বাঙালির ধর্মচিন্তা pdf - মোহাম্মদ আবদুল হাই - bangalir dormochinta

14 minute read
0

বাঙালির ধর্মচিন্তা একটি পর্যবেক্ষণমূলক প্রবন্ধ বই। যেখানে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ও ধর্মের উত্থান পতন, ক্রমবিকাশ, প্রচার-প্রসার, বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি মোহাম্মদ আবদুল হাই এর এই জনপ্রিয় বইটির pdf পড়তে চান, তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।

বাঙালির ধর্মচিন্তা pdf

বাঙালির ধর্মচিন্তা pdf  বাংলা ভাষাভাষী সকল মানুষের একটি প্রিয় বই। বাংলা অঞ্চলে ধর্মের উৎপত্তি ও প্রভাব, ইতিহাস সম্পর্কে বিশদ গবেষণা ও আলোচনা করে যে কয়টা বই বাংলা সাহিত্যে প্রকাশিত হয়েছে, তারমধ্যে এই বইটি অন্যতম। এই বইটির PDF পেতে পুরো আর্টিকেলের ধাপগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

বাঙালির ধর্মচিন্তা কি?

বাঙালির ধর্মচিন্তা হলো বাঙালির আধ্যাত্মিক ধ্যান; ধর্মপরায়ণ বাঙালি মানুষজনের আচার-আচরণ, রীতিনীতি, ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক আইন, প্রথা ইত্যাদি নিয়ে বিশদ গবেষণামূলক প্রবন্ধ বই। এই বইটির সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল হাই। বইটি ২০১৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এই বইটির পিডিএফ ফরম্যাট পাওয়া যাবে অনলাইনে। 

এই বইটির PDF পড়তে চাইলে নিচের দিকে যান।

Bangalir Dormochinta by Mohammad Abdul hai

ধর্ম ও মিথ নিয়ে সাদ উল্লাহ বলেন: 

সমাজে ধর্মের প্রবর্তন কবে থেকে শুরু তার সঠিক ধারণা কেউ দিতে পারে না। ধর্ম ও মিথ সম্পর্কে অনেকেই বলেন, একে অপরের পরিপূরক। আধুনিক সমাজবিদ্যার প্রতিষ্ঠাতা এমিল ডার্কহেইম (Emile Darkheim-1858-1917)-তার বিখ্যাত গ্রন্থে “Elementary Form of Religious Life” (1912) বলেছেন, ধর্মটা সমাজের অন্যতম একটা কর্ম। ধর্মই সমাজে মানুষের মধ্যে একত্ববােধ এনে দেয়, একে অন্যের প্রতি বিশ্বস্ত করে তােলে। তিনি বিশ্বাস করতেন, ধর্ম একটা ‘Cohesive force' একত্ব বজায় রাখার শক্তি, কিন্তু পরবর্তীকালে সমাজ যতই বৃহত্তর হতে শুরু করল, মানুষের গােষ্ঠীর ইতিহাস বাড়তে লাগল, এই Cohesive force টা ততই বিভক্ত হয়ে যেতে শুরু করে গােষ্ঠীতে গােষ্ঠীতে, কবিলায় কবিলায়। মানুষ যখন বিভিন্ন মতবাদ ধর্মের মাঝে নিয়ে এলাে তখন ধর্ম হল ‘ধারণ করার বস্তু। তাই বিভিন্ন শ্রেণিবাদ-মতবাদ দেখা দিল, দেখা দিল ফেটিসিজম, এনিমিজম, পলিথেইজম, মনােথেইজম, মনিজম, প্যান্থেইজম ইত্যাদি। এবং এই সব ইজম-এর মধ্যে মানুষ আমদানি করল বিভিন্ন কেচ্ছা-কাহিনী, ভূত-প্রেত, দত্যি-দানব, ম্যাজিক, অলৌকিক বিশ্বাস, মােজেজা, ঈশ্বর্য প্রদর্শনের জাদুবিদ্যা, মানুষকে বােকা বানাবার পন্থা অদৃশ্য শক্তির কেরামতির সাহায্য নিয়ে। আর এর থেকেই সৃষ্টি হল মিথ, উপকথা, রেওয়াত, কেচ্ছা-কাহিনী, কিংবদন্তি। পৃথিবীতে এখন কত ধর্ম বিরাজ করছে মানব সমাজে তার সঠিক ঠিকানা পাওয়া মুশকিল। তবে প্রধান যেসব ধর্ম-মতবাদ বর্তমান সমাজে বিদ্যমান সেগুলাে হল দ্বৈতবাদ ও অদ্বৈতবাদ-অর্থাৎ জোরাস্তারবাদ, বৌদ্ধবাদ, জৈনবাদ, হিন্দুবাদ, তাওবাদ, শিন্টোবাদ, কনফুসিবাদ আর অন্যদিকে ইহুদিবাদ, খ্রিষ্টবাদ, ইসলামবাদ। বর্তমান সমাজে মােটামুটি বিদ্যমান ধর্মগুলাে হয় বহু ঈশ্বরবাদ, নয় একেশ্বরবাদে বিভক্ত। এছাড়া আধুনিককালে আরও দুটো বাদ দেখা যাচ্ছে-নিরীশ্বরবাদ অর্থাৎ নাস্তিকতাবাদ আর অস্তিত্ববাদ। এই মতবাদের মধ্যে নির্দিষ্ট কেচ্ছাকাহিনী আছে যাকে মিথ বলা হয়। তবে নিরীশ্বরবাদ ও অস্তিত্ববাদে মিথ বা উপকথা এ পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছে কি-না জানা নেই-অন্তত আমি জানি না।

এখন কথা হচ্ছে, মিথ কাকে বলে? এর সংজ্ঞা কি, অর্থ কি? স্মরণাতীত কাল থেকে মানুষ গল্প বলে আসছে। কারণ গল্প, গাঁথা ইত্যাদি আমাদের কথ্য ভাষায় প্রকাশিত বস্তু, প্রােডাক্ট। আমাদের কাল্পনিক শক্তি ও বুদ্ধিমত্তার বহিঃপ্রকাশ যা মানুষকে পশুদের থেকে পৃথক করে । গল্প তৈরি করা ও কথকতা করা মানুষের সংস্কৃতির বিশ্বরূপ-প্রকাশ। সারাদিন পরিশ্রমের পর দৈহিক ক্লান্তি থেকে আমরা মুক্ত হওয়ার উপায় খুঁজি এই গল্প তৈরি করা ও প্রকাশ করার মাধ্যমে। আর শ্রোতারা এতে খুঁজে পায় জীবনের মূল্যবােধ, অভিজ্ঞতা, বিশ্বাস এবং এর থেকে তৈরি হয় ইতিকথা, উপকথা। 
বাঙালির ধর্মচিন্তা pdf

মিথ বা মাইথকে সংজ্ঞায়িত করা কষ্টকর, কারণ এর জন্ম হয়েছে বিভিন্ন রকমের কাহিনী থেকে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক, প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলে গেছেন। মূলত শব্দটির উৎস হল গ্রিক শব্দ মিথােস (Mythos) থেকে, যার সরল অর্থ-বাক্য, গল্প বা প্লট। কিন্তু পরবর্তী পণ্ডিত ব্যক্তিরা এই মিথ শব্দকে সংকীর্ণভাবে ব্যবহার করেছেন। অধুনা কোন কোন অথরিটি বা কর্তৃপক্ষ মিথের অসম্ভাব্য প্রপঞ্চতার (ফেনােমনন) কারণে অস্বীকার করেন এই বলে যে, মিথ কোন পরিষ্কার (কোহেরেন্ট) ধারণা দেয় না বা এটা কোন সহজবােধ্য ঘটনা নয়। তবে সাধারণভাবে অধিকাংশ পণ্ডিত স্বীকার করেছেন যে, মিথকে (Myth) প্রথাগত ট্র্যাডিশনাল) কাহিনী বলে ধরা যেতে পারে। আমরা এই সংজ্ঞাকেই গ্রহণযােগ্য বলে ধরে নিতে পারি। কিন্তু আমাদের অবশ্যই এটা বিচার করে দেখতে হবে-এই মিথ থেকে আমরা কী পেলাম, বা এর অর্থ কী ? ধরা যাক, মিথ একটা কাহিনী; এর বিষয়বস্তু (প্লট) আছে। আদি, মধ্য ও অন্ত আছে। একটা টিপিক্যাল কাহিনীর শুরুতে আমরা কতকগুলাে চরিত্রের সম্মুখীন হয়। কেউ হতভাগ্য কেউবা একে অন্যের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে, কিংবা নিজেরাই মারপিট করছে। কাহিনীর মধ্যভাগের অবস্থা আরও জটিল, কিংবা টেনশন শুরু হয়ে গেছে। তারপর শেষে এসব জটিলতা ও টেশনের অবসান বা সমস্যার সমাধান হচ্ছে। 

আজকাল আমরা অনেক উপন্যাস বা ফিচার ফিল্মে একই বিষয়বস্তু ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে পাই। যেমন শুরুতে একটি ছেলে একটি মেয়ের সাথে মিলল, মিশল, ভালবাসল, কাহিনীর মধ্যভাগে ছেলেটি (নায়ক) মেয়েটিকে (নায়িকা) হারিয়ে ফেলল। তারপর শেষপর্বে অনেক ঘটনা ঘটার পর তাদের মিলন হল। মিথে এসব বিষয়বস্তু অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, থাকতেই হবে। কোন কাহিনী হয় না, যার শুরু, মধ্য, শেষ নেই। তেমনি মিথেরও। সত্যি বলতে কি, জিউস কিন্তু মিথ নয়, একটা চরিত্র এবং এক কাহিনীর বিষয়বস্তুতে সে একটা চরিত্র হিসাবে (নায়ক বলা যাক) তার দুরূহ কর্ম সম্পাদন করছে। কিন্তু তার অস্তিত্বে দেবত্ব আরােপ করে তার সম্মানে সিচুয়েল পালন করে। অন্যান্য গল্পের মত মিথের প্লট আছে, চরিত্র আছে । মিথের চরিত্রগুলাে দেব-দেবী এবং অন্যান্য অশরীরী অস্বাভাবিক প্রাণী। কিন্তু এই চরিত্রের মাঝে মানব ও পশু চরিত্রও। থাকতে পারে, যে পশুরা মানুষের মতাে কথা বলতে পারে (যেমন, বালাম বাউলের গাধা কিংবা আসহাবুল কাহাফের কুকুর এদের মুখ দিয়ে কাহিনীকাররা কথা। বলিয়েছেন)। 

মিথের অন্য একটা এলিমেন্ট হচ্ছে অবস্থান। একে Setting বলা হয়। এই সেটিং হচ্ছে স্থান ও কাল- যেখান থেকে গল্প বা কাহিনীকে মেলে ধরা হয়, বিস্তার করা হয় । মিথ কখনও বর্তমানে বা নিকট অতীতের ঘটনা নয়, এটা ঘটে সুদূর অতীতে এবং মানুষের পর্যায়ক্রমে ব্যবহারিক জীবনের বাইরে ছায়া-ছায়া আবছা অবস্থার মাঝে যেন ঘুম ঘুম চোখে স্বপ্ন দেখার মত। এই যে সেটিং এটা কোন চিহ্নিত স্থানে ঘটে না, কোন এক স্থানে ঘটে পরে অচেনা হয়ে যায়। গ্রিকদের কয়েকটি মিথ সেটিং করা হয়েছে শহরকে ঘিরে, যেমন-এথেন্স বা থিবস কিংবা এমন কোন স্থানে যা মানুষের কাছে অতি পরিচিত। অন্যান্য মিথের সেটিং অজানা-অচেনা স্থানে ঘটেছে, ঘটেছে পাতালে যেখানে কোন মানুষের পদচারণা নেই। 

কিংবা মাউন্ট অলিম্পাসে-যা শুধু কিংবদন্তি বা মিথ হিসাবে দেব-দেবীদের আবাসভূমি বলে পরিচিত, কিংবা বহু প্রাচীনকালের ক্রীট দ্বীপে। এই যে মিথ তা শুধু আমাদের ধারণার মধ্যে সময় ও গতির সাথে সম্পৃক্ত। যদিও মিথের স্থান-কাল-পাত্র আছে, কিন্তু এটাকে ঠিক গল্প বলে ধরা হয় না, এটা এমন একটা কথিত কাহিনী যা প্রথাগতভাবে ট্রাডিশনালি) বহুকাল ধরে চলে আসছে। ট্রাডিশন শব্দটা ল্যাটিন শব্দ ট্রাডাে (Trado) থেকে আগত। এর অর্থ হচ্ছে হস্তান্তর করা। একটা কাহিনী মুখে মুখে কথকদের দ্বারা একে অপরের কাছ থেকে বলে যাওয়া। কেউ লিখে রাখেনি। সে সমাজে তখন লেখালেখির প্রচলন ছিল না, কাহিনী কেচ্ছা ধরে রাখা হত মুখে মুখে এবং যুগযুগান্তর ধরে পুরুষানুক্রমে নেমে এসেছে, কিন্তু সংযােজন বা অতিরঞ্জিত হয়ে। এইভাবে মিথকে জিইয়ে রাখা হয়েছে। এতে করে বর্তমান সমাজ জানতে পেরেছে সুদূর অতীতে কী সব ঘটনা ঘটেছে মানব সমাজে বা জীবনে, যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে অবাস্তবরূপে। এসব কাহিনীর অর্থ আছে, মূল্যবােধ আছে, শিক্ষণীয় বিষয়ও আছে। কারণ বর্তমান যুগের মানুষেরা জানতে পারে, সে-যুগে জীবনধারা কেমন ছিল, সমাজ ব্যবস্থা কেমন ছিল, মানুষে মানুষে আচরণ কেমন ছিল, অন্ত দ্বন্দ্বকলহ ও ক্রাইসিস কেমন ছিল। উদাহরণস্বরূপ হােমারের ইলিয়াডে (খ্রি. পূ. অষ্টম শতাব্দিতে রচিত) দেখা যায়, একিলিস কেমন করে ট্রয়ের রাজা প্রায়ামকে খাদ্যবস্তু গ্রহণ করার জন্য অনুরােধ করেছে, সান্ত্বনা দিচ্ছে, যখন রাজা প্রায়াম পুত্রশােকে (হেক্টরের মৃত্যুতে) মুহ্যমান, মৃতপ্রায়, আর অনুরােধ করছে সেই ব্যক্তি যে তার
পুত্রহন্তা। 

একিলিস হিবসের রাজকুমারী নিওবের (Niobe) গল্প বলে বােঝাচ্ছে; যদিও আর্টিমেস ও এপােললা তার সাত পুত্র ও সাত কন্যাকে নিধন করেছিল। তবুও তাে সে। খেয়েছে, ক্রমাগত উপবাস থাকেনি। সুতরাং রাজা প্রায়াম এক পুত্র শােকে খাবেন না কেন? এর চারশ বছর পর দার্শনিক সক্রেটিস যখন মৃত্যু বিচারের সম্মুখীন, তখন তিনি একিলিসির উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, সত্যের খাতিরে তিনি যেমন কাপুরুষের মত বেঁচে না থেকে সাহসের সাথে ট্রয় নগরীর দেয়ালের পাশে মৃত্যুকে মােকাবিলা করেছেন, আমিও তেমনি সত্য রক্ষার জন্য মৃত্যুকে ভয় করি না। [ সূত্র Classical Myth by Barry B. Powell. 1998. Printice Hall Inc. New Jersey, U.S.AT] কিংবদন্তির সাথে বেশ কয়েকটি বড় ধর্মের যােগসূত্র রয়েছে। কেননা এর সাথে অতিপ্রাকৃতিক বিষয়, দেব-দেবী, ঈশ্বর, ভূতপ্রেত বিশেষভাবে জড়িত। এতে অবশ্য দুটো প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। পৃথিবী সম্বন্ধে একটা অবচেতন ধারণা দিতে প্রাকৃতিক প্রপঞ্চ (ফেনােমেনন)কে খাড়া করা হয়েছে অদৃশ্য বা বহিশক্তিকে টেনে এনে। দ্বিতীয়, মিথ বা কিংবদন্তি, উপকথার মধ্যদিয়ে একটা প্রথা বা প্রতিষ্ঠানকে প্রচলিত করা হয়েছে রিচুয়েল হিসাবে। এই কারণে দলগত অনুষ্ঠান ও আলােচনাকালে মানুষের কাছে এইসব প্রথাগত উপকথা, অবিশ্বাস্য গালগল্প পুরােহিত বা ধর্মাচারীদের দ্বারা পুনঃপুনঃ ব্যক্ত ম্যাজিকের মত মানুষকে বিশেষ করে অশিক্ষিত সমাজকে-তাকে লাগানাে হয় বাধ্যগত পােষাপ্রাণী বা যন্ত্রের মত যাদের বােধশক্তি বলে বিশেষ কিছু থাকে না।

মিসরের ফ্যারাওদের রাজসভায় পুরােহিত ও ম্যাজিশিয়ানদের আধিভৌতিক কর্মকাণ্ড দ্রষ্টব্য। সময়ের সাথে সাথে অবশ্য এসব ধারণা বদলে যাচ্ছে এবং মিথের প্রভাব কমে গিয়ে কথা-কাহিনীর রূপ ধারণ করে গল্পে-সাহিত্যে স্থান পাচ্ছে বিশেষ করে শিশুসাহিত্যে। এইভাবে মিথ এখন মানুষের কাছে সেকেন্ডারি আকারে নেমে এসেছে। তাই সাধারণভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে এর আবেদন কিছু লাঘব হলেও গালগল্প হিসাবে বেশ সমাদর রয়েছে পড়ুয়াদের কাছে। মিথকে কয়েকটি বিশেষ শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-
  • পৃথিবীর উৎস এবং এর কাঠামাে; 
  • মানব সৃষ্টি ও তার প্রকৃতি; 
  • সৃষ্টিতত্ত্ব ও প্রাকৃতিক প্রপঞ্চ- যেমন প্রাণী, উদ্ভিদ, নক্ষত্র জগত, আবহাওয়ার গতি
  • ইত্যাদি; 
  • প্রাকৃতিক ছন্দ
  • প্রকৃতির পরস্পরবিরােধী ভাবধারা-ফিজিক্যাল ও মরাল অর্থাৎ আলাে-অন্ধকার,
  • ভাল-মন্দ ইত্যাদি; 
  • পৃথিবীর আদি-ইতিহাস এবং তার অন্তিম ভাগ্য;  অন্য জগতের প্রকৃতি
যেমন স্বর্গের সুখভােগ ও নরকযন্ত্রণার ব্যাপার, দেব
দেবীদের ও মৃত ব্যক্তিদের (আত্মার) আবাসভূমি এবং দেব-দেবীদের ও ট্র্যাডিশনাল বীরপুরুষদের সাথে সনাতন সম্পর্ক। এছাড়াও ভাবরাজ্যের কবি ও লেখকদের হাতে মিথের বিকৃতি দ্বারা কিংবদন্তির নায়ক-নায়িকাদের ভিন্ন বিবরণ। এই সূত্রে মহাকবি হােমার ও নাট্যকার সফোকলসের ‘এডিপাস' সম্পর্কে বিভিন্ন বিবরণ। অবশ্য উভয়েই স্বীকার করেছেন হিবসের রাজা এডিপাস তাঁর পিতাকে হত্যা করে তার স্ত্রীকে বিবাহ করেন, যে মহিলা (জোকাস্টা) তার মা ছিল। কিন্তু হােমার আরও বলেছেন যে, এডিপাস সত্য উদঘাটনের পরও রাজত্ব করে গেছেন। অন্যদিকে সফোকলস বলেছেন, সত্য উঘাটনের পর এডিপাস চোখে পিন ঢুকিয়ে রাজ্য পরিত্যাগ করে হতভাগ্যের মত ভবঘুরে জীবনযাপন করেন। মিথের রচনা, ঘটনা ও সত্যতা সবই নামহীন, বেনামী (Anonymous)। কারণ এগুলাে ট্র্যাডিশনাল, প্রথাগত; ইতিহাসলব্ধ নয়। আধুনিককালে কাহিনীকারদের রচনা, যেমন টলস্টয়ের ‘War and Peace' কিংবা জর্জ লুকাসের ফিল্ম-এর বিপরীতে মিথের কোন চিহ্নিত রচনাকার বা লেখক নেই। 

মিথের ওপর ভিত্তি করে সাহিত্যকর্মের লেখক আছে, কিন্তু মিথের নেই। গ্রিক নাট্যকার সফোকলস কিং এডিপাসের নাটক লিখেছিলেন, কিন্তু এডিপাসের মিথ বহু যুগ ধরে মুখে মুখে এসে গেছে, কেউ জানে না এ কাহিনীর প্রথম কথক কে ছিলেন তেমনি ইউসুফ জুলেখা, লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, সসানী-মহীয়াল, হীর-রাঞা ইত্যাদি। মুখে মুখে বলতে বলতে ও শুনতে শুনতে মিথের কাহিনীর সব সময়ই কিছু না কিছু পরিবর্তন ঘটছে। কারণ বিভিন্ন বক্তা ও কথক কাহিনীকে নিজের মত করে বলতে গিয়ে হয়ত কখনও ঘটনা বা চরিত্রের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যেমন শয়তানের। চরিত্র। দ্বিত্ববাদ মিথে প্রকৃতির মধ্যে দুটি পরস্পরবিরােধী দেবতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে-যার রূপ পেয়েছে বিশ্বজনীনভাবে। প্রাচীন মিসরে অশুভ শক্তি সেট (Set) এবং শুভ চরিত্র হােরাসের কথা; পারস্যে জোরাস্টারবাদে অশুভ শক্তি আহরিমান ও শুভ শক্তি আহুরা মাজদা (হােরমুজ)। এরই সূত্র ধরে বাইবেলের আদিপুস্তকে ইহুদি-খ্রিস্টানদের ঈশ্বর ও স্যাটানের কথা। এইসব কাহিনীতে দেখা যায় ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে অশুভ শক্তি (স্যাটান) নস্যাত করতে প্রয়াস পাচ্ছে।

বাইবেলে সাতান এর আগমন বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন ঢঙে। যেমন ব্যাবিলনে নির্বাসনের পূর্বে নেবুচেদনজর যখন ইহুদিদের ব্যাবিলনে বন্দরে নিয়ে যায় তার আগে শয়তানের রূপ ছিল সর্পাকৃতি। তারপর জরথুস্ত্রর ধারণায় আহরিমানের রূপ। তারপর পতিত দেবদূত (angel) হিসাবে আজাজিল ও গ্রিক ডায়াবলস (diabolos)-এর আদলে ডেভিলের রূপ। এরপর গ্রিক উপকথার সাতির-এর (Satyr) রূপ, যার সাথে মিল রয়েছে হিব্রু শব্দ সাইরিম (sairim) -এর সাথে; এর অর্থ বন্যছাগল বিশেষ করে পাঠা (He-goat) । এরা যৌন ব্যাপারে বিশেষ ক্রিয়াশীল। তাই মনােবিজ্ঞানে nymphomania-র বিপরীতে satyriasis (সাতিরিয়াসিস) শব্দের উৎপত্তি-যার অর্থ হল -An exaggerated sexual desire in human males জেরাল্ড মেসাডি (Gerald Messadie) তার নামকরা গ্রন্থ A History of the Devil-এর মুখবন্ধে 99169, God had to have a counter part, other wise all the woes of humanity would have to be ascribed to him অর্থাৎ নিশ্চয়ই ঈশ্বরের একজন প্রতিপক্ষ আছে, তা না হলে মানুষের দুঃখ-দুর্দশার দায়িত্ব তার ওপরই বর্তাত । (Published by Kodansha America Inc. 1997). সৃষ্টিতত্ত্ব সম্বন্ধে সব ধর্মই প্রায় একই কথা বলে যে, আদিতে শুধু জল আর জল। মিসর, ব্যাবিলন, বেদ, হােমারের ইলিয়াড, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার এদাস, মেক্সিকো-প্রায় সব দেশের ধর্মপ্রন্থে এর উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়াও মিশরীয়, ফোনিশীয়, হিন্দু, পার্সি, গ্রিক ও পলিনেশীয় ধর্মও বলে যে, একটা ডিমের ওপর তা দিয়ে পৃথিবীকে প্রসব করানাে হয়েছে। 

কাদা থেকে যে মানবকুলের সৃষ্টি-এ সম্বন্ধে বাইবেলের আদিপুস্তক ২: ৭ ও জব ৩৩; ৬-এ বর্ণিত ভাষ্য ছাড়াও মিসরের কাহিনী হল ঈশ্বর নেমু (Khnemu) কুম্ভকাররূপে কাদা দিয়ে মানুষ তৈরি করেন। আদি অস্ট্রেলিয়াবাসীদের ধারণা যে, পান্ডজেল দেবতা (Divine Pund-Jel) দো-আঁশলা মাটি থেকে মানুষের আকৃতি দেন। গ্রিক মিথে প্রমিথিউস নদীর কাদা থেকে মানুষ তৈরি করেন। তেমনি অনেক জাতির ধারণা যে, নারী পুরুষের মাংস থেকে তৈরি (formed from the flesh of man) । মৃত্যু ও পুনরুত্থানের ধারণা জন্মেছে ঋতুর পরিবর্তন, দিন ও রাত (সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত), আলাে ও অন্ধকারের ধারণা থেকে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাবিলনের তামুজ মিসরের ওসিরিস, ফ্রিজিয়ানদের আত্তিস, ক্যানানাইটদের বাল’-এর দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এর সূত্র ধরে বর্তমানে রুমানিয়া ও রাশিয়ায় পুতুলের প্রতীক কবর দেয়া হয় এবং পর দিন তাকে ভােলা হয়। 

Bangalir Dormochinta pdf

যে পুতুলের নামে এ প্রথা প্রচলিত তাকে স্ক্যালােজন (Scalojan) বলা হয়; রুমানিয়ায় আর রাশিয়ায় বলা হয় কস্ট্রোবঙ্কো (Kostrobonko) আদিকালের পৃথিবীর ইতিহাস সম্বন্ধে বেশ মজার কাহিনী রচিত হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমান পৃথিবী পুরনাে পৃথিবীর ধবংসের ওপর সৃষ্ট। পুরনাে পৃথিবী শয়তানের কারসাজিতে কিংবা মানুষের দুষ্ট প্রকৃতির জন্য মহাপ্লাবনের দ্বারা ধ্বংস হয় এবং পরে গড়ে ওঠে নতুন পৃথিবীর। বাইবেলে নােয়াহর মহাপ্লাবনের কাহিনীর মত প্রায় নব্বইটি জাতির মধ্যে মহাপ্লাবনে বিশ্বাস আছে এবং এও বিশ্বাস করে যে, কিছুসংখ্যক মানুষ জাহাজে (আর্ক) করে বেঁচে গেছে এবং বন্যার শেষে সে-জাহাজ এক পাহাড়ের গায়ে ঠেকে যায়। এই পাহাড় সম্বন্ধে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থানের উল্লেখ আছে। যেমন বাইবেলে আরারট, আমেরিকায় কলহুয়াকান (colhuacan) পর্বত প্যাসিফিক কোস্টে; আপার মিক্সিটিকায় মাউন্ট এ্যাপােআলা; গােয়েমিজ (Guaymies)-এ মাউন্ট নেবা (Neba) ইত্যাদি। স্বর্গ ও নরক সম্বন্ধে বিভিন্ন জাতির প্রায় একই ধারণা। বাইবেলের এডেন উদ্যানের মত গ্রিকদের হেসপেরাইডস (Hesperides) উদ্যান, যেখানে সুমিষ্ট ফল ও মধুর নহর রয়ে যাচ্ছে। বাইবেলের আদিপুস্তকে ২: ১০ যে চারটি নদীর কথা আছে, তেমনি হিন্দু পুরাণে, হােমারের ওডিসিতে; এবং আমেরিকা ও পলিনেশিয়ার কিংবদন্তিতে নদীর কথা উল্লেখ আছে। আবার সূক্ষ্ম সূতার ওপর দিয়ে মৃত ব্যক্তিদের পুল পার হয়ে যেতে পাপী লােকদের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পতনের কাহিনীও একরূপ।

মানুষের ধারণা যে, যে ব্যক্তি অন্য জগতের খাদ্য গ্রহণ করেছে সে আর পৃথিবীর মানুষের কাছে ফিরে আসবে না।। গ্রিক পুরাণে আছে, পা-তাল-রাজা হেডেস তার ভগ্নি-কন্যা পার্সিফোনকে চুরি করে নিয়ে পাতালে চলে যায়। সেখানে পুটো (Pluto) পরিগ্রেনেটের বিচি খাইয়ে তাকে বন্দী করে ফেলল; তেমনি জাপানি পুরাণে আছে যে, ইজানাগি তার স্ত্রী ইজানামিকে ভুতের দেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। কারণ তার স্ত্রী সে দেশের খাদ্য গ্রহণ করেছিল। এ ধরনের এক কাহিনী ফিনল্যান্ডেও আছে। তবে বাইবেল ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে সরাবুন তহুরা এবং আনত-নয়না আনিন্দ্যসুন্দরী হুরী ও অল্প বয়স্ক গিলমান ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে কিনা পুণ্যবান স্বর্গবাসীদের জন্য, এ প্রকারের আশ্বাস অন্য কোন কাহিনীতে পাওয়া যায় না। 819* u American Peoples Encyclopedia, Classical Myth by Barry B. Powell, Harpers Bible Dictionary ইত্যাদি। সংকলন সূত্র : লেখকের ঈশ্বর, সৃষ্টি ও ধর্ম (প্র.প্র.২০০৭) শীর্ষক গ্রন্থ থেকে সংকলিত।

বাঙালির ধর্মচিন্তা pdf free

এখান থেকে বইটির PDF পড়তে পারবেন।

Book Publisher Author  F Size
বাঙালির ধর্মচিন্তা সূচিপত্র মোহাম্মদ আবদুল হাই ২৯ মেগাবাইট
Bookshop Price Language  T Page
Durdin Magazine Only 640 Taka Bangla 664



বইটি পাঠ করার পর আপনাদের প্রতিক্রিয়া আমাদেরকে ইমেইল করে জানাতে পারেন। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের বাঙালির ধর্মচিন্তা pdf পড়তে তুলনামূলক ভাল সাহায্য করেছে।

 আরো পড়ুন: ইলেভেন মিনিটস PDF

Tags

Post a Comment

0Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Post a Comment (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !