ইলেভেন মিনিটস একটি ইন্টারন্যাশনাল বেস্টসেলার বই। বইটির মূল লেখক পাওলো কোয়েলহো। রোদেলা প্রকাশনী থেকে বইটি অনুবাদ করেছেন অনীশ দাস অপু।
ইলেভেন মিনিটস pdf
ইলেভেন মিনিটস কি?
ইলেভেন মিনিটস pdf হলো পাওলো কোয়েলহো রচিত কল্পনাধর্মী রূপক উপন্যাস বই। বইটি ২০০৩ সালে প্রকাশিত হওয়ার পরেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। অনীশ দাস অপু এই বইটির প্রাঞ্জল ভাষানুবাদ করেছেন। বইটির লেখক পাওলো কোয়েলহো একজন ব্রাজিলিয়ান সাহিত্যিক।ইলেভেন মিনিটস by পাওলো কোয়েলহো pdf
উৎসর্গ
২৯ মে ২০০২, আমি এ বইয়ের কাজটি শেষ করলাম। বােতলে বসন্ত থেকে কিছু অলৌকিক পানি আনার জন্য আমি ফ্রান্সের লর্ডস-এর গ্রুটো গেলাম। শান্ত সৌম্য ব্যাসিলিকা আমাকে বললাে, তুমি কি জাননা, তুমি দেখতে ঠিক পাওলাে কোয়েলহাের মতাে!' আমি বললাম, আমিই পাওলাে কোয়েলহাে। লােকটি আমার সাথে কোলাকুলি করল এবং আমাকে তার স্ত্রী ও নাতি-নাতনির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। সে তার জীবন থেকে আমার বইয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে বলে চললাে। অবশেষে বললাে, তারা আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে। আমি প্রায়ই এ কথা আগেও শুনেছি এবং তারা সবসময় আমাকে মহান বলে ভাবে। যা হােক, এ মুহূর্তে আমি প্রকৃতপক্ষে তয় অনুভব করছি। কারণ, আমি জানি এটা আমার প্রথম উপন্যাস ইলেনে মিনিটস'-এ তুলে ধরা হয়েছে কর্কশ, কঠিন, আঘাতপ্রবণভাবে। আমি বসতে সেখানে গেলাম বােতলগুলাে ভরতে।যেভাবে লেখা হলাে ইলেভেন মিনিটস
সেক্স বা যৌনতার পবিত্র প্রকৃতি আবিষ্কার করতে আমার দীর্ঘ সময় লেগেছে। যৌবনে আমি ছিলাম খুবই স্বাধীন, যা ইচ্ছা তা-ই করে বেড়িয়েছি। সত্তরের দশকে আরভিং ওয়ালেস আমেরিকার সেন্সরশিপ নিয়ে একটি বই লেখেন। বইয়ের নাম ‘দ্য সেভেন মিনিটস' এ উপন্যাসে যৌনতার বিষয়টি খুব বেশি আসে নি। ১৯৯৭ সালে, ইতালির মানতুয়ায় একটি বক্তৃতা দান শেষে আমি ফিরে যাই আমার হােটেলে। দেখি কে একজন একটি পাণ্ডুলিপি রেখে গেছে রিসেপশনে। আমি অযাচিত কোনাে পাণ্ডুলিপি পড়ি না। তবে এটি পড়লাম একজন ব্রাজিলীয় পতিতার সত্যিকারের অ্যাডভেঞ্চার। ২০০০ সালে, আমি জুরিখ দিয়ে যাচ্ছি, আমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ওই পতিতার, পেশাদারভাবে সে সােনিয়া নামে পরিচিত। জানতে চাইল তার লেখা আমার পছন্দ হয়েছে কিনা। আমি বললাম লেখাটি আমার ব্রাজিলীয় প্রকাশকের কাছে পাঠিয়ে দিতে। তবে প্রকাশক শেষে সিদ্ধান্ত নেয় বইটি প্রকাশ করবে না। সােনিয়া ওই সময় ইটালি থাকত। জুরিখে এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। সে আমাকে, আমার এক বন্ধু এবং ব্লিক’ পত্রিকার এক মহিলা সাংবাদিককে (ইনি আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন) নিমন্ত্রণ জানাল ল্যাংস্ট্রসে যাবার জন্য।
এটা স্থানীয় পতিতালয়। আমি জানতাম না। সােনিয়া ইতিমধ্যে তার সহকর্মীদের বলে দিয়েছে যে আমরা আসছি। আমি অবাক হয়ে গেলাম দেখে অনেক মেয়েই এলাে আমার লেখা বই হাতে। তারা অটোগ্রাফ চাইছিল। ওই সময় সে নিয়ে লেখার চিন্তা-ভাবনা চলছিল মাথায়। তবে প্লট বা মূল চরিত্রগুলাে খুঁজে পাচ্ছিলাম না । ল্যাংস্ট্রাসে গিয়ে মনে হলাে সেক্স নিয়ে লিখতে হলে আসলে আগে জানা উচিত কেন সেক্স নিষিদ্ধ বস্তু। ‘সুইস ম্যাগাজিন L'llustree'র এক সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে আমি ল্যাংট্রাসের অভিজ্ঞতার কথা স্বতঃস্ফুর্তভাবে বলছিলাম তাকে। সে এ নিয়ে দীর্ঘ একটি প্রতিবেদন রচনা করল। এর ফল যা হলাে- জেনেভায় বহু পতিতা এলাে আমার অটোগ্রাফ নিতে। এদের একজন আমার নজর কেড়ে নেয়। এই মেয়েটির সঙ্গে আমি বেশ কয়েকদিন বৈঠক করি। সঙ্গে ছিল আমার এজেন্ট এবং বান্ধবী মােনিকা আন্তন। ওই মেয়ের সঙ্গে বৈঠকের ফলে জন্ম নিয়েছে ইলেভেন মিনিটস।
আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার সুইশ প্রকাশক অ্যানা ভন প্লান্টাকে যিনি তার দেশের পতিতাবৃত্তি সম্পর্কে আমাকে প্রচুর তথ্যের যােগান দিয়েছেন। ধন্যবাদ দিতে চাই জুরিখের সােনিয়াকেও যার সঙ্গে মানতুয়ায় প্রথম দেখা আমার (হয়তাে একদিন তােমার বইও প্রকাশ হবে।) ধন্যবাদ রইল মার্থা, আনোেয়া এবং ইসাবেলাকে। আরও ধন্যবাদ থাকল জেনেভার এমি, লুসিয়া, আদ্রেই, ভ্যানেসা, প্যাট্রিক, থেরেস ও অ্যানা ক্রিস্টিনাকে। সবশেষে ধন্যবাদ দিব আসল মারিয়াকে, যার অভিজ্ঞতা আমাকে এ বই লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এই মারিয়া বর্তমানে তার স্বামী এবং চমৎকার দুটি কন্যা সন্তান নিয়ে সুসানে বাস করছে।
ইলেভেন মিনিটস এর ভূমিকা
রােদেলার তরুণ প্রকাশক রিয়াজের সঙ্গে বছরখানেক আগে বসুন্ধরা সিটির বর্ষার বইমেলায় পরিচয় করিয়ে দেন রুমী ভাই (প্রচ্ছদ শিল্পী এবং সায়েন্স ফিকশন সংকলন করে বিখ্যাত হাসান খুরশীদ রুমী।) রিয়াজ তখন প্রকাশনার জগতে পা দেয়ার তােড়জোড় করছেন। বললেন আমি যেন তাকে হিট কোনাে লেখকের থ্রিলার অনুবাদ করে দিই। দিব’-আশ্বাস দিয়েছিলাম তাকে। এরপর রিয়াজের সঙ্গে যােগাযােগ ছিল না আমার। গত বইমেলায় তিনি চমকার প্রচ্ছদের একটি বই নিয়ে এসে হাজির। বললেন, “দাদা, আপনাকে এ বইটি অনুবাদ করে দিতে হবে। রুমী ভাই বলেছেন এ ধরণের বই আপনার চেয়ে ভালাে কেউ অনুবাদ করতে পারবে না।' কী ধরণের বই ? বইয়ের নাম ইলেভেন মিনিটস, লেখক পাওলাে কোয়েলহাে।
আমি এর আগে পাওলোে কোয়েলহাের নামই শুনি নি। (নাম না শােনারই কথা। কারণ আমার জগত থ্রিলার, হরর, সায়েন্স ফিকশন ও ক্ল্যাসিকস-এ সীমাবদ্ধ। কোয়েলহাে'র জগত এ থেকে আলাদা।) রিয়াজ সােৎসাহে জানালেন কোয়েলহাে নামকরা পর্তুগিজ লেখক, ব্রাজিলের হমায়ুন আহমেদ। ইলেভেন মিনিটস তার লেটেস্ট বই। এক পতিতাকে নিয়ে গল্প। রিয়াজ বইটি আরেকজনকে অনুবাদ করতে দিয়েছিলেন, (আমার কাছে ওই সময় আসেন নি কারণ তিনি জানতেন থ্রিলার বা হরর ছাড়া অন্য কিছুতে আমার তেমন উৎসাহ নেই।) সেই নােক নাকি বইটি কয়েকপাতা পড়েই রিয়াকে ফেরত দেন 'অশ্লীল' বলে এবং পরামর্শ দেন এ বই প্রকাশ না করার জন্য। রিয়াজ তার পর চটে লাল হয়ে যান এবং উল্টো তাকে শুনিয়ে দেন, যার মধ্যে সৃজনশীলতা নেই তাঁর পক্ষে কোয়েলহাে'র বই’র মর্ম উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। এরপর রিয়াজ কমী ভাই'র কাছে পরামর্শ চাইতে যান কাকে দিয়ে ইলেভেন মিনিটস-এর গ্রহণযােগ্য অনুবাদ করানাে সম্ভব।
রিয়াজের ভাষ্য অনুযায়ী, রুমী ভাই তাৎক্ষণিকভাবে আমার নাম উল্লেখ করে বলেন, অনীশই এ ধরণের বই অনুবাদে সেরা। রিয়াজের কথা শুনে আমি মুচকি হাসি। এ ধরণের বই বলতে রুমী ভাই কী বােঝাতে চেয়েছেন তা তিনিই জানেন, তবে আমার মনে হয় সরাসরি তিনি যেটা বলেন নি তাহলাে- বইতে যৌন বর্ণনা থাকলে তা সংক্ষেপিত করার পক্ষপাতি আমি নই। এটা আমি কখনাে করি না। কিছু থ্রিলার বইতে প্রচুর সেক্স থাকে। আমি সে সব বর্ণনায় কখনাে কাচি চালাই না। কারণ লেখক যদি যৌন বর্ণনায় উদার হতে পারেন, অনুবাদক হিসেবে আমি কেন সেন্সরশিপের মাতরী করতে যাব? তাছাড়া এসব বইতে আমি পরিষ্কার উল্লেখ করে দিই এগুলাে অপ্রাপ্তবয়স্কদের পড়া বারণ। যাহােক, রিয়াজের উৎসাহেও আমি শুরুতে খুব একটা উৎসাহ বােধ করি নি। কারণ যেসব লেখক সম্পর্কে আমি অবগত নই তাদের বই না পড়ে অনুবাদে সম্মতি প্রদানের কাজটি কখনােই করি না। তু রিয়াজের অনুরােধে বইটি আমি বাসায় নিয়ে আসি এবং প্রথম পৃষ্ঠাটি পড়তে গিয়েই চমকে যাই।
কী সুন্দর একটা শুরু। এক দেশে ছিল এক পতিতা, নাম তার মারিয়া। আমি মমমুগ্ধের মতাে পড়তে থাকি। কোয়েলহাে'র চমৎকার সহজ ভাষা, কাহিনীর গাথুনি কোথাও আটকায় না আমাকে, তরতর করে এগিয়ে যেতে থাকি। অনুবাদের ক্ষেত্রে প্রকাশকদের চাপে এবং সময় স্বল্পতার জন্য অনেক সময়ই পুরাে বইটা পড়া হয়ে ওঠে না আমার। তবে ইলেভেন মিনিটস এক নিশাসে পড়ে শেষ করেছি আমি। এতই ভালাে লেগেছে। আমার বােধগম্য হয় না রিয়াজের এই অনুবাদক কী করে এতা চমৎকার একটি বইকে অশ্লীল আখ্যায়িত করলেন। বইটিতে কাহিনী প্রয়ােজনে বিন্নি সময় অনিবার্যভাবে এসেছে সে। তবে কোয়েলহাের দারুণ লেখনীতে সেইসব যৌন বর্ণনা শিল্প বা আর্টের রূপ পেয়েছে, কোনােভাবেই একে অশ্লীলতার দোষে দুষ্ট করার অবকাশ নেই।
পাঠক বইটি পড়লে আমার সঙ্গে একমত হবেন আশা করি। ইলেনে মিনিটস মারিয়া নামের এক ব্রাজিলীয় পতিতার চমক্কার মানবিক কাহিনী। বিদেশী এ কাহিনী পড়ার সময় আপনার কি মনে হবে না মারিয়া একজন বিদেশিনী, তাকে মনে হবে কাছের কেউ। তার জন্য আপনার মায়া লাগবে, কষ্ট হবে। বইটি পড়া শেষে একটি সুলিখিত উপন্যাস পাঠের তৃপ্তিতে সই হবেন। হয়তাে পাওলাে কোয়েলহাের আরাে বই পড়ার ইচ্ছে জাগবে আপনার। যেমনটি আমার জাগছে। ভাবছি রিয়াজকে বলব ব্রাজিলের হুমায়ুন আহমেদটির আরাে বই আমাকে পড়তে দেওয়ার জন্য। উনি যদি আমাকে কোয়েলহাে’র আর কোনাে বই অনুবাদ করে দিতে বলেন, এবারে আমি কাজটা করে দিতে একপায়ে খাড়া।
— অনীশ দাস অপু
আর নগরীর সেই পাপিনী যখন জানতে পারলাে যে, প্যারিসি'র বাড়িতে সে অবস্থান করছে, তখন সে একটি অভিশাপের ছোঁয়া বয়ে আনলাে। তার পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে সে ফুপিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলাে। অশ্রুতে তার পা ভিজে এলাে। মাথার চুল এলােমেলাে হয়ে গেল। সে তার পায়ে চুমাে খেলাে। ছোঁয়ায় সে উষ্ণ হলাে। আর প্যারিসি যখন তাকে নিষেধ করলাে, সে দেখলাে নিজেকে আর বললাে, এই লােক, যদি সে মহামানব হয়ে থাকে, নারীর প্রতি তার নীতি ও ছােয়া, যে নারী একজন পাপিনী। যিশু উত্তর দিল, সিমন, তাকে আমার কিছু বলার আছে। সে অনুগত এবং এক প্রভু, একথা বলা যায়। দুজনের এই বিশ্বাস যেন পাঁচশত পেলের সমান। আর অন্যদের জন্য পঞ্চাশ পেল। যেখানে তাদের পরিশােধ করার কিছুই নাই, তারা উভয়ই তা ক্ষমা করে দিবে।
একথা শুনে সিমন উত্তর দিল এবং বললাে, আমি মনে করি, সে তাকে ক্ষমা করেছে, আর তাকে বলেছে, এটা অবশ্যই সঠিক বিচার। ফিরে আসার মুহর্তে মহিলাটি সিমনকে বললাে, দেখে নাও এই নারীকে? সে প্রবেশ করেছে পাপের ঘরে, পায়ে ফেলেছে । এই অশ্র ধুয়ে দিয়েছে তার পা, আর তার চুলে করেছে বিন্যস্ত। সে আমাকে চুমেছে; যখনই আমি এসেছি। সে আমার পায়ের চুমােকে দীর্ঘায়িত করেছে। আমার মাথায় তেল মেখেছে কি আঁচড় দেয় নি। কেবল পায়ে মালিশ মেখেছে। শেষে আমি তাকে বলি, তার পাপ অনেক, আর তা ক্ষমা করা হয়েছে, তাকে অনেক ভালােবাসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষমা যেমন ক্ষুদ্র ভালােবাসাও তেমনি ক্ষুদ্র।
প্রথম আর শেষের জন্য আমি
আমি হতাশ, আমি বিধ্বস্ত আমি বেশ্যা, আমি পাপিনী আমি বধু, আমি কুমারি
আমি মা, আমি কন্যা আমি আমার মায়ের একটি বাহু
আমি শিশুদের বাহক, সেই যারা আমারই আমি বিবাহিতা নারী, আমি অশালীন
আমি নারী, জন্ম দেয় যে তাকে যে কখনােই আটকে না।
জন্মব্যথার শান্তুনা প্রাপ্ত আমি
আমি স্ত্রী, আমি স্বামী আর যে ছিল আমার, যে সৃষ্টি করেছে আমাকে আমি আমার পিতার
একজন মা আর স্বামীর একজন বােন আমি বিচ্ছিন্ন হওয়া পুত্র সে আমার শ্রদ্ধার সাথে সে আমার অস্তিত্ব সর্বদা, এজন্য আমি লজ্জিতা আর ত্যাগিনীর একজন।
একদেশে ছিল এক পতিতা, নাম তার মারিয়া। দাঁড়ান, দাঁড়ান। এক দেশে ছিল' কথাটা বাচ্চাদের রূপকথার মত শশানাচ্ছে না। আর ‘পতিতা' শব্দটি তাে প্রাপ্তবয়স্কদের। এরকম প্রত্যক্ষ বিভেদ নিয়ে কি করে গল্প শুরু করি? কিন্তু আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেহেতু এক দিয়ে রেখেছি রূপকথার ভুবনে, আরেক পা নরকের অতল খাদে, কাজেই শুরুটা এভাবেই হােক না। এক দেশে ছিল এক পতিতা, নাম তার মারিয়া।
আরও অনেক বারবণিতার মতই সে জন্ম নিয়েছিল কুমারী, নিস্পাপ একটি মেয়ে হিসেবে, কৈশােরে স্বপ্ন দেখত সে তার স্বপ্নের রাজপুত্রের দেখা পেয়েছে (ধনী, সুদর্শন, বুদ্ধিমান), তাকে বিয়ে করছে (বিয়ের পােশাক পরে), দুটি সন্তান হয়েছে তাদের (তারা বড় হয়ে বিখ্যাত হবে) এবং বাস করছে চমৎকার একটি বাড়িতে (সেখান থেকে সাগর দেখা যায়)।
মারিয়ার বাবা ভ্রাম্যমান সেলসম্যান, কাঠখােটা ভাষায় যাকে বলে ফেরিঅলা। তার মা অতি সাধারণ গৃহিণী। মারিয়ারা থাকে ব্রাজিলের এক মফস্বলে, তাদের শহরে একটি মাত্র সিনেমা হল, একটি নাইটক্লাব এবং একটি ব্যাংক। মারিয়া সব সময় স্বপ্ন দেখে একদিন হঠাৎ করেই হাজির হয়ে যাবে তার স্বপ্নের রাজপুত্তুর, ওকে নিয়ে বেরিয়ে পড়বে দুনিয়া দখল করতে।
স্বপ্নের রাজকুমারের দেখা পাবার আশায় প্রতীক্ষায় প্রহর গােণে মারিয়া। এগারাে বছর বয়সে তার জীবনে প্রস্ফুটিত হলাে প্রথম প্রেম। প্রেমে পড়ল মারিয়া, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে।
মারিয়া সেদিন আবিষ্কার করল স্কুলের যাত্রাপথে সে একা নয়, আরেকটি ছেলেও একই রাস্তা ধরে স্কুলে যায়। ছেলেটি পাড়ারই, মারিয়া যে সময় স্কুলে যায়, একই সময় সে-ও স্কুলে যাচ্ছে। দুজনের মাঝে বাক্য বিনিময় হয় না একবারও, তবে স্কুলে যাওয়ার সময়টুকু দারুণ উপভােগ করে মারিয়া। ধুলাে মেখে, চদি ফাটা গরমে প্রবল তৃষ্ণায় ক্লান্ত হয়ে ছেলেটি আগে আগে হাঁটে, মারিয়া ওর সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠে।
একই দৃশ্য অভিনীত হতে লাগল মাসের পর মাস; মারিয়া, পড়াশােনায় যার প্রবল অনীহা এবং টিভি দেখা যার একমাত্র শখ, প্রার্থনা করতে থাকে দিনগুলাে যেন দ্রুত শেষ হয়ে যায়। তার বয়সী মেয়েদের মত ছুটির দিনগুলাে মারিয়ারও নিতান্তই নীরস এবং একঘেয়ে কাটে । মারিয়ার প্রচণ্ড রাগ হয় কারণ দিনগুলাে বিশাল লম্বা হলেও ভালােবাসার মানুষটির সঙ্গে সে মাত্র দশ মিনিট কাটানাের সময় পায় এবং বাকি হাজার হাজার ঘণ্টা তার ভেবে চলে যায় ছেলেটির সঙ্গে কথা বলার সুযােগ পেলে কী মজাটিই না
সুযােগটা মিলেও গেল একদিন।
সেদিন সকালে, স্কুলে যাবার পথে ছেলেটি এল মারিয়ার কাছে, জানতে চাইল মারিয়া তাকে একটি পেন্সিল ধার দিতে পারবে কি না। মারিয়া জবাব দিল না; আসলে অপ্রত্যাশিত এই আগমনে সে বরং বিরক্তই হয়েছে, তার পদক্ষেপ দ্রুততর হলাে। সে আতঙ্ক বােধ করল দেখে ছেলেটি তার দিকেই আসছে, শঙ্কিত বােধ করল ভেবে ও হয়তাে জেনে যাবে মারিয়া তাকে কতটা ভালােবাসে, তার জন্য কত ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করে, কত স্বপ্ন দেখে তার হাত সে নিজের মুঠোয় পুরে নিয়েছে, তার সঙ্গে স্কুলের গেটের সামনে দিয়ে ইলেভেন মিনিটস
হন হন করে এগিয়েছে, চলে গেছে রাস্তার শেষ মাথায়, যেখানে- লােকে বলে রয়েছে বিরাট এক শহর, সেখানে চলচ্চিত্র এবং টিভি তারকারা বাস করেন, আছে প্রচুর প্রেক্ষাগৃহ এবং মজা করার হাজারও উপকরণ।
সেদিন সারাদিন পড়ায় মন বসাতে পারল না মারিয়া, ছেলেটির সঙ্গে কেন অমন অদ্ভুত আচরণ করল ভাবতেই নিজের ওপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। তবে একই সংগে মনের গভীরে স্বস্তি অনুভব করছে কারণ সে জানে ছেলেটির নজর কেড়েছে সে, পেন্সিল চাওয়াটা কথা বলার সুযােগ সৃষ্টির অজুহাত মাত্র। কারণ মারিয়া লক্ষ করেছে ছেলেটি যখন তার কাছে এল, তার পকেটে কিন্তু পেন্সিল ছিল। মারিয়া ছেলেটির সঙ্গে কথা বলার সুযােগের অপেক্ষায় থাকল- রাত যায়- মারিয়া রিহার্সাল দেয় কীভাবে সে ছেলেটির সঙ্গে কথা বলবে। | কিন্তু কথা বলার সুযোেগ আর আসে না। যদিও একই সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছে দু'জনে। মারিয়া কখনও কয়েক কদম সামনে, ডান হাতে পেন্সিল, আবার কখনও ইচ্ছে করে পিছিয়ে পড়ে, বারবার তাকায় ছেলেটির দিকে। কিম ছেলেটি মারিয়ার সঙ্গে কোনও বাতচিৎ করে না। মারিয়া ছেলেটিকে এক তরফা ভালােবেসে যাবার যন্ত্রণা সহ্য করে যেতে লাগল।
স্কুলে গরমের ছুটি চলছে। একদিন সকালে মারিয়া ঘুম থেমে জেগে দেখে তার পা মাখামাখি হয়ে গেছে তাজা খুনে। ও নির্ঘাৎ মারা যেতে চলেছে, নিশ্চিত হয়ে গেল মারিয়া। সে ছেলেটিকে একটি চিঠি লিখবে সিদ্ধান্ত নেয়। বলবে ছেলেটি ছিল তার জীবনের একমাত্র প্রেম। এরপর মারিয়া বনে চলে যাবে। ওখানে যে দুই ভয়ঙ্কর দানব থাকে তাদের যে কোনও একজনের হাতে খুন হয়ে যাবে সে। ওই দুই দানব ওদের শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে রেখেছে। একটি হলাে মায়া নেকড়ে, অপরজন মুলা-সেমকাবেসা (এক ধর্মযাজকের রক্ষিতা, খচ্চরের রূপ ধরে ঘুরে বেড়ায় রাতের আঁধারে)। তবে মারিয়ার খোজ না পেয়ে তার বাবা মা হয়তাে ভাববেন কেউ তাদের সুন্দরী মেয়েটিকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। একদিন মারিয়া ফিরে আসবে ধনী এবং খ্যাতিমান হয়ে।
ইলেভেন মিনিটস pdf অনলাইনে পড়ুন
Book | Publisher | Author | Size |
---|---|---|---|
ইলেভেন মিনিটস | রোদেলা | পাওলো কোয়েলহো | ৭ মেগাবাইট |
Bookshop | Price | Language | Page |
Durdin Magazine | Only 180 Taka | Bangla | 240 |