মুসলমানদের ২০টি স্মরণীয় আবিষ্কার
বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। আমরা বিজ্ঞানের আশীবাদ হিসাবে যেসব বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি সেগুলাের মধ্যে মুসলমানদের আবিষ্কার হলাে এক হাজার একটি। ২০০৬ সালের ৮ মার্চ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের মানচেস্টারে মিউজিয়াম অব সায়েন্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিতে ‘ওয়ান থাউস্যান্ড ওয়ান ইনভেশন্স: মুসলিম হেরিটেজ ইন আওয়ার ওয়ার্ল্ড’ (1001 Inventions : Muslim Heritage in our world) শিরােনামে একটি প্রদর্শনীতে মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করা হয়। এখানে সবগুলাে আবিষ্কার নিয়ে আলােচনা করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র লন্ডনের দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় যে ক'টি আবিষ্কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলাে নিয়ে আলােচনা করা হলাে। ২০০৬ সালের ১১ মার্চ পল ভ্যালি পরিবেশিত হাউ ইসলামিক ইনভেন্টার্স চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড (How Islamic Inventors changed the world) বা কিভাবে ইসলামী বিজ্ঞানীরা পৃথিবীকে বদলে দিয়েছেন শিরােনামে প্রকাশিত রিপাের্টে উল্লেখিত ২০টি আবিষ্কারের বর্ণনা দেয়া হলাে।
কফি
আজকাল আমরা ঘরে ঘরে আধুনিক সভ্যতার অনুষঙ্গ হিসাবে কফি নামে পরিচিত যে উপাদেয় পানীয় পরিবেশন করতে দেখি তার আবিষ্কারক হলাে মুসলমান। উত্তর-পূর্ব ইথিওপিয়ার কাফা অঞ্চলের নাম থেকে কফি শব্দটি এসেছে। এখানে ব্যাপক পরিমাণ কফি উৎপন্ন হতাে। তবে তা কারাে জানা ছিল না। তার উপকারিতাও কেউ বুঝতে পারেনি। খালিদ নামে একজন আরব কাফা অঞ্চলে ছাগল চরাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করেন যে, এক ধরনের বীজ ভক্ষণ করায় তার ছাগলগুলােকে বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। তিনি এ বীজ সিদ্ধ করে প্রথম কফি তৈরি করেন। ইথিওপিয়া থেকে ইয়েমেন ও দক্ষিণ আরবে কফি চাষ সম্প্রসারিত হয়। এ কফি বীজ থেকে পানীয় তৈরি করা হতে থাকে। আরব অঞ্চলে উৎপাদিত কফিকে বলা হতাে কফিয়া আরাবিয়া (Coffea Arabia)। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইয়েমেন ও দক্ষিণ আরবে সুফিদের মধ্যে কফি পানের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায়। এ পানীয় পান করে সারারাত জেগে মুসলিম সুফিরা এবাদত বন্দেগী করতেন। ১৬৪৫ সালে আরব থেকে কফি প্রথমে গিয়ে পৌঁছায়। ইতালির ভেনিসে। পাসকুয়া রােসি নামে একজন তুর্কি ১৬৫০ সালে ইংল্যান্ডে কফি নিয়ে যান। রােসি লন্ডনের ল্যাম্বার্ড স্ট্রীটে প্রথম কফি হাউজ খােলেন। আরবী কাওহা' (Qahwa) তুর্কি শব্দ কাহভে (Kahve) পরিণত হয়। পরে এ নাম থেকে ইতালীয় কাফি' (caffe') এবং পরে ইংলিশ কফি’তে (coffe) রূপান্তরিত হয়।
দাবা খেলা
আধুনিক দাবা খেলার জন্ম হয়েছে মুসলমানদের হাতে। প্রাচীন ভারতে চতুরঙ্গ (Chaturanga) নামে এক ধরনের দাবা খেলার প্রচলন ছিল। তবে আজকে আমরা দাবা খেলাকে যে পর্যায়ে দেখতে পাই তার বিকাশ ঘটেছিল পারস্যে। সাসানীয় পারস্যে ভারতের চতুরঙ্গ শতরঞ্চ’ (Shatranj) নামে প্রচলিত হয়। পারস্য থেকে দাবা খেলা পশ্চিম ইউরােপে ছড়িয়ে পড়ে। দশম শতাব্দীতে মুর মুসলমানরা স্পেনে দাবা খেলা চালু করে। দাবা খেলায় ব্যবহৃত রুক (Rook) শব্দটি এসেছে ফারসি ‘রখ’ (Rokh) শব্দ থেকে। ফারসি রখ শব্দটির মানে হলাে চার চাকার গাড়ি (Chariot)।
প্যারাস্যুট
আমরা সবাই জানি অরভিল রাইট ও উইলভার রাইট নামে আমেরিকার দু'ভাই ১৯০১ সালে বিমান আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু তাদের এক হাজার বছর আগে আব্বাস ইবনে ফারনাস নামে একজন মুসলিম কবি, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, সঙ্গীতজ্ঞ ও প্রকৌশলী একটি উড্ডয়ন যন্ত্র তৈরি করতে কয়েকবার চেষ্টা করেন। ৮৫২ সালে তিনি কাষ্ঠখণ্ড একটি ঢিলা আলখাল্লা পেঁচিয়ে কডোভার গ্রান্ড মসজিদের মিনার থেকে ঝাঁপ দেন। পাখির মতাে উড়তে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যর্থ হন। আলখাল্লা তার গতি শ্লথ করে দেয়। নিচে পতিত হওয়ার সময় তিনি সামান্য আহত হন। তবে তার স্বপ্ন বৃথা যায়নি। তার প্রচেষ্টার পথ বেয়ে আধুনিক প্যারাস্যুটের জন্ম হয়েছে।

ফারনাসের জন্ম ৮১০ সালে স্পেনের কর্ডোভায়। ল্যাটিন ভাষায় তার নাম আরম্যান ফারমান (Aman Firman)। তার আকাশে উড্ডয়নের প্রচেষ্টা সম্পর্কে মরক্কোর ঐতিহাসিক আহমদ মােহাম্মদ আল-মাক্কারি সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে তিনি একজন কবি ছাড়া আর কোনাে সূত্র উল্লেখ করতে পারেননি। নবম শতাব্দীর কবি মুমিন ইবনে সাঈদের একটি কবিতা ছিল তার সূত্র। প্রথম মােহাম্মদের আমলে কর্ডোভার শরীরে শকুনের পাখা পেঁচিয়ে যখন উড্ডয়ন করেন তখন তিনি ফিনিক্সের চেয়ে দ্রুতগতিতে উড়ে যেতে সক্ষম হন। প্রথম বারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে দ্বিতীয়বার ৮৭৫ সালে ৭০ বছর বয়সে ইবনে ফারনাস রেশম ও ঈগলের পাখা দিয়ে একটি যন্ত্র তৈরি করে আবার একটি পাহাড় থেকে ঝাঁপ দেন। তিনি বেশ উঁচুতে পৌছাতে সক্ষম হন এবং ১০ মিনিট অবস্থান করেন। তবে তিনি অবতরণ করতে গিয়ে ভেঙ্গে পড়েন। নির্ভুলভাবে তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। পাখির মতাে লেজ না লাগানাের জন্য অবতরণের সময় তিনি টাল সামলাতে পারেননি।
পাহাড় থেকে ইবনে ফারনাসের ঝাপ
অর্থাৎ তিনি (ইবনে ফারনাস) যেসব অতি কৌতূহলােদ্দীপক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান সেগুলাের মধ্যে তার আকাশে উড্ডয়নের প্রচেষ্টা ছিল অন্যতম। এ উদ্দেশ্যে তিনি পালক দিয়ে শরীর পেঁচিয়ে নেন, শরীরে এক জোড়া পাখা সংযুক্ত করেন এবং উঁচুতে পৌঁছে নিচে বাতাসে ঝুলতে থাকেন। এ ঘটনা প্রত্যক্ষকারী কয়েকজন বিশ্বস্ত লেখকের সাক্ষ্য অনুযায়ী এসময় তিনি পাখির মতাে উল্লেখযােগ্য দূরত্ব অতিক্রম করেন। কিন্তু যেখান থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন পুনরায় সেখানে অবতরণ করতে গেলে পৃষ্ঠদেশে প্রচণ্ড আঘাত পান। পাখিরা তাদের লেজের ওপর ভর করে নিচে নেমে আসে। একথা জানা না থাকায় তিনি লেজ ব্যবহার করতে ভুলে গিয়েছিলেন।
ইবনে ফারনাসের আরাে কৃতিত্ব আছে। তিনি পাঠের অযােগ্য গােপন সাংকেতিক বার্তার পাঠোদ্ধার করতে পারতেন। এছাড়া তিনি চশমা ও জটিল ক্রনােমিটার আবিষ্কার করেন। তিনি তার বাড়িকে একটি নক্ষত্রশালা হিসাবে নির্মাণ করেছিলেন। এ বাড়ি থেকে গ্রহ ও নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করা হতাে এবং মেঘ ও বজ্রপাত দেখা যেতাে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইবনে ফারনাসকে বিশ্ব সম্মান দিতে কুণ্ঠা প্রকাশ করেনি। ১৯৭৬ সালে চাঁদের একটি গহ্বরের নামকরণ করা হয় তার নামে। ৬ দশমিক ৮ দ্রাঘিমাংশ এবং ১২২ দশমিক ৩ ই অক্ষাংশে এ গহ্বরের দৈর্ঘ্য ৮৯ দশমিক শূন্য পাঁচ কিলােমিটার । বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নামকরণ করা হয়েছে তার নামে। লিবিয়ার একটি পােস্ট কার্ডে তার প্রতিকৃতি শােভা পাচ্ছে।
স্বর্নযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার
অজু ও গােসলকে মুসলমানদের জন্য ফরজ কাজ হিসাবে গণ্য করা হয়। পবিত্রতা অর্জনের প্রয়ােজনে মুসলমানরা সাবান তৈরির সরঞ্জাম সগ্রহ করতে বাধ্য হয়। এ সাবান এখনাে আধুনিক পৃথিবীতে ব্যবহৃত হচ্ছে। রােমানরা সাবানকে যেভাবে একটি সুগন্ধি দ্রব্য হিসাবে ব্যবহার করতাে, প্রাচীন মিসরীয়রা ঠিক সেভাবে সাবান ব্যবহার করতাে। তবে একমাত্র আরবরাই প্রথম সুগন্ধি দ্রব্য হিসাবে সােডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও এরােমেটিক্সের সঙ্গে শাকসজির তৈল মিশিয়ে শ্যাম্পু তৈরি করে। আরবদের মতাে ক্রুসেডাররা অজু ও গােসল করতাে না। তাই তাদের শ্যাম্পুর তেমন একটা প্রয়ােজন। হয়নি। বাঙালি মুসলমান শেখ দীন মােহাম্মদ ইংল্যান্ডে শ্যাম্পু চালু করেন। তিনি ১৭৫৯ সালে ব্রাইটন সিফ্রন্টে ‘মেহমুদের ইন্ডিয়ান ভ্যাপার বাথ’ (Mahomed's Indian Vapour Baths) নামে শ্যাম্পুর একটি দোকান খােলেন। এ মুসলমানকে সম্রাট চতুর্থ জর্জ ও চতুর্থ উইলিয়াম শ্যাম্পুয়িং সার্জন (Shampooing Surgeon) হিসাবে নিয়ােগ দিয়েছিলেন।
১২৬০ সালে আইন জালুতে তাতারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মিসরীয় সৈন্যরা বর্ম হিসাবে প্রথম অগ্নিপ্রতিরােধক পােশাক পরিধান করে এবং গােলাবারুদ থেকে আত্মরক্ষায়। তাদের হাতে প্রথম পিচ্ছিল পাউডার ব্যবহার করে। এছাড়া আরবরা বর্ম হিসাবে সেলাই করা এক ধরনের কাপড়ও ব্যবহার করতাে। বর্ম তৈরির কৌশল মুসলিম বিশ্বে উদ্ভাবিত হয়েছিল নাকি চীন অথবা ভারত থেকে মুসলিম বিশ্বে এসেছিল তা স্পষ্ট নয়। তবে তা নিশ্চিতভাবে ক্রুসেডারদের মাধ্যমে পাশ্চাত্যে গিয়ে পৌছে। ক্রুসেডাররা। মুসলিম যােদ্ধাদের এ কৌশল ব্যবহার করতে দেখেছিল। মুসলিম যােদ্ধারা প্রতিরক্ষা হিসাবে বর্মের পরিবর্তে বড় বােঝাই ক্যাম্বিসের শার্টও পরিধান করতাে। ক্রুসেডারদের ধাতব বর্মের আক্রমণের বিরুদ্ধে ক্যাম্বিসের এ মােটা শার্ট যুদ্ধে একটি কার্যকর কৌশল হিসাবে প্রমাণিত হয় এবং তা ছিল ব্যবহৃত সামগ্রীগুলাে কার্যকরভাবে পৃথক করার একটি পদ্ধতি। এ কৌশল এত সফল বলে প্রমাণিত হয় যে, ব্রিটেন ও হল্যান্ডের মতাে। শীতপ্রধান দেশগুলােতে তা একটি কুটির শিল্পে রূপান্তরিত হয়।
সার্জারি আধুনিক যুগে শৈল্য চিকিৎসায় যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় সেগুলাে অবিকল দশম শতাব্দীতে মুসলিম শৈল্যবিদ আল-জাহরাবি উদ্ভাবিত যন্ত্রপাতির অনুরূপ। তিনি চোখের অস্ত্রোপচারে সাঁড়াশি, সূক্ষ কাঁচি, ছুরি ও ছােট করাত ব্যবহার করতেন। এছাড়া তিনি আরাে দু'শতাধিক যন্ত্রপাতি তৈরি করেছিলেন। আধুনিক সার্জনরা তার উদ্ভাবিত এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন। আল-জাহরাবির আবিষ্কারের মধ্যে আরাে রয়েছে পেট সেলাই করার জন্য ব্যবহৃত এমন সূতা যা আপনাআপনি গলে যায় এবং যা ক্যাপসুল তৈরিতেও ব্যবহার করা যায়। একটি বানর তার বাশির তার খেয়ে ফেলার ঘটনা থেকে তিনি এ সত্য বুঝতে পারেন। মুসলিম চিকিৎসকগণ আফিম ও এলকোহলের মিশ্রণে এনেসথেশিয়া উদ্ভাবন করেন এবং চোখের ছানি অপসারণে ফাপা সূই আবিষ্কার করেন।
এখনাে চোখের ছানি কাটতে এ ফাঁপা সূই ব্যবহার করা হয়। স্যুপ স্যুপ তৈরি করার পদ্ধতি মুসলমান ছাড়া আর কেউ জানতাে না। ইউরােপে এ পদ্ধতি বয়ে নিয়ে যাবার জন্য আলী ইবনে নাফি স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। নাফির ডাকনাম ছিল জারিয়াব বা কালাে পাখি। নবম শতাব্দীতে তিনি ইরাক থেকে স্পেনের কর্ডোভায় গিয়ে। সেখানে স্যুপ তৈরির ধারণা ছড়িয়ে দেন। পানি অথবা অন্য কোনাে তরল পদার্থের সঙ্গে মাংস, শাকসজি, জুস ও মসল্লা মিশিয়ে সুপ বা উষ্ণ খাদ্য তৈরি করা যায়। নাফি প্রথমে মাছ অথবা মাংস দিয়ে স্যুপ তৈরি করতেন। পরে ফলমূল বা বাদাম দিয়ে। নাফি স্পেনে ক্রিস্টাল গ্লাসও চালু করেন।
পে চেক
আধুনিক চেক শব্দটি এসেছে আরবী সাক থেকে। সাক হলাে মাল ডেলিভারি দেয়ার পর পণ্যের মূল্য পরিশােধের একটি লিখিত অঙ্গীকারনামা। বিপজ্জনক জায়গায় অর্থ বহনের ঝুঁকি এড়াতে সাক-এর আশ্রয় নেয়া হতাে। নবম শতাব্দীতে একজন মুসলিম ব্যবসায়ী বাগদাদের কোনাে ব্যাংক থেকে নিজের নামে ইস্যুকৃত সাক সুদূর চীনে গিয়েও ভাঙ্গাতে পারতেন।
রকেট ও টর্পেডাে
চীনারা যবক্ষার থেকে বারুদ আবিষ্কার করেছিল এবং আঁতশবাজিতে বারুদ ব্যবহার করতাে। কিন্তু আরবরাই প্রথম সামরিক প্রয়ােজনে পটাশিয়াম নাইট্রেটের সাহায্যে বারুদ পরিশােধন করে। মীর ফাতেহউল্লাহ খান হলেন বন্দুক ও বারুদের আবিষ্কারক। 'অ্যারাব সিভিলাইজেশন'-এ ড. লীবন লিখেছেন, ‘গােলাবারুদ হলাে আরবদের একটি শ্রেষ্ঠতম আবিষ্কার। বারুদ আবিষ্কারের আগে তারা বন্দুক ব্যবহার করছিল।
১৩৪০ সালে ফ্রাঞ্জডল আল-বাশুর অবরােধ করলে আরবরা এ শহর প্রতিরক্ষায়। বন্দুক ব্যবহার করে। হিস্টরি অব দ্য মুরিশ এম্পায়ার ইন স্পেন’-এর লেখক স্কট আরবদের বন্দুক ব্যবহারের সত্যতা সমর্থন করেছেন।
আরবরা প্রাথমিক যুগে পটাশিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে পরিচিত ছিল এবং খলিফা খালিদ ইবনে ইয়াজিদ-ও পটাশিয়াম নাইট্রেটের কথা জানতেন। তবে বিভিন্ন নামে রসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হতাে। ধাতুর কাজকর্মে একটি ফ্লাক্স হিসাবে এবং নাইট্রিট এসিড ও একোয়া রিজিয়া তৈরিতে তা কাজে লাগানাে হতাে। জাবির ইবনে হাইয়ান, আবু বকর আল-রাজি ও অন্যান্য আরব রসায়নবিদের রচনাবলীতে এ রসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের রেসিপি খুঁজে পাওয়া গেছে। আরবরাই প্রথম সল্টপিটারকে পরিশােধন করে অস্ত্র তৈরির মানে উন্নীত করে। ১০২৯ সালে ইবনে বখতাওয়ারের ‘আল-মুদ্দাদিমায় অস্ত্র উৎপাদনের উদ্দেশ্যে সল্টপিটার পরিশােধন করার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ১২৭০ সালে সিরীয় সামরিক প্রকৌশলী ও রসায়নবিদ হাসান আল-রাম্মাহ তার আল-ফুরুসিয়া ওয়া আল-মানাসিব আল-হারবিয়া’য় (The Book of Military Horsemanship and ingenious war devices) বিস্ফোরক বারুদ ও বারুদের ব্যবহার নিয়ে আলােচনা করেছেন। তিনি প্রথম পটাশিয়াম নাইট্রেট পরিশােধন করার প্রক্রিয়া বর্ণনা করেন। এছাড়া তিনি পটাশিয়াম নাইট্রেট থেকে ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সল্ট অপসারণে পটাশিয়াম কার্বোনেট ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন।
১২৭০-৮০ সালের মধ্যে তিনি বইটি লিখেছিলেন। বইটিতে ১০৭ প্রকারের বারুদ তৈরির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। রকেট তৈরির বর্ণনা দেয়া হয়েছে ২২টি রেসিপিতে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক হিসাব অনুযায়ী বারুদ তৈরির জন্য প্রয়ােজন ৭৫ শতাংশ পটাশিয়াম নাইট্রেট, ১০ শতাংশ সালফার এবং ১৫ শতাংশ কার্বন। হাসান আল-রাম্মাহর রেসিপিতে ছিল ৭৫ শতাংশ পটাশিয়াম নাইট্রেট, ৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ সালফার এবং ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ কার্বন। ১২৬০ সালে মিসরীয় সৈন্যরা তাতার সৈন্যদের বিরুদ্ধে আইন জালুতের যুদ্ধে ইতিহাসে প্রথম কামান থেকে গােলা ছুঁড়ে। স্পেনের আল-আন্দালুসে মুসলমানরা খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একইভাবে কামান ব্যবহার করে। অগ্নিউদগীরণকারী মুসলিম অস্ত্রগুলাে ক্রুসেডারদের ভীত করে তােলে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে আরবরা রকেট ও টর্পেডাে দু’টিই আবিষ্কার করে। রকেটকে বলা হতাে তায়ার বুরাক বা স্বয়ংক্রিয় ও জলন্ত ডিম। আরবদের উদ্ভাবিত টর্পেডাে ছিল সামনে বশা সজ্জ্বিত নাশপাতির আকৃতি বিশিষ্ট একটি স্বয়ংক্রিয় বােমা। বােমাটি শত্রু জাহাজ ভেদ করে ভেতরে ঢুকে গিয়ে বিস্ফারিত হতাে।
টর্পেডাে আবিষ্কারে মুসলমানদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে এনশিয়েন্ট ডিসকভারি, এপিসােড টুয়েলভ: মেশিন অব দ্য ইস্ট'-এ বলা হয়, “ টর্পেডাে ছিল মধ্যযুগের যুদ্ধে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি আবিষ্কার। ১২৭৫ সালে আরব আবিষ্কারক হাসান আল-রাম্মাহ সিরিয়াতে টর্পেডাে উদ্ভাবন করেন। তার উদ্ভাবিত টর্পেডাে বিস্ফোরক গােলাবারুদ পূর্ণ একটি রকেট নিয়ে পানির ভেতর ছুটে যেতাে এবং তাতে ছিল গােলা বের হওয়ার তিনটি ছিদ্র। যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে এ অস্ত্র ছিল অত্যন্ত কার্যকর।
২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড ডিসকভারি চ্যানেলে জেমি হ্যানিম্যান এবং এডাম স্যাভেজ আরব বিজ্ঞানী রাম্মাহর উদ্ভাবিত টর্পেডাের একটি নমুনা তৈরি করেন এবং কয়েক বার চেষ্টার পর নমুনাটি ছুঁড়তে সক্ষম হন। অস্ত্রটিকে তারা বিশ্বস্ত হিসাবে দেখতে পান।
এসব মারণাস্ত্র ব্যবহারের ফলাফল হয়েছিল বিস্ময়কর। কিন্তু মুসলমানদের দুর্ভাগ্য। এ প্রযুক্তি স্পেনের খ্রিস্টানদের কাছে হস্তান্তরিত হয় এবং মুসলমানদের সঙ্গে শেষ লড়াইয়ে ক্রুসেডাররা কামান ব্যবহার করে। স্পেনের খ্রিস্টানদের কাছ থেকে এ প্রযুক্তি পশ্চিম ইউরােপে গিয়ে পৌছে। ১৩৪২-৪৫ সালে ডারবি ও সলিসবেরির আর্লগণ আল-জাজিরা অবরােধে অংশগ্রহণ করেন এবং তারা গােলাবারুদ ও কামান তৈরির রহস্য ইংল্যান্ডে নিয়ে যান। তার মাত্র দু'এক বছর পর ১৩৪৬ সালে পশ্চিম ইউরােপে ক্রিসির যুদ্ধে ফরাসিদের বিরুদ্ধে ইংরেজরা কামান ব্যবহার করে।
ইউরােপীয়রা আতশবাজি তৈরি করতে জানতাে না। মুসলমানদের কাছ থেকে তারা এ জ্ঞান লাভ করে। একজন ফরাসি বৈরুতে এসে লােকজনকে আতশবাজি করতে দেখেন। এ ফরাসির নাম ছিল বারট্রানডন দ্য লা ব্ৰকিয়েরি। ১৯৪২ সালে ব্ৰকিয়েরি ভ্রমণকারীর ছদ্মবেশে জেরুজালেম ও তুরস্কের আনাতােলিয়া সফর করেন। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি লা ভয়েজ ডি’কোত্রি-মার' শিরােনামে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন। বারগুন্ডির ডিউকের নেতৃত্বে আরেকটি ক্রুসেড পরিচালনা করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে তিনি ইসলামী দেশগুলাে সফর করছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ গুপ্তচর এবং অত্যন্ত সূক্ষদর্শী পর্যটক। ব্ৰকিয়েরি তার যাত্রাপথের সবকিছু খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন। বর্তমান লেবাননের রাজধানী বৈরুতে এসে তিনি স্থানীয় অধিবাসীদের ঈদ উদযাপন করতে দেখতে পান। লােকজন ঈদের আনন্দে আতশবাজি করছিল। জীবনে তিনি প্রথমবার আতশবাজি দেখেন। তিনি যুদ্ধে বারুদের সম্ভাব্য গুরুত্ব অনুধাবনে সক্ষম হন এবং ঘুষ দিয়ে বারুদের ব্যবহার শিখে নেন। ব্ৰকিয়েরি তার এ ধারণা ফ্রান্সে নিয়ে যান।
উইন্ডমিল
৬৩৪ সালে পারস্যের একজন খলিফার জন্য উইন্ডমিল বা বায়ুকল প্রস্তুত করা হয়। শস্য চূর্ণ এবং সেচের জন্য পানি উত্তোলনে তা ব্যবহার করা হতে থাকে। গ্রীষ্মকালে পানির উৎসগুলাে শুকিয়ে গেলে আরব দেশের বিশাল মরুভূমিতে শক্তির একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়াতে বাতাস। কয়েক মাস পর্যন্ত একদিক থেকে অন্যদিকে দ্রুত বেগে বাতাস প্রবাহিত হতাে। প্রতিটি উইন্ডমিল বা বায়ুকলে কাপড় অথবা খেজুর পাতায় আচ্ছাদিত পাল থাকতাে ছয়টি কিংবা ১২টি। ইউরােপে বায়ুকল চালু হওয়ার ৫ শ' বছর আগে আরব দেশে তা ব্যবহার করা হয়েছিল।
পিন হােল ক্যামেরা
প্রাচীন গ্রীক বিজ্ঞানীরা ধারণা করতেন যে, লেসারের মতাে আমাদের চোখ থেকে রশ্মি বের হয়। এ রশ্মি বের হওয়ায় আমরা দেখতে পাই। কিন্তু তাদের ধারণা ছিল ভুল।। দশম শতাব্দীর মুসলিম বিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিদ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে আল-হাইছাম হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যে, চোখ থেকে রশ্মি বের হওয়ার পরিবর্তে বরং আমাদের চোখে রশ্মি প্রবেশ করে। জানালার শাটার ভেদ করে আলাে প্রবেশ করতে দেখতে পেয়ে তিনি প্রথম পিন হােল ক্যামেরা উদ্ভাবন করেন। তিনি অভিমত দেন যে, কোটর যত ছােট হবে ছবি তত বড় হবে। এ ধারণার ভিত্তিতে তিনি প্রথম ক্যামেরা অবসকিউরা নির্মাণ করেন। ইংরেজি অবসকিউরা (Obscura) শব্দটি এসেছে আরবী কামারা' (Qamara) শব্দ থেকে। ইবনে হাইছাম হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি পদার্থবিজ্ঞানকে দর্শন থেকে আলাদা করতে সক্ষম হন।
শােধন
অষ্টম শতাব্দীতে সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়ান শােধন ও পাতন প্রণালী আবিষ্কার করেন। হাইয়ান আলকেমি থেকে রসায়নকে মুক্ত করেন এবং আজকাল আমাদের ব্যবহৃত বহু মৌলিক প্রক্রিয়া ও যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করেন। তার উদ্ভাবিত প্রক্রিয়াগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে স্ফটিকীকরণ, পাতন, শােধন, ঊর্ধ্বপাতন, পরিস্রাবণ, দ্রবণ, কেলাসন, ভস্মীকরণ, গলন, বাষ্পীয়ভবন ইত্যাদি। সালফিউরিক এসিড ও নাইট্রিক এসিডও তার আবিষ্কার। ইসলামে নিষিদ্ধ হলেও তিনি এলকোহল আবিষ্কার করেন। জাবির ইবনে হাইয়ান বৈজ্ঞানিক গবেষণার ওপর জোর দেন এবং তিনি হলেন আধুনিক রসায়নের জনক।
ঘূর্ণায়মান হাতল
ঘূর্ণায়মান হাতল আবিষ্কার করেছেন মুসলিম বিজ্ঞানী আল-জাজারি। ঘূর্ণায়মান হাতল হলাে এমন একটি যন্ত্র যা রােটারি যন্ত্রকে পিস্টন ইঞ্জিনে রূপান্তরিত করতে পারে এবং এ যন্ত্রটি আধুনিককালের বহু যন্ত্রপাতি আবিষ্কারে মূল দিকনির্দেশনা দিয়েছে। মানব জাতির ইতিহাসে ঘূর্ণায়মান হাতল হলাে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। পানি উত্তোলনের জন্য আল-জাজারি যন্ত্রটি তৈরি করেন।
১২০৬ সালে প্রণীত বুক অব নলেজ অব ইনজীনিয়াস মেকানিক্যাল ডিভাইসেস ((Book of Knowledge of Ingenious Mechanical Devices)-এ তিনি ভাল্ব ও পিস্টন নির্মাণের কলাকৌশল বর্ণনা করেন। তিনি পানি এবং ওজন চালিত কয়েকটি যান্ত্রিক ঘড়ি উদ্ভাবন করেন। তাকে রােবটের জনক হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।
ছুঁচালাে খিলান
ইউরােপে গথিক স্টাইলে নির্মিত গীর্জায় শােভিত ছুঁচালাে খিলানের আবিষ্কারক হলাে মুসলমানরা। এ তীক্ষ খিলান রােমান ও নরম্যানদের ব্যবহৃত খিলানের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী। এ খিলান ভবনগুলােকে উঁচু, প্রশস্ত ও সুপরিসর করার সুযােগ দেয়। ঠেকনা দেয়া খিলান করা ছাদ, রােজ উইনডােজ ও গম্বুজ তৈরির কলাকৌশলের জন্য মানব জাতি আরব স্থপতিদের কাছে ঋণী। ইউরােপীয়রা মুসলমানদের তৈরি উঁচু চূড়া, নিচু পাচিল, ফোকর ও বগাকৃতির টাওয়ার সম্বলিত দুর্গ নির্মাণের কৌশল হুবহু অনুকরণ করেছে। পঞ্চম হেনরির দুর্গ নির্মাণের স্থপতি ছিলেন একজন মুসলমান।
টিকা
টিকা দানের কৌশল জেনার অথবা পাস্তুরের নয়, মুসলমানদের আবিষ্কার। ১৭২৪ সালে ইস্তাম্বুলে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী তুরস্ক থেকে টিকা দানের কৌশল শিখে এসে ইউরােপে ছড়িয়ে দেন। তুর্কি শিশুদের গুটিবসন্তের প্রতিষেধক হিসাবে গরুর বসন্তের জীবাণু সম্বলিত টিকা প্রদান করা হতাে। ইউরােপে টিকা উদ্ভাবনের ৫০ বছর আগে মুসলিম দেশগুলােতে টিকা দেয়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
ফাউন্টেন পেন
ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কারক হলাে মুসলমান। ৯৫৩ সালে মিসরের সুলতান মােয়াদ আল-মুয়িজের নির্দেশে ফাউন্টেন পেন আবিস্কৃত হয়। তিনি এমন একটি কলম তৈরির নির্দেশ দেন যেন তার হাত ও কাপড়ে দাগ না লাগে। তার নির্দেশে তৈরি ফাউন্টেন পেনে কালি একটি আধারে সংরক্ষণ করা হতাে। খােলস থেকে নলের সংযােগ দিয়ে কলমের নিবে কালি নেমে আসতাে। কাজী আল-নুমান আল-তামিনির ‘কিতাব আলমাজালিস ওয়াল-মুসাওয়ার্দ’-এ ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারের এ কাহিনীর বিবরণ পাওয়া গেছে। আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়, ক্রুসেডের সময় মুসলমানরা ফাউন্টেন পেন ব্যবহার করতাে। এসময় মুসলিম ভূখণ্ড থেকে ইউরােপে এ প্রযুক্তি স্থানান্তরিত হয়।
অসীম সংখ্যা লিখন
সারা পৃথিবী জুড়ে এখন সংখ্যার ব্যবহার দেখা যায়। এমন একসময় ছিল যখন ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলাে লিখে থেমে যেতে হতাে। শূন্যের ব্যবহার চালু করে আরব গণিতজ্ঞা মানব জাতিকে এ জটিলতা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। সংখ্যা মূলত প্রাচীন ভারতে উদ্ভাবিত হলেও তা প্রথম ব্যবহার করেছিল আরবীয় মুসলমানরা। আনুমানিক ৮৩০ সালের দিকে মুসলিম গণিতজ্ঞ আল-খাওয়ারিজমি ও আল-কিন্দির গ্রন্থাবলীতে প্রথম সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। খাওয়ারিজমির গ্রন্থ আল-ইলম ওয়াল জাবর ওয়াল-মুকাবালা থেকে এলজাব্রা শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। তার নামে এলজাব্রার নামকরণ করা হয়েছে। আল-জাবর ওয়ালমুকাবালা’র অধিকাংশ বিষয়বস্তু এখনাে প্রচলিত। তিন শ’ বছর পর ইতালীয় গণিতজ্ঞ ফিবােনাসি ইউরােপে মুসলিম গণিতজ্ঞদের গ্রন্থাবলী ইউরােপে আমদানি করেন। এলজাব্রা ও ত্রিকোণমিতির অধিকাংশ ফর্মুলা এসেছে মুসলিম বিশ্ব থেকে। আল-কিন্দি ফ্রিকোয়েন্সি বিশ্লেষণে সক্ষম হওয়ায় প্রাচীন বিশ্বের সব সংকেতের পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয় এবং তার আবিষ্কার আধুনিক ক্রিপটোলজির ভিত্তি স্থাপন করেছে।
কার্পেট গালিচা
কার্পেট গালিচা বা কার্পেট ব্যবহারের জন্য আরবদের খ্যাতি ছিল বিশ্বব্যাপী। মধ্যযুগে আরব স্থাপত্য অগ্রগতির চরম শিখরে আরােহন করে। কার্পেট বুননে তাদের কৌশল এবং শৈল্পিক জ্ঞান ছিল অতুলনীয়। ইসলামী রসায়নের বদৌলতে রঙ্গীন ও সুদৃশ্য কার্পেট তৈরি হতে থাকে। পক্ষান্তরে, ইউরােপের মেঝেগুলাে ছিল তখন অনাবৃত।
স্বর্ণযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার পিডিএফ বইটি পড়ে আপনাদের কেমন লেগেছে জানাবেন।