এ ক্ল্যাশ অব কিংস হলো প্রাচীন রাজাদের সংঘর্ষ নিয়ে রচিত জর্জ আর. আর. মার্টিনের লেখা নন্দিত উপন্যাস এ সং অব আইস এন্ড ফায়ার উপন্যাসের দ্বিতীয় খন্ড। উপন্যাসটির পূর্ববর্তী খন্ড হচ্ছে এ গেম অব থ্রোনস।
পুরস্কার: লোকাস পুরস্কার, ১৯৯৯
এ ক্ল্যাশ অব কিংস Pdf
আয়ারল্যান্ডসহ সাত রাজ্যের রাজা হওয়ার গল্প নিয়ে বর্ণিত এই উপন্যাসে সাত রাজার সংঘর্ষকে গল্পের মাধ্যমে তুলে আনা হয়েছে। বইটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক উপন্যাস।
| Book | Publisher | Author | F Size |
|---|---|---|---|
| এ ক্ল্যাশ অব কিংস |
অন্যধারা | জর্জ আর আর মার্টিন | ১৫ মেগাবাইট |
| Bookshop | Price | Language | T Page |
| Durdin Magazine | Only 450 Taka | Bangla | 496 |
এ কিংসের ক্লাশ সম্পর্কে সম্পাদকের বক্তব্য
এই কথার সত্যতা বুঝতে পারবেন। মুভি ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয়তার পরে ধীরে ধীরে লেখকদের উদ্দেশ্যেও পরিবর্তন আসতে থাকে। তারা এখন গল্পটা আপনাকে শােনাতে নয়, সরাসরি দেখাতে চায়, চরিত্রের চোখ দিয়ে। দৃশ্যগুলাে এমনভাবে লেখার চেষ্টা করে যেন আপনি সেগুলাে কল্পনায় দেখতে পান। চরিত্রায়নের ক্ষেত্রে বর্ণনায় সরাসরি তাদের বৈশিষ্ট্যগুলাে বলে না দিয়ে তাদেরকে দিয়ে এমন সব কাজ করায় যাতে তাদের ওই বৈশিষ্ট্যগুলাে ফুটে ওঠে।
ফলে আপনি চরিত্রগুলােকে আপন ভাবেন, কেয়ার করেন, নিজেকে তাদের স্থানে কল্পনা করেন, কিংবা মনেপ্রাণে ঘৃণা করেন। এখন স্যার গ্রেগরকে। আপনি কীভাবে মন থেকে ঘৃণা করবেন যদি সে অসভ্যের মতাে গালিগালাজ না করে? একটা চরিত্রের যে চরিত্রে সমস্যা আছে তা আপনি কীভাবে বুঝবেন যদি-না তাকে পতিতার কাছে যেতে দেখেন?
এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আপনারা হয়তাে জানেন যে আমাদের বাংলা বানান একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই বইটি বাংলা অভিধানের সর্বশেষ সংস্করণ ২০১৬ সালের বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান যথাসম্ভব অনুসরণ করে সম্পাদনা করা হয়েছে। শতভাগ পারিনি, কিংবা বলা যায় করিনি। বেশ কিছু বানান আছে যেগুলােতে পাঠক অভ্যস্ত হতে পারেনি বলেই আমার বিশ্বাস-আমি নিজেও পারিনি। কিছু বানান আছে যা আগে একরকম লেখা হতাে, এখন ভিন্ন রকম লেখা হয়, কিন্তু পূর্বের বানানে অভ্যস্ততার কারণে পড়তে খুবই অস্বস্তি হয়। বাস্তবতা হলাে, চোখের দেখায় যদি অস্বস্তি লাগে, তাে সেই বানানের বই পড়েও অস্বস্তিই লাগে।
আবার অনেক ক্ষেত্রে সমাধান খুঁজে পাইনি। বর্মপরা নাকি বর্ম পরা? তারচেয়ে নাকি তার চেয়ে? একমুঠো নাকি এক মুঠো? একসারি না এক সারি? মৃত্যু ভয় নাকি মৃত্যুভয়? পুরাে তালিকা দিতে গেলে বিপদ হয়ে যাবে। এসব নিয়ে বাংলা একাডেমির সরাসরি কোনাে নিয়ম খুঁজে পাইনি, তাই একটাই উপায় ছিলাে: পদ, সমাস ইত্যাদি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে কোনটা বাক্যে কী পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, কোনটা সমাসবদ্ধ আর কোনটা না তা হিসেব করে নিজেই নিয়ম বানিয়ে নেওয়া। আমি তাই করেছি। যা একত্রে দেখবেন, তা নির্দিষ্ট কোনাে নিয়ম মেনেই একত্রে, যা আলাদা, তাও ওই নিয়ম।
মেনেই আলাদা। কিন্তু বিষন্ন ব্যাপারটা হলাে, যতই সমস্যার সমাধান করি, ততই নতুন করে সমস্যার উদ্ভব হয়। বাইরের দেশগুলােতে এডিটিং ম্যানুয়েল থাকে, সেখান থেকে সবাই একই নিয়ম মেনে কাজ করে। যেমন ইংরেজির জন্য দ্য শিকাগাে ম্যানুয়েল অব স্টাইল আর দি এসােসিয়েটেড প্রেস স্টাইলবুক।
এই ২০২১ সালে এসেও যে আমাদের এভাবে অন্ধকারে হাতড়ে মরতে হচ্ছে, যার যেমন মন চায় তেমন কাজ করছি, এটা তাে গ্রহণযােগ্য হতে পারে না, তাই না?
আশরাফুল সুমন
সম্পাদক
উপক্রমণিকা : এ ক্লাশ অব কিংস
ভােরের দিকে ড্রাগনস্টোনের আকাশের বেগুনি-গােলাপিরঙা গায়ে ছুরির পোঁচের মতাে ধূমকেতুর রক্তলাল লেজটা দেখা গেল।
মেইস্টার তার কক্ষের বাইরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন। সমুদ্রের তীব্র বাতাসের পুরােটাই গায়ে মেখে যাচ্ছে তার। এখানে বার্তাবাহী দাঁড়কাকগুলাে এসে নামে। তার দুপাশে দুটো বারাে ফুটের মতাে লম্বা গারগয়েল, একটা হেলহাউন্ড আর একটা ওয়াইভার্ন। সেগুলাের গা পাখির ঝরা পালক আর বিষ্ঠায় মাখামাখি। এই প্রাচীন দুর্গের প্রাচীরে অতন্দ্র প্রহরীর মতাে দাঁড়ানাে হাজারখানেক গারগয়েলের মধ্যে এগুলাে কেবল দুটো। মেইস্টার প্রথম যখন ড্রাগনস্টোনে এসেছিলেন, তখন এই গারগয়েলগুলাের ভয়ংকর মূর্তি তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিতাে। কিন্তু যতদিন গেল ততই তিনি এগুলাের সাথে বসবাসে অভ্যস্ত হয়ে গেলেন। এখন তার এদেরকে পুরােনাে বন্ধুর মতাে মনে হয়। এই মুহূর্তে মনে অমঙ্গল চিন্তা নিয়ে তিনি তার বন্ধুদের সাথে আকাশপানে তাকিয়ে আছেন। | মেইস্টার লক্ষণ বিচারে বিশ্বাসী নন। কিন্তু তারপরও...এত বছর বয়স হলাে ক্রেসেনের, তিনি কখনাে এত উজ্জ্বল ধূমকেতু দেখেননি। এমন রঙেরও না। জঘন্য রংটা। রক্ত, আগুন আর সূর্যাস্তকে নির্দেশ করে এই রং। আচ্ছা, গারগয়েলগুলাে কি আগে কখনাে এমন কিছু দেখেছে? এরা তাে তার আসার বহু আগে থেকেই এই ড্রাগনস্টোনে আছে। তিনি একদিন থাকবেন না, কিন্তু এরা থাকবে। আহা, ওদের পাথুরে জিভের যদি কথা বলার ক্ষমতা থাকতাে...।
যত্তসব বােকামি চিন্তাভাবনা। তিনি ছিদ্রপ্রাচীরের উপর দিয়ে ঝুঁকে পড়লেন, নিচে সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে। আঙুলের ছোঁয়ায় ছিদ্রপ্রাচীরের কালচে পাথর একটু বেশিই অমসৃণ মনে হলাে তার। কথাবলা গারগয়েল আর আকাশের বুকে অমঙ্গলের লক্ষণ খোঁজা, ভাবলেন তিনি। আমি একজন অথর্ব বৃদ্ধ, আবার বাচ্চাদের মতাে যুক্তিহীন কথা ভাবতে শুরু করেছি। এক জীবনে কঠোর পরিশ্রমলব্ধ জ্ঞান আর প্রজ্ঞা কি স্বাস্থ্য ও শক্তির মতােই তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে? তিনি একজন মেইস্টার।
তাকে ওল্ডটাউনের গ্রেট সিটাডেলে প্রশিক্ষণ ও শিকলাভিষিক্ত করা হয়েছে, আর আজ তার এই পরিণতি। গ্রামের অশিক্ষিত চাষাভুষাদের মতাে তিনিও কি কুসংস্কারে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন?
কিন্তু তারপরও...তারপরও...এই দিনের বেলাতেও ধূমকেতুটা দেখা যাচ্ছে। দুর্গের পেছনে ড্রাগনমন্টের চুল্লির মুখ থেকে আবছা ধূসররঙা বাষ্পের আকাশে হারিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে ভাবছেন তিনি। এই তাে গত সকালে সিটাডেল থেকে একটা সাদা রঙের দাঁড়কাক খবর নিয়ে এসেছে। খবরটা যতটা অবশ্যম্ভাবী ছিলাে তার চেয়েও বেশি ভয়াবহ। গ্রীষ্ম শেষ হতে যাচ্ছে। এখানে সব রকমের লক্ষণ বিচার করা হয়েছে। এত বেশি লক্ষণ দেখা গেছে যে আর তা নিয়ে সন্দেহের কোনাে অবকাশ নেই। এর মানে কী? তার এখন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
‘মেইস্টার ক্রেসেন, আপনার কাছে সাক্ষাপ্রার্থী এসেছেন, পাইলােস নরম গলায় বললাে, যেন ক্রেসেনের ধ্যান ভঙ্গ করতে চাইছে না। ও যদি জানতাে তার মাথায় কীসব আজগুবি চিন্তা চলছে, তাহলে হয়তাে চিৎকার করে উঠতাে। রাজকুমারী এসেছেন। উনি সাদা কাকটা দেখতে চান। পাইলােস এখনই মেয়েটাকে রাজকুমারী বলে ডাকতে শুরু করেছে, যেন তার লর্ড পিতা ইতােমধ্যেই রাজা হয়ে গেছে। অবশ্য, এই বৃহৎ লবণ সাগরের মাঝে একটা মাত্র পাহাড়ের অধিপতি হলেও এখানে তিনিই রাজা। উনার সাথে ভাঁড়টাও আছে।
বৃদ্ধ উদীয়মান ভােরকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে ঘুরে দাঁড়ালেন। ওয়াইভার্নের উপর একটা হাত রেখেছেন ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য। আমাকে ধরে একটু চেয়ারে বসিয়ে দাও, আর ওদের ভেতরে নিয়ে এসাে।
হাতে ধরে পাইলােস তাকে ভেতরে নিয়ে গেল। যৌবনে ক্রেসেন দ্রুত চলাফেরা করতেন, কিন্তু এখন যখন তিনি তার আশিতম নামকরণ দিবসের মাত্র কয়েক দিন দূরে আছেন, পা দুর্বল আর বেসামাল হয়ে পড়েছে। দুই বছর আগে তিনি আছাড় খেয়ে কোমর ভেঙেছেন, যা আর কখনােই পুরােপুরি জোড়া লাগেনি। গত বছর তিনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন ওল্ডটাউনের সিটাডেল থেকে পাইলােসকে পাঠানাে হয়, লর্ড স্ট্যানিসের দ্বীপ অবরুদ্ধ করে দেওয়ার কয়েক দিন আগে।
যাতে সে এই অসুস্থ অবস্থায় তাকে সাহায্য করতে পারে। সিটাডেল থেকে এমনটা বলা হলেও ক্রেসেন সত্যটা জানেন, পাইলােসকে পাঠানাে হয়েছে তার বদলি হিসেবে। তার মৃত্যু হলে পাইলােসই তার স্থলাভিষিক্ত হবে। তার অবশ্য তাতে আপত্তি নেই। কাউকে না কাউকে তাে তার জায়গা নিতেই হতাে, সেটা তিনি চান বা না চান।
যুবক মেইস্টারের সাহায্যে তিনি টেবিলের উপর স্তুপীকৃত বই আর কাগজপত্রের আড়ালে গিয়ে বসলেন। যাও, ওকে নিয়ে এসাে। একজন লেডিকে অপেক্ষা করানােটা অভদ্রতা। তিনি হাত নাড়লেন। এমন একজন মানুষ পাইলােসকে তাড়া দিচ্ছেন যার নিজের পক্ষেই আর তাড়া করা সম্ভব না। তার ভাঁজ পড়া চামড়া দাগে ভরতি, চামড়া এত পাতলা হয়ে গেছে যে এর নিচের শিরার জাল আর হাড়ের আকৃতি স্পষ্ট বােঝা যাচ্ছে। একসময়ের দৃঢ় আর দক্ষ হাত আজ সামান্য উঁচু করতেই ঝড়ের কবলে পড়া বাঁশপাতার মতাে কাঁপতে থাকে।
পাইলােস ফিরে আসতেই তার সাথে লাজুক এক বালিকাকে দেখা গেল। তার পেছনে এলােমেলাে পায়ে হাঁটা সেই আনন্দিত চঞ্চল ভাঁড়কেও দেখা যাচ্ছে। তার মাথায় একটা পুরােনাে টিনের বালতি দিয়ে বানানাে হাস্যকর শিরস্ত্রাণ, যার আগায় বাঁধা একজোড়া হরিণের শিং। শিঙে গরুর গলায় বাঁধা ঘণ্টার মতাে একটা ঘণ্টা। তার হাঁটার তালে তালে ঘণ্টাগুলাে বেজে উঠছে, ভিন্ন ভিন্ন শব্দ হচ্ছে প্রতিবার, ক্ল্যাং-ড্যাং, বং-ডং, টুং টুং, ক্লং ক্লং ক্লং।
‘এত ভােরে কে এলাে দেখা করতে, পাইলােস?' ক্রেসেন আমুদে গলায় বললেন।
‘আমি আর প্যাচেস, মেইস্টার। নিস্পাপ একজোড়া নীল চোখের পলক পড়লাে। আফসােস, মেয়েটার চেহারাটা মােটেই সুন্দর না। দুর্ভাগ্যবশত, এই মেয়ে তার লর্ড পিতার চৌকো চোয়াল আর মায়ের বিসদৃশ কানজোড়া উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে, সাথে আছে তার নিজের সমস্যা। শৈশবেই তার উপর একদফা ঘেস্কেল রােগের থাবা পড়েছিলাে। দোলনায় থাকতেই মরতে বসেছিলাে মেয়েটা। তার একপাশের গাল থেকে । শুরু করে ঘাড় পর্যন্ত চামড়া শক্ত আর মৃত, চামড়া ফাটা আর আঁশের মতাে ভাঙা ভাঙা। গােটা অংশটা কালচে ধূসর রঙের, হাত দিয়ে ছুঁলে পাথরের মতাে মনে হয়। পাইলােস বললেন আমরা সাদা কাকটা দেখতে পারি।' | ‘অবশ্যই পারাে, ক্রেসেন বললেন। যেন তিনি কোনােদিন তার মুখের উপর না বলতেন আর কি। মেয়েটাকে খুব বেশিই বাধ্যবাধকতার মধ্যে থাকতে হয়। মেয়েটির নাম শিরীন।
আগামী নামকরণ দিবসে তার বয়স দশ হবে। আর সে মেইস্টার ক্রেসেনের গােটা জীবনে দেখা সবচেয়ে বিষন্ন বাচ্চা। ওর এই বিষন্নতা আমার লজ্জার কারণ, বৃদ্ধ ভাবলেন, কারণ তা আমারই ব্যর্থতার ফল। মেইস্টার পাইলােস, কষ্ট করে লেডি শিরীনের জন্য কাকশালা থেকে সাদা কাকটা নিয়ে এসাে।
‘আনন্দের সাথে। পাইলােস খুবই ভদ্র এক যুবক। বয়স পঁচিশের বেশি হবে না, কিন্তু তার চেহারায় ষাট বছরের বৃদ্ধের গাম্ভীর্য লেগে থাকে। তার মধ্যে কিছুটা রসবােধ আর কিছুটা প্রাণচাঞ্চল্য থাকাটা জরুরি ছিলাে। ড্রাগনস্টোনে এই জিনিসের বড় অভাব। গম্ভীর পরিবেশের জন্য রসবােধ দরকার, আরাে গাম্ভীর্য না । ড্রাগনস্টোন খুবই নিষ্প্রাণ আর গম্ভীর এক জায়গা। এই জলাকীর্ণ পতিত অঞ্চলের মাঝে একমাত্র আশ্রয়। পেছনের পর্বতটার ছায়া দুর্গের উপর পড়ায় সারা দিন দুৰ্গটা ছায়ায় ঢেকে থাকে। মেইস্টারদের যেখানে যাওয়ার আদেশ হয় সেখানেই যেতে হয়।
ক্রেসেন প্রায় বারাে বছর আগে তার লর্ডের সাথে এখানে এসেছিলেন, তার লর্ডের যথাযথ সেবা করেছেন-খুব ভালােভাবেই। কিন্তু কখনাে তিনি ড্রাগনস্টোনকে ভালােবাসতে পারেননি। কখনাে এই জায়গাটা তার কাছে নিজের বাড়ি বলে মনে হয়নি। প্রায়ই যখন তিনি স্বপ্নে লােহিত মানবীর বিকৃত মূর্তি দেখে জেগে উঠেন, তখন প্রায়ই ঠাহর করতে পারেন না তিনি কোথায় আছেন।
ভাঁড় তার উল্কিতে ভরা টেকো মাথাটা ঘুরিয়ে পাইলােসকে লােহার সিঁড়ি বেয়ে কাকশালার দিকে যেতে দেখলাে। নড়াচড়ার সাথে বেজে উঠলাে তার শিঙের
ঘণ্টাগুলােও।
জলের তলে, পাখির গায়ে, পালকের বদলে আঁশ থাকে, ও বললাে, টুনটুন শব্দে ঘণ্টা বাজছে। আমি জানি, আমি জানি, ও হাে হাে হাে হাে।' | ভাঁড় হলেও প্যাচফেস বিষন্ন বদনেই থাকে। হয়তাে একটা সময় ছিলাে যখন সে সবাইকে হাসিয়ে মারতে পারতাে। কিন্তু রুদ্র সাগর তার থেকে সেই ক্ষমতাটা কেড়ে নিয়েছে, সেই সাথে তার অর্ধেক বুদ্ধিমত্তা আর সম্পূর্ণ স্মৃতি। এখন সে নরম-সরম আর অত্যধিক মােটা। প্রায়ই চমকে চমকে ওঠে, থরথর করে কাঁপে, বেশিরভাগ সময়ই অহেতুক। এখন শুধু মেয়েটাকেই হাসাতে পারে সে। প্যাচফেস বাঁচুক কি মরুক তাতে এই মেয়েটার ছাড়া আর কারােই কিছু যায় আসে না।
কুৎসিত দেখতে এক বাচ্চা মেয়ে আর এক বিষন্ন ভাঁড়, আর সেই সাথে মেইস্টার মিলে তিনজন...এই গল্পটা যে-কাউকে কাঁদিয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট। আমার পাশে বসাে।' মেইস্টার শিরীনকে ইশারায় কাছে ডাকলেন। এখন এখানে আসার সময় না, সবে ভাের হচ্ছে, তােমার এখন বিছানায় থাকা উচিত।'
‘দুঃস্বপ্ন দেখেছি, শিরীন বললাে। ড্রাগন নিয়ে। ওরা আমাকে খেয়ে ফেলার জন্য তাড়া করছিলাে।
মেইস্টার ক্রেসেন যতদিন থেকে ওকে চেনেন, ততদিন ধরেই এই মেয়েটাকে দুঃস্বপ্নে ভুগতে দেখেছেন। আমরা আগেও এটা নিয়ে কথা বলেছি, তিনি কোমল গলায় বললেন। ড্রাগনগুলাে জীবিত না। ওগুলাে পাথর কুঁদে বানানাে। অনেক আগে আমাদের এই দ্বীপ স্বাধীন ভ্যালিরিয়া রাজ্যের পশ্চিম সীমান্ত ছিলাে। ভ্যালিরিয়ানরাই তৈরি করেছিলাে এই দুর্গ। তবে তাদের প্রস্তরশিল্পের কায়দা এখন বিলুপ্ত। ওদের পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রাচীরের প্রতিটা কোণে, যেখানে দুই দেয়াল কোনাকুনি গিয়ে মিলেছে, সেখানে একটা করে টাওয়ার রাখতে হবে দুর্গের সুরক্ষার জন্য।
ভ্যালিরিয়ানরা তাদের দুর্গের প্রাচীর ড্রাগনের মূর্তি দিয়ে সাজাতাে যেন দেখতে ভয়ংকর লাগে। একই কারণে তারা দেয়াল গােলামুখের পরিবর্তে গারগয়েল দিয়ে সাজায়। মেয়েটার ছােট্ট গােলাপি হাত নিজের ভঙ্গুর আর ছােপ ছােপ দাগে ভরতি হাতে নিয়ে আলতাে করে চাপ দিলেন। ক্রেসেন। তাে বুঝতেই পারছাে, ছােট্ট রাজকন্যা। ভয়ের কিছু নেই।
শিরীন খুব একটা আশ্বস্ত হলাে না। তাহলে আকাশে ওটা কী? ডালা আর ম্যাট্রিস কুয়ার পাড়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাে। ডালা বললাে সে নাকি লােহিত মানবীকে মায়ের কাছে বলতে শুনেছে যে ওটা হচ্ছে ড্রাগনের নিঃশ্বাস। যদি ড্রাগন শ্বাস নেয়, তার মানে কি এই না যে ওরা আবার বেঁচে উঠেছে?
লােহিত মানবীর কথা শুনতেই মেইস্টার ক্রেসেনের মন তিক্ততায় ছেয়ে গেল। ওই মহিলা শিরীনের মায়ের মনে পাগলামি কথাবার্তা ঢুকিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না, তাকে এখন এই মেয়েটার স্বপ্নগুলােকেও বিষাক্ত করতে হবে? তার ইচ্ছে করছে ডালাকে ডেকে কড়া কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতে যাতে সে আর কখনাে এসব গালগল্প ছড়িয়ে না বেড়ায়। ‘আকাশের ওটা একটা ধূমকেতু, মিষ্টি রাজকন্যা। লেজওয়ালা তারাও বলতে পারাে, স্বর্গ থেকে হারিয়ে গেছে। খুব দ্রুতই আবার চলে যাবে, আমরা জীবদ্দশায় আর ওটা দেখতে পাবাে না। বুঝেছ?
শিরীন অল্প করে মাথা নাড়লাে।
মা বললাে যে সাদা কাক আসার মানে হলাে গ্রীষ্ম শেষ হয়ে যাচ্ছে।' ‘তা ঠিক, মাই লেডি। সাদা কাক আসে শুধু সিটাডেল থেকে। ক্রেসেনের আঙুলগুলাে তার গলায় ঝােলানাে শেকল আঁকড়ে ধরলাে। শেকলের প্রতিটা জোড় আলাদা আলাদা ধাতুতে তৈরি, প্রতিটা ধাতু তার জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভিন্ন ভিন্ন শাখায় দক্ষতা অর্জনের নিদর্শন। মেইস্টার কলার তার পদবির পরিচায়ক। যৌবনে তিনি এটা গর্বের সাথেই গলায় পড়তেন। আজ এই বার্ধক্যে ধাতুর স্পর্শ তার কাছে শীতল বােধ হচ্ছে। শেকলটার ওজনও যেন বেড়ে গেছে অনেকখানি। ওগুলাে অন্য দাঁড়কাকের থেকে আকারে বড়, আর চতুরও। এগুলােকে পােষা হয় কেবল গুরুত্বপূর্ণ খবর আদানপ্রদানের জন্য। এইটা আমাদের জন্য খবর এনেছে যে মন্ত্রণাসভা বসেছিলাে সিটাডেলে। তারা সমস্ত রাজ্য থেকে মেইস্টারদের পাঠানাে তথ্যাদি মাপজোখ আর বিচার করে ঘােষণা দিয়েছে যে দীর্ঘ গ্রীষ্ম অবশেষে শেষ হতে যাচ্ছে। প্রায় দশ বছর দুই পক্ষ আর ষােলাে দিন এই গ্রীষ্ম স্থায়ী হয়েছে। মানুষের স্মৃতিতে থাকা দীর্ঘতম গ্রীষ্ম।'
এখন কি শীত পড়বে? শিরীনের জন্ম গ্রীষ্মে, সে কখনাে দেখেনি শীত কী।
সময় হলে, ক্রেসেন জবাব দিলেন। যদি ঈশ্বর সহায় হন, তারা আমাদের উষ্ণ শরৎ আর গােলাভরা ফসলের আশীর্বাদ দেবেন। গ্রামের লােকেরা বলে থাকে যে দীর্ঘ গ্রীষ্ম নাকি দীর্ঘ শীতের পূর্বাভাস দেয়। তবে এই কথা বলে মেইস্টার আর বাচ্চাটাকে ভয় দেখালেন না। | প্যাচফেস ঘণ্টা বাজালাে। সাগরের নিচে চির গ্রীষ্মের কাল, সুর করে বলছে সে। মৎস্যকন্যারা চুলে নেনিমােন আর গায়ে রুপালি সামুদ্রিক শৈবালের তৈরি জামা পরে। আমি জানি, আমি জানি, ও হাে হাে হাে হে।। | শিরীন খিলখিল করে হেসে উঠলাে। রুপালি শৈবালের একটা গাউন পেলে পরতাম।' | ‘সমুদ্রের নিচেও বরফ পড়ে,' ভাঁড় বললাে। আর ওখানে বর্ষাকালে খরা হয়। আমি জানি, আমি জানি, ও হাে হাে হাে হাে। | ‘সত্যিই কি বরফ পড়বে? বাচ্চা মেয়েটা প্রশ্ন করলাে।
‘হ্যাঁ, পড়বে, ক্রেসেন বললেন। কিন্তু আশা করি অন্তত আরাে কয়েক বছর হাতে আছে এখনাে। আর এও আশা করি যেন খুব বেশিদিন ধরে না পড়ে। ওই তাে পাইলােস পাখি নিয়ে চলে এসেছে।
শিরীন আনন্দে চিৎকার দিলাে। ক্রেসেনকেও স্বীকার করতে হলাে যে পাখিটা দেখতে দারুণ। তুষারের মতাে সাদা, বাজপাখির মতাে বড়, উজ্জ্বল কালাে চোখ দেখে বােঝা যায় এটা সাধারণ কোনাে শ্বেতী কাক না, সিটাডেলের খাঁটি রক্তের সাদা কাক। "এই তাে, তিনি বললেন। কাকটা ডানা মেলে দিয়ে ঝটপট করে উড়তে উড়তে ঘরের আরেক পাশে গিয়ে টেবিলের উপর বসলাে।
‘আমি আপনার সকালের নাস্তার ব্যবস্থা করি, পাইলােস বললাে। ক্রেসেন সায় দিলেন তাতে। ইনি হচ্ছেন লেডি শিরীন, তিনি কাকটাকে বললেন। কাকটা একবার মাথা উপর-নিচ করলাে যেন সম্মান দেখাচ্ছে। লেডি, কা কা করে বললাে সেটা।
‘লেডি।
শিরীনের মুখ বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল। এ কথাও বলে! ‘কয়েকটা শব্দ মাত্র। যেমন বললাম, এই পাখিগুলাে খুব চতুর ।।
‘চালাক পাখি, চালাক মানুষ, চালাক চালাক ভাঁড়, প্যাচফেস মাথা দুলিয়ে ঘণ্টার আওয়াজ তুলে বললাে। হাে চালাক চালাক ভাঁড়, ও গাইলাে। ছায়া নাচছে, মাই লর্ড। থামুন, মাই লর্ড, থামুন।' ছেলেটা মাথায় ঝাঁকি দিলাে প্রতিটা শব্দের সাথে, হরিণের শিঙে বাঁধা ঘণ্টাগুলাে ঝংকার তুললাে তাতে।
সাদা কাকটা চিৎকার করে আবার ডানা মেললাে। উড়তে উড়তে গিয়ে কাকশালার। সিঁড়ির লােহার রেলিং-এ গিয়ে বসলাে। শিরীন যেন ভয়ে কুঁকড়ে গেল। ও সারা দিন গান গাইতে থাকে, চুপ করতে বললেও থামে না। আমার খুব ভয় করে। আপনি ওকে চুপ করতে বলুন। | আর আমি তা কীভাবে করবাে? বৃদ্ধ ভাবলেন। একসময় হয়তাে আমি ওকে জন্মের তরে চুপ করিয়ে দিতাম, কিন্তু এখন...
প্যাচফেস এখানে এসেছিলাে বালক অবস্থায়। লর্ড স্টেফন সেই সুন্দর সময়ে তাকে সংকীর্ণ সাগরের ওপারে ভলান্টিস থেকে নিয়ে এসেছিলেন। বৃদ্ধ রাজা দ্বিতীয় এরিস টারগেরিয়ান, যিনি তখনাে পুরােপুরি উন্মাদ হননি, তিনিই লর্ড স্টেফনকে পাঠিয়েছিলেন যুবরাজ রেইগারের জন্য পাত্রী খুঁজতে। রেইগারের কোনাে বােন ছিলাে না যাকে সে বিয়ে করতে পারে। আমি পৃথিবীর সবচেয়ে দারুণ ভাঁড়টাকে খুঁজে পেয়েছি, তিনি ক্রেসেনকে চিঠিতে জানিয়েছিলেন।
ব্যর্থ সেই অভিযান থেকে ফেরার এক পক্ষ আগে তার চিঠি এসেছিলাে। সে এখন বালক মাত্র, কিন্তু বানরের মতাে চটপটে আর ডজনখানেক সভাসদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান। ও ভেলকি দেখাতে জানে, ধাঁধার খেলা। জানে, জাদু জানে আর চার ভাষায় গানও গাইতে পারে। আমি ওকে কিনে নিয়েছি, আশা করি ওকে নিয়েই বাড়ি ফিরবাে। রবার্ট ওকে পেয়ে খুব খুশি হবে। আশা করি। স্ট্যানিসের মুখেও হাসি ফোটাতে পারবে ছেলেটা। | চিঠির কথা মনে পড়তেই ক্রেসেনের মন খারাপ হয়ে গেল। স্ট্যানিসকে কেউ হাসতে শেখাতে পারেনি, প্যাচফেস তাে না-ই। ঝড়টা হুট করেই এসেছিলাে, তুমুল গর্জনের সাথে। সেদিন শিপব্রেকার বে তার নামের স্বার্থকতা প্রমাণ করে দেয়। লর্ডের দুই মাস্তুলের জাহাজ উইন্ডপ্রাউড ভেঙে চুরমার হয়ে তলিয়ে যায় দুর্গের দৃষ্টিসীমার মধ্যেই।
দুর্গের ছাদ থেকে দুই শিশু সন্তান তার পিতার জাহাজটাকে শৈলপ্রাচীরে বাড়ি খেয়ে পানিতে তলিয়ে যেতে দেখলাে। জাহাজটা ডুবে গেল একশাে মাঝিমাল্লা আর নাবিক লর্ড স্টেফন ব্যারাথিয়ন এবং তার লেডি স্ত্রীকে সাথে নিয়ে। তারপর বেশ অনেক দিন ধরেই প্রতিবার ঢেউয়ের সাথে কয়েকটা করে ফুলে উঠা লাশ স্টর্মস এন্ডের নিচে তীরে ভেসে আসতাে।
ছেলেটা ভেসে এলাে তৃতীয় দিন। মেইস্টার অন্যদের সাথে নিচে গিয়েছিলেন লাশ শনাক্ত করার উদ্দেশ্যে। যখন তারা ভাঁড়কে পেল তখন সে নগ্ন, চামড়া ফ্যাকাশে, ভাঁজ পড়া আর ভেজা বালিতে সারা গা মাখামাখি। ক্রেসেন ভেবেছিলেন এও মৃত। কিন্তু যখন জমি তার পা ধরে টেনে তাকে লাশের গাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলাে তখন সে কেশে মুখ
থেকে পানি বের করে উঠে বসলাে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জমি হলফ করে বলে গেছে যে প্যাচফেসের শরীর ঠান্ডা ছিলাে তখন। | কেউ প্যাচফেসের সেই দুই দিন সাগরে নিখোঁজ থাকার ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। জেলেরা বলতাে, একটা মৎস্যকন্যা তার বীজের বদলে ওকে পানিতে শ্বাস নেওয়া। শিখিয়েছে। প্যাচফেস নিজে কিছু বলেনি। লর্ড স্টেফন চিঠিতে যে বুদ্ধিমান, চতুর বালকটির কথা লেখেছিলেন, সে আর কখনােই স্টর্মস এন্ডে পৌঁছায়নি। যে ছেলেটিকে ওরা পেয়েছিলাে সে ছিলাে অন্য কেউ; মানসিক ও শারীরিকভাবে ভগ্ন, বুদ্ধি নেই, কথা বলারও ক্ষমতা নেই। কিন্তু চেহারা দেখেই বােঝা যাচ্ছিলাে সে কে। ভলান্টিসের মুক্তনগরীতে দাস ও চাকরদের মাথায় ও মুখে উল্কি করা থাকে-মাথার চাঁদি থেকে নিয়ে ঘাড় পর্যন্ত লাল বর্গ আর সবুজ রঙের নানা রকম আকৃতি।
‘হতভাগ্য ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে, কষ্টে আছে। ও আর কারাে জন্যই কোনাে কাজের না, তার নিজের জন্যও না,' স্টর্মস এন্ডের বহু বছরের দুর্গরক্ষক স্যার হার্বার্ট ঘােষণা দিলেন। এখন ওর উপর দয়া করতে চাইলে ওকে কাপ ভরতি করে পপির দুধ দিন। ব্যথামুক্ত ঘুম। আর সবকিছু শেষ। তার যদি বােঝার ক্ষমতা থাকতাে, তবে এই কাজের জন্য সে আপনাকে ধন্যবাদ দিতাে।
কিন্তু ক্রেসেন মানা করে দিলেন, আর শেষে বিজয়টা তারই হলাে। কিন্তু এই বিজয়ে প্যাচফেস খুশি হয়েছিলাে কি না তা আর কখনােই জানা যায়নি। এত বছর পরেও না। | ‘ছায়াগুলাে নাচছে, মাই লর্ড। আপনিও নাচুন, মাই লর্ড। নাচুন, মাই লর্ড, নাচুন, ভাঁড় গাইতে শুরু করলাে। তালে তালে মাথা দোলাচ্ছে, আর তার শিঙে বাঁধা ঘণ্টা বেজে উঠছে। ঢং ঢং, টুন টুন, ঢং ঢং।
“লর্ড, সাদা কাক ডাকলাে। লর্ড, লর্ড, লর্ড।
‘ভাঁড় যা মনে আসে তাই গায়, মেইস্টার চিন্তিত রাজকন্যাকে আশ্বস্ত করলেন। ওর কথায় কিছু মনে করা উচিত না। কাল হয়তাে ওর অন্য কোনাে গান মনে পড়বে। তখন আজকের গানটা তার মনেই থাকবে না।
লর্ড স্টেফন তার চিঠিতে লেখেছিলেন সে চার ভাষায় সুন্দর গান গাইতে পারে... পাইলােস দরজা দিয়ে উঁকি দিলাে। মেইস্টার, ক্ষমা করবেন।'
‘তুমি পরিজ আনতে ভুলে গেছ, ক্রেসেন বললেন। পাইলােসের কখনাে এমন ভুল হয় না।
‘মেইস্টার, গত রাতে স্যার ড্যাভােস ফিরে এসেছেন। ওরা এ নিয়ে রান্নাঘরে আলাপ করছিলাে। আমি ভাবলাম আপনাকে এখনই জানানাে উচিত।'
‘ড্যাভােস...তুমি বলছাে, গত রাতে এসেছেন? উনি কোথায়? ‘রাজার সাথে। প্রায় সারা রাতই সেখানে ছিলেন।
একটা সময় ছিলাে যখন স্ট্যানিস তাকে জানাতেন। সময় তার কাছে কোনাে ব্যাপার ছিলাে না। তার পরামর্শ তিনি সব সময় চাইতেন। আমাকে জানানাে উচিত ছিলাে, অভিযােগের সুরে বললেন ক্রেসেন। আমাকে জাগানাে উচিত ছিল।
Read More: ঠিক বেঠিক মার্কেটিং Pdf
তিনি শিরীনের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলেন। ক্ষমা করাে, মাই লেডি, আমাকে এখন তােমার লর্ড পিতার সাথে কথা বলতে যেতে হবে। পাইলােস, আমাকে ধরাে। এই দুর্গের সিঁড়ির অনেকগুলাে ধাপ। কেন যেন মনে হয়, আমাকে অত্যাচার করার জন্যই প্রতি রাতে ওরা কয়েকটা করে ধাপ ওতে যােগ করে।'
শিরীন আর প্যাচফেস তাদের পিছু পিছু বেরিয়ে এলাে, বৃদ্ধের ধীর কদমের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে দ্রুতই অধৈর্য হয়ে ছুটে গেল সামনের দিকে। ভাঁড় প্যাচফেস ছুটলাে তার পেছনে। দৌড়ানাের সময় তার শিঙে লাগানাে ঘণ্টা বাজতে থাকলাে পাগলের মতাে।
দুর্গ তার মতাে দুর্বল বৃদ্ধের জন্য কোনাে সুবিধার জায়গা না, সি ড্রাগন টাওয়ারের পেঁচানাে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে ভাবলেন তিনি। লর্ড স্ট্যানিস পেইন্টেড টেবিলের ঘরে আছেন। স্টোন ড্রামের উপরে ড্রাগনস্টোনের কেন্দ্রীয় দুর্গ। এই নাম রাখার কারণ হলাে, ঝড়ের সময়ে এই দুর্গের পুরােনাে দেয়ালে বাতাস বয়ে যাওয়ার সময় বুম বুম গুড়ম শব্দ হয়। পেইন্টেড টেবিলের ঘর পর্যন্ত যেতে হলে তাকে গ্যালারির মধ্য দিয়ে যেতে হবে, মধ্য ও আন্তঃদেয়াল আর ওখানকার পাহারায় থাকা রক্ষী গারগয়েল আর লােহার তৈরি কালাে দ্বারগুলাে পার হতে হবে।
শুধু তাই না, এসব করতে গিয়ে উঠতে হবেঅগণিত সিঁড়ি বেয়ে। একজন যুবক চাইলে এক লাফে দুটো করে সিঁড়ি ভাঙতে পারে, কিন্তু একজন কোমর ভাঙা বৃদ্ধের জন্য প্রতিটা ধাপই অত্যাচারের মতাে। কিন্তু লর্ড স্ট্যানিস নিজে তার কাছে আসবেন না, তাই বৃদ্ধকে এই কঠিন পথটা পার করতে হবে। অন্তত পাইলােস আছে তাকে সাহায্য করার জন্য, আর সেজন্য তিনি কৃতজ্ঞ।
A Clash of Kings in Portable Document Format, Read bangla pdf on Online.
