমার কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইছি। আর কখনও তােমার অবাধ্য হব না । কখনও তােমার বিরুদ্ধে না। আল্লাহ গাে, ও হযরত, আমাকে ক্ষমা কর। 
    এতবড় দৈত্যের এই কাতর মােনাজাত শুনে দিলে একটু সাহস পেল জেলে। সে বলল, আফ্রিদি রাজ, বাদশাহ সােলায়মানের ভয়ে কাঁপছ কেন তুমি? তিনি তাে কবে সেই আঠারােশাে বছর আগে মারা গেছেন। তারপর কত কাণ্ড কত কিছু ঘটে গেল দুনিয়ায়। তা হয়েছে কী? কী এমন পাপ করেছিলে যে কলসের ভিতরে বন্দি করে রাখলেন তােমাকে বাদশাহ?
    বাদশাহ সােলায়মান বেঁচে নেই শুনে ধড়ে যেন প্রাণ ফিরল দানবের। কিন্তু আশ্বস্ত হতে পারল না। বাদশাহ সােলায়মান সত্যি মারা গেছেন কিনা, বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগল জেলেকে। বারবার একই উত্তর পেল। শেষে নিশ্চিন্ত হয়ে বলল, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে মানি না আমি। এই ব্যাটা জেলে, একটা খবর আছে তাের জন্য ।
    জেলে জানতে চাইল, কী খবর, জনাব? হুঙ্কার ছাড়ল দানব। তাের মরণ। তােকে খুন করব।
    মুখ শুকিয়ে গেল জেলের। বলল, দৈত্যরাজ, আমাকে মারবে কেন তুমি? কী আমার অপরাধ? আমি তাে ভেবেছিলাম, খুশি হয়ে আমাকে বহুত ইনাম দিয়ে ফেলবে। তুমি। বহুদিনের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেছি।
    কিন্তু জেলের কথায় কান দিল না দৈত্য। বলে উঠল, কিভাবে মরতে চাও, আগে সে-কথা বল। কিন্তু কী দোষ আমার? অপরাধ কী? বেশ তাহলে শােনাে আমার কাহিনী। তােমার প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবে।
    বল।
    বলতে লাগল দৈত্য :
    আমি এক জিন : দাউদের পুত্র শাহেনশাহ সােলায়মানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলাম। আমাকে শায়েস্তা করতে তাঁর উজির, আশফ-ইবনে ব্যারাখ্যাকে পাঠালেন বাদশাহ। বহুত ক্ষমতা আমার, তবু পারলাম না, উজিরের সঙ্গে। আমাকে কাবু করে ধরে নিয়ে গেল বাদশাহ’র কাছে। বাদশাহ বললেন, এরপর থেকে আর কোনাে গােলমাল না পাকালে, তার অনুগত হয়ে থাকলে আমাকে মাপ করে দেবেন। কিন্তু আমি তার কথা শুনলাম না। রেগে গেলেন বাদশাহ। উজিরকে ডেকে আমাকে একটা তামার জালার ভিতরে ভরে পানিতে ফেলে দেয়ার হুকুম দিলেন । | আমাকে ভিতরে ভরে সিসার পাত এঁটে জালার মুখ বন্ধ করে দিল উজির । সিসার পাতের ওপর বাদশাহ সােলায়মানের সিলমােহর এঁকে দিয়ে জালাটা ফেলে দিল সাগরে।
    পানির তলায় তামার জালায় বন্দি হয়ে রইলাম আমি। দিন যায় । মুক্তির আশায় দিন গুণি । আল্লাহর নামে কসম করলাম, একশাে বছরের মধ্যে যে আমাকে মুক্ত করবে, তাকে সারাজীবন দুধে-ভাতে থাকার ব্যবস্থা করে দেব। ধনদৌলতে ভরে দেব। 

    সহস্র এক আরব্য রজনী pdf

    তার ঘর । কিন্তু আমার কপাল খারাপ । কেউই মুক্ত করল না । পেরিয়ে গেল আমার বন্দি জীবনের একশাে বছর।
    আবার কসম করলাম, আমি : একশাে বছরের ভিতরে যে আমাকে মুক্ত করবে, দুনিয়ার যত হিরে জহরৎ, মণি-মুক্তা এনে তুলে দেব তার হাতে। কেটে গেল আরও একশাে বছর। এবারেও কেউ এল না।
    কসম করলাম আবার : একশাে বছরের ভিতর যে মুক্ত করবে, তাকে দেব তিনটি র। যা চাইবে, সে, পাই পাবে । আশায় আশায় দিন গুণি । কিন্তু বৃথা। এবারেও এল না কেউ। | রাগে দুঃখে জালার ভিতরেই লাফঝাপ মারতে লাগলাম। মনে মনে আবার কসম করলাম, এবারে যে আসবে, জালা থেকে বেরিয়েই শেষ করে ফেলব তাকে।
    তােমার কপাল খারাপ, জেলে। তুমিই এলে। আমাকে আলাের মুখ দেখিয়েছ, ঠিক, কিন্তু আমি কসম খেয়েছি । নিরুপায়। তােমাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারছি না। কী করে মরবে এখন তাই বল। | বুক দুরুদুরু করছে জেলের । ভাবছে : এই আমার নসিবে লেখা ছিল । জেনেশুনে জীবনে তাে কোনাে পাপ করিনি! তাহলে? হাতজোড় করে দৈত্যের কাছে কাতর অনুনয় জানাল সে, হে দৈত্যরাজ, তুমি এমন ক্ষমতাশালী। আমাকে মাপ করে দাও। আল্লা তােমার ভালাে করবেন ।
    জেলের কথায় এবারেও কান দিল না দৈত্য । বলল, আমার সময় নষ্ট করছ । জলদি বল, কিভাবে মরতে চাও। | জেলে বলল, আমি কোনাে দোষ করিনি। আমাকে অন্যায়ভাবে মেরে ফেললে আল্লা তােমাকে রেহাই দেবেন না। তােমার চেয়ে শক্তিমান কাউকে পাঠাবেন। তার হাতে মারা যাবে তুমি ।
    মন গলল না আফ্রিদির । তার সেই এক কথা। আমি কসম করেছি, আমাকে যে মুক্ত করবে, তাকে খুন করব আমি। তুমি মুক্ত করেছ। তােমাকে ছাড়তে পারি না। . এভাবেই উপকারীর প্রতিদান দাও তােমরা? মরিয়া হয়ে বলে উঠল জেলে ।
    গলা চড়ে গেল দৈত্যের, বহুত বকবক করেছ। এবার থামাে । মরার জন্য তৈরি হও।
    জেলে দেখল, অনুনয় করে লাভ হবে না । তখন মনে মনে এক বুদ্ধি আঁটল সে। জানে সে, গায়ের জোরের চেয়ে বুদ্ধির জোর অনেক বেশি। কোনাে প্যাচে ফেলতে
    পারলে আফ্রিদি শয়তানটার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। বলল, তাহলে তুমি আমাকে মেরেই ফেলবে?
    তাে কী বলছি এতক্ষণ? | আমার অপরাধ?
    রেগে গেল দৈত্য। আবার সেই এক কথা! ক’বার বললাম, আমি কসম খেয়েছি, আমাকে যে মুক্ত করবে তাকে খুন করব? ওই তামার জালায় বন্দি ছিলাম। আজ আমাকে মুক্ত করেছ তুমি, জেলে বলল, পানি থেকে জালা তুলেছি আমি । মােহর ভেঙে ঢাকনাও খুলেছি। কিন্তু একটা কথা, তােমাকে মুক্ত করলাম কী করে? তােমার এই বিশাল শরীর ছােট্ট জালায় আঁটে? এই আজগুবি কথা বিশ্বাস করতে বলছ আমাকে? তােমার একটা ঠ্যাং ঢুকবে এর ভিতর? অথচ কী সহজেই না বলে যাচ্ছ, ওই জালার ভিতর শ শ বছর কাটিয়ে দিয়েছ । মিথ্যে বলার আর জায়গা পাওনি! রূপকথার গাঁজাখুরি কাহিনীকেও ছাড়িয়ে যায়... * জেলের মুখ-বাঁকানাে দেখে দৈত্য তাে রেগে টং। দাঁত মুখ খিচিয়ে চেঁচিয়ে উঠল । কী, আমি মিথ্যে কথা বলছি! আমি মিথুক? ওই জালাটায় ছিলাম না। এত্তোবড় কথা! ঠিক আছে দেখ, এর ভিতর ঢুকতে পারি কি পারি না! | বিন্দুমাত্র দেরি না করে নিজের দেহটাকে গুটিয়ে নিতে লাগল দৈত্য।
    চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল জেলে। দৈত্যের দেহটা যেই পুরাে ঢুকে গেল জালার ভিতরে, অমনি লাফ দিয়ে এগিয়ে গেল সে। সিসার ঢাকনাটা তুলে নিয়েই এঁটে দিল জালার মুখ । তারপর হা-হা হাসিতে ফেটে পড়ল । দৈত্যকে শুনিয়ে শুনিয়ে চেঁচিয়ে বলল, আফ্রিদির বাচ্চা, এবার তুমি ঠিক কর, কিভাবে তুমি মরতে চাও। এক কাজ করি। তােমাকে আবার পানিতেই ফেলে দিই । তারপর নদীর পাড়ে, এখানে এসে ঘর বাঁধব। সমস্ত জেলেকে হুঁশিয়ার করে দেব যেন জালাটা তুলে আমার মতাে বিপদে না পড়ে। তঁাড়া, পিটিয়ে আশপাশের গায়ে তােমার শয়তানির কথা জানিয়ে দেব: খবর, প্রচার করে , দেব সারা দেশে। ভয়ে এ তল্লাট মাড়াবে না আর কেউ । দেখব, এরপর কে তােমাকে ছাড়াতে আসে! হা-হা-হা!


    সহস্র এক আরব্য রজনী PDF পড়তে নিচে যান

    নিজের বােকামি বুঝতে পেরে কপাল চাপড়াতে লাগল আফ্রিদি। জালা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করল না। বাদশাহ সােলায়মানের মােহর আঁকা ঢাকনা খােলার ক্ষমতা কোনাে দৈত্যের নেই। খুলে দেয়ার জন্য অনেক কাকুতি-মিনতি করল দৈত্য, কিন্তু জেলে অটল রইল ।
    দৈত্য বলল, আমি কথা দিচ্ছি, তােমাকে মারব না । দনিয়ার সুব ধনদৌলত এনে দেব তােমাকে ।
    কিন্তু জেলে বিশ্বাস করল না তার কথা। বলল, তােমাকে বিশ্বাস করে কি মরব নাকি? সুলতান ইয়ুনান আর হকিম রায়ানের কিচ্ছা শােননি নিশ্চয়। তাহলে আর এই অনুরােধ করতে না।
    শুনিনি। কী সে কিচ্ছা, শােনাও তাে, জালার ভিতর থেকে বলল দৈত্য। জেলে বলতে লাগল : সুলতান ইয়ুনান, তার উজির আর হকিম রায়ান
    অনেক অনেক দিন আগে, রুম দেশের ফার শহরে রাজত্ব করতেন এক প্রবল প্রতাপ সুলতান। হাজার হাজার সৈন্য-সামন্ত, লােক-লস্কর, দাস-দাসী আর অঢেল ধনদৌলত ছিল তার। কিন্তু সুলতানের মনে শান্তি নেই। সাংঘাতিক কুষ্ঠরােগে আক্রান্ত সারাদেহ। কত হকিম কত কবিরাজ দেখিয়েছেন সুলতান, কাজ হয়নি। কেউ সারাতে পারেনি তার রােগ। কোনাে ওষুধেই কোনাে কাজ হয়নি।
    হতাশ হয়ে পড়েছেন সুলতান, তাঁর রােগ আর কোনােদিন বুঝি সারবে না। এই সময় একদিন তাঁর দরবারে এসে হাজির এক বৃদ্ধ হকিম । নাম তার রায়ান। অসাধারণ জ্ঞানী লােক তিনি । অনেক ভাষা জানেন, অনেক বিদ্যা শিখেছেন। হকিমি বিদ্যায় জুড়ি নেই তাঁর।
    ইয়ুনানের দরবারে ঢুকে সেলাম জানালেন রায়ান। বললেন, আমি আপনার রােগের খবর শুনে এসেছি। কোনাে হকিম কোনাে ওষুধেই নাকি সারাতে পারেনি আপনার রােগ । ঠিক আছে, যদি অনুমতি দেন তাে আমি একবার চেষ্টা করে দেখি ।
    হতাশ গলায় বললেন সুলতান, কী লাভ, হকিম সাহেব? ওষুধ তাে আর কম । খাইনি, কম লাগাইওনি। সারেনি । আর ভালাে লাগে না এসব। রায়ান বললেন, আমি আপনাকে খাবার কিংবা লাগাবার ওষুধ দেব না। কৌতূহলী হয়ে উঠলেন সুলতান । তাহলে কী করে সারাবেন শুনি?
    সে-কথা না-ই বা শুনলেন, যদি আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন.বলুন। আমি আপনার রােগ সারিয়ে দেবই।
    আর শােনার জন্য চাপাচাপি করলেন না সুলতান। বললেন, ঠিক আছে যদি সারাতে পারেন, যা চাইবেন তাই দেব। অঢেল ধনদৌলত দেব । শুধু আপনিই নন, আপনার ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি, তাদের নাতি-নাতনিরাও মাসােহারা পাবে আমার খাজাঞ্চি থেকে। আপনাকে আমার সভার প্রধান পারিষদ করে রাখব। প্রাণের প্রাণ দোস্ত ভাবব ।
    সূক্ষ্ম কারুকাজ করা মূল্যবান একটা:শাল উপহার দিলেন সুলতান হকিমকে। আবার বললেন; যেভাবে খুশি চিকিৎসা করুন আমার, কোনাে আপত্তি নেই। রােগ সারলেই হল।
    ভরসা দিলেন হকিম। আপনি কোনাে চিন্তা করবেন না, জাহাপনা । আপনার রােগ ভালাে হয়ে যাবে।

    অনেক দিন পর হাসলেন সুলতান। বললেন, তাহলে আর দেরি করে লাভ নেই। কাল থেকেই কাজ শুরু করুন।। মাথা নুইয়ে সম্মতি জানিয়ে বললেন হকিম, তাই হবে, জাহাপনা।
    শহরে ঢুকেই একটা ঘর ভাড়া করেছিলেন রায়ান। তাঁর গাছ-গাছড়া, ওষুধের শিশি-বােতল-বয়াম, মােটা মােটা পুঁথি আর বইতে ভরে উঠেছে ঘরটা। বাদশাহর দরবার থেকে বেরিয়ে সােজা সেই বাসায় ফিরে এলেন হকিম।
    বাসায় এসে ওষুধ বানালেন রায়ান। একটা ফাঁপা বাঁশের লাঠির ভিতর ভরে দিলেন খানিকটা ওষুধ। তারপর সুন্দর করে একটা হাতল বানিয়ে লাগিয়ে দিলেন লাঠির মাথায়। এরপর তিনি বানালেন একটা পােলাে বল। বলের ভিতরে কায়দা করে ভরে দিলেন ওষুধ।
    Arabya Rajani Adult book pdf

    লাঠি আর বল নিয়ে পরদিন সকালে দরবারে চলে এলেন রায়ান। যথারীতি সেলাম জানালেন সুলতানকে। লাঠি আর ছড়িটা দিয়ে বললেন, আজ থেকে ঘােড়ায় চেপে পােলাে খেলতে হবে আপনাকে। এই লাঠি আর বল দিয়ে খেলবেন। খেলে যাবেন যতক্ষণ-না দরদর করে ঘাম ঝরতে থাকে। তারপর প্রাসাদে গিয়ে ভালােমতাে গােসল করবেন। ব্যস, আর কিছু না। এই আপনার চিকিৎসা । সেরে উঠবেন এতেই । | পােললা খেলতে ময়দানে চললেন সুলতান। সঙ্গে চলল আমির-অমাত্য-ওমরাহউজির-নাজির-পাত্র-মিত্র-সভাসদ। আর চললেন হকিম রায়ান।
    কী করে লাঠিটা ধরতে হবে, সুলতানকে শিখিয়ে দিলেন রায়ান। শুরু হল খেলা। ঘােড়ায় চেপে খেলতে লাগলেন সুলতান । ঘাম ঝরতে লাগল শরীর থেকে। ঘেমে নেয়ে উঠলেন এক সময় ।
    চোখে নজর রাখছিলেন রায়ান। সুলতানকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আজ এই পর্যন্তই । প্রাসানে ফিরে গিয়ে সােজা হামামে ঢুকে পড়ন।
    কদিন পরে সে রাতে গাঢ় ঘুম হল না সুলতানের। সকালে উঠে দেখলেন, অনেকখানি কেটে গেছে দেহের জড়তা। মেজাজ খুশি খুশি।
    নিয়মিত সময়ে দরবারে এলেন সুলতান। রায়ানও এলেন । তাকে ডেকে সুলতান . জানালেন, অনেকটা আরাম পাচ্ছি আজ।
    রায়ানকে একটা মূল্যবান পােশাক উপহার দিলেন সুলতান । তারপর দলবল নিয়ে রওয়ানা হলেন পােলাে খেলতে।
    কয়েক দিন কেটে গেল। ভালাে হয়ে উঠতে লাগলেন সুলতান। আস্তে আস্তে কুষ্ঠের ক্ষত শুকিয়ে যাচ্ছে তার শরীর থেকে। রােজই দরবারে আসেন রায়ান। সুলতানের সঙ্গে দেখা করেন । রােজই তাঁকে কিছু না কিছু উপহার দেন সুলতান । আস্তে আস্তে পুরােপুরি ভালাে হয়ে উঠলেন। সুলতান, তাঁর শরীর থেকে দূর হয়ে গেল কুষ্ঠের অভিশাপ। মনে আনন্দের সীমা নেই’ সুলতানের । রায়ানকে অনেক মূল্যবান সামগ্রী; ধনদৌলত, উপহার দিয়ে দিলেন।


    সহস্র এক আরব্য রজনী PDF পড়তে নিচে View Now ক্লিক করুন।


    Book Publisher Author  F Size
    সহস্র এক আরব্য রজনী
    মৌসুমি প্রকাশনী ক্ষিতিশ সরকার 29 মেগাবাইট
    Bookshop Price Language  T Page
    Durdin Magazine Only 800 Taka Bangla 866



    সহস্র এক আরব্য রজনী pdf বইয়ের আরব্য রজনীর গল্প আপনাকে মুগ্ধ করবে বলে আমরা আশা রাখি। অমূল্য বইটির হার্ডকপিও সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। মাঝে মাঝে চোখ বুলাতে পারেন আরব্য রজনী PDF বইয়ে।

    Read More: Bangla Academy books PDF

    Tags

    Post a Comment

    0Comments
    * Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
    Post a Comment (0)

    #buttons=(Accept !) #days=(20)

    Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
    Accept !