আমি তোমাকে বলে দেব – সঞ্জীব চৌধুরীর গান কবিতাসমগ্র Pdf

0

    সঞ্জীব চৌধুরী, বাংলা গানের জগৎে এক কিংবদন্তির নাম। কোটি ভক্তের হৃদয়ে যিনি প্রতিনিয়ত বিচ্ছেদের দোলা দিয়ে যান, তার গানের নাম অনুসারেই রাখা হয়েছে তার নতুন বইয়ের নাম আমি তোমাকে বলে দেব।


    আমি তোমাকে বলে দেব 

    আমি তোমাকে বলে দেব একটি জনপ্রিয় বাংলা গান ও কবিতা সমগ্র। এটি সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সংকলিত বই। এই বইয়ের নাম ' আমি তােমাকে বলে দেব ' সঞ্জীব চৌধুরীর জনপ্রিয় গানের লাইন থেকে নেওয়া। এই নামের কারণ বলি, গানটা শুনলেই একটা তীব্র হাহাকার তৈরি হয়, নিজের কথাগুলাে বলার জন্য সেই “তােমাকে খুঁজে ফিরি। কিন্তু এই “তুমি” কে সত্যিই কী পাওয়া যায়? এক জীবনে কত কথা, কত দুঃখ, কত না পাওয়ার গল্প জমা হয়ে থাকে। বুকের ভেতর। পান্ডুলিপির শেষ লাইনটা লিখে অনেকক্ষণ কেঁদেছিলাম। 

    ভালােবাসাশুন্য পৃথিবীতে ভালােবাসার গল্প লেখা খুব কষ্টের কাজ। কষ্ট করে পাওয়া ভালােবাসা চাল-ডালের হিসাবে হারিয়ে যায়। তবু অল্প সময়ের জন্য মানুষ সেই মৃদু স্পর্শ অনুভব করে, যখন মনে হয়না, আমার জন্য কেউ একজন আছে। কেউ আছে যে অসংখ্য মানুষের ভীড়েও শুধু আমাকেই ভালােবাসে। আমার সব অপূর্ণতা নিয়ে আমাকে ভালােবাসে। গল্পগুলােতে সেই মুহূর্তগুলাে ধরার চেষ্টা করেছি। কোন উচ্চস্তরের সাহিত্য বা সাহিত্যজগতে টিকে। থাকার গল্প লেখা হয়নি, লেখা হয়েছে শুধু ভালােবাসার গল্প। বইয়ের পেছনের কথা বলি। লেখালেখি করা শুরু করেছিলাম মূলত নির্ঘুম রাতগুলাে পার করতে। তখন ভেবেছিলাম আমাকে দিয়ে প্রেমের গল্প হবে না। কিন্তু দেখলাম, আমি ভালােবাসাকে যেভাবে অনুভব করি অনেকেই সেভাবে অনুভব করে। একসময় লিখতে লিখতে দেখলাম গল্পগুলাে, চরিত্রগুলাে পাঠকদের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছে। 

    সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখা এই চরিত্রদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য মলাটবদ্ধ করা প্রয়ােজন। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম কিছু গল্প একত্র হােক। উৎসাহ দিয়েছেন এই গল্পগুলাের প্রাণ “গল্প ক্যাফে-শানজানার গল্প রাজ্য” গ্রুপের পাঠকেরা। তাদের ভালােবাসায় আচ্ছন্ন এই চরিত্রগুলাে তাদের কাছেই পৌছে যাক, এই কামনা করি। নিরন্তর ভালােবাসা।

    — শানজানা আলম।

    সঞ্জীব চৌধুরী 

    বুকের ভেতর খামচে ওঠা একটি নাম সঞ্জীব চৌধুরী। মানুষটার সাথে আর দেখা হয় না, হবেও না। পরকাল বলে যদি কিছু থাকে তাহলে হয়তাে সেখানেই দেখা হবে আমাদের।

    এই সংকলনে যে কয়টি গানকবিতা আছে তার প্রায় একশাে ভাগের সাথেই আমার প্রত্যক্ষ যােগাযােগ। তাই বড়াে বেশি কষ্ট হয়, আরও বেশি কষ্ট হয় যখন এই গানগুলাে শ্রোতাদের সামনে নিজ কণ্ঠে ধারণ করতে হয়। এই অনুভূতি যে কতটা ভয়ানক তা একমাত্র বুঝবেন যারা আমার মতাে একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন।
    সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা; এই অসাধারণ মানুষটির সাথে আমার পরিচয়ের সুবাদে জেনেছি মানুষটির অসাধারণ, অনন্য কিছু দিক। তাঁর কাছ থেকে শিখেছি তার জীবদ্দশায়, শিখেছি তাঁর মহাপ্রয়াণে। সঞ্জীব চৌধুরীর মৃত্যু নেই, মৃত্যু হবে না, হয় না...

    – বাপ্পা মজুমদার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০।

    সঞ্জীব চৌধুরীর গান

    সঞ্জীব চৌধুরীর জন্ম ১৯৬৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জে। বাবা ননী গােপাল চৌধুরী ও মা প্রভাশিনী চৌধুরী। নয় ভাই-বােনের মধ্যে সপ্তম সঞ্জীব চৌধুরীর ছেলেবেলা কেটেছে হবিগঞ্জেই। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দুর্দান্ত ফলাফলের পর প্রবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়। গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতায় পড়াশােনার পর পেশা হিসেবে বেছে নেন সাংবাদিকতা। বাংলাদেশে ফিচার সাংবাদিকতার পথিকৃত এই গুণীর পদচারণায় বিভিন্ন সময় মুখরিত হয়েছে আজকের কাগজ, ভােরের কাগজ, যুগান্তর ও যায়যায়দিনের মতাে দেশসেরা সব জাতীয় দৈনিক।

    আমি তোমাকে বলে দেব pdf

    সঞ্জীব চৌধুরী একাধারে একজন রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, গীতিকবি, সুরস্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পী। আমার কাছে সঞ্জীব চৌধুরী একটি দর্শনের নাম। যে দর্শন ধারণ করবার চেষ্টা করি আমি এবং আমরা।
    ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর দুম করে দাদা চলে গেলেন। আমরা নির্বাক, হতবাক। সঞ্জীবদার গানকবিতা আমার ও আমার মতাে অনেকের কাছেই গান লেখার ইস্কুল। আমি ভাগ্যবান দাদাকে কাছ থেকে দেখেছি বলে। দলছুটের সেই আড্ডায় আমি ছিলাম কনিষ্ঠতম সদস্য। ফলে সবার স্নেহ আর আদরে গানের সাগরে ভাসতাম সবার সাথে। সুঞ্জীবদ্রার সেই আদরমাখা প্রশ্রয় আমাকে সাহস জুগিয়েছে অনেক, যা আজকের আমি হবার পথে আমার সঙ্গী সবসময়।

    তোমাকেই বলে দেব pdf

    সঞ্জীবদার লেখা গানের সংখ্যা একেবারেই হাতে গােনা। ২০১০ সালে সেই সব গানকবিতা একসাথে সংকলনের উদ্যোগ নেই। দলছুট ও তার একক অ্যালবামের বাইরে কিছু মিশ্র অ্যালবাম, অন্য শিল্পীর জন্য লেখা গানকবিতা সংগ্রহ করে আমার সংকলন ও সম্পাদনায় সে বছর ‘আজব’ থেকে প্রকাশ পায় সঞ্জীব চৌধুরীর গানের খাতা' বইটি। এই পুরাে প্রক্রিয়ায় আমি কৃতজ্ঞ বাপ্পা ভাই ও কবন্ধের প্রতি আমার পাশে থাকার জন্য।
    তারপর বছর দশেক পেরিয়ে গেছে। সেই বইয়ের ছাপা কপি আর নেই। কিন্তু সঞ্জীবদার লেখা লিরিকগুলাে একমলাটে থাকার প্রয়ােজনীয়তা ফুরােয়নি। বিশেষ করে এ প্রজন্মের জন্য তা খুব দরকার বলেই মনে করি। তাই আবার উদ্যোগ নিলাম। প্রথমবারের সংকলনে ৪৩টি লিরিক ছিল। এবার আরও ৪টি যােগ করতে পেরেছি। ২টি পরে প্রকাশিত আর ২টি আগেরবার জানার বাইরে ছিল। ধ্রুব আহসানকে ধন্যবাদ ভালাে থাকুক গানটি সংগ্রহ করে দেবার জন্য। 

    এবারে সংকলনের নামটাও নতুন করে দিলাম তােমাকেই বলে দেব। দাদার অনেক জনপ্রিয় গান থাকলেও তার নাম উচ্চারিত হলেই এ গানটি সবার হৃদয়ে অনুরণন তােলে সবার আগে, সেটা সর্বজন স্বীকৃত। যেহেতু সঞ্জীবদার সবগুলাে গানকবিতা একসাথে স্থান পেয়েছে, তাই এই বইটি সঞ্জীব চৌধুরীর গানকবিতা সমগ্রও বটে। আশা করি এই বইটি সব সঞ্জীবপ্রেমীর জন্য এক অমূল্য ভালােবাসার সঙ্গী হয়ে থাকবে জীবনভর। সঞ্জীব চৌধুরীর মৃত্যু নেই। তিনি আছেন, থাকবেন তাঁর গানে, কবিতায়, দর্শনে...

    ভালাে হােক সবার। ভালােবাসার অজস্রতায়।

    জয় শাহরিয়ার। ১১ ডিসেম্বর ২০২১।

    তোমাকেই বলে দেব pdf by সঞ্জীব চৌধুরী 

    সঞ্জীব চৌধুরী এর তোমাকেই বলে দেব pdf  অরজিনাল বইটি পড়তে পারবেন এখানে:

    (দুঃখিত, বইটির পিডিএফ এখনো প্রকাশিত হয় নি)

    Book Publisher Author  File Size
    তোমাকেই বলে দিব গান-কবিতাসমগ্র আজব প্রকাশনী সঞ্জীব চৌধুরী ৭ মেগাবাইট
    Bookshop Price Language  Total Page
    Durdin Magazine Only 215 Taka Bangla 176



    সঞ্জীব চৌধুরী এর গানের বই আমি তোমাকে বলে দেব কেমন লেগেছে আশা করি জানাবেন।

    তোমাকেই বলে দেব গানকবিতাসমগ্র থেকে কয়েকটি গানকবিতা: 

    ইয়াসমিন

    ঘরে ফিরতে চাইলেই কি ঘরে ফেরা যায়? 
    সবাই কি ঘরে ফিরতে পারে? 
    ইয়াসমিন। দিনাজপুরের ইয়াসমিন। 
    কিশােরী ইয়াসমিন ঘরে ফিরতে চেয়েছিলাে। কিন্তু কী অন্ধকার সে পথ! কী নিষ্ঠুর সে পথ। ইয়াসমিনের আর কোনদিন বাড়ি ফেরা হয় না। ঢাকা-টু-দিনাজপুর অন্ধকারে লােপাট হয়ে যায়। আর রাক্ষসের মুখােশ পরে কসাইগুলাে হাসে। পুলিশের ব্যাটন হাতে কসাইগুলাে হাসে। 
    আর তাকে ধর্ষণ করা হয়, তাকে ধর্ষণ করা হয়। তাকে মেরে ফেলা হয়। ইয়াসমিন, ইয়াসমিন। 
    আহ্ আহ্ আহ্। পােড়ে রক্তচোষা ডাকলাে প্যাঁচা। অলুক্ষণে রাত। আসে অন্ধকারে চুপিসারে
     এক ভীষণ কালাে হাত লােল ঝরে তার লােলুপ জিহ্বা ছিড়লাে-হৃদয় বীণ। 

    আহ্ ইয়াসমিন, আহ্ ইয়াসমিন, আহ্ ইয়াসমিন।
    হাত বাড়ালে বন্ধু মেলে হাত বাড়ালেই সুখ,
    সুখের ঘরে হামলে পড়ে নিষিদ্ধ অসুখ।
    তােমাকেই বলে দেব। 

    ভর দুপুর

    ভর দুপুরে তিন কুকুরে 
    খাচ্ছে কেন দূর্বাঘাস। 
    কারাে কারাে মনে কেন 
    বারাে মাসই ভাদ্র মাস।
    ভর দুপুরে টিনের চালে ভূতে মারে ঢেলা চ্যালচ্যালাইয়া চলতে আছে ভণ্ড বাবার চ্যালা 
    ভূত তাড়ানাের জবর মন্ত্র ফুঁকতে আছে ফুসুর ফাঁস।

    শ্বশুর থাকেন কুয়েত সিটি স্বামী থাকেন সৌদী,
    ফ্ল্যাট বাড়িটা আগলে রাখেন হারাধনের বৌদি।
    ভরদুপুরে চোখের জল আর নদীর জলে হাসুর পাস।
    তােমাকেই বলে দেব।

    সানগ্লাস 

    দেয়ালে তােমার ছবি 
    অন্ধকার তুমি ছায়াঘেরা সুদূরের মুখ। 
    বাগানে দাঁড়িয়ে আছাে স্মৃতির পাথর 
    ঐ পাথরের চোখে সানগ্লাস 
    ভেতরে লাফিয়ে ওঠে অন্ধ রাত 
    দেখে নেবাে দেখে নেবাে 
    সব স্বপ্ন করেছে খুন কোন মায়াবিনী 
    কেন অন্ধের চোখে সানগ্লাস।

    কেউ নেই, কেউ নেই কেউ নেই, নেই কিছু নেই। সবাই ফিরেছে ঘরে ফেরার সময়। শুধু তােমার সময় হলাে না তা।
    দেখাে এখন চোখের নিচে কালাে দাগ কার নখের আঁচড় 
    ভেতরেই সকল মানুষ হাঁটে দীর্ঘ পায়ে
    তুমি তাদের ভিড়েই হারালে তুমি সিড়ি ভাঙো, 
    কত সিড়ি ভাঙো কিনে ফেলেছাে কি স্বর্গের সিঁড়ি
    তােমাকেই বলে দেব। 

    নিষিদ্ধ

    সব নিষিদ্ধ, কষ্ট নিষিদ্ধ, কষ্ট নাই 
    দুঃখ নিষিদ্ধ, দুঃখ নাই 
    আমাদের কষ্ট থাকতে নাই দুঃখ পাওয়ার আদেশ নাই। 
    কষ্ট নিষিদ্ধ, কষ্ট নাই দুঃখ নিষিদ্ধ, দুঃখ নাই 
    আমাদের কষ্ট থাকতে নাই। 

    দুঃখ পাওয়ার আদেশ নাই। আমাদের জিহ্বা নাই, বাক্য নাই 
    আমাদের মস্তক নাই, হস্ত নাই। 
    আমাদের মাথা থাকতে নাই। 
    মাথা থাকার নিয়ম নাই।
    চক্ষু নিষিদ্ধ। চক্ষু নিষিদ্ধ, দৃশ্য নাই 
    কর্ম নিষিদ্ধ, শব্দ নাই। 
    আমাদের দেখশােনা নাই। দেখাশােনার নিয়ম নাই। 

    আমাদের ক্ষুধা চুপ, আমাদের খাদ্য নাই। আমাদের তৃষ্ণা চুপ, আমাদের নদী নাই আমাদের ক্ষুধা-তৃষ্ণা নাই ক্ষুধা-তৃষ্ণার আদেশ নাই। 
    আমাদের ক্ষুধা চুপ, আমাদের খাদ্য নাই
    তােমাকেই বলে দেব।

    আমাদের তৃষ্ণা চুপ, আমাদের নদী নাই 
    আমাদের ক্ষুধা-তৃষ্ণা নাই। ক্ষুধা-তৃষ্ণার আদেশ নাই কণ্ঠ নিষিদ্ধ, কণ্ঠ নিষিদ্ধ, সুর নাই যন্ত্র নিষিদ্ধ, বাদ্য নাই 
    আমাদের গানের আদেশ নাই ও গান গাওয়ার নিয়ম নাই 
    আকাশ নিষিদ্ধ, পক্ষী নাই বৃক্ষ নিষিদ্ধ, পুষ্প নাই আমাদের মনের উড়াল নাই উড়াল প্রজাপতি নাই। অন্তর নিষিদ্ধ। অন্তর নিষিদ্ধ, কান্না নাই 
    আনন্দ নিষিদ্ধ, হাসি নাই এখানে কারাে হৃদয় নাই। হৃদয় থাকার নিয়ম নাই। 

    চিন্তা নিষিদ্ধ, ভাবনা নাই রাজপথ নিষিদ্ধ, যাত্রা নাই আমাদের কোন স্বপ্ন নাই। স্বপ্ন দেখার আদেশ নাই এইসব রাত্রী নাই, দিনও নাই রাত্রী নাই, দিনও নাই।
    তােমাকেই বলে দেব।
    Tags

    Post a Comment

    0Comments
    * Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
    Post a Comment (0)

    #buttons=(Accept !) #days=(20)

    Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
    Accept !